স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ ডালের ক্ষেত্রে মুগ ডালকেই বেশি পছন্দ করেন। এমনকি পুস্তিবিদরাও অন্য দলের তুলনায় মুগ ডাল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। মুগ ডাল বিভিন্নভাবে সেবন করা যায়। অনেকে কাঁচা মুগডাল খেতে পছন্দ করেন আবার অনেকে ভিন্ন উপায়ে রান্না করার মাধ্যমে মুগ ডালের সেবন করেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা মুগ ডালের কিছু রেসিপি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
- 1 মুগ ডাল খাওয়ার উপকারিতা কি কি? What are the benefits of eating Moong daal?
- 2 মুগ ডাল কি প্রতিদিন খাওয়া যাবে? Can moong daal be consumed every day?
- 3 প্রতিদিন কতটুকু মুগ ডাল খাওয়া উচিত? How much moong daal should be consumed every day?
- 4 মুগ ডাল কি ক্ষতিকর? Is Moong daal harmful?
- 5 মুগ ডালের বিভিন্ন রেসিপি, Moong daal recipes :
- 6 শেষ কথা, Conclusion :
মুগ ডাল খাওয়ার উপকারিতা কি কি? What are the benefits of eating Moong daal?
মুগ ডাল রান্নার বিভিন্ন পদ্ধতি জানার আগে এই ডাল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন:

- মুগ ডাল প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন (যেমন ফোলেট, বি ভিটামিন এবং ভিটামিন সি) এবং খনিজ (যেমন আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়াম) সহ প্রয়োজনীয় পুষ্টির একটি ভাল উৎস।
- মুগ ডালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- গ্যাস্ট্রিক সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য মুগ ডাল (বিভক্ত হলুদ মসুর ডাল) প্রায়ই সুপারিশ করা হয়। এটি পেটে মৃদু এবং অন্যান্য ডালের তুলনায় গ্যাস বা ফোলা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
- হলুদ মুগ ডালের ফাইবার, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং স্নায়ুকে প্রশমিত করতে একসাথে কাজ করবে এবং এটি ডায়াবেটিক বন্ধুত্বপূর্ণ।
- মুগ ডালে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন থাকে, যা আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে । গবেষণায় দেখা গেছে যে ফাইবার এবং প্রোটিন ক্ষুধার হরমোনকে দমন করতে পারে।
মুগ ডাল কি প্রতিদিন খাওয়া যাবে? Can moong daal be consumed every day?
মুগ ডাল খাও ভাল কারণ এটি আমাদের দেহে প্রোটিন এবং ফাইবার সরবরাহ করে এবং লিভার ভালো রাখে।
মুগ ডাল ভারত, চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মসুর ডাল বা স্যুপ হিসাবে রান্না করা হয়। জিঙ্ক (1.4 মিলিগ্রাম), প্রোটিন (12.2 মিলিগ্রাম) এবং লোহা (1.95 মিলিগ্রাম) এর মতো পুষ্টিতে ভরপুর, হলুদ মুগ ডাল আপনার ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে এবং এটি আমাদের শরীরকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন কতটুকু মুগ ডাল খাওয়া উচিত? How much moong daal should be consumed every day?
স্প্রাউট ফাইবার এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং সকালের নাস্তায় খাওয়া উচিত। এগুলি আপনাকে ভাল পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ক্যালোরিতেও কম। আপনি প্রতিদিন 100 থেকে 150 গ্রাম স্প্রাউট খেতে পারেন।
মুগ ডাল কি ক্ষতিকর? Is Moong daal harmful?
মুগ ডালের বিভিন্ন ভালো গুণ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দেখে নিন কাদের ক্ষেত্রে মুগ ডাল ক্ষতিকর হতে পারে :
যদি আপনার রক্তচাপ কম থাকে, তাহলে মুগ ডাল খেলে আপনার সমস্যা হতে পারে।
আপনি যদি ইউরিক অ্যাসিড দ্বারা আক্রান্ত হন, তাহলে আপনার সীমিত পরিমাণে মুগ ডাল খাওয়া উচিত। মুগ ডাল খেলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
মুগ ডালের বিভিন্ন রেসিপি, Moong daal recipes :
নিরামিষ মুগ ডাল রেসিপি :

উপকরণ :
- 1 কাপ মুগ ডাল
- 1 কাপ সব্জী কুচি
- 1/4 চা চামচ আদা বাটা
- 1/4 চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
- 1/2 চা চামচ ধনে গুঁড়ো
- 1/2 চা চামচ কাঁচা মরিচ বাটা
- 1/4 চা চামচ জিরা
- 1 টা তেজপাতা
- স্বাদ মত নুন ও চিনি
- পরিমাণ মত তেল
রান্নার নির্দেশ সমূহ :
- ভাল শুকনো খোলায় ভেজে তুলে ধুয়ে ফেলুন
- তেল গরম করে তাতে জিরা তেজপাতা দিয়ে দিন এবং সব্জী দিয়ে ভালো করে ভাজুন। নুন, হলুদ আদা,কাঁচা মরিচ বাটা ও ধনে গুঁড়ো মিশিয়ে নিন
- ভাল দিয়ে দিন এবং জল দিয়ে ফুটতে দিন সেদ্ধ হয়ে গেলে চিনি দিয়ে মিশিয়ে নামিয়ে নিন এবং পরিবেশন করুন।
মুগ মনোহর রেসিপি :

উপকরণ :
- সোনা মুগডাল বা ছোট মুগডাল- ১০০ গ্রাম
- আদা বাটা -২ টেবিল চামচ
- শুকনো লঙ্কা
- তেজপাতা
- গোটা জিরে
- ছোট এলাচ -২-৩ টি
- দারচিনি- ২ টি ১ ইঞ্চি স্টিক
- লবঙ্গ- ১-২ টি
- ঘি
- সাদা তেল
- কাজু
- কিশমিশ
- বিভিন্ন সবজি কুচি (গাজর, ফুলকপি, মটরশুঁটি, ইত্যাদি )
- ভাজা মশলা- ১- ২ চা চামচ
- জিরে গুঁড়ো -১ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো -১/২ চা চামচ
- জায়ফল গুঁড়ো – ১ চিমটি বা এক কুচি জায়ফলের টুকরো
- দই -১ টেবিল চামচ
- কাঁচালঙ্কা
- নুন
- চিনি
রান্নার পদ্ধতি:
- সোনা মুগডাল প্রথমে শুকনো খোলায় ভেজে নিন যতক্ষন না সুন্দর ভাজা মুগ ডালের গন্ধ আসছে।
- এর পর ডাল ভালো করে ধুয়ে সিদ্ধ করে নিন। সিদ্ধ করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন ডাল গলে না যায়।
- এমন ভাবে সিদ্ধ করতে হবে যে, ডাল সিদ্ধ হবে কিন্তু দানা গুলো গোটা থাকবে।
- এইবার কড়াইতে ঘি বা সাদা তেল ও ঘি মিশিয়ে গরম করে ওর মধ্যে কাজু কিশমিস ও সবজি কুচি হালকা করে ভেজে সরিয়ে রাখুন।
- ভাজার সময় নুন বা হলুদ দেবেন না।
- ওই তেল বা ঘিয়ের মধ্যেই জিরে, তেজপাতা শুকনো লঙ্কা, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি ফোড়ণ দিন। (একটা এলাচ ও এক ইঞ্চি দারচিনি আলাদা রাখবেন। পরে লাগবে।)
- ওর মধ্যে ১ টেবিল চামচ আদা বাটা ও ১ টেবিল চামচ টকদই দিয়ে কষে নিন।
- এবার এতে জিরেগুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো দিয়ে কষে, ওর মধ্যে জল সহ সিদ্ধ ডাল দিন। ভেজে রাখা সবজি , কাজু কিশমিশ দিন।
- তারপর অতিরিক্ত এককাপ গরম জল দিন। হলুদ দিন।
- হলুদ মিশে গেলে এবার ওর মধ্যে আগের বাঁচিয়ে রাখা একটি এলাচ ও একটি ছোট দারচিনির টুকরো, জায়ফলের কুচি দিন এবং ১ টেবিল চামচ আদাবাটা চিপে তার রস দিন।
- কাঁচালঙ্কা ঐচ্ছিক। একটি গোটা কাঁচালঙ্কা চাইলে দিতে পারেন।
- এবার নুন , চিনি দিন এবং ঢাকা দিয়ে ফুটতে দিন।
- ডাল ফুটে গেলে এক চামচ ঘি ও ভাজা মশলা দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন।
- কিছুক্ষণ পরে নামিয়ে গরম ভাত, আর ঝুরি আলুভাজা বা বেগুনী সহযোগে নিরামিষ মুগডাল পরিবেশন করুন।
- ভাজা মশলা অনেক রকম ভাবেই বানানো যায়, এক্ষেত্রে যেটি ব্যবহার করেছি সেটি বানানোর জন্য, জিরে, ধনে, মৌরি , শুকনোলঙ্কা তেজপাতা, দারচিনি (খুব মোটা দারচিনি না), ছোট এলাচ, শুকনো খোলায় ভেজে গুঁড়ো করে নিয়ে ব্যবহার করি।
- ডাল ঠান্ডা হলে নিজে থেকেই একটু ঘন হয়ে যায়, সেটা মাথায় রেখে ডালের ঘনত্ব রাখতে হবে।
- মুগডালে জিরে গুঁড়ো গরম মসলা গুঁড়ো দেবার সময় ১/৪ চা চামচ শুকনো লঙ্কা গুঁড়ো দিতে পারেন, যদি ঝাল পছন্দ করেন তো।
- এই মুগডাল সাধারণ ঘরোয়া ভাজা মুগ ডালের থেকে একটু বেশি rich হয়।
- কাজু কিশমিশ না ভেজেও ব্যবহার করতে পারেন।
- ডাল শেষে ফোটানোর সময় দারচিনি ও এলাচ ও কাঁচা আদার রস দিয়ে ফুটতে দিন, এর জন্যই এই মুগডালের স্বাদ ও গন্ধ আরো সুন্দর হয়।
- আশা করি এই নতুন ধরনের স্বাদ আপনাদের সবার ভালো লাগবে।
আমিষ মুগডালের রেসিপি
মুগ ডাল মানেই কি নিরামিষ? মোটেই নয়। আদা, পেঁয়াজ, রসুন দিয়ে মুগ ডালের রেসিপি শিখে নিন।

কী কী লাগবে ?
- মুগ ডাল: আধ কাপ
- কড়াইশুঁটি: ১/৪ কাপ
- কাঁচা লঙ্কা: ২টো (কুচনো)
- জিরে: ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
- লাল লঙ্কা গুঁড়ো: আধ চা চামচ
- জিরে গুঁড়ো: ১/৪ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো: ১/৪ চা চামচ
- পেঁয়াজ: অর্ধেকটা (মিহি করে কুচনো)
- শুকনো লঙ্কা: ২টো
- আদা-রসুন বাটা: ১ চা চামচ
- জল: ডাল সিদ্ধ করার জন্য
- সাদা তেল: ২ টেবল চামচ
- সর্ষের তেল: ২ চা চামচ
- নুন
কী ভাবে বানাবেন ?
- প্রেশার কুকারে পরিমাণ মতো জল দিয়ে ডাল নুন, হলুদ গুঁড়ো, লাল লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে সিদ্ধ করুন।
- ৩-৪টি হুইসলে ডাল সিদ্ধ হয়ে যাবে।
- এ বার কড়াইতে তেল গরম করুন। জিরে ফোড়ন দিয়ে শুকনো লঙ্কা দিয়ে দিন।
- ৪-৫ সেকেন্ড নেড়ে নিয়ে পেঁয়াজ, আদা-রসুন বাটা দিন।
- শুকনো লঙ্কা বাদামি হয়ে এলে সিদ্ধ ডাল দিয়ে দিন। ফুটতে শুরু করলে কড়াইশুঁটি দিন।
- ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে জিরে গুঁড়ো দিন। ডাল নিজের সুবিধা মতো ঘন হলে নামিয়ে নিন।
শেষ কথা, Conclusion :
আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলো থেকে আপনারা মুগ ডাল খাওয়ার ভালো এবং খারাপ দিক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিতে পেরেছেন বলে আশা করছি।
পাশাপাশি এখানে উল্লেখ করা মুগ ডালের রেসিপিগুলো বাড়িতে একবার হলেও তৈরি করে খেয়ে দেখবেন।
এখানে উল্লেখিত তথ্যগুলো ভালো লাগলে প্রতিবেদনটি অবশ্যই আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।