মাশরুম পুষ্টিকর সম্পন্ন উৎকৃষ্ট ছত্রাক জাতীয় খাদ্য। প্রোটিন, খনিজ, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, মাশরুম হল পুষ্টির পাওয়ার হাউস। মাশরুমের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান স্তন, প্রোস্টেট এবং ফুসফুসের ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে অবদান রাখতে পারে। মাশরুম খাওয়ার যে কত উপকারিতা আছে, তা অনেকেরই অজানা বিষয়। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
মাশরুমে কি কি ভিটামিন আছে? What vitamins are there in Mushrooms?
প্রতিদিন মাশরুম খেলে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ হয়। সেলেনিয়াম শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ফ্রি র্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করার পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে সেলেনিয়াম পাওয়া যায়।
সারাবছর চাষযোগ্য মাশরুম কোনটি? What type of mushroom is cultivated all through the year?
আমাদের দেশে মূলত তিন ধরনের মাশরুম চাষ হয়— বোতাম, পোয়াল, ঝিনুক। এর মধ্যে সহজেই বাড়িতে চাষ করা যায় ঝিনুক মাশরুম। এর মধ্যে ঝিনুক মাশরুম চাষের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। খুব গরমকাল বাদ দিলে প্রায় সারা বছর এই মাশরুম চাষ করা যায়।
100 গ্রাম মাশরুমে কত গ্রাম শর্করা থাকে? How many grams of sugar are present in 100 grams of Mushroom?
মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আমিষ এবং হজমে সাহায্যকারী এনজাইম রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে থাকে
- ০.৮ গ্রাম স্নেহ,
- ১.৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ,
- ০.৪ গ্রাম আঁশ,
- ৪.৩ গ্রাম শর্করা,
- ৬ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম,
- ১১০ মি. গ্রাম ফসফরাস,
- ১.৫ মি. গ্রাম লৌহ,
- ০.১৪ মি. গ্রাম ভিটামিন B1,
- ১২ মি. গ্রাম ভিটামিনC,
- ২.৪ মি. গ্রাম নায়াসিন,
- ০.১৬ মি. গ্রাম B2
মাশরুমে কি ঔষধিগুণ আছে ? What are the medicinal properties of Mushrooms?
মাশরুম এমন একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি এবং টনিক যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে আছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো এসিড, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
ডায়াবেটিক, উচ্চরক্ত চাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও টিউমার, হেপাটাইটিস-বি, জন্ডিস, এইডস, প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিরোধক। শুধু তাই নয়, নিয়মিত মাশরুম খেলে শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
মাশরুম কি নন ভেজ? Is Mushroom a Non-vegetarian food?
মাশরুমগুলিকে নিরামিষ হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় কারণ তারা ছত্রাক এবং প্রাণীর টিস্যু থেকে উদ্ভূত নয়। এগুলি রান্নার একটি বহুমুখী উপাদান এবং সাধারণত নিরামিষ এবং নিরামিষ খাবারে তাদের সুস্বাদু গন্ধ এবং মাংসল টেক্সচারের কারণে মাংসের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় কোন মাশরুমের? Which is the most cultivated Mushroom in the world?
চাষ করা মাশরুমের সবচেয়ে সাধারণ জাত হল গ্যারিকাসবিস্পোরাস বা সাদা বোতাম মাশরুম ।
মাশরুম এর বৈজ্ঞানিক নাম কি? What is the scientific name of mushroom?
বৈজ্ঞানিক নাম: “আগারিকাস বিসপরাস” (ভোজ্য মাশরুম)।
পুষ্টিমান বিচারে মাশরুম সবার সেরা কেন? Why mushrooms are considered as best in terms of Nutrition?
পুষ্টি বিচারে মাশরুম নিঃসন্দেহে সবার সেরা, কারণ আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেসব উপাদান অতি প্রয়োজনীয় যেমন – প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সেগুলো মাশরুমে উচুঁ মাত্রায় আছে।
অন্যদিকে যেসব খাদ্য উপাদানের আধিক্য আমাদেরকে জটিল মরণব্যাধীর দিকে নিয়ে যায়, যেমন – ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেড তা মাশরুমে নেই বললেই চলে।
মাশরুম চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব, Economic importance of Mushroom cultivation: :
ঘনবসতিপূর্ণ ও বর্ধনশীল জনসংখ্যার খাবারের চাহিদা বাড়ছে, এদিকের খাবার জোগান দেওয়ার জমি প্রতি বছর কমছে। সেক্ষেত্রে মাশরুম চাষ করতে কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না।
মাশরুম চাষের উপকরণ খড়, কাঠের গুঁড়া, আখের ছোবড়া অত্যন্ত- সস্তা ও সহজে পাওয়া যায়। এ সবজিটি ঘরের মধ্যে চাষ করা যায় এবং মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যেই মাশরুম পাওয়া যায় যা অন্য ফসলে পাওয়া যায় না।
বর্তমানে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ যুবকরা মাশরুম চাষ করছেন।
ঘরোয়াভাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ করা হচ্ছে, যা দেশের বেকারত্বের সমস্যা সমাধান এবং বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এভাবে মাশরুম চাষ জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখতে পারে।
মাশরুম খাওয়ার নিয়ম, Rules for eating Mushroom :
মাশরুম বিভিন্নভাবেই খাওয়া যায়। সাধারণত রান্না করে, স্যুপ বানিয়ে, নুডলস কিংবা অন্য কোনো তরকারির সাথে মিশিয়ে মাশরুম খাওয়া যায়। এছাড়াও মাশরুমকে আলাদা তেলে ভেজে মচমচা করে খাওয়া যায় যা মাশরুম ফ্রাই নামে পরিচিত। এটি বেশ সুস্বাদু ও মজাদার হয়।
মাশরুমের উপকারিতা, Benefits of Mushroom :
মাশরুমে পেনিসিলিন নামক অ্যান্টিবায়োটিক থাকে যা মানুষের জন্য বেশ উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাশরুম রাখতে পারেন।
মাশরুমের স্বাস্থ্যকর দিকগুলো হল :
- দাঁত ও হাড়ের গঠনে মাশরুম: মাশরুমে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন -ডি থাকে বলে বাচ্চাদের দাঁত ও হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- কোলেস্টেরল কমাতে: মাশরুমে রয়েছে ইরিটাডেনিন,লোভস্ট্রাটিন, অ্যান্টাডেনিন, যা কোলেস্টেরল কম করতে কার্যকরী।
- ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ায়: মাশরুম পলিফেনল ও সেলেনিয়াম এর উৎস যাতে থাকে অনেক এন্টিঅক্সিডেন্ট। এর ভেষজ গুন জীবনঘাতী রোগ, যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ ও ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা সালফার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
- টিউমারের আশঙ্কা কমায়: মাশরুম এর বেটা ডি, ল্যাম্পেট্রোল, টারপিনওয়েড ও বেনজোপাইরিন উপাদান ক্যান্সার ও টিউমার এর সম্ভাবনা প্রতিহত করে দেয়।
- প্রসূতি ও সন্তানদের প্রতিপালনে: মাশরুমে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল শারীরবৃত্তীয় কাজকে বিশেষরূপে সচল রাখে। এতে আছে নিয়াসিন এস্কর্বিক এসিড যা গর্ভস্থ শিশুর শরীরে লোহিত রক্তকণিকার যোগান বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রসূতি মহিলাদের নিয়মিত মাশরুম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মাশরুমে মানুষের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল ও সেলেনিয়াম মারাত্মক কিছু রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
- হজমে সাহায্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণ: মাশরুমে থাকা প্রচুর ফাইবার বা আঁশ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। রক্তের চিনির পরিমাণও নিয়ন্ত্রণ করে। ওজন কমাতেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। মাশরুমে থাকা ফাইবার ও এনজাইম হজমেও সহায়তা করে। এটি অন্ত্রে উপকারি ব্যাকটেরিয়ার কাজ বৃদ্ধি করে।
- অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দূর করে : মাশরুমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় অ্যানিমিয়ার রোগীদের জন্য এটি আশীর্বাদ স্বরূপ। মাশরুম খাদ্য তালিকায় রাখলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
- ত্বক সুস্থ রাখা: মাশরুমে ভিটামিনের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে নিয়াসিন ও রিবোফ্লাবিন থাকে, যা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।
মাশরুম এর অপকারিতা, Disadvantages of eating Mushroom :
মাশরুম এর বেশ কিছু ভালো বৈশিষ্ট্য থাকার পাশাপাশি কিছু খারাপ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
মাশরুম খাওয়ার অপকারিতা বা খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলো জেনে নিন :-
- অপরিচিত বুনো মাশরুম না বুঝে খেয়ে নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। এর কারণ মাশরুমের কিছু প্রজাতি বিষাক্ত হয়। বিষাক্ত মাশরুম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষ ও প্রাণীর মৃত্যুও হতে পারে।
- মাশরুম যদি কোনো কাঠ, খড়, বাঁশ প্রভৃতির উপর জন্মায় তবে তাদের ক্ষতি সাধন করে।
বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায় কি? How to identify poisonous Mushroom?
- মাশরুমের উজ্জ্বল বর্ণের প্রজাতিগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিষাক্ত হয়ে থাকে।
- অম্লগন্ধযুক্ত ও ঝাঁঝালো প্রজাতির মাশরুমগুলো বিষাক্ত হয়।
- বিষাক্ত প্রজাতিগুলোর ব্যাসিডিওস্পোর বেগুনি রঙের হয়।
- বিষাক্ত মাশরুমগুলো সাধারণত প্রখর রোদে জন্মায় না।
- কাঠের উপর যেসব মাশরুম জন্মায় এমন প্রজাতিগুলো বিষাক্ত হয়।
শেষ কথা, Conclusion :
নিয়মিত মাশরুম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা বুঝতেই পারছেন মাশরুমের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা কতটা। তবে বুনো মাশরুম তথা বিষাক্ত মাশরুম থেকে সাবধান থাকা জরুরি।
Frequently Asked Questions
“আগারিকাস বিসপরাস”
প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল ইত্যাদি উপাদানগুলো মাশরুমে উচুঁ মাত্রায় আছে।
গ্যারিকাসবিস্পোরাস বা সাদা বোতাম মাশরুম