দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, Health benefits and risks of drinking milk in Bengali

দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দুধ আমাদের সকলের পরিচিত সুষম খাদ্য। বাচ্চাদের বৃদ্ধিতে দুঃখ খাওয়া নিশ্চিত করার দিকে সকল অভিভাবকই নজর দেন। তবে শুধু শিশু নয় বরং কিশোর থেকে প্রবীণ সকলেরই দুঃখ খাওয়া উচিত। দুধ বিভিন্নভাবে আমাদের সুস্বাস্থ্য বিজয় রাখতে সহায়তা করে। তবে অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করি আবার অনেকের অপছন্দ খাবার এটি। দুধের মধ্যে আছে অনেক পুষ্টিগুণ যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

দুধের পুষ্টিগুণ, Nutritional value of milk :

দুধের পুষ্টিগুণ

দুধের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন :

দুধে পুষ্টি ভরপুর থাকে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, গরুর দুধে রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম ইত্যাদি খনিজ পদার্থ।

 দুধ খাওয়ার উপকারিতা কি কি ? What are the benefits of drinking milk?

জেনে নিন দুধ খাওয়ার উপকারিতা :

১। হাড় ও পেশিকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

২। ফিটনেস ভালো ও সুস্থ রাখে।

৩। শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দুর করে।

৪। মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।

৫। শরীরের ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে।

৬। হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

৭। ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

৮। পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি কমায়।

৯। রাতে ভাল ঘুমের জন্য উপকারি।

১০। দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

১১। শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হয়।

১২। ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

১৩। স্ট্রেস দূর করতে।

১৪। ত্বককে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল রাখতে।

১৫। চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে।

১৬। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।

১৭। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

১৮। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

দুধ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দুধ খাওয়ার অপকারিতা, Risks of drinking milk :

দুধের উপকারিতা যেমন আছে তেমনি অপকারিতাও আছে। এতক্ষন তো জানলেন দুধের উপকারিতা নিয়ে। এখন আলোচনা করবো দুধের অপকারিতা সম্পর্কে। আমরা অনেকেই ভাবি যে সকলের জন্য দুধ খাওয়া উপকারি, কিন্তু এই কথাটি ভুল। কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা বজায় রাখা জরুরি।

দুধ খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন :

১। কিডনিতে পাথর হয়েছে এমন ব্যক্তিদের দুধ খাওয়া নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনির সমস্যায় জর্জরিত রোগীদের দুধ কম খাওয়া এবং রাতে দুধ না খাওয়াই উত্তম।

২। ‘ল্যাক্টেজ’ নামক এনজাইম যাদের শরীরে কম রয়েছে, তাদের দুধ খাওয়ার ব্যাপারে সাবধান হওয়া উচিত।

৩। কারও এলার্জি থাকলে, দুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা উচিত; এর কারণ হল চিকিৎসকরা এলার্জির রোগীদের দুধ খেতে নিষেধ করেন। আবার অনেকের দুধে এলার্জি আছে বলে জানা যায়।

৪। যাদের পাকস্থলীর আলসার জনিত সমস্যা তথা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী হয়ে থাকলে, তাদের দুধ খাওয়া উচিত নয়। এই সকল রোগীদের ক্ষেত্রে দুধ খেলে পেটে ব্যথা ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৫। যাদের কোনো করবে পেটে অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে, তাদের দুধ খাওয়া উচিত নয়। সেই ব্যক্তি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে তারপর দুধ খেতে পারেন।

একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত যে, অতি মাত্রায় দুধ কারও খাওয়া উচিত না। অনেকজন এমন আছেন যারা প্রতিদিন অনেক দুধ খেয়ে থাকেন। সাধারণভাবে দেখতে গেলে, প্রতিদিন নিয়ম করে এক গ্লাস বা ২ গ্লাস দুধ খেতে পারেন। কিন্তু এর চেয়ে বেশি খেলে আপনার জন্য উপকারের চেয়ে অপকারি হতে পারে। 

রাতে দুধ খাওয়া উচিত কি না? Should you drink milk at night?

দুধে ভিটামিন বি১২, ভিটামিন ডি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, খনিজ ও পটাশিয়াম ইত্যাদি পাওয়া যায়। দুধ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং অনেক গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। ডায়েটিশিয়ানদের মতে, ঘুমের অভাবে যারা ভুগছেন তারা রাতে দুধ খেলে উপকার পেতে পারেন। অর্থাৎ রাতে ভাল ঘুমের জন্য গরম দুধ খাওয়া ভাল।

দুধ খেলে কি কি ক্ষতি হয়? What are the harmful effects of drinking milk?

আমরা সকলেই জানি যে, দুধে রয়েছে ল্যাকটোজ নামক একটি উপাদান। উক্ত উপাদান গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজমের মতো একাধিক পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত, অত্যধিক পরিমাণে দুধ খেলে ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই পেটের রোগের সমস্যা এড়িয়ে সুস্থ থাকার ইচ্ছে থাকলে প্রতিদিন গ্লাসের পর গ্লাস দুধ পান করার বদভ্যাস থাকলে সেটা আজই ত্যাগ করুন।

রাতে দুধ খেলে কি ওজন কমে? Does drinking milk at night reduce weight?

রাতে দুধ পান করলে কি আপনার ওজন প্রভাবিত হয়? আপনি যদি বিশ্রামের জন্য উপযুক্ত ঘুম পেতে চান তবে রাতে দুধ পান করা ভাল ধারণা। কিন্তু ওজন কমানোর চেষ্টা করছে এমন ব্যক্তিদের জন্য রাতে দুধ খাওয়া এতটা ভালো নাও হতে পারে। ডায়েটিশিয়ানদের মতে, রাতে দুধ খেলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে এবং লিভারের কার্যকারিতা প্রভাবিত হতে পারে।

দুধ খাওয়ার সঠিক সময় কখন? When is the right time to drink milk?

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার খাওয়ার পরপরই দুধ পান করা উচিত নয়। এর পাশাপাশি দুধ খাওয়ার আগে কোনো টক জিনিস বা ফল, দই, টক জাতীয় কোনো খাবারই খাওয়া চলবে না। এতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে খাবার গ্রহণের ৪০ মিনিট পর দুধ পান করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

কোন দুধ শিশুদের জন্য উপকারী? Which milk is beneficial for children?

দুধ শিশুদের জন্য উপকারী

শিশুর জীবনের প্রথম ছয় মাস, বুকের দুধ তাকে সর্বোত্তম পুষ্টির দেয়, কারণ এটি তার প্রয়োজন অনুসারে তৈরি। মায়ের বুকের দুধে আপনার শিশুর প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি থাকে এবং সঠিক অনুপাতে থাকে।

এছাড়াও ছাগলের দুধকে নবজাতকের জন্য উপকারী বলে বিবেচনা করা হয়। চিকিৎসকের মতে, ‘আপনি যদি আপনার দিদা বা ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি সবসময় বলবেন যে ছাগলের দুধ শিশুদের জন্য উপকারী। এই ভাবেই আয়ুর্বেদ আমাদের সংস্কৃতিতে একীভূত হয়েছে’।

গরম দুধ খেলে কি ঘুম আসে? Does hot milk make you sleepy?

 গরম দুধ আসলে ঘুমের আগে আপনার শরীরকে শিথিল করতে সাহায্য করতে পারে । ইউনিভার্সিটি অফ আরকানসাস ফর মেডিক্যাল সায়েন্সেস এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পানীয়টি নিজেই আপনাকে ঘুমন্ত করে তোলে না, তবে এতে যেসব পুষ্টি রয়েছে তা আপনার ঘুমিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

গরম দুধ

গরম দুধ খাওয়া কি ভালো? Is it good to drink warm milk?

গরম দুধের অন্যতম প্রধান সুবিধা হল এটি সহজে হজমযোগ্য। এছাড়াও ডায়রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ প্রদাহজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে আরামদায়ক। গরম বা উষ্ণ দুধে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা ঘুম ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।

এক গ্লাস দুধে ট্রিপটোফেনের পরিমাণ কত? What is the amount of tryptophan in a glass of milk?

 পনিরে প্রতি আউন্সে প্রায় 91 মিলিগ্রাম ট্রিপটোফ্যান থাকে, দুধ প্রতি কাপে 183 মিলিগ্রাম এবং তুলনামূলকভাবে, 2 শতাংশ বা কম চর্বিযুক্ত দুধে প্রতি কাপে 138 মিলিগ্রাম থাকে।

গরম দুধ কি এসিডিক? Is hot milk acidic?

দুধ গরম করা হলে অ্যামিনো অ্যাসিড সক্রিয় হয়ে উঠে।

সর্দি কাশি হলে দুধ খাওয়া যাবে কি? Can you drink milk if you have a cold and cough?

আপনার ঠান্ডা লাগলেও আপনি দুধ, দই বা অন্য কোন দুগ্ধজাত দ্রব্য খেতে পারেন। আসলে, হলুদের সাথে গরম দুধ আপনার ঠাসা গলা খুলতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু আপনাকে আইসক্রিম এবং অন্য কোনো ঠান্ডা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে কারণ এগুলো আপনার সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

পরিশেষে, Conclusion :

দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সকল দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে যে দুধ খাওয়ার উপকারিতাই বেশি। তাই সুস্থ থাকতে আমাদের প্রতিদিন দুধ খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। তবে সীমিত পরিমাণে খাওয়াই শ্রেয়। পাশাপাশি কাদের ক্ষেত্রে দুধ খাওয়া ক্ষতিকর সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।

Frequently Asked Questions

প্রশ্নঃ দুধ কখন খাওয়া উচিত রাতে না দিনে?

উত্তরঃ  অনেকেই বলে থাকেন দুধ রাতে খাওয়া বেশি উপকার। রাতে দুধ খেলে ভাল ঘুম হয়।

প্রশ্নঃকাঁচা দুধ কি খাওয়া যেতে পারে ?

উত্তরঃ  না, কখনোই না।

প্রশ্নঃখালি পেটে কি দুধ খাওয়া উচিত?

উত্তরঃ ডায়েটিশিয়ানের দ্বারা প্রায়ই খালি পেটে দুধ না খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts