কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা, Benefits of Kulekhara leaves in Bengali

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা

কুলেখাড়া খুব পরিচিত একটি নাম, ভেষজ হিসেবে এটি বিভিন্ন কারণে ব্যবহার করা হয়। একে অনেকে জাদুকরী ভেষজ বলে সম্বোধন করেন, কারণ এর মধ্যে বিভিন্ন উপকারী উপাদান রয়েছে এবং বিভিন্নভাবে এটি আমাদের উপকার করে। শাক হিসেবে খাওয়া হোক কিংবা পাতাগুলো কাঁচা চিবিয়েই খাওয়া হোক না কেন, সকলকাবেই এটি আমাদের উপকার করতে সক্ষম।

সবচেয়ে বড় কথা এটি এমন একটি ভেষজ যার শুধু পাতা নয় বরং সম্পূর্ণ গাছই আমাদের বিভিন্ন দৈহিক সমস্যা কাজে লাগে। আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা এই বিশেষ ভেষজ অর্থাৎ কুলেখাড়ার বিভিন্ন উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম তথা এর সেবনের ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি না সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

কুলেখাড়ার বিভিন্ন নাম কি কি, Various other names of Kulekhara leaves 

কুলেখাড়া শব্দটি এসেছে ‘কোকিলাসা’ শব্দ থেকে যার অর্থ হল কোকিলের মতো চক্ষু। কুলেখাড়া গাছ কিছু কিছু স্থানে গোকুলকাঁটা নামেও পরিচিত। এর হিন্দি নাম তালমাখনা, ইংরেজিতে একে বলে Marsh Barbel, আর সংস্কৃত নাম হল कोकिलाक्ष (কোকিলাক্ষ)। এই বহুগুণ সম্পন্ন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম: Hygrophila auriculataOpens in a new tab.। এটি আকান্থুস পরিবারের একটি উদ্ভিদ।

কুলেখাড়ার বিভিন্ন নাম

কুলেখাড়ার ব্যাপ্তি, Availability of kulekhara leaves 

কুলেখাড়া বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ইন্দো-চীন, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকায় বিস্তৃত। উক্ত দেশে বিভিন্নভাবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।

কুলেখাড়া বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ইন্দো-চীন, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আফ্রিকায় বিস্তৃত। উক্ত দেশে বিভিন্নভাবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।

আয়ুর্বেদে কুলেখাড়া পাতার ব্যবহার, Usage of kulekhara leaves in Ayurveda 

আয়ুর্বেদে কুলেখাড়ার বীজ, শিকড় এবং পঞ্চাঙ্গ অর্থাৎ পাঁচ অংশ, যথা মূল, ফুল, কাণ্ড, ফল এবং পাতা একসাথে পুড়িয়ে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া অনেকে হয়তো জানেন না যে কুলেখাড়ার পাতা, শিকড় তথা বীজ বেশ কিছু উপকারী রাসায়নিক উপাদানে ভরপুর। যেমন অ্যালকালয়েড্‌স যেমন মিউসিলেজ,ফাইটোস্টেরোল ও সুগন্ধি তৈল পদার্থ; এছাড়া আছে কিছু উৎসেচক, কথা ডাইয়াসটেজ ও লিপেজ, যা বিভিন্নভাবে আমাদের সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। তাছাড়া আছে অসংখ্য মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট এবং অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল উপাদান যা নানাভাবে আমাদের দৈহিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। 

আয়ুর্বেদে কুলেখাড়া পাতার ব্যবহার

কুলেখাড়ার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিন, Nutrient benefits of Kulekhara leaves

প্রতি ১০০ গ্রাম কুলাখাড়া পাতায় পুষ্টি উপাদান কত মিলিগ্রাম পরিমাণে থাকে জেনে নিন। 

সোডিয়াম : ৫৬.১ মিলিগ্রাম

পটাশিয়াম : ২৬৬ মিলিগ্রাম

ক্যালশিয়াম : ২৭.৯৩ মিলিগ্রাম

তামা : ৪.৮৭ মিলিগ্রাম

দস্তা : ০.৪৪ মিলিগ্রাম

আয়রন : ৭.০৩ মিলিগ্রাম

ভিটামিন সি : ৫০.০৮ মিলিগ্রাম

রিবোফ্লাভিন : ১০২ মিলিগ্রাম

ফলিক অ্যাসিড : ১.০ মিলিগ্রামের বেশি

বিটা ক্যারোটিন : ২.৫ মিলিগ্রাম

কুলেখাড়ার পুষ্টিগুণ

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা কি কি, Overall benefits of kulekhara leaves 

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা সম্পর্কে কম বেশ অনেকেই হয়তো জানেন। বাড়িতে ঘরোয়াভাবে ভেষজের ব্যবহা করে যেসব চিকিৎসা হয় সেগুলোর মধ্যে কুলেখাড়ার সেবন অন্যতম। তবে যারা এর উপকারিতা সম্পর্কে এখনও অবগত নন, তাদের জেনে রাখা ভালো যে :

কুলেখাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত কার্যকর।

কুলেখাড়া আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। গবেষণায় অনুযায়ী টানা এক মাস ধরে এই পাতা খাওয়ার ফলে রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটে।

কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা

কুলেখাড়ায় প্রদাহ প্রতিরোধকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এটি খেলে হজমশক্তিও উন্নত হয়।

কুলেখাড়া খেলে পাকস্থলী এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত হয় তথা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে উঠে।

 বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে ডায়রিয়া ও আমাশয়ের চিকিৎসার জন্য কুলেখাড়ার কার্যকরী বলে প্রমাণিত হয়েছে, কারণ এই ভেষজটিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যানথেলমিন্টিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। 

কুলেখাড়া ব্যথানাশক হিসেবেও কার্যকরী। 

পুরুষ বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্যও কুলেখাড়া উপাদেয়। কুলেখাড়ার বীজ পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি অ্যাফ্রোডিসিয়াক হিসাবে কাজ করে এবং এটি শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সিরাম টেস্টোস্টেরন করতে পারে।

পুরুষ বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার জন্যও কুলেখাড়া উপাদেয়

অনিদ্রার সমস্যা থাকলে কুলেখাড়া শিকড়ের (মূলের) রস ২ থেকে ৪ চা-চামচ রোজ খেলে সুখনিদ্রা হয়

পিত্তের থলিতে বা কিডনিতে পিত্তবিকারে যে পাথর হয়, সেই সমস্যা সারাতে কুলেখাড়া বীজ আধ চা-চামচ নিয়ে আধ গ্লাস জলে গুলে খেতে পারেন।

কখনো কিছু কাজ করতে গিয়ে কোনোভাবে হাত বা পা কেটে গিয়ে যদি রক্তপাত হতে থাকে তবে সেক্ষেত্রে কুলেখাড়া পাতা থেতো করে লাগাতে পারেন, রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে।

কুলেখাড়ায় ভিটামিন A, আয়রন, উৎসেচক, স্টেরল ইত্যাদি থাকে, তাই এটি মূত্র বৃদ্ধি করে দিয়ে দেহের শোথ বা ফোলা কমায়। 

কুলেখাড়া মূত্রনালীর দোষ প্রশমন করে। তাছাড়া রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমান স্বাভাবিক রাখে।

কোষের সঠিক বিকাশ ও বৃদ্ধির জন্য যা প্রয়োজন তা আছে কুলেখাড়া পাতায়, আর শরীরের প্রতিটি কোষ যখন পুষ্টি পায় তখন আমাদের শারীরিক শক্তিও বৃদ্ধি পায়। 

কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার নিয়ম, How to take Kulekhara leaves

এতক্ষণ কুলেখাড়া পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানা গেছে, তবে কিভাবে এর সেবন করতে হবে সেটা জেনে রাখা খুব জরুরি। এরজন্য যা করতে হবে : এক গুচ্ছ কুলেখাড়া পাতা নিয়ে সেগুলো ভালোভাবে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এবারে পাতাগুলি ছোটো ছোটো করে কেটে নিয়ে অল্প জল যোগ করে বেটে নিন অথবা মিক্সার মেশিনে পিষে নিন।

কুলেখাড়া পাতা খাওয়ার নিয়ম

তারপর একটি ছাঁকনি নিয়ে সবুজ রসটা ছেঁকে নিন। একটি কাপে জল নিয়ে তাতে ১ চামচ কুলেখাড়ার রস নিয়ে এতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন। বিভিন্নভাবে এর উপকারিতা পাবেন। এর পাতা ও কাণ্ডের রস উভয়ই আপনি খেতে পারেন। আবার অনেকে কুলেখাড়া পাতা শাক রান্না করেও খেয়ে থাকেন। পাতা বা কাণ্ডের রস একটু তেঁতো হয়, তাই যদি কারো সরাসরি খেতে কোনও সমস্যা হয় তাহলে আপনি কুলেখাড়ার টনিক, কুলেখাড়ার পাউডার, কুলেখাড়ার ট্যাবলেটও খেতে পারেন। তবে ঘরোয়া উপায়ে খাওয়াই শ্রেয়।

কুলেখাড়া সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন, Kulekhara leaves side effects 

যে কোনও কিছুর ক্ষেত্রে ভাল এবং মন্দ দুটো দিকই থাকে। কুলেখাড়া পাতার ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। তাই কুলেখাড়ার বিভিন্ন ভালো গুণের পাশাপাশি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত। যদিও এই বিশেষ ভেষজ সেবনের ফলে কোনো সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে শোনা যায় নি, তবুও যেসব বিষয়ের দিকে নজর রাখা উচিত, সেগুলি হল :

শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময়কালে বা যখন আপনি সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করছেন এবং গর্ভবতী অবস্থায় কুলেখাড়া পাতা না খাওয়াই ভাল। তবে যদি খেতে হয় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো।

যদি ক্রনিক অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তবে এটা না খাওয়া ভালো। যারা হাইপারসেন্সিটিভ তাদের এই পাতা এড়িয়ে চলা উচিত।

অতিরিক্ত পরিমাণে এই পাতা বা কুলেখাড়ার কাণ্ডের রস খাওয়া উচিত না, কথায় আছে অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। তাই পরিমাণে বেশি খেলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন অতিরিক্ত মাত্রায় কুলেখাড়া খাওয়ার ফলে বদহজম, পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হতে পারে, অনেকের ক্ষেত্রে গ্যাস-অম্বলও হতে পারে।

কুলেখাড়া সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

উপসংহার, Conclusion

কুলেখাড়া পাতার সম্পর্কে অনেকেই বিভিন্ন তথ্য জানেন। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা বহু বছর ধরে নিত্য এর সেবন করে আসছেন, আর এর উপকারিতা আছে বলেই তো এটি আমাদের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম তারা এর সেবন করেন এই মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রাখার উদ্দেশ্যে, সেই হিসেবে ফলও পান জাদুর মত। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও জেনে রাখা উচিত এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এর সেবন করা উচিত।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts