তিনি কি শুধু কবি? না কি দেশদ্রোহী? হ্যাঁ, এই প্রশ্নই তুলেছিল ব্রিটিশ সরকার! আমরা সবাই জানি, ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য এক বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল কবি নজরুল ইসলামের। কিন্তু জানেন কি? ১৯৩০ সালের ১৫ ডিসেম্বর, আবারও তাঁকে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে টার্গেট করা হয়! কারণ? তাঁর ‘প্রলয়শিখা’ কাব্যগ্রন্থ!
কবির কলম ছিল তলোয়ার….
সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম, বঞ্চনা—নজরুলের লেখায় ছিল প্রতিটি বিষয়ের বিরুদ্ধে ধ্বনি। আর সেই কারণেই আজও তিনি শুধু কবি নন, এক চেতনার নাম।
জন্ম থেকেই যিনি বিদ্রোহী….
১৮৯৯ সালের ২৫ মে, পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল মহকুমার চরুলিয়া গ্রামে জন্ম কবির। ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’—আর সত্যিই জীবন ছিল দুঃখে ভরা। মাত্র নয় বছর বয়সে পিতৃহারা হয়ে যান। অল্প বয়সে শুরু হয় তাঁর সাহিত্যচর্চা।
তবে জানেন কি, তাঁর ডাকনাম ছিল ‘তারা ক্ষ্যাপা’? গ্রামে তাঁকে এই নামেই ডাকতেন অনেকে। কারণ, ছোট থেকেই ছিলেন একটু আলাদা—সৃষ্টিশীল, স্বাধীনচেতা।

বিপ্লবী সন্দেহে বৃত্তিও কেড়ে নেওয়া হয়….
মাত্র ১০ শ্রেণির সেরা ছাত্র, মাসে ৫ টাকার বৃত্তি পেতেন। কিন্তু তাঁর বিপ্লবী মনোভাব দেখে সেই বৃত্তি কেড়ে নেওয়া হয়। পরে অবশ্য অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় ফেরত দেওয়া হয় বৃত্তি।
ভার্সাই চুক্তির পরে বদলে গেল জীবন…..
১৯১৯ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে নজরুল সেনাবাহিনী ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন। কিন্তু মেসে উঠেই বাধার সম্মুখীন! শুধু মুসলিম বলে মেসের চাকর তাঁর এঁটো বাসন ধুতে অস্বীকার করে!
ভালোবাসা পেলেও, বিয়ে সুখের হয়নি…
নার্গিসের সঙ্গে বিয়ে হলেও শ্বশুরবাড়ি নজরুলকে শর্ত দেয়—নার্গিসকে দৌলতপুর থেকে সরানো যাবে না! অপমানিত নজরুল বিয়ের রাতেই দশ এগারো মাইল হেঁটে চলে যান কুমিল্লায়।
কবি, সাংবাদিক, সংগীতজ্ঞ, দার্শনিক—এক মানব, এক বিপ্লব! নজরুল ইসলাম শুধু একজন কবি নন, তিনি ছিলেন একাধারে উপন্যাসিক, নাট্যকার, সাংবাদিক ও দার্শনিক। তাঁর কবিতা আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করার শিক্ষা, তাঁর গান আমাদের দিয়েছে সংগ্রামের ভাষা।