খিচুড়ি একটি সুস্বাদু খাবার। একে বৃষ্টির দিনের এক অতীব উপাদেয় ও উপভোগ্য খাবারও বলা যেতে পারে। তবে আপনারা অনেকেই হয়ত জানেন না যে খিচুড়ি দুইভাবে রান্না করা যায়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা দুরকমের খিচুড়ি রান্না রেসিপি বলে দেবো। একটি হলো ভোগের খিচুড়ির রেসিপি এবং অন্যটি আমিষ খিচুড়ির রেসিপি।
নিরামিষ মুগ ডালের খিচুড়ি রান্নার রেসিপি, Vegetarian Mung Dal Khichuri Recipe :
নিরামিষ মুগ ডালের খিচুড়ি কিভাবে রান্না করা হয় সেটা অনেকেরই জানা ব্যাপার। তাও যারা জানেন না তাদেরকে বলে রাখি যে খিচুড়ি মুগ ডাল দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এতে ব্যবহৃত চাল হল গোবিন্দভোগ চাল। এই ধরনের চাল একটি মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত এবং ছোট দানার হয়ে থাকে।
দেখে নিন কিভাবে অল্প সামগ্রী দিয়েই নিরামিষ খিচুড়ি তৈরী করবেন :
ঘরে কিছুক্ষণের মধ্যে নিরামিষ মুগ ডালের ভোগের খিচুড়ি রান্না করার জন্য যে সরঞ্জাম লাগবে সেগুলি হল :
উপকরণ :
- ২০০ গ্রাম মুগ ডাল
- ২০০ গ্রাম গোবিন্দভোগ চাল
- ২০০ গ্রাম আলু ছোট টুকরো করা
- ২০০ গ্রাম ফুলকপি ছোট টুকরো করা
- ১০০ গ্রাম টমেটো চার টুকরো করা
- ৪০ গ্রাম মটরশুটি
- ২ গ্রাম জিরা
- ৩ পিস গোটা এলাচ
- ১ পিস দারুচিনি
- ৩ পিস লবঙ্গ
- ৩ পিস শুকনো লাল মরিচ
- ৪ পিস তেজপাতা
- ৪০ গ্রাম আদা পেস্ট
- ৪০ গ্রাম নারকেল গ্রেট করা
- ৫ গ্রাম হলুদ গুঁড়া
- ৫ গ্রাম জিরা গুঁড়া
- ২৬ গ্রাম লবণ
- ৫০ গ্রাম চিনি
- ৫ সবুজ মরিচ চেরা
- ১০ গ্রাম ঘি
- ০.৫ চা চামচ গরম মশলা
- ১৫ গ্রাম সরিষার তেল
- ২ লিটার জল গরম
![মুগ ডালের খিচুড়ি রান্নার রেসিপি](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/03/images-34.jpeg)
রান্নার প্রণালী :
- প্রথমে ডাল ও চাল ভাজতে হবে :
একটি পাত্রে গোবিন্দভোগ চাল নিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। তার পর চালের জল ঝরিয়ে একটি থাল বা শুকনো পরিষ্কার কাপড়ের উপর বিছিয়ে রাখুন। এক কথায় চালটিকে পুরোপুরি বাতাসে শুকিয়ে নিন।
এবার একটি কড়াই নিয়ে তাকে মাঝারি আঁচে গরম করুন। এরপর এতে মুগ ডাল দিয়ে প্রায় ৬-৭ মিনিটের জন্য ডালটি শুকনোভাবে ভাজুন। সোনালী-বাদামী রং হলে নামিয়ে নিন।
এবার ভাজা ডাল হালকা করে ধুয়ে নিন। এরপর ডালটিকে বড় ছাঁকনির উপর বিছিয়ে রাখুন।কড়াইতে ৫ গ্রাম ঘি গরম করুন এবং এতে ধুয়ে রাখা গোবিন্দভোগ চাল দিতে প্রায় ৪-৫ মিনিটের জন্য ভাজুন।
ভাজা করার সময় ঘন ঘন নাড়তে থাকুন। চাল ভালো করে ভাজা হলে একটি পাত্রে নামিয়ে রাখুন।
- সবজি ভাজতে হবে :
আলু এবং ফুলকপি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে রাখুন। টমেটোগুলিকে চার টুকরো করে কাটুন। পাশাপাশি মটরশুঁটির খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে।
এরপর কড়াইতে ১৫ গ্রাম ভেজিটেবল তেল অথবা ঘি গরম করে এক এক করে আলু এবং ফুলকপি ভেজে নিন।
- খিচুড়ির মশলার প্রস্তুতি :
একটি ছোট পাত্রে ৫০ গ্রাম জল নিন। এতে আদা পেস্ট, হলুদ গুঁড়ো এবং জিরা গুঁড়ো মেশান। এবারে একটি কড়াইতে ১৫ গ্রাম সরিষার তেল গরম করুণ।
তেল গরম হলে তাতে শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ এবং জিরা ফোড়ন দিতে হবে। সাথে গ্রেট করা নারকেল দিন।
নারকেল সোনালি না হওয়া পর্যন্ত সবকিছু একসাথে প্রায় ৩-৪ মিনিট ভাজুন। এতে আদা-হলুদ-জিরার পেস্ট দিয়ে দিন। মশলাগুলো মাঝারি আঁচে প্রায় ৬-৭ মিনিট ভাজুন।
- মশলায় চাল ও ডাল যোগ করুন :
মশলা ভালোভাবে কষাতে হবে। মিশ্রণটি শুকিয়ে আসছে দেখলে, ৫০ গ্রামের মত জল যোগ করে মশলা কষাতে থাকুন।
তারপর এতে টমেটো যোগ করে ঢেকে দিন। প্রায় ২ মিনিটের জন্য এভাবে অল্প আঁচে রান্না হতে দিন। এরপরে, ভাজা করা চাল ও ডাল সহ ২ টি চেরা কাঁচা মরিচ যোগ করুন।
সব উপকরণ একসাথে নাড়ুন। প্রায় ২ মিনিটের জন্য ভালো করে রান্না করুন।
- গরম জল যোগ করুন :
চাল- ডালের মিশ্রণে লবণের সাথে ১.৮ লিটার গরম জল যোগ করুন। এরপর কড়াই ঢেকে দিন এবং চাল, ডাল সহ সমস্ত উপকরণ প্রায় ৫ মিনিটের জন্য ফুটতে দিন। গ্যাসের আঁচ এসময় কম রাখবেন।
![খিচুড়ির রান্না ও পরিবেশন](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/03/images-33.jpeg)
- খিচুড়ির রান্না ও পরিবেশন :
জল ফুটে উঠলে ভাজা আলু ও ফুলকপি দিন যোগ করে প্রায় ১৫ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। মাঝে মাঝে নাড়তে ভুলবেন না।
মশলা ও ডাল যেন পাত্রের নিচে লেগে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। ১৫ মিনিটের পরে, চিনি এবং মটরশুটি সহ ৩টি চেরা কাঁচা লঙ্কা যোগ করুন।
সবকিছু একসাথে নাড়ুন এবং আরও ৩ থেকে ৪ মিনিট রান্না করুন। শেষে ঘি ও গরম মসলা ছড়িয়ে খিচুড়ি নামিয়ে নিন।
নামানোর পরও খিচুড়ি ঢাকা দিয়ে রাখুন। যদিও এই রান্নায় সবজি যোগ করা হয়েছে; তবুও আপনারা চাইলে এই খিচুড়ি বাঁধাকপির তরকারি, বেগুনি, চাটনি দিয়ে খেতে পারেন।
আমিষ খিচুড়ি রান্নার রেসিপি জেনে নিন, Non-vegetarian Khichuri Recipe :
আমিষ খিচুড়ি রান্নার জন্য কি কি প্রয়োজন এবং কিভাবে রান্না করতে হয় দেখে নিন।
উপকরণ :
![আমিষ খিচুড়ি রান্নার উপকরণ](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/03/IMG_20240316_135034.jpg)
- 1.5 কাপ চাল
- 2 কাপ মুসুর ডাল
- 2টো বড় পেঁয়াজ
- 1 চা চামচ আদা ও রসুন বাটা
- 2 চা চামচ জিরে গুঁড়ো
- 2 চা চামচ ধনে গুঁড়ো
- 1 চা চামচ গরম মসলা গুঁড়ো
- 3টি গোটা ছোট এলাচ
- 2টি দারুচিনি
- 2টো তেজপাতা
- 2টি শুকনো লঙ্কা
- 4টে কাঁচা লঙ্কা
- 1টা মাঝারি আলু
- 1 কাপ সর্ষের তেল
- 1 চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
- 4 চা চামচ ঘিস্বাদ অনুযায়ী
রান্নার নির্দেশ সমূহ দেখে নিন :
- চাল ও ডাল ভালো করে ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে দিন।
- তারপর 1টা বড় কড়াইতে তেল দিয়ে তাতে তেজপাতা ও শুকনো লঙ্কা ও গোটা গরম মসলা ফোড়ন দিন।
- সাথে পেঁয়াজগুলোও ভেজে নিন।
- পেয়াজ গুলো একটু লালচে হলে তাতে আদা রসুন ও গুঁড়ো মসলা বাটা ও হলুদ নুন দিয়ে কষিয়ে নিন।
- তারপর একটু জল দিয়ে ১ মিনিট ঢেকে রাখুন।
- মসলা টা ভালোভাবে কষানো হলে তাতে চাল ও ডাল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করার পর ফুটিয়ে রাখা গরম জল দিয়ে দিন। তারপর ঢেকে রাখুন।
- চাল ও ডাল ভালো করে সিদ্ধ হয়ে গেলে তাতে চিনি, গরম মসলা গুঁড়ো ও ঘি দিয়ে নামিয়ে নিন।
![আমিষ খিচুড়ি](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/03/prothomalo-bangla_2022-03_8b86cd4e-6ef2-462b-9916-40e65cafe994__SY_9162.jpeg)
এই রান্না যেকোনো ভাজা বা অমলেট এর সাথেও উপভোগ করতে পারেন।
পরিশেষে, Conclusion :
নানান বৈচিত্র্যময় দক্ষিণ এশীয় খাবারের মধ্যে একটি অতি সাধারণ ও উপাদেয় খাবার হল খিচুড়ি। খিচুড়ি আপনার পছন্দ মতো সাধারণ বা সমৃদ্ধ হতে পারে। উপরে খিচুড়ির দুরকম রেসিপি দেওয়া হল। আশা করি এভাবে রান্না করে খেতে আপনাদের ভালো লাগবে ।