ত্রিধারার মতো বয়ে চলে তিনটি দিন—হলি থার্সডে, গুড ফ্রাইডে এবং ইস্টার সানডে। একটানা এই তিন দিনের নামই পবিত্র ট্রিডুয়াম। ক্যালেন্ডারে আলাদা হলেও, আত্মিক অভিজ্ঞতায় এরা এক, অনন্য। খ্রিস্টানদের কাছে এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় পালনের বিষয় নয়, বরং আত্মার জাগরণ, প্রেম ও পরিত্রাণের চরম উপলব্ধি।
চলুন দেখে নিই কী ঘটে এই তিন পবিত্র দিনে—

১. হলি থার্সডে: ভালোবাসা ও সেবার চূড়ান্ত নির্দেশ
- যিশু খ্রিস্ট এই দিনে শিষ্যদের পা ধুয়ে শিখিয়েছিলেন—নেতৃত্ব নয়, সেবা-ই আসল।
- শেষ নৈশভোজে প্রতিষ্ঠিত হয় ইউক্যারিস্ট, যা আজকের খ্রিস্টান জীবনের কেন্দ্র।
- এই দিনের বার্তা স্পষ্ট—“পরস্পরকে ভালোবাসো”।
- গির্জায় হয় পা ধোয়ার প্রতীকী অনুশীলন, এরপর চুপচাপ সরিয়ে নেওয়া হয় অলঙ্কার, নিভিয়ে দেওয়া হয় বাতি।
- শুরু হয় নীরব প্রতীক্ষার সময়।
২. গুড ফ্রাইডে: যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে মুক্তির পথ
এই দিনেই যিশুকে ক্রুশে টাঙানো হয়েছিল।
গির্জায় হয় না কোনো উৎসব। বাজে না কোনো ঘণ্টা, নেই কোনো সংগীত।
শুধু বিষাদের মধ্যে ভেসে চলে এক নিঃশব্দ আরাধনা।
উপাসনার তিনটি ধাপ—
- পবিত্র পাঠ
- ক্রুশের পূজা
- পূর্বদিনের সংরক্ষিত ইউক্যারিস্ট গ্রহণ
যিশুর মৃত্যু নয়, এটি ছিল মানবজাতির জন্য প্রেমের চূড়ান্ত নিদর্শন।
৩. ইস্টার ভিজিল ও ইস্টার সানডে: মৃত্যু থেকে আলোয় জেগে ওঠা
- শনিবার রাতের অন্ধকার ছেঁদ করে আসে এক আশ্চর্য ভোর।
- ইস্টার ভিজিল শুরু হয় আগুন জ্বালিয়ে—আলোয় স্বাগত জানানো হয় যীশুর পুনরুত্থানকে।
- এদিন গির্জায় বাজে ঘণ্টা, গাওয়া হয় বিজয়ের গান।
- যিশু ফিরে আসেন মৃত্যুকে জয় করে—দেখিয়ে দেন, আলো সবসময়ই অন্ধকারকে ছাপিয়ে যায়।
- ইস্টার মানে শুধু উৎসব নয়, মানে নতুন করে বাঁচার প্রেরণা।
পবিত্র ট্রিডুয়াম—এক নিরব সুর, এক চিরন্তন আহ্বান

এই তিন দিন এক অদ্ভুত নীরবতার মধ্যে দিয়ে বলে—
“যেখানে মৃত্যু, সেখানেই শুরু নতুন জীবনের।
যেখানে ত্যাগ, সেখানেই বাসা বাঁধে প্রেম।”
এটি শুধুই রোমান ক্যাথলিক লিটার্জির নিয়ম নয়, বরং আত্মিক পুনর্জন্মের এক সময়।
নিজেকে নতুন করে দেখার, ঈশ্বরকে অনুভব করার, এবং পৃথিবীকে ভালোবাসার এক পবিত্র সুযোগ।
এই ট্রিডুয়ামে, আপনার হৃদয়েও জ্বলে উঠুক সেই আলো,
যা মুছে দেয় সব অন্ধকার।
শুভ ট্রিডুয়াম।