রসুন বছরের পর বছর ধরে খাবারে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রসুন খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে, আয়ুর্বেদে একে ওষুধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর একাধিক উপকারিতার কথা বলা আছে আয়ুর্বেদে। শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াতেই নয়, ঔষধি গুণের জন্য রসুনের কদর চিরকাল। কাঁচা রসুন খাওয়া অভ্যাস করতে পারলে এড়ানো যায় অসংখ্য রোগভোগ।
রসুনে উপস্থিত উপকারী যৌগ, Beneficial compounds present in garlic
রসুনে থাকে অ্যালিসিন নামক একটি যৌগ, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। এছাড়াও, রসুন ভিটামিন এবং পুষ্টিতেও সমৃদ্ধ। ভিটামিন B1, B6, C ছাড়াও এতে ম্যাঙ্গানিজ, ক্যালসিয়াম, কপার, সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য প্রধান লবণ রয়েছে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ কাঁচা রসুন খেলে অনেক রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। রসুন থেকে সর্বাধিক উপকার পেতে, এটি কাঁচা খাওয়াই উচিত। খুব বেশি রান্না করলে এর বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন, Know the benefits of eating garlic
প্রাচীন কাল থেকে রসুনের উপকারিতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী চর্চা হয়ে আসছে। রসুন কাজে লাগিয়ে তৈরি করা যায় বিভিন্ন রোগের টোটকা। যেমন : রসুনের ২-৩টি কোয়া কুচিয়ে তার সঙ্গে এক টেবিলচামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে শরীর ফিট ও এনার্জিতে ভরপুর থাকবে। এছাড়াও রসুনের রয়েছে বহু উপকারিতা। জেনে নিন রসুন খাওয়ার ফলে কি কি উপকার পাওয়া যায় :
১) রসুন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে :
রসুনের মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ একে অনেকটা ওষুধের মতোই কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করে, যার দরুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খালি পেটে রসুন খেলে এই উপকার বেশি। তাই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন।
২) দেহে রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে :
দেহে রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে না হলে বহু সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যার দরুণ রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে রোগের সৃষ্টি হতে পারে না।
৩) রসুন পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়াতে বেশ সহায়ক :
পুরুষের যৌনক্ষমতা বিভিন্ন কারণে কম হয়ে যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে খালি পেটে প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন খেলে ধীরে ধীরে যৌনক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। পুরুষের ক্ষমতার মূল উৎস হচ্ছে রক্তের সাবলীল গতি, আর রসুন রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখতে সহায়ক, তাই রসুন পুরুষের যৌনক্ষমতা বাড়াতে পারে। রসুনে থাকা নানা উপাদান পুরুষদের ফার্টিলিটির সমস্যা ঠিক করতে সাহায্য করে। এটা শরীরে টেস্টাস্টেরনের মাত্রা বাড়ায় এবং শুক্রাণু তৈরিতেও সহায়তা করে।
৪) রসুন হৃৎপিণ্ডের শক্তিবর্ধকের ভূমিকা পালন করে :
হৃদপিণ্ডের সমস্যা নিয়ে অনেকেই বিব্রত, মাঝেমধ্যে বুকের বাঁ পাশে ব্যথা অনুভূত হয় অনেকের, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে কষ্ট হয়, এসব কারণে হৃদপিণ্ডের চাপ পড়ে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন জল দিয়ে গিলে খেলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হবে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না, বুকের ব্যথা কমে যাবে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতেও কষ্ট হবে না।
৫) রসুন উচ্চ রক্তচাপ কম করতে সাহায্য করে :
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য অন্যতম পথ্য রসুন। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে শরীরের এলডিএল বেড়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়, তাই প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন সকালে খালি পেটে খাওয়া শুরু করুন, এতে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা থাকবে না।
৬) সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক রসুন :
মানুষের শরীরে যেকোনো সময়ে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ ঘটতে পারে। আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাবে যে কোনো ব্যক্তি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কাঁচা রসুন খেলে কাশি, জ্বর ও ঠান্ডাজনিত সমস্যার হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে শরীর রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।
৭) ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক রসুন :
ফুসফুসে বিভিন্ন কারণে সংক্রমণ হয়ে থাকে, সেটা অ্যালার্জি সমস্যা হোক কিংবা ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকেই হোক না কেনো। যে কারণেই হোক না কেনো ফুসফুসে সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে রসুন পিষে রস খেলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে, সঙ্গে হলুদগুঁড়া গরম জল দিয়ে চায়ের মতো খেলে সংক্রমণ দ্রুত কম হয়ে যাবে। প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খাওয়া ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত কার্যকর।
৮) রসুন রক্ত পরিশোধিত করে :
রক্ত পরিশোধিত করতে প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেতে পারেন, এতে শরীর ভালো থাকে, নিরোগ দেহের জন্য সাবলীল রক্ত চলাচল অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়।
৯) রসুন ত্বক ভালো রাখে :
প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে উল্লেখিত অন্যান্য উপকারের পাশাপাশি ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে না, চেহারায় কোনো দাগ থাকলে সেটাও কমে যায়। তাই বলা যায় যে রসুন ত্বক ভালো রাখতেও কার্যকরী।
১০) শরীরে অবাঞ্ছিত ফোলা বা গোটা কম করতে সহায়ক :
অনেকের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় হঠাৎ করেই ফোলা পিণ্ড দেখা দেয়, যা বাড়ে কমে না, ব্যথাও করে না, কিন্তু ফোলাটা মিশেও যায় না, গোটার মত হয়ে থেকে যায় অনেকের ক্ষেত্রে। এমন ফোলা বা গোটা থেকে শরীরকে মুক্ত করতে কাঁচা রসুন খেতে পারেন। প্রতিদিন ছয়-আট কোষ রসুন সকালে খালি পেটে এবং দুপুর ও রাতে খাবার পর দুইটি করে রসুন কোষ খেলে ফোলাটা ধীরে ধীরে মিশে যাবে।
১১) সেল ড্যামেজ রোধ করে :
রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ’ ও ‘এজিং’ রোধ করে। ব্রেনের সেল ড্যামেজ কম হয়ে আলঝেইমারস ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগ সৃষ্টি হতে পারে, যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায় রসুন খেলে।
১২) রসুন হাড়ের শক্তি বাড়ায় :
বিভিন্ন কারণে একটা বয়সের পর নারীদের হাড়ের শক্তি কমে যায়। তাছাড়া হরমোনের ভারসাম্য হারিয়ে যায়। প্রতিদিন ২ গ্রাম করে রসুন খেলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রায় ভারসাম্য বজায় থাকে, ফলে হাড়সংক্রান্ত সমস্যাও অনেকটা কম হয়ে যায়। এমনকি যেসব নারীদের মেনোপোজ হয়ে গেছে, তাদেরও নিয়মিত রসুন খাওয়া উচিত, খেলে অনেক উপকার পাবেন।
১৩) দাঁতের ব্যথায় রসুন খুবই উপকারী :
কখনো দাঁতে ব্যথা হলে আক্রান্ত দাঁতে রসুনের তেল লাগালে ব্যথা উপশম হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকিও কমে।
১৪) হজম প্রক্রিয়াকেও শক্তিশালী করে :
রসুনের ব্যবহার হজম প্রক্রিয়াকেও শক্তিশালী করে। এতে উপস্থিত অনেক পুষ্টি উপাদান খাবার হজমে সাহায্য করে। তাই খাবারের আগে বা পরে এক কোয়া রসুন থেঁতো করে খেতে পারেন।
১৫) ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে :
রসুনের ব্যবহার ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়তা করে। যারা রসুন খান তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। তাই রোজ খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খাওয়ার অভ্যাস করুন।
শেষ কথা, Conclusion
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা রসুনের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলেন। তাহলে এখন থেকেই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাঁচা রসুন যোগ করতে পারেন, এর ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের রোগ দূরে থাকে। এছাড়া ব্যথা বা দেহের আক্রান্ত স্থানে রসুন তেল লাগলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়।
তবে প্রত্যেক খাবারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও থাকে, ফলে এ বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শরীরের পক্ষে উপকারী বলে রসুন অতিরিক্ত খেতে যাবেন না, কারণে এতে থাকা অ্যালিসিন লিভারে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। রসুন খেয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।