আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলতে কি বুঝ? What do you mean by Agartala conspiracy case in Bengali?

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলতে কি বুঝ

পূর্ব পাকিস্তানের দায়ের করা  রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার মধ্যে অন্যতম হল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যা কিনা পাকিস্তানি আমলে সংঘটিত হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই ঘটনা অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। ১৯৬৮ সালের প্রথম ভাগে আওয়ামী লীগ নেতা তথা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার এই মামলা দায়ের করেছিল। মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, শেখ মুজিব ও অন্যান্যরা ভারতের সাথে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। 

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট, Background of Agartala Conspiracy Case.

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ নিজের অধিকার ও দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য একের পর এক সংগ্রাম চালিয়ে যায়।  তখন তাদের সকল ন্যায্য দাবি ও অধিকারকে দমন করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের শেখ মুজিবুর রহমান নামক এক অবিসংবাদিত বাঙালি নেতার নেতৃত্বে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়, এরপর শুরু হয় ছয় দফা ভিত্তিক দুর্বার আন্দোলন।

জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই ছয় দফা ভিত্তিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। এ সময় সমগ্র পাকিস্তান আইয়ুব সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল। সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন তখন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। শেখ মুজিবসহ বাঙালি নেতাদেরকে ঠেকাতে তখন পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী তাদের উপর চাপিয়ে দেয় আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা। এই মামলাটির পূর্ণ নাম ছিল “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য মামলা “।

কিন্তু ইতিহাসে এটি ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ হিসাবেই পরিচিত, কারণ ষড়যন্ত্রটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় শুরু হয়েছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যখন শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ধ্বংস করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছিল ঠিক তখনই ছয় দফা ভিক্তিক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।

 ৬ জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে ২ জন সিভিল সার্ভিস অফ পাকিস্তান (সি. এস. পি) অফিসারসহ ২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের গ্রেফতার সম্পর্কে সরকারি প্রেসনোটে উল্লেখ করা হয় যে,

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রেক্ষাপট

“ গত মাসে (অর্থাৎ ডিসেম্বর, ১৯৬৭) পূর্ব-পাকিস্তানে উদঘাটিত জাতীয় স্বার্থবিরোধী এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে এঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।”

তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এই ষড়যন্ত্রকে “আগরতলা ষড়যন্ত্র” নামে অভিহিত করে। এই একই অভিযোগে ১৮ জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সরকারিভাবে নামকরণ করেছিল “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্যদের বিচার”। এই মামলায় ৩৫ জনকে আসামীরা সকলেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। তারা হলেন –

  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান;
  • আহমেদ ফজলুর রহমান, সিএসপি;Opens in a new tab.
  • কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন;
  • স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান;
  • সাবেক এলএস সুলতানউদ্দীন আহমদ;
  • এলএসসিডিআই নূর মোহাম্মদ;
  • ফ্লাইট সার্জেন্ট মফিজ উল্লাহ;
  • কর্পোরাল আবদুস সামাদ;
  • সাবেক হাবিল দলিল উদ্দিন;
  • রুহুল কুদ্দুস সিএসপি;
  • ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ ফজলুল হক;
  • বিভূতি ভূষণ চৌধুরী (ওরফে মানিক চৌধুরী);
  • বিধান কৃষ্ণ সেন;
  • সুবেদার আবদুর রাজ্জাক;
  • সাবেক কেরানি মুজিবুর রহমান;
  • সাবেক ফ্লাইট সার্জেন্ট মোঃ আব্দুর রাজ্জাক;
  • সার্জেন্ট জহুরুল হক;
  • এ. বি. খুরশীদ;
  • খান মোহাম্মদ শামসুর রহমান, সিএসপি;
  • একেএম শামসুল হক;
  • হাবিলদার আজিজুল হক;
  • মাহফুজুল বারী;
  • সার্জেন্ট শামসুল হক;
  • শামসুল আলম;
  • ক্যাপ্টেন মোঃ আব্দুল মোতালেব;
  • ক্যাপ্টেন এ. শওকত আলী;
  • ক্যাপ্টেন খোন্দকার নাজমুল হুদা;
  • ক্যাপ্টেন এ. এন. এম নূরুজ্জামান;
  • সার্জেন্ট আবদুল জলিল;
  • মাহবুব উদ্দীন চৌধুরী;
  • লেঃ এম রহমান;
  • মহসিন চৌধুরী
  • সাবেক সুবেদার তাজুল ইসলাম;
  • আলী রেজা;
  • ক্যাপ্টেন খুরশীদ উদ্দীন এবং
  • ল্যাঃ আবদুর রউফ।

আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবের ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি লাভ, Withdrawal of the Agartala Conspiracy Case and Sheikh Mujib’s ‘Bangabandhu’ title

আগরতলা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানে ছয় দফা ভিত্তিক আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে বলে আশা করেছিল পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী। কিন্তু পশ্চিমা শাসকদের ষড়যন্ত্র পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বুঝতে পেরে যায় এবং সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান মিলিত হয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যায়। আন্দোলনের মুখে পড়ে পাকিস্থানের আইয়ুব সরকারও আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।

এদিকে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কারণে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা পূর্বের তুলনায় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এই মামলায় শেখ মুজিবকে আসামি করায় বাংলার জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়েন, এর প্রভাবে শেখ মুজিব অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। এই মামলার ফলেই শেখ মুজিব ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি লাভ করেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবের ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি লাভ

ষড়যন্ত্র মামলার কার্যক্রম নিয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, Increasing public awareness about conspiracy case proceedings

দীর্ঘ আট মাসব্যাপী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হয় এবং জনগণ ছিল এই মামলার ব্যাপারে ভীষণ উদগ্রীব। তৎকালীন দৈনিক পত্রিকাগুলােও ধারাবাহিকভাবে এ মামলার কার্যক্রম তুলে ধরতে শুরু করে, যার ফলে এই মামলার আসামীগণ পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন ও এর পিছনে যে যৌক্তিকতা তুলে ধরার সুযোগ পান এবং তা জনগণের মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। এই সবকিছুর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের গণসচেতনতা উল্লেখযােগ্য হারে বৃদ্ধি পায় ।

ষড়যন্ত্র মামলার কার্যক্রম নিয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি

মামলার বিচার প্রক্রিয়া, Proceedings of the case

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রসিকিউটর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন স্যার উইলিয়াম থমাস। মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় প্রথমে আসামিদেরকে ‘দেশরক্ষা আইন’ থেকে মুক্তি দিয়ে, পরে ‘আর্মি, নেভি অ্যান্ড এয়ারফোর্স অ্যাক্টে’ শেখ মুজিবুর রহমান, সার্জেন্ট জহুরুল হক-সহ অন্যান্য আসামিকে আবারও গ্রেফতার করে নেওয়া হয় এবং তাদের সকলকে সেন্ট্রাল জেল থেকে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়।

মামলার বিচারের জন্য পরবর্তী সময়ে ফৌজদারি দণ্ডবিধি সংশোধন করে দিয়ে এক বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৯ জুন, ৩৫ জন আসামির ১২১-(ক) এবং ১৩১ ধারায় মামলাটির শুনানি কার্যক্রম শুরু হয়।

মামলার বিচার প্রক্রিয়া

মামলার অভিযোগনামা, Charge sheet of the case

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের সকল ন্যায্য দাবি ও অধিকারকে পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করে, তাদের দমন করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য’ মামলার অভিযোগনামায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে,

“অভিযুক্তরা ভারতীয় অর্থ ও অস্ত্রের সাহায্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটিয়ে কেন্দ্র থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিল।”

ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে অবস্থিত ‘সিগন্যাল অফিসার মেসে’ মামলার স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ১৯৬৯ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি ছিল মামলাটির শেষ তারিখ।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফলাফল, Results of Agartala Conspiracy Case

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফলাফল ছিল এক সুদূরপ্রসারী ঘটনা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে সাধারণ জনতা।  মামলায় প্রত্যক্ষ ফলশ্রুতিতে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয় । প্রবল গণ-আন্দোলন তথা উত্তাল ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের সরকার পিছু হটতে শুরু করে দেয় এবং মামলা প্রত্যাহার করতে একান্ত বাধ্য হয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়, অর্থাৎ আইয়ুব সরকার ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হতে থাকে ।

দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবুর রহমান-সহ অন্যান্যদের মুক্তির দাবি করেছিল। ১৯৬৯ সালের ৮ই জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা ও ছাত্রসমাজের এগারাে দফার প্রতি সমর্থন জানাতে পাকিস্তানের ৮টি রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। ক্রমে সংগ্রাম পরিষদ আইয়ুব বিরােধী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।

তখন সরকারপ্রধান হিসেবে আইয়ুব খান সমগ্র পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করা হয়। সাথে সাথে শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল কারাবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হয়। পরেরদিন, অর্থাৎ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ মামলায় অভিযুক্তদের এক গণসংবর্ধনা দেয়া হয়।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফলাফল

এই দিনে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান’ নামক এই গণ-আন্দোলনের প্রভাবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানের শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের পতন ঘটে এবং এই আসনে ক্ষমতায় আসেন ইয়াহিয়া খান। 

পরিশেষে, Conclusion 

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছিল একটি প্রতারণামূলক মিথ্যা মামলা। জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত বিকাশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেক্ষাপট সৃষ্টির ক্ষেত্রে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ফলাফল ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মামলার ফলে সৃষ্ট গণআন্দোলন শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতায় রূপ নেয়। ঐতিহাসিকগণ এই মামলা এবং মামলা থেকে সৃষ্ট গণ-আন্দোলনকে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পেছনে প্রেরণাদানকারী অন্যতম প্রধান ঘটনা বলে গণ্য করে থাকেন।

Frequently asked questions

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মোট কতজন আসামি ছিলেন?

৩৫ জন আসামি।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে প্রসিকিউটর হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন কে?

স্যার উইলিয়াম থমাস

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার দাপ্তরিক নাম কী ছিল?

রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য।

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts