মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা, Benefits of Pumpkin in Bengali

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা

মিষ্টি কুমড়া অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি। খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে যারা এই সবজি পছন্দ করেন না। এই সবজিটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুণও খুব উচ্চ পর্যায়ে বিদ্যমান। তবে মিষ্টি কুমড়া খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

মিষ্টি কুমড়ার বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস,

মিষ্টি কুমড়ার বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস, Scientific Classification of Pumpkin :

  • জগৎ: উদ্ভিদ
  • শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
  • শ্রেণীবিহীন: Eudicots
  • শ্রেণীবিহীন: Rosids
  • বর্গ: Cucurbitales
  • পরিবার: Cucurbitaceae
  • গণ: Cucurbita
  • প্রজাতি: C. moschata

খাদ্য হিসেবে মিষ্টি কুমড়া, Pumpkin as Food :

মিষ্টি কুমড়ার গাছের লতা, ফুল, ফল ও বীজ সবই খাওয়া যায়। তবে গাছের বিভিন্ন অংশ খাওয়ার পদ্ধতি বিভিন্ন। তবে সবটাই উপকারী এবং সুস্বাদু।

মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ, Nutritional value of Pumpkin: :

মিষ্টি কুমড়ায় আছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ, যা আমাদের স্বাস্থের জন্য প্রয়োজনীয়।

মিষ্টি কুমড়ায় থাকা ভিটামিন হল : ভিটামিন A এর সমতুল্য বিটা-ক্যারোটিন, লুটিন জিয়াক্সানথিন, থায়ামিন (B1), রিবোফ্লাভিন (B2), নায়াসিন (B3), প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (B5), ভিটামিন B6, ফোলেট (B9), ভিটামিন C, ভিটামিন E, ভিটামিন K।

মিষ্টি কুমড়ায় থাকা খনিজ পদার্থ হল : ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক।

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা, Benefits of Pumpkin: :

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা

জেনে নিন মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

 ভিটামিন এ, সি, ফাইবার ও পটাসিয়াম সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া খেলে বাড়ে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা।

স্ট্রেস কমায়

মিষ্টি কুমড়ায় ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। এই উপাদান স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

শরীরে শক্তি ও পুষ্টি জোগায়

    কার্বোহাইড্রেট, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও আয়রন মেলে মিষ্টি কুমড়া থেকে। এসব উপাদান শরীরে শক্তি ও পুষ্টি জোগায়।

ওজন কমাতে সহায়ক

    কম ক্যালোরি ও উচ্চ ফাইবার সম্পন্ন হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া ওজন কমাতে সাহায্য করে।

লিভার ভালো রাখে

এতে থাকা বেটা ক্যারোটিন, ফাইবার ও ভিটামিন সি শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে, ফলে লিভার ভালো থাকে।

 ত্বকের সুস্বাস্থ্য

ভিটামিন এ, সি এবং ই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। আর এসবই মিলবে কুমড়া থেকে। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, ত্বক রাখে আর্দ্র। ভিটামিন ই- একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ‘ফ্রি র‌্যাডিকেল’ থেকে হওয়া ক্ষতি পূরণ করে। নিয়মিত এই সবজি খেলে ত্বক থাকে কোমল ও মসৃণ।

চোখের স্বাস্থ্যে উপকারী

কুমড়ায় থাকা নানান রকম ভিটামিন খনিজের মধ্যে একটি হল বেটা-ক্যারোটিন, এই ভিটামিন যে চোখের জন্য উপকারী সেটা প্রায় সবারই জানা। এছাড়া কুমড়ায় থাকে লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন, এই দুই উপাদান বয়সের কারণে হওয়া দৃষ্টিশক্তি কমার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।

পটাসিয়ামের উৎস

কুমড়া থেকে পটাসিয়াম পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ, স্বাভাবিক হৃদগতি ও পেশির কার্যকারিতার জন্য পটাসিয়াম প্রয়োজন। পটাসিয়ামের অভাব থেকে কিডনি অর্থাৎ বৃক্কে পাথর হওয়া ও হাড় ভঙ্গুর রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। তাই এই সমস্যাগুলো থেকে দূরে থাকতে মিষ্টি কুমড়া খাওয়া উচিত, যার ফলে দূরে থাকা যায় কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ থেকে।

 খাদ্য হজমে সাহায্য করে

মিষ্টি কুমড়ায় আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার, যা সহজেই হজম হয়। তাই এটি আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহ করার কাজে সহায়ক এই সবজি।

ডায়াবেটিসেও উপকারী

মিষ্টি কুমড়া শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কম করে। এ ছাড়া কুমড়োর বীজ হজমে সাহায্য করে এমন প্রোটিনও সরবরাহ করে। ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

বয়সের ছাপ কমায়

মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক ও আলফা হাইড্রোক্সাইড। আপনাদের অনেকেই হয়তো জানেন যে জিংক ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মিষ্টি কুমড়া বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।

মিষ্টি কুমড়া খেলে কি ব্লাডপ্রেসার বাড়ে? Does eating Pumpkin increase blood pressure?

যাদের হাই প্রেসার রয়েছে তারা নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন, কারণ মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে; যা আমাদের শরীরে হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তা ছাড়া মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

মিষ্টি কুমড়া খেলে কি কোলেস্টেরল বাড়ে? Does eating Pumpkin increase cholesterol?

মিষ্টি কুমড়ার বীজে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর। এসব উপাদান হৃদযন্ত্রের জন্য খুব উপকারী। এই বীজে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

Pumpkin seeds

কাঁচা কুমড়োর বীজ খাওয়া কি ভালো? Is it good to eat raw Pumpkin seeds?

কুমড়োর বীজ হল একটি পুষ্টিকর খাবার, প্রোটিন সমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান । কুমড়োর বীজ হার্টের স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে। তবুও এক্ষেত্রে পৃথক খাদ্যতালিকাগত চাহিদা এবং অংশ নিয়ন্ত্রণ বিবেচনা করা অপরিহার্য। একজন সুস্থ ব্যক্তি নিয়মিত একমুঠো অর্থাৎ ১৫-২০টির মতো বীজ খেতে পারবেন। মিষ্টি কুমড়ার বীজ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করে রাখা যায়। সালাদ, তরকারির মধ্যে বীজ যোগ করলে খাবারের পুষ্টিমাণ বৃদ্ধি পায়।

কুমড়ার পিউরি খাওয়া কি ভালো? Is it good to eat Pumpkin puree?

কুমড়ো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে, যা আপনার হৃদস্পন্দনকে নিয়মিত রাখতে এবং আপনার রক্তচাপ কম রাখতে সাহায্য করতে পারে । কুমড়ার ফাইবার রক্তচাপের পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমাতেও ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও, কুমড়াতে থাকা ফাইবার আপনাকে ওজন কমাতে সহায়তা করে।

মিষ্টি কুমড়া কখন চাষ করতে হয়? When to plant Pumpkin?

 গ্রীষ্মকালে এই বর্ষজীবী সবজির চাষাবাদ করতে চাইলে ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। উন্নত ফলন পেতে হলে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বীজ বোনা উচিত। মিষ্টি কুমড়ার চাষের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। সুনিষ্কাশিত জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁ-আশ বা এঁটেল দোঁ-আশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উৎকৃষ্ট।

মিষ্টিকুমড়া চাষপদ্ধতি, Pumpkin Cultivation Method :

নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা তৈরি করে রোপণ করা উত্তম। চারার জন্য ৮-১০ ইঞ্চি মাপের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। জমিতে ১৬-২০ দিনের চারা লাগাতে হবে। মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেদে ৬-৮ইঞ্চি উঁচু,সোয়া ৩ ফুট চওড়া এবং লম্বায় সুবিধাজনক এমন বেড তৈরী করতে হবে যাতে জল সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা হয়।

মিষ্টিকুমড়া চাষপদ্ধতি

টবে মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি, How to Grow Pumpkin in Tubs :

টবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করার জন্য প্রথমেই মাটি তৈরি করে নিতে হবে, দোআঁশ মাটি হলে সবচেয়ে ভাল হয়। মাটি তৈরি করার পর সেই মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ বা চারা লাগিয়ে দিতে হবে, বড় সাইজের টবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করা উত্তম। টবে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন পেতে হলে অব্যশই সময় মত সার দিতে হবে। বাড়ির আঙিনায় মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে চাইলে সুবিধাজনক জায়গায় দু’একটি মাদায় বীজ বুনে গাছ মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোন গাছের উপর তুলে দেয়া যেতে পারে।

শেষ কথা, Conclusion :

মিষ্টিকুমড়া বাড়িতেই খুব সহজে চাষ করা যায়। প্রাকৃতিক সার প্রয়োগ করে ভালো ফসল ফলানো যায় খুব সহজেই। বর্তমানে বাজারজাত মিষ্টিকুমড়াগুলোতে কৃষকেরা অধিক ফলনের জন্য অধিক সার প্রয়োগ করে থাকেন। এর ফলে এই সবজি খেয়ে আমাদের স্বাস্থের উন্নতির তুলনায় অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আপনারা চাইলে বাড়িতেই এই সবজির চাষ করতে পারেন ।

Frequently Asked Questions

মিষ্টি কুমড়া খেলে কি ব্লাডপ্রেসার বাড়ে?

মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন c এবং পটাশিয়াম রয়েছে, যা হাই ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

কুমড়োর বীজ খাওয়া কি ভালো?

বীজে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

কুমড়ার পিউরি খাওয়া কি ভালো?

হ্যাঁ, কারণ এর থেকে অনেক পুষ্টি পাওয়া যায় এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটি কার্যকরী।

Contents show

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts