মালদহী, হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাতি; নামেই যেন অর্ধেক প্রশান্তি। নামগুলো শুনলেই মনে আম খাওয়ার ইচ্ছে জাগ্রত হয়ে যায়। আম খেতে অনেকেই ভালোবাসেন। ফল টি খেতে যে বড়ই সুস্বাদু ও রসালো। তবে আম খেলে আমাদের কি কি উপকার হবে সে সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞাত। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।
-
1
আম খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of eating mangoes
- 1.1 ১. ক্যান্সার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক :
- 1.2 ২. রক্তাল্পতা রোধে সহায়ক :
- 1.3 ৩. হাড়ের সমস্যা উপশমে সহায়ক আম :
- 1.4 ৪. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক আম :
- 1.5 ৫. ত্বকের জন্য উপকারী আম :
- 1.6 ৬. শরীরের অ্যালকালাইন লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে আম
- 1.7 ৭. ওজন কমাতে সাহায্য করে আম :
- 1.8 ৮. আফ্রোডিজিয়াক ফ্রুট
- 1.9 ৯. চোখের জন্য উপকারী আম :
- 1.10 ১০. হজমের সমস্যা সমাধানে কার্যকর আম :
- 1.11 ১১. হিট স্ট্রোক ঠেকাতে সহায়ক আম :
- 1.12 ১২. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক আম :
- 1.13 ১৩. মনযোগ ও স্মৃতির জন্য উপকারী আম :
- 1.14 ১৪. বডি স্ক্রাব হিসেবে আমের ব্যবহার :
- 2 কতোটা পরিমাণ আম খাবেন? How much mango to eat?
- 3 শেষ কথা, Conclusion
আম খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of eating mangoes
আমে রয়েছে বিপুল পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এই ফলে পাবেন ভিটামিন এ, সি, ই, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, কপার, ফলেট, ফাইবার ও প্রোটিন। আমে থাকে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল, খনিজ লবণ, আঁশ এবং ক্যারোটিন, যা আপনার চোখের জন্য খুবই উপকারী। তাই মৌসুমের এই পাকা আম আপনার চোখের দৃষ্টিশক্তি যেমন বাড়ায় তেমনি এ সময়ের জ্বর কিংবা সর্দি কাশি থেকেও আপনাকে সুরক্ষিত রাখে।

এ ছাড়া আমে আছে কার্বোহাইড্রেট যা আপনার শরীরে শক্তি জোগাতে সহায়তা করে এবং আপনাকে সারা দিন রাখে প্রাণবন্ত। তাছাড়া স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের ক্ষেত্রে এতে থাকা ক্যালরি নিয়ে চিন্তার কোনো বিষয় নেই। সাধারণত অধিকাংশ ফলেই ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। আমের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। তাই আম খেলে আপনার মন ও পেট ভরলেও ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ খুব বেশি বাড়বে না।
জেনে নিন আম খাওয়ার উপকারিতা :
১. ক্যান্সার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক :
আমে আছে কোয়েরসেটিন, ফাইসেটিন, আইসোকোয়েরসেটিন, অ্যাস্ট্রাগ্যালিন, গ্যালিক অ্যাসিড ও মিথাইল গ্যালেট নামের কঠিন নামওয়ালা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো। তাই আম খাওয়ার ফলে এইসব উপাদান আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং স্তন ক্যান্সার থেকে শুরু করে কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার ও লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করে।
২. রক্তাল্পতা রোধে সহায়ক :
পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, যা আপনার শরীরের রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সহায়তা করে এবং হার্টকে সুস্থ রাখে। তাই যাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন অল্প পরিমাণে হলেও আম খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। এতে রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়ে উঠবে।

৩. হাড়ের সমস্যা উপশমে সহায়ক আম :
যাদের হাড়ের সমস্যা আছে তাদের জন্য আম বেশ উপকারী ফল। আমে থাকে ক্যালসিয়াম, যা আপনার হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। তাই হাড়কে মজবুত রাখতে অবশ্যই আম খাওয়া উচিত।
৪. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক আম :
আমে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, ফাইবার ও প্যাকটিন থাকে, যা রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে। যারা কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে পাকা রসালো আম হতে পারে আদর্শ একটি খাবার। প্রতিদিন আম খেলে আপনার কোলেস্টেরল মাত্রা যেমন নিয়ন্ত্রণে আসবে তেমনি আপনিও সুস্থ থাকবেন।

৫. ত্বকের জন্য উপকারী আম :
আমাদের ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে আম। বিশেষ করে ত্বকের ফুসকুড়ি দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকরী এই ফল।

৬. শরীরের অ্যালকালাইন লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে আম
আমে রয়েছে টারটারিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড। তাছাড়াও আছে সাইট্রিক অ্যাসিড। এইসব অ্যাসিড আমাদের শরীরের অ্যালকালি নামক রাসায়নিক উপাদানের ভারসাম্য ঠিক রাখে।
৭. ওজন কমাতে সাহায্য করে আম :
আমের মধ্যে এতো পরিমাণ ভিটামিন আছে যে একটা আম খেলেই শরীরে রোজকার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনের চাহিদা মিটে যাবে। অন্যদিকে এতে ফাইবারও আছে যা দেহে পুষ্টি ও শক্তি যোগাবে। তাই যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন তারা বার্গার, কোল্ড ড্রিংকস বা সাব-স্যান্ডউইচের বিকল্প খাবার হিসেবে বেছে নিতে পারেন সুস্বাদু রসালো ফল আম কে।

৮. আফ্রোডিজিয়াক ফ্রুট
খুঁজে দেখলে বুঝতে পারবে যে আম প্রায় সকলেরই পছন্দের একটি ফল। এই ফল খেলেই যেন মনে আনন্দের সঞ্চার হয়। ইংরেজিতে একটু কঠিন শব্দ আছে, সেটি হল- আফ্রোডিজিয়াক। এর বাংলা অর্থ হয়, যা খেলে মনে ভালোবাসার উদ্রেক হয়। আম হল এমনই একটা ফল। সুতরাং নিজেও আম খান এবং প্রিয়জনকেও আম উপহার দিতে পারেন।
৯. চোখের জন্য উপকারী আম :
ছোটবেলা থেকেই বই-তে পড়ে এসেছেন অনেকেই যে আমের ভিটামিন A আমাদের রাতকানা রোগ থেকে বাঁচতে সহায়তা করে, যদিও এই রোগ এখনকার সময়ে প্রায় নেই বললেই চলে। তবে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আম খাওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা চোখ শুষ্ক হয়ে হওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তারা আম খেয়ে উপকার পেতে পারেন।

১০. হজমের সমস্যা সমাধানে কার্যকর আম :
স্বাস্থ্য যদি সুখের মূল হয়ে থাকে, তবে স্বাস্থ্যের মূলে রয়েছে হজমক্রিয়া। খাবার ভালো হজম হলে শরীরে সঠিকভাবে পুষ্টি জোগান হয়। তবে অনেকেই হজমের সমস্যায় ভোগেন, সেক্ষেত্রে আম খাওয়া উচিত। আমে থাকা এনজাইমগুলো খাদ্যের প্রোটিন উপাদানগুলোকে সহজে ভেঙে ফেলতে পারে। এর ফলে খাবার হজম হয় দ্রুত এবং পাকস্থলী সংক্রান্ত অনেক রোগ থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।
১১. হিট স্ট্রোক ঠেকাতে সহায়ক আম :
গরমের দিনে অনেকেই হিট স্ট্রোকের শিকার হন, এটি যেন গ্রীষ্মকালের এক সাধারণ ঘটনা। সেক্ষেত্রে আম হিট স্ট্রোক ঠেকাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আম আমাদের অন্তরকে শীতল রাখে এবং শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলোকে অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়। তাই গরমের দিনে অবশ্যই আম খাওয়া উচিত।
১২. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক আম :
আমে থাকা ক্যারোটেনয়েড বাড়িয়ে দেবে আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। সহযোদ্ধা হিসেবে ভিটামিন সি তো আছেই।

১৩. মনযোগ ও স্মৃতির জন্য উপকারী আম :
অনেক সময় বিভিন্ন কাজে মনোযোগের অভাব থাকার কারণে সঠিকভাবে সেই কাজ সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। পড়াশুনার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে কোনও কিছুর প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হলে আম উপকারী ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ফলটি আমাদের মেমোরি বুস্টার হিসেবেও কাজ করে।
১৪. বডি স্ক্রাব হিসেবে আমের ব্যবহার :
নিজে আম খাওয়ার পাশাপাশি আপনার ত্বককেও খাওয়াতে পারেন আমের নির্যাস। তাছাড়া বডি স্ক্রাব হিসেবে পাকা আম বেশ ভালো কাজ করে। একটি পাকা আমের খোসা ছাড়িয়ে এবং এর বীজ ফেলে দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করুন, এরপর এতে একটুখানি মধু আর দুধ মিশিয়ে নিন। স্নানের আগে এই মিশ্রণটি আলতো করে মুখে ও শরীরে মাসাজ করে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের জেল্লা বৃদ্ধি পাবে এবং ত্বক নরম ও মসৃণ থাকবে।
কতোটা পরিমাণ আম খাবেন? How much mango to eat?
অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো ফল দেয় না। একথা আমরা সকলেই জানি। তাই এতো এতো উপকারের কথা শুনে আম গপাগপ গিলতে যাবেন না।
এমন বলার কারণ হল, এক কাপ আমে আছে ১০০ ক্যালোরি, আর এই ক্যালরির ৯০ ভাগই আসে আমে থাকা চিনি থেকে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিমাণে আম খাওয়া সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে আম খাওয়ার আগে পুষ্টিবিদের দেওয়া চার্টটা দেখে নিন। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত দিনে একটি পাকা আমের অর্ধেকটা খাওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হয়, তবে সেটাও রোজ না খাওয়াই উত্তম।

শেষ কথা, Conclusion
কাঁচা কিংবা পাকা আমপ্রেমীদের কাছে আম মানেই প্রিয় একটি ফল। আম খাওয়া ভালো, এটা অনেকেই জানেন, কিন্তু এতসব উপকারিতা আছে জেনে হয়তো যারা আম সাধারণত খেতেন না তারাও খাওয়া শুরু করে দেবেন। তবে উপকারিতা আছে বলে অতিরিক্ত পরিমাণে না খাওয়াই ভালো, নয়তো উপকারী ফল কখন ক্ষতি করতে শুরু করবে বুঝতেই পারবেন না।