বাঙালিদের বাড়ির রান্নাঘরে প্রায়ই দেখা যায় ভিন্ডি বা ঢেঁড়স নামে পরিচিত সবুজ সবজিটিকে। অনেকেরই প্রিয় সবজি ঢেঁড়স। এই সবজি দিয়ে ভিন্ন রকম খাবার তৈরি করা যায়, যেমন ভর্তা, ভাজা, চচ্চড়ি ইত্যাদি। এমনকি মাছের সঙ্গে ঝোলেও অনেকে এটি রান্না করে থাকেন। গ্রীষ্মকালীন সবজি হলেও ঢেঁড়স প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে ছোট সবুজ ঢেঁড়স স্বাদে যেমন দারুণ তেমনি এর ঔষধি গুণও রয়েছে প্রচুর। আজকের এই নিবন্ধে আমরা ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরবো।
- 1 ঢেঁড়সের বিভিন্ন নাম, Different names of lady’s finger
- 2 ঢেঁড়সের মধ্যে কি কি উপকারী উপাদান আছে, Beneficial ingredients present in lady’s finger
-
3
ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of eating lady’s finger
- 3.1 কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি :
- 3.2 দেহে ফলেটের ঘাটতি পূরণ করে :
- 3.3 কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ কমায় :
- 3.4 ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করে :
- 3.5 ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে :
- 3.6 অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায় :
- 3.7 খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় :
- 3.8 হাড়কে শক্ত করে :
- 3.9 শ্বাস কষ্টের মতো রোগ প্রতিরোধ করে :
- 3.10 ডায়াবেটিস রোগ দূরে রাখে :
- 3.11 চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে :
- 3.12 চুলের যত্নে ঢেঁড়সের ব্যবহার :
- 4 ঢেঁড়সের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন, Bad sides of lady’s finger
- 5 উপসংহার, Conclusion
ঢেঁড়সের বিভিন্ন নাম, Different names of lady’s finger
ঢেঁড়সকে ইংরেজিতে ওকরা বলা হয়, আবার কিছু স্থানে এটি লেডিজ ফিঙ্গার নামেও পরিচিত। কোথাও এটি গাম্বো নামেও খ্যাত, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটিকে ভেন্ডি বা ভিন্ডি বলা হয়।
ঢেঁড়সের মধ্যে কি কি উপকারী উপাদান আছে, Beneficial ingredients present in lady’s finger
ঢেঁড়সের মধ্যে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, ভিটামিন এ, সি এবং ফলেট। এছাড়াও আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন কে, বি, আয়রন, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, মেঙ্গানিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিটা ক্যারোটিন। এই সব উপাদানগুলো একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ঢেঁড়স খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of eating lady’s finger
কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি :
নিয়মিত ঢেঁড়সের তরকারি খেলে কিডনির থেকে ক্ষতিকর উপাদান বেরিয়ে যেতে শুরু করে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই কিডনি সুস্থ থাকে।
দেহে ফলেটের ঘাটতি পূরণ করে :
আমাদের দেহ সচল এবং রোগমুক্ত রাখার জন্য নিয়মিত যে উপাদানগুলোর প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে ফলেট অন্যতম। তাই তো দেহের ভেতরে এই উপাদানটির সঠিক পরিমাণে উপস্থিতি খুব জরুরি। এজন্য প্রতিদিন ঢেঁড়স খাওয়া উচিত, কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলেট।
কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ কমায় :
ঢেঁড়সে থাকা ফাইবার হার্টের খেয়াল রাখার পাশাপাশি খাবার হজম করার শক্তির উন্নতি ঘটায়। তাছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এবং গ্যাস–অম্বলের মতো রোগের প্রকোপ কম করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ঢেঁড়স খেলে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পায়।

ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করে :
ঢেঁড়সে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যার কারণে প্রতিদিন এই সবজিটি খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, অন্যদিকে দেহের কোষেদের বিভাজনও সঠিক নিয়ম মেনে হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের কোষ গঠনে পরিবর্তন করার কোনও সুযোগই দেয় না, ফলে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশেই হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, কোষেদের এই ভাবে চরিত্র বদল করে ক্ষতিকর কোষে রূপান্তরিত হওয়াকে “মিউটেশন অব সেল” বলা হয়ে থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে :
ওজন কম করার চিন্তা থাকলে প্রতিদিনের ডায়েটে ঢেঁরশ অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী! এই সবজিটির ফাইবারে পূর্ণ হওয়ায় এটি খেলে অনেকক্ষণ ধরে পেট ভরা আছে বলে মনে হয়, যার ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে, ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।

অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমায় :
ঢেঁরশে উপস্থিত পুষ্টিকর উপাদান শরীরে প্রবেশ করে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। লোহিত রক্ত কণিকা রক্তে সঠিক পরিমাণে থাকলে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে হ্রাস পায়।
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় :
শরীরে উপস্থিত বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখতে ঢেঁড়সের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সবজিটি ফাইবার সমৃদ্ধ। এই উপাদানটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
হাড়কে শক্ত করে :
ঢেঁড়সে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এর উপস্থিতর ফলে এই সবজি হাড়ের গঠনে উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগকে আমাদের থেকে দূরে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ঢেঁড়স খেলে নানাবিধ হাড়ের রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধতে পারে না। বিশেষত ৪০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের ঢেঁড়স খাওয়া জরুরী।
শ্বাস কষ্টের মতো রোগ প্রতিরোধ করে :
অনেকেরই শ্বাস কষ্ট জনিত সমস্যা আছে। এই রোগ কম করতে হলে ঢেঁড়সের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে, কারণ ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে তোলে, যা দেহে উপস্থিত অ্যালার্জি সৃষ্টিকারি উপাদানগুলোর উপর প্রভাব সৃষ্টি করে, ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা কম হয়।

ডায়াবেটিস রোগ দূরে রাখে :
আমাদের দেশে রোজই একজন না একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর আক্রান্তের সংখ্যাটাও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতিদিন ৬–৮ টা ঢেঁড়স খেলে শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না এবং ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে :
ঢেঁড়সে ভিটামিন-এ, বিটা-ক্যারোটিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা সেলুলার মেটাবলিজম দ্বারা উৎপাদিত ফ্রি রেডিকেলগুলি দূর করতে সাহায্য করে। এই কণাগুলোই অন্ধত্বের জন্য দায়ী। তাই চোখের সাস্থ্য ভালো রাখতে অবশ্যই ঢেঁড়স খাওয়া উচিত।
চুলের যত্নে ঢেঁড়সের ব্যবহার :
আমাদের মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, উকুন এবং খুশকি ইত্যাদি দূর করার জন্য কাঁচা ঢেঁড়সের ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও, ঢেঁড়স চুল চকচকে করতে সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া ঢেঁড়সে ভিটামিন সি থাকে যা চুলকে আবার নতুন জীবন দিতে সাহায্য করে।
ঢেঁড়সের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন, Bad sides of lady’s finger
ঢেঁড়সের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকারী এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হলেও এর বেশ কিছু উপকারিতাও আছে। এই অপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত, তাহলে আপনারা এই সবজি খাওয়ার সময় সাবধানতার সাথে খেতে পারবেন। ঢেঁড়সের অপকারিতাগুলি হল :
ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে :
প্রোটিওলাইটিক নামক এনজাইম ঢেঁড়স থেকে নিঃসৃত হয়, যার সংস্পর্শে আসার কারণে ত্বকের ক্ষত হতে পারে।
কিডনিতে পাথর থাকলে ঢেঁড়স ক্ষতিকর :
ঢেঁড়সে অক্সালেট নামক একটি বিশেষ যৌগ থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে। তবে কেউ যদি কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে তাদের ঢেঁড়স না খাওয়া উচিত, নয়তো তাদের স্বাস্থ্যের আরো ক্ষতি হতে পারে।

পেটের সমস্যা :
অতিরিক্ত ঢেঁড়স খাওয়ার ফলে কিছু মানুষের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে, কারণ ঢেঁড়স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে গ্যাস, ডায়রিয়া, ক্র্যাম্প এবং অন্ত্রের প্রদাহের মতো সমস্যা হতে পারে। তাই শরীরে সহ্য না হলে এই সবজি না খাওয়ায় ভালো।
ঢেঁড়স খেলে রক্ত খুব ঘন হয়ে যেতে পারে :
ঢেঁড়সে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-কে পাওয়া যায়, যা শরীরে রক্ত ঘন করার কাজ করে। যাদের রক্ত পাতলা, তারা যদি রক্ত ঘন করার জন্য কোনো ওষুধ খেয়ে থাকেন তবে তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঢেঁড়স খাওয়া উচিত, কারণ দুটো একসাথে খাওয়ার ফলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করতে পারে, যা শেষ মেষ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হতে পারে।

উপসংহার, Conclusion
ঢেঁড়স এমন একটি সবজি যা দেখতে ছোটো হলেও এর গুণ প্রচুর। তাছাড়া আমরা ছোটবেলা থেকেই পড়েছি যে সবুজ শাক সবজি আমাদের স্বাস্থের জন্য উপকারী, সেক্ষেত্রে ঢেঁড়স ও একটি সবুজ সবজি, অতএব এটি খাওয়ার ফলে বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়াটাও স্বাভাবিক। তবে যেকোনো কিছুরই উপকারিতার সাথে কিছু না কিছু অপকারিতা থাকে।
তাই উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা এর অপকারিতা সম্পর্কেও অবগত হয়েছেন। যাদের কোনো সমস্যা নেই তারা নিশ্চিন্তে এই সবজি খেলেও যাদের কিডনি বা রক্ত সংক্রান্ত কোনো সমস্যা আছে তারা প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঢেঁড়স খাওয়া উচিত।