বাঙালির জীবনে কিছু কিছু নাম শুধু নাম নয়, এক একটা আবেগ। তেমনই এক আবেগ, এক উজ্জ্বল নক্ষত্র— মহানায়ক উত্তম কুমার। তাঁর মায়াবী হাসি, গভীর চাহনি আর জাদুকরী অভিনয় আজও বাঙালির হৃদয়ে অমলিন। সিনেমার পর্দায় যেমন তিনি চিরন্তন, তেমনই তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা খুঁটিনাটিও আমাদের মুগ্ধ করে, আর সেই খুঁটিনাটির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো তাঁর ভোজনরসিক সত্তা।
উত্তমকুমারের ভোজনরসিকতা :
উত্তম কুমার ছিলেন আদ্যোপান্ত একজন বাঙালি। তাই বাঙালি হয়ে খাদ্যরসিক না হলে কি চলে? আর তাঁর এই রসনা তৃপ্তিতে বড় ভূমিকা ছিল দুই পটিয়সী রন্ধনশিল্পী— গৌরী দেবী এবং সুপ্রিয়া দেবীর। তাঁদের হাতের জাদুতে কত অসাধারণ পদই না তৈরি হতো মহানায়কের জন্য! তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকার মধ্যে দুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য— লঙ্কা মুরগি আর মিষ্টির মধ্যে সাগর দই। আজ আমরা সেই অসাধারণ স্বাদের লঙ্কা মুরগির রেসিপিটি আপনার হেঁশেলে নিয়ে এসেছি।

মহানায়কের প্রিয় লঙ্কা মুরগির উপকরণ:
এই পদটি তৈরি করতে খুব বেশি উপকরণের প্রয়োজন হয় না, সবই আপনার রান্নাঘরেই মজুত:
- তাজা মুরগির মাংস: ১ কেজি (হাড় সহ বা হাড় ছাড়া, আপনার পছন্দ অনুযায়ী)
- পেঁয়াজ: ২ টি মাঝারি আকারের (মিহি কুচি করে কাটা)
- রসুন বাটা: ১ চা চামচ
- আদা বাটা: ১ চা চামচ
- কাঁচা লঙ্কা বাটা: ২-৩ চামচ (নিজের ঝাল অনুযায়ী বাড়িয়ে বা কমিয়ে নিতে পারেন – এটাই কিন্তু এই পদের আসল হিরো!)
- শুকনো মশলা: জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো – ১ চা চামচ করে
- গরম মশলা গুঁড়ো: ১-২ চা চামচ
- নুন ও চিনি: স্বাদমতো
- সর্ষের তেল: রান্নার জন্য পরিমাণ মতো
- ধনে পাতা কুচি: সামান্য (সাজানোর জন্য)
লঙ্কা মুরগি রান্নার প্রণালী:

- প্রথমে মুরগির মাংস ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপর এতে পরিমাণ মতো নুন ও হলুদ মাখিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট বিশ্রাম নিতে দিন। এই সময়টা মাংসের মধ্যে নুন ঢুকে মাংসকে আরও নরম ও সুস্বাদু করে তুলবে।
- এবার কড়াইতে সর্ষের তেল গরম করুন। তেল গরম হলে তাতে দিন পেঁয়াজ কুচি। পেঁয়াজ হালকা সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। লক্ষ্য রাখবেন, পেঁয়াজ যেন পুড়ে না যায়, তাহলে রান্নার স্বাদ তেতো হয়ে যাবে।
- পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে একে একে যোগ করুন আদা বাটা, রসুন বাটা এবং কাঁচা লঙ্কা বাটা। এই পর্যায়ে মশলাগুলো খুব ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে, যতক্ষণ না আদা-রসুনের কাঁচা গন্ধ চলে যায়। কাঁচা লঙ্কার ঝাঁঝালো সুগন্ধই এই পদের মূল আকর্ষণ।
- এরপর দিন জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো এবং লঙ্কা গুঁড়ো। সামান্য জল দিয়ে মশলাগুলো আরও একবার ভালো করে কষিয়ে নিন, যাতে মশলা পুড়ে না যায়। তেল ছেড়ে আসা পর্যন্ত কষাতে থাকুন। এই ধাপে দিন স্বাদমতো নুন এবং সামান্য চিনি। চিনি স্বাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
- এবার ম্যারিনেট করা মুরগির মাংস মশলার মধ্যে দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে মাংসকে মশলার সাথে খুব ভালো করে কষিয়ে নিন। এই কষানোর উপরই রান্নার স্বাদ অনেকটাই নির্ভর করে।
- মাংস কষানো হয়ে গেলে, অল্প আঁচে ঢেকে দিন। মাংস নিজের জলে সেদ্ধ হতে থাকবে। মাঝে মাঝে ঢাকনা তুলে নাড়াচাড়া করে দেবেন যাতে নিচে লেগে না যায়। প্রয়োজনে সামান্য গরম জল যোগ করতে পারেন, তবে সাধারণত মুরগি তার নিজস্ব জলেই সেদ্ধ হয়ে যায়।
- মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে এবং ঝোল আপনার পছন্দমতো ঘন হয়ে এলে ঢাকনা খুলে দিন। এবার উপর থেকে ছড়িয়ে দিন গরম মশলা গুঁড়ো এবং টাটকা ধনে পাতা কুচি। হালকা হাতে মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
এভাবেই তৈরি আপনার মহানায়কের প্রিয় লঙ্কা মুরগি। গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, রুটি, লুচি বা পরোটা—যার সঙ্গেই পরিবেশন করুন না কেন, এই পদ আপনার মন জয় করবেই। মহানায়কের স্মৃতির এই স্বাদু উপহারটি আপনার পরিবারের সাথে উপভোগ করুন আর ডুব দিন নস্টালজিয়ায়।