শশা আমরা প্রায় সকলেই খেয়ে থাকি। বিশেষ করে খাবারে স্যালাড হিসেবে শশা অনেকেই পছন্দ করেন। যারা ডায়েট কন্ট্রোল করেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষও শশা অবশ্যই খেয়ে থাকেন। তাছাড়াও অনেকেই রূপচর্চায় শশার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু শুধু রূপচর্চায় নয়, বরং শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখতেও শশা নিয়মিত খাওয়া দরকার।
শশায় কি কি উপকারী উপাদান থাকে, Valuable ingredients present in cucumber
শশায় এমন অনেক উপকারী উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয়। যেমন : ভিটামিন B, থিয়ামিন (B1), রাইবোফ্লাবিন (B2), নিয়াসিন (B4), প্যানটোথেনিক, B5, B6, ফোলেট (B9), ভিটামিন C, ভিটামিন K, গ্লুকোজ, স্নেহপদার্থ, ফাইবার, প্রোটিন, বিভিন্ন ধরনের খনিজ পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লোহা, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, ক্যালোরি ইত্যাদি। তবে দেহে সব থেকে জরুরী উপাদান হল জল, আর শশায় জলীয় পদার্থ বেশি থাকে। ১০০ গ্রাম শসাতে জলের পরিমাণ প্রায় ৯৪.৯ গ্রাম থেকে এবং ক্যালরি থাকে ২২ কিলো; এছাড়াও শশা একটি ভাল মানের এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার হিসেবেও গণ্য হয়।
শশার উপকারিতা কি কি জেনে নিন, Various benefits of cucumber
দেহের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে শশা। শশার বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হল :
জল শূন্যতা দূর করে :
শশা আমাদের শরীরে জলের চাহিদা মেটাতে খুবই উপকারী। অনেকেই হয়তো জানেন না যে একটি শশার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ জল থাকে। তাই শশা খেলে শরীর হাইড্রেট হয়ে থাকে এবং কখনো দুর্বলতা বোধ হলে এই হাইড্রেশন দুর্বলতা কাটিয়ে দেহকে দ্রুত সতেজ করে তোলে।
ভিটামিনের চাহিদা মেটায় :
আমাদের শরীরে প্রতিদিন যে সমস্ত ভিটামিনের প্রয়োজন হয় সেগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ভিটামিনই শশায় উপস্থিত। তার মধ্যে ভিটামিন A, B ও C দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে।
ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে :
শশায় উপস্থিত বিভিন্ন উপাদান ডায়াবেটিস বা সুগারের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। তাছাড়াও শশায় রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। রোজ সকালে খালি পেটে ১০০ গ্রাম শশার রস খেলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আসে। এই রস সকালের খাবার ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে খেয়ে যান। মাসখানেক এই ভাবে খেলে অবশ্যই উপকার পাবেন।
কিডনির পাথর সরাতে উপযোগী :
শশার বেশিরভাগটাই জলীয় অংশ, আর এটাই দেহের বর্জ্য ও দূষিত পদার্থ বের করার কাজ করে। কারও কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হলে সে নিয়মিত যদি শশা খায় তবে শশার জলীয় অংশ কিডনির পাথর গলে যেতে সহায়তা করবে। তাছাড়াও ইউরিনারি, ব্লাডার, লিভার ও প্যানক্রিয়াসের সমস্যা সমাধান করতেও শশা বেশ সাহায্য করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে শশার ভূমিকা :
শশার রস যদি নিয়মিত খাওয়া হয় তবে আমাদের মস্তিস্কে ও ধমনীতে জমে থাকা এলডিএল হ্রাস পায়, ফলস্বরূপ আমাদের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে শশার ভূমিকা :
প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন C, সিলিকা, ম্যাগনিসিয়াম, পটাসিয়াম ও আঁশপদার্থ আছে শশায়, আর এই উপাদানগুলি শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। উচ্চ কিম্বা নিম্ন রক্তচাপ; শশায় উপস্থিত উপাদানগুলো দু’ই নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া হার্ট ও ফুসফুসের বেশ কিছু সমস্যায়ও উপকার করে।
ওজন হ্রাস করতে সহায়ক শশা :
শশার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ জল থাকে, আর ক্যালরি থাকে নিম্নমাত্রায়, এর ফলে দেহের ওজন কম করার জন্য এটি ডায়েটে যোগ করতে পারেন।
খাবার হজম করতে সহায়ক :
অনেকেই খাবারের পর ভালো হজম হওয়ার জন্য শশা খেয়ে থাকেন। কাঁচা শশা চিবিয়ে খেলে যে হজম ভালো হয় তা হয়তো অনেকেরই জানা আছে। শশার মধ্যে এরেপসিন নামক অ্যানজাইম থাকে যার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাছাড়া আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস, অ্যাসিডিটির ক্ষেত্রেও এটি উপকারী ভূমিকা পালন করে।
গেঁটেবাত দূর করে :
শশার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সিলিকা থাকে, যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গাজরের রসের সাথে শশা রস মিশিয়ে খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কম থাকে ফলে গেঁটেবাতের ব্যথাও কমে। এছাড়া আর্থ্রাইটিসের ব্যথাও উপশম করতেও শশা উপকারী।
মাথাব্যথা কম করতে সহায়ক :
অনেকেই আছেন যাদের সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথাব্যথা অনুভব হয়, অথবা শরীরে অবসাদ আসে। এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে শশা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর উপাদান সমূহ, যেমন – ভিটামিন B এসব দূর করতে সহায়ক। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কেউ যদি কয়েক টুকরো শশা খায় তবে ঘুম থেকে ওঠার পর উক্ত সমস্যাগুলো হয় না।
ক্যানসার প্রতিরোধে শশার ভূমিকা :
শশায় বিশেষ কিছু আয়ুর্বেদিক উপাদান থাকে যা জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ দেহের আরো বিভিন্ন স্থানে ক্যানসারের ঝুঁকি কম করে।
চোখের যত্নে শশা :
চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা অপসারণ করতে শশা গোল করে কেটে চোখের পাতার ওপর রাখতে পারেন, হয়, এতে আপনার চোখের জ্যোতিও বাড়বে। এছাড়াও চোখের প্রদাহ প্রতিরোধ করতেও শশা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এভাবে শশার ব্যবহার ছানি পড়া আটকায়।
মুখের গন্ধ দূর করতে শশার ব্যবহার :
পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে শশা দেহের বর্জ্য এবং দূষিত পদার্থ তথা টক্সিন দূর করে। নিয়মিত শশা খেলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ, সংক্রমণ এবং মাড়ির বিভিন্ন সমস্যা দূরে থাকে। এক টুকরো শশা গোল করে কেটে জিভের ওপরে তালুর মাধ্যমে চাপ দিয়ে আধ মিনিট রাখুন, তা বিশেষ বিক্রিয়া ঘটায়, ফলে মুখের জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়। এভাবে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় না।
দেহকলা শক্তিশালী করে :
বাড়ি থেকে বাইরে গেলে সূর্যের তাপের কারণে অনেক সময় ত্বকে জ্বালা অনুভব হয়, সেই সমস্যা দুর করতে ত্বকে শশা মাখলে ভালো ফল পাওয়া যায়। শশায় উপস্থিত সিলিকা কার্টিলেজ নামক উপাদানের প্রভাবে লিগামেন্টের কানেকটিভ টিস্যু গড়ে ওঠে এবং এভাবেই আমাদের দেহকলা শক্তিশালী এবং মজবুত হয়ে ওঠে।
রূপচর্চায় শশার ব্যবহার :
স্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি ত্বক এবং চুলের যত্নেও শশা সমানভাবে উপকারী। বিশেষ করে অ্যাগজিমার মত ত্বকের সমস্যা সারাতে তথা প্রতিরোধ করতে শশা বিশেষভাবে উপকারী।
চুল ও নখের যত্নে শশার ব্যবহার :
শশায় থাকা খনিজ চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে। এ ছাড়া সালফার ও সিলিকা চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
শশার অপকারিতা, Disadvantages of cucumber
শশার এত উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু অপকারিতাও বিদ্যমান । তবে জেনে রাখা ভালো যে এই উপকারী শশা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে যখন কেউ ভাবে যে শুধুমাত্র শশা খেয়েই ওজন কমানো যায়। অনেকেই ডয়েট চার্টে শসাটা রাখেন। কিন্তু শুধু শশা খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব না। কিন্তু অনেকে আছেন যারা ওজন কমানোর জন্য শশাকেই ওষুধ হিসবে ধরে নেন, আর যখনই ক্ষুধা লাগে শশা খেতে শুরু করে দেন।
শশা যেহেতু একটি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার, সেহেতু শশা একনাগারে খেতে থাকলে ওজন অবশ্যই কমে যাবে; কিন্তু পাশাপাশি আপনার শরীরে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদনের ঘাটতি দেখা দেবে। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব হলে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। দেহে কাজ করার মত শক্তি পাবেন না। এমনকি রক্ত কমে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। কথায় আছে, অতিরিক্ত কিছুই ভালো না, তাই সবকিছু নিয়ম মত খাওয়া উচিত।
পরিশেষে, Conclusion
শশা বিভিন্নভাবে আমাদের উপকারে আসে। তবে এর অতিরিক্ত সেবন করলে ক্ষতিও হতে পারে। তবে শশা সবসময় খোসাসমেত খাওয়া উচিত, তাহলেই আমরা এর পূর্ণ গুণাগুণ লাভ করতে পারব ৷ তবে খাওয়ার আগে শশা খুব ভাল করে ধুয়ে নিতে ভুলবেন না ৷