২০১ গম্বুজ এই মসজিদটি হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট মসজিদ। ২০১টি গম্বুজ এবং ৯টি মিনার দিয়ে সজ্জিত একটি পূর্ণাঙ্গ মসজিদ কমপ্লেক্স হিসেবে এই মসজিদের নকশা করা হয়েছে। উল্লেখ্য মসজিদটির ছাদে সর্বমোট ২০১ টি কারুকার্যময় গম্বুজ থাকার কারণে এটি ‘২০১ গম্বুজ মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
মসজিদটি নির্মাণাধীন রয়েছে। এর প্রধান ফটকের কাছাকাছি মসজিদের দেওয়ালে পিতলের সোনালি রঙে চকচক করছে আল্লাহর ৯৯টি নাম। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বাংলাদেশের এই বিশেষ মসজিদটির নির্মাণ ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো।
মসজিদের কিছু তথ্য, Some information about the mosque :
বিশ্বখ্যাত ২০১ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি নিঃসন্দেহে বিশ্বের পুরাকীর্তির ইতিহাসে এক মাইলস্টোন। বলাই বাহুল্য যে মসজিদটি নতুন ও আনকোরা বৈশিষ্ট্য এবং চমৎকারিত্ব নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। পৃথিবীর সব বিখ্যাত মসজিদের নকসা সংমিশ্রিত করে ভিন্নধর্মী ডিজাইনে রূপান্তরিত হয়েছে, তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে এই মসজিদে সিরিয় ও মেসোপটেমীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
- দৈর্ঘ্য : ১৪৪ ফুট (৪৪ মি)।
- প্রস্থ : ১৪৪ ফুট (৪৪ মি)।
- গম্বুজ : ২০১ টি।
- গম্বুজের ব্যাস (বাহ্যিক) : ৮১ ফুট/ ২৫ মি (মূল গম্বুজ), ১৭ ফুট/৫.২ মি (অন্যান্য গম্বুজ)।
- মিনার : ৯ টি।
২০১ গম্বুজ মসজিদ তৈরির কাজে ব্যবহৃত টাইলস, মার্বেল ও দামি পাথরসহ ফিটিংস এর যাবতীয় পণ্য চীন ও ইতালি থেকে আমদানি করা হয়েছে।
মসজিদে ব্যবহৃত পাথরগুলোতে এমনভাবে ক্যামিকেলের আস্তরণ দেওয়া হয়েছে, যাতে বড় কোনো অগ্নিকাণ্ডেও মসজিদের কোনোও রকম ক্ষয়ক্ষতি হবে না।
এদিকে ঝিনাই নদীর তীর থেকে মসজিদ পর্যন্ত টাইলসের সিঁড়ি তৈরি করা হবে। পাশাপাশি নদীর উপর নির্মিত হবে একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু। মসজিদের চারপাশে সাজানো থাকবে দেশি-বিদেশি ফুলে ভরা বাগান।
মিনারের উচ্চতা, Height of minar :
মসজিদের চার কোণায় রয়েছে ৪টি মিনার। প্রত্যেকের উচ্চতা ১০১ ফুট। পাশাপশি ৮১ ফুট উচ্চতার আরও চারটি মিনার আছে। সবচেয়ে উঁচু মিনারটি মসজিদের পাশে অবস্থিত, যার উচ্চতা ৪৫১ ফুট।
মসজিদের স্থাপত্যশৈলী, Architectural style of the mosque :
মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। মসজিদটির দেয়ালের লাগানো টাইলসগুলোতে পূর্ণ কোরআন শরিফ অঙ্কিত আছে। মসজিদের প্রধান দরজা নির্মাণে ৫০ মণ পিতল ব্যবহার করা হবে।
আজান দেওয়ার জন্য মসজিদের সবচেয়ে উঁচু মিনারে বিশেষ স্থান বানানো হবে। মসজিদটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলেও এতে সহস্রাধিক বৈদ্যুতিক পাখাও যুক্ত করা হবে। মেঝের বিশেষায়িত টাইলসগুলো বাইরের তাপমাত্রা শোষণ করে মেঝেকে শীতল করে রাখে।
এছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক লাইটিং ব্যবস্থা। অন্যদিকে পুরো মসজিদ প্রাঙ্গণ সিসিটিভি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে। সেই হিসেবে বলা যায় যে, নিরাপত্তার মধ্যে থেকেও ঘুরে ফিরে পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন মসজিদের সৌন্দর্য।
মসজিদের পাশে নির্মাণ করা হবে আলাদা ভবন, যেখানে থাকবে দুঃস্থ নারীদের জন্য বিনামূল্যের হাসপাতাল, এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। এছাড়াও থাকছে বেকার যুবকদের কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার প্রকল্প।
মসজিদকে কেন্দ্র করে ১৮ বিঘা জায়গা জুড়ে একটি হেলিপ্যাড নির্মিত হয়েছে। তা ছাড়া এখানে গাড়ি পার্কিংয়েরও পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮০ শতাংশেরও বেশি নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও এখানে বর্তমানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, শুক্রবারে জুমার নামাজ ও প্রতি বছর ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
২০১ গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা কে? Who is the founder of 201 Dome Mosque?
২০১ গম্বুজ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. রফিকুল ইসলাম। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ এটি। মসজিদের মিনারগুলো ৪৫১ ফুট উচ্চতার। ১৫ বিঘা জমির ওপর ৫৭ তলা উচ্চতার বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইটের তৈরি মিনারের মসজিদটি নির্মিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে।
সবচেয়ে বেশি গম্বুজ মসজিদ কোথায়? Where is the most domed mosque situated ?
২০১ গম্বুজ মসজিদ হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট মসজিদ হিসাবে স্বীকৃত।
২০১ গম্বুজ মসজিদ কোন নদীর তীরে অবস্থিত ? On which river bank 201 Dome Mosque is located ?
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার পশ্চিমে ঝিনাই নদীর তীরে অবস্থতি এ মসজিদটি।
২০১ গম্বুজ মসজিদ কত সালে নির্মিত হয়? In which year 201 Dome mosque was built ?
২০১৩ সালের জানুয়ারি এই মসজিদ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মা রিজিয়া খাতুন। মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হবে আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণকাজ এখনো চলছে।
বিভিন্ন সূত্র অনুসারে, নির্মাণ শেষ হলে কাবার ইমাম এসে নামাজের ইমামতি করে মসজিদটি উদ্বোধন করবেন। তবে অনেকেই মনে করছেন যে মসজিদটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। বলাই বাহুল্য ঐতিহ্যপূর্ণ এই মসজিদ এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
মসজিদগুলোতে মিনারের গুরুত্ব, The importance of minarets in mosques :
আমরা সকলেই হয়তো লক্ষ্য করেছি যে সকল মসজিদেই মিনার থাকে। যেকোনো মসজিদে থাকা মিনারগুলি সাধারণত একজন মুয়াজ্জিনের কাছ থেকে মুসলমানদের প্রার্থনার (আযান) জন্য ব্যবহৃত হয়। ইসলামে নামাজের পূর্বে আযান দেওয়া হয়, সেই আযান সাধারণত মসজিদের মিনারে দাঁড়িয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।
২০১ গম্বুজ মসজিদ দেখতে হলে কিভাবে যেতে হবে ? How to visit the 201 Dome Mosque?
মসজিদ দেখতে হলে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে টাঙ্গাইল জেলা সদরে পৌঁছতে হবে। মসজিদটি সেখান থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অন্যদিকে এটি গোপালপুর উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
প্রথমে টাঙ্গাইল থেকে গোপালপুর উপজেলায় আসতে হবে। তারপর সেখান থেকে অটো বা সিএনজি ভাড়া নিয়ে সহজেই ২০১ গম্বুজ মসজিদে যেতে পারবেন।
রাত্রিযাপন করতে কোথায় থাকবেন ? Where will you stay to spend the night?
২০১ গম্বুজ মসজিদে যেতে ঢাকা থেকে সকালে রওনা দিতে হবে। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পৌঁছে রাতের মধ্যে ফিরে আসা যায়। তবে কেউ যদি সেখানে রাত্রিযাপন করতে চায় তাহলে টাঙ্গাইল শহরে চলে আসতে পাবে। টাঙ্গাইলে এলেঙ্গা এবং যমুনা রিসোর্টের মত থাকার লাক্সারী ব্যবস্থা আছে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে যেখানে আপনারা চাইলে রাত কাটাতে পারবেন। এখানে রাত্রিযাপনে ২০০ থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হবে। দেখে বুঝে থাকার জন্য পছন্দসই স্থান বেছে নিতে পারবেন আপনারা।
মসজিদটি দেখতে গিয়ে কোথায় খাবেন ? Where will you take meals while visiting the mosque?
মসজিদটির সামনেই বেশ কিছু ছোট বড় খাবারের হোটেল রয়েছে। সেখানে গেলে হালকা নাস্তা বা দুপুরের খাবারও খেতে পারবেন। এছাড়া চাইলে আপনারা গোপালপুর বাজারেও চলে যেতে পারেন। সেখানে সাধারণ মানের খাবারের দোকান রয়েছে। তবে চাইলে সাথে করে খাবার নিয়ে যেতেও পারেন।
শেষ কথা, Conclusion :
টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে এই মসজিদ অবস্থিত। এটি দেখার জন্য বিদেশ থেকেও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটছে। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে তো ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আগমন অনেকদিন আগে থেকেই চলছে। আশা করা হচ্ছে যে, এই মসজিদটির উদ্বোধন হলে পর চারদিকে এর নাম আরো ছড়িয়ে পড়বে। পাশাপাশি এই নিদর্শনটি দেখতে দেশ বিদেশের পর্যটকদের ভীড়ও বেড়ে যাবে।