ভিনিগারের কাজ কি? Benefits of vinegar in Bengali

ভিনিগারের কাজ কি?

আজকাল প্রায় সবার ঘরেই ভিনিগার ব্যবহৃত হয়। বিশেষ কিছু খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে ভিনিগারের ব্যবহার তুলনাহীন, যেমন চাইনিজ খাবার। তবে শুধু খাবারকে সুস্বাদু করতেই নয়, বরং ভিনেগারে অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। এছাড়াও, নিত্যদিনের গৃহস্থের নানারকম কাজেও ভিনিগার প্রয়োজন হয়।

বাজারে কালো ভিনিগারও পাওয়া যায়, কিন্তু স্বাস্থ্যের দিক থেকে সাদা ভিনিগার এবং অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খুবই উপকারী। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ভিনিগার খেলে কি হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

ভিনিগার খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা, Special Benefits of taking Vinegar

ভিনিগার বিভিন্নভাবে আমাদের উপকারে আসে। কিন্তু স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে এর সেবনের মধ্য দিয়েই আমরা এর উপকারিতা পেতে পারি। ভিনিগারের মধ্যে স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় আপেল সিডার ভিনেগার।

এটি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। কোনো স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির শরীরের ওজন কম করার জন্য হোক, কিংবা কোলেস্টেরল কম করার জন্য, এমনকি রক্তে শর্করার পরিমাণ কম করা সহ আরো অনেক উপকার করে এই ভিনেগার। আপেল থেকে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয়। এ ধরনের ভিনেগারে ৫-৬ শতাংশ অ্যাসিটিক এসিড থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারি। অন্যদিকে এতে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ লবণ।

ভিনিগার খাওয়ার বিশেষ উপকারিতা

১. হেঁচকি ওঠা বন্ধ করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ভিনিগার।

অনেকেরই এমন হয় যে বসে বসে হঠাৎ হেঁচকি ওঠে, তারপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে এই হেঁচকি চলতে থাকে। জল খেয়েও কোনো কিছু কাজ হয় না। সেক্ষেত্রে ভিনিগার খেলে হেঁচকি কমে যেতে পারে। ভিনিগারের এই উপকারী ভূমিকা সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞাত। যদি কখনো আপনার ঘন ঘন হেঁচকি হয়, তবে এক চামচ ভিনিগার খেয়ে দেখতে পারেন। হেঁচকি কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে।

২. ভিনিগার গলা ব্যথা উপশম করতে পারে।

আমাদের অনেকেরই এই সমস্যা আছে যে একটু ঠাণ্ডা লাগলেই গলা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তখন বেশ কষ্ট হয়, অনেক সময় খাবার গিলতেও সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে কখনো আপনার গলা ব্যথা হলে এক কাপ গরম জলে এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে খেয়ে নিন, অথবা এটি দিয়ে গার্গল করুন। দেখবেন আপনার গলা ব্যথা খুব তাড়াতাড়ি কম হয়ে যাবে।

৩. ওজন কমাতে সাহায্য করে ভিনিগার।

অনেকেই মোটা হওয়ার ফলে বিভিন্ন সমস্যায় ভোগেন। চিকিৎসকের কাছে গেলে তাদেরকে ওজন কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেকের ক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসা পদ্ধতিতে ওজনের কারণে ওষুধের প্রভাব তেমন একটা পরিলক্ষিত হয় না। তখন অনেকেই ওজন কম করার কথা ভাবেন। সেক্ষেত্রে ভিনিগার আপনার সহায়তা করতে পারে। যদি কেউ ওজন কমানোর চেষ্টা করেন, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার পরে, আপনি চাইলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ মত ভিনিগার খেতে পারেন।

এই পদ্ধতি অবলম্বন করে কিছু দিনের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পাবেন। প্রতিদিন আপেল সিডার ভিনিগার খাওয়ার অভ্যাস স্থূলকায় ব্যক্তিকে ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবে ওজনের সাথে কমে যাবে পেটের মেদও। তবে খাবার গ্রহণের পরিমাণও অবশ্যই কমাতে হবে, শুধু ভিনেগার খেলেই ওজন কম হয়ে যাবে না।

ওজন কমাতে সাহায্য করে ভিনিগার।

৪. দেহের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ভিনিগার।

যেসব ব্যক্তি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত নয়, তারা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে ভিনিগার খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। তবে যারা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্য কোনো ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিনেগার খাওয়া ঠিক হবে না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার খেতে পারেন, এতে সকালে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ার গতি চার শতাংশ কম হবে। 

৫) আপেল সিডার ভিনেগারেOpens in a new tab. ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি রয়েছে বলেও বেশ কিছু গবেষকের মন্তব্য।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের ভিনেগার ক্যানসার কোষ নির্মূল ও টিউমার সারাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে এই তথ্যটি এখনো সর্বব্যাপী স্বীকৃত নয়। এ নিয়ে  এখনও গবেষণা চলছে।

আপেল সিডার ভিনেগারে ক্যানসার প্রতিরোধী শক্তি রয়েছে বলেও বেশ কিছু গবেষকের মন্তব্য

ভিনিগার থেকে কিছু ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন, precautions before using vinegar in some cases

সরাসরি ভিনিগার জলের সঙ্গে গ্লাসে মিশিয়ে পান না করাই ভালো। এমনটা করলে তা আমাদের দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। ভিনিগারের প্রভাবে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে গিয়ে দাঁত ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে। তাই সম্ভব হলে স্ট্র বা জুস খাওয়ার পাইপ দিয়ে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মেশানো জল খেতে পারেন।

তবে অতিরিক্ত পরিমাণে ভুলেও খাবেন না, এতে অজান্তেই আমাদের শরীরের পটাশিয়াম লেভেল কম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এছাড়াও ডায়রিয়া, বদহজম এবং হাড়ের ক্ষতিও হতে পারে। শুরুতে অবশ্যই অল্প পরিমাণ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। ভিনেগার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে খাবার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময়ে হজম হয়, যার ফলে ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে।

তাছাড়া মাত্রা ও নিয়ম না জেনে ভিনেগার খেলে উপকারের চেয়ে অপকার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ভালো করে জেনেশুনে প্রয়োজনে চিকিৎসকের থেকে নিশ্চিত হয়ে ভিনেগার ব্যবহার করা উচিত।

ভিনিগার খাওয়ার নিয়ম, How to take vinegar

অনেকেই ভিনিগার খাওয়ার নিয়ম নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকেন। খাবার খাওয়ার আগে না পরে আপেল সিডার ভিনেগার পান করতে হবে সেটা নিয়ে অনেকেরই দ্বিধা রয়েছে। এটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। জেনে রাখুন যে, খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে বা পরে ভিনিগার পান করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।  

ভিনিগারের বিভিন্ন ব্যবহার, various usages of vinegar 

ভিনিগারের ব্যবহার বর্তমান সময়ে নতুন কিছু নয়। কয়েক হাজার বছর আগে কোনো ক্ষতস্থান পরিষ্কার করার কাজে ভিনেগারের ব্যবহার করা হতো। খাবার সংরক্ষণ করার জন্য ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। এর ব্যবহারে খাবারে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মায় না। তাছাড়া কেউ যদি প্রাকৃতিকভাবে খাবার সংরক্ষণ করতে চায় তবে তারা আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়া মুখে ব্রণ দেখা দিলে অথবা ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হলে তা নিরসনে ভিনেগার খুব কাজের। তবে ত্বকে লাগাতে হলে ভিনেগারের সাথে অবশ্যই পরিমাণ মতো জল মিশিয়ে নেওয়া উচিত। অন্যদিকে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমের কারণে পেশীতে ব্যথা হলে ভিনিগার দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন।

মুখে ব্রণ দেখা দিলে অথবা ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হলে তা নিরসনে ভিনেগার খুব কাজের

এভাবে ভিনিগার ব্যবহার করে পেশী ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাছাড়া কন্ডিশনার হিসেবে ভিনিগারের ব্যবহার করা যেতে পারে। এরজন্য এক কাপ জলে আধা চা চামচ ভিনিগার নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে তা দিয়ে চুলে ম্যাসাজ করে দেখতে পারেন, ফলাফল হিসেবে আপনার এই সমস্যার  প্রতিকারের সাথে, আপনার চুল উজ্জ্বল এবং চকচকে হয়ে উঠবে।

উপসংহার, Conclusion 

ভিনিগারের বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে আমরা আগেই কম বেশি জানতাম। তবে ভিনিগার খাওয়ার ফলে কি কি হয় সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো সঠিকভাবে জানতেন না। আশা করি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা ভিনিগার খেলে কি হয় সে সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তবে নির্দিষ্ট মাত্রা ও খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী এর সেবন করা শ্রেয়, যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, নয়তো উপকারিতা পাওয়ার আশায় থেকে নিজেই নিজের অপকার করে বসবেন। খাওয়ার নিয়ম না জেনে সেবন না করা ভালো। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts