পুঁইশাক খেলে কি হয়, What happens if you eat Malabar spinach  in Bengali

পুঁইশাক খেলে কি হয়

সবুজ শাক সবজি আমাদের জন্য খুব উপকারী, সে কথা আমরা সকলেই জানি। এসব খেলে আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদানের চাহিদা মিটে। মাছ, ডিম ইত্যাদির থেকে বেশি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান শাক সবজিতে পাওয়া যায়। এমনই একটি উপকারী শাক হল পুঁই শাক। এতে বহু পুষ্টিকর উপাদান আছে যা আমাদেরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা পুঁই শাক খেলে কি হয় তা জানবো।

পুঁই শাক এ কি কি উপকারী উপাদান আছে, Beneficial ingredients of Malabar spinach

পুঁই শাক এর ফলন খুব সহজ, এগুলোর বিশেষ পরিচর্যা করতে হয় না, গ্রামে গঞ্জের বাড়িতে এর প্রচুর ফলন হয়। অন্যান্য বড় গাছ বেয়ে পুঁই শাক এর লতা ক্রমে বড় হতে থাকে, আবার কিছু ক্ষেত্রে লতাগুলো মাটিতেই ছড়িয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু অনেকেই একে হেলাফেলা করেন, কেটে ফেলে দেন।

পুঁই শাকে কি কি পুষ্টিকর উপাদান আছে তা জানলে হয়তো এমনটা আর কেউ করবে না। এই সবুজ শাকে আছে প্রচুর ভিটামিন B, K, C ও A;  আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আর আয়রণও। শরীরের বৃদ্ধির জন্য ক্যালসিয়াম ও আয়রণ জরুরী, তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তথা রোগ মুক্ত থাকতে জরুরী ভিটামিন, এই সবকিছুই আছে পুঁই শাকে।  এছাড়া আছে ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এই সব খনিজ পদার্থ। তাই সুস্থ থাকতে পুঁই শাক খাওয়া উচিত।

পুঁই শাক এ কি কি উপকারী উপাদান আছে

পুঁই শাক এর উপকারিতা, Benefits of Puin Sakh

অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন, পুঁই শাক নিয়ে বাঙালিদের মধ্যে একটা কথার প্রচলন আছে, সেটা হল, ” মাছের মধ্যে রুই আর শাকের মধ্যে পুঁই “। এই বিশেষ শাক আমরা নিরামিষ বা আমিষ দুই ভাবেই রান্না করতে পারি। অনেকেই আছেন যারা এই শাক নিরামিষ পদ্ধতিতে রান্না করে খান, আবার অনেকে ইলিশ-পুঁই বা চিংড়ি-পুঁই ইত্যাদি রান্না করে খেতে বেশি ভালবাসেন।

পুঁই শাককে অনেকে আমিষ শাকও বলেন, এর কারণ হল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই শাকটি মাছ দিয়ে রান্না করা হয়। এছাড়া শরীরের কোনো অংশ যদি কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ফুলে যায় তবে সেই অংশে পুঁইশাকের শিকড় বেটে লাগালে দ্রুত উপশম হয়। তবে পুঁই শাক খেলে ঠিক কী কী উপকার পাওয়া যায়, তা কিন্তু অনেকেই জানেন না। আসুন কেন পুঁই শাক উপকারী দেখে নিই :

১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক :

পুঁই শাকে আছে এক ধরণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যার নাম লিপোইক অ্যাসিড। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় আর ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই এই শাক ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করতে পারে।

২. ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক :

আমরা সবাই জানি যে কার্সিনোজেনিকের প্রভাবেই ক্যানসার হয়। অন্যান্য সবুজ সবজির মত পুঁই শাকে আছে ক্লোরোফিল। বিভিন্ন গবেষণায় দেখে গেছে যে, এই ক্লোরোফিল কিন্তু কার্সিনোজেনিক প্রভাব আটকানোর ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয়। তাছাড়া এতে থাকা ফাইবার পাকস্থলী আর কোলন ক্যানসার প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। 

ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক

৩. অ্যাজমা প্রতিরোধে সহায়তা :

 পুঁই শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন যা অ্যাজমার সমস্যা হতে দেয় না সহজে। তাই অ্যাজমা থেকে বাঁচতে অবশ্যই পুঁই শাক খাওয়া উচিত।

৪. রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক :

পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস হল পুঁই শাক। আমদের মধ্যে অনেকেই জানেন যে পটাশিয়াম রক্ত চাপ কম করার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, কারণ পটাশিয়াম আমাদের শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। তাই পুঁই শাক খেলে শরীরে পটাশিয়াম এর ঘাটতি হবে না এবং রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

৫. হাড় মজবুত করে তোলে :

আমাদের দেহে উপস্থিত হাড় শক্ত করে তুলতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। তাই শরীরে ভিটামিন কে প্রবেশ করার মানেই হল হাড়ের মজবুতি বজায় থাকা, আর পুঁই শাক হল ভিটামিন k’র একটি খুব ভালো উৎস। ভিটামিন কে আমাদের হাড়ের মেট্রিক্স প্রোটিনকে উন্নত করে তোলে ফলে হাড়ে ক্যালসিয়াম ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তাই হাড়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য পুঁই শাক খাওয়া উচিত।

হাড় মজবুত করে তোলে

৬. স্বাস্থ্যকর চুল আর সুন্দর ত্বকের জন্য :

পুঁই শাকে ভিটামিন এ রয়েছে, যা ত্বকের আর স্ক্যাল্পের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। ত্বকে নম্রতা ধরে রাখে। অনেকেই জানেন যে ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল বা সিবাম নিঃসরণ হলে ব্রণ হয়। এই পুঁই শাক যেহেতু তেল নিঃসরণ কম করে দেয় তাই সহজে ব্রণ হয় না। ভিটামিন সি ত্বকের কোষ কোলাজিনের জন্য খুব দরকারি, সেই ভিটামিন সি’র উপযুক্ত উৎস এই পুঁই শাক।

৭. হজমের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : 

খাবারের সাথে গ্যাস বা অম্বলের মতো সমস্যা অনেকেরই লেগে থাকে। কিন্তু আপনারা হয়তো জানেন না যে পুঁই শাক এই সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। এই শাক আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তোলে আর এতে ফাইবার থাকে বলে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে দেয় না। প্রসঙ্গত পুঁই শাক খেলে যেহেতু খাবার ভালো করে হজম হয় তাই বদহজমের সমস্যা হয় না।

৮. শিশুদের বৃদ্ধিতে পুঁই শাকের ভূমিকা :

শিশুদের বাড়ন্ত বয়সে যদি তাদেরকে নিয়মিত পুঁই শাক খাওয়ানো যায় তবে তাদের বৃদ্ধি ভালোভাবে হয়। শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন ইত্যাদি এলা পুঁই শাক থেকেই পাওয়া যেতে পারে। তাই বাচ্চাদেরকে ছোট থেকেই পুঁই শাক খাওয়ানো অভ্যেস করানো উচিত। 

শিশুদের বৃদ্ধিতে পুঁই শাকের ভূমিকা

৯. চোখকে সুস্থ রাখতে সহায়ক :

চোখ আমাদের শরীরের অত্যন্ত সুক্ষ্ম তথা সংবেদনশীল একটি অঙ্গ। তাছাড়া চোখ সুস্থ না থাকলে বহু সমস্যা দেখা দেয়, দেখতে অসুবিধা হয়, কাজ কর্ম ঠিক ভাবে করা হয় না, তাই চোখের যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। সেক্ষেত্রে পুঁই শাক চোখ ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী, কারণ পুঁই শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন এর মত উপাদান যা চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে উপযোগী। তাই চোখের যত্ন নেওয়ার জন্য পুঁই শাক খাওয়া উচিত।

১০. দেহে কর্মচঞ্চলতা বাড়ায় :

বর্তমান সময়ে সবাই কর্মব্যস্ততায় দিন কাটায়। সারাদিনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয়, যার জন্য দরকার হয় সক্রিয়ভাবে চলাফেরা করার মত শক্তি। সেক্ষেত্রে পুঁই শাক শরীরে তেজভাব বাড়াতে সহায়তা করে। পুঁই শাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম আমাদের দেহে কর্মচঞ্চলতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া পুঁই শাক ফোলেটের একটি ভালো উৎস। অন্যদিকে পুঁই শাক হল ন্যাচারাল অ্যালকালাইন যা সারাদিন আমাদের এনার্জেটিক রাখে।

দেহে কর্মচঞ্চলতা বাড়ায়

পুঁইশাক খাওয়ার অপকারিকা কি ? Adverse effects of eating Puin Sakh

উপকারিতার সাথে অপকারিতা থাকবেই, কারণ কোনো কিছুই অতিরিক্ত সেবন ভালো ফল দেয় না। পুঁইশাক উপকারী হলেও পরিমিত মাপে খাওয়াই শ্রেয়। পুঁইশাকে পিউরিন নামক উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত গ্রহণ করার ফলে শরীরে ইউরিক এসিড এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে অনেকের গেঁটেবাত, কিডনীতে পাথর ইত্যাদির মত রোগ হতে পারে। কিডনি এবং পিত্তথলির বিভিন্ন সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে পুঁইশাক খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

পুঁইশাক খাওয়ার অপকারিকা

উপসংহার, Conclusion 

শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটায় পুঁই শাক, তাই পরিবারের সবার স্বাস্থ্যসচেতনতায় খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পুঁইশাক রাখা উচিত। নিয়মিত পুঁইশাক খেলে পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমোরয়েড হওয়ার আশঙ্কা কম হয়ে যায়। সহজলভ্য বলে এই শাক কম-বেশি সবার কাছে প্রিয়। এছাড়া পুঁইশাকের পুষ্টিগুণের কারণে এর ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts