বাংলাদেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংক হল অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। উক্ত ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকাল হল ১৯৭২ সাল।
অগ্রণী ব্যাংক পিএল সি সম্পর্কে কিছু তথ্য, Some information about Agrani Bank Plc :
- সদরদপ্তর : দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা, বাংলাদেশ
- বাণিজ্য অঞ্চল : বাংলাদেশ ও বিদেশ
- চেয়ারম্যান : ডঃ জায়েদ বখত
- পণ্যসমূহ : ফাইন্যান্স ও বীমা, কনজ্যুমার ব্যাংকিং, যৌথ ব্যাংকিং, বিনিয়োগ ব্যাংকিং, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা
- নীট আয় : ২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বৃদ্ধি ৳ ২০৬.৪৮ কোটি (US$ ২৬.৪৭ মিলিয়ন)
- কর্মীসংখ্যা : ১৪০০০ এরও বেশি
অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি’ র ইতিহাস, History of Agrani Bank PLC :
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর পর বাংলাদেশ ভূখন্ডে অবস্থিত সকল ব্যাংককে জাতীয়করণের আওতায় আনা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকস জাতীয়করণ আদেশ ১৯৭২ পিও নং ২৬ এর আওতায় ব্যাংকটি ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ভূখন্ডে অবস্থিত সাবেক হাবিব ব্যাংক লিমিটেড ও সাবেক কমার্স ব্যাংক লিমিটেড এর শাখা এবং সমুদয় দায় ও সম্পদ সমন্বয়ে অগ্রণী ব্যাংক একটি রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
অগ্রণী ব্যাংক যাত্রা শুরু করেছিল ৫ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন ও ১ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে। পরবর্তীকালে, ২০০৭ সালের ১৭ই মে তা পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়।
অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালনা পদ্ধতি, Management System of Agrani Bank :
অগ্রণী ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা পর্ষদ। উক্ত পর্ষদের প্রধান হিসেবে একজন চেয়ারম্যান কর্মরত আছেন। ২০২২ সাল অনুসারে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে আছেন ডঃ জায়েদ বখত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হলেন জনাব মুরশেদুল কবীর।
অগ্রণী ব্যাংকের বিস্তৃতি, Agrani Bank Expansion :
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্রণী ব্যাংকের ১১টি সার্কেল অফিস রয়েছে, হেড অফিসে আছে ৩৬ টি বিভাগ, এছাড়াও উক্ত ব্যাংকের ৩৬টি কর্পোরেট শাখা আছে, পাশাপাশি ৫৩টি আঞ্চলিক অফিস এবং ৪৩টি অনুমোদিত পরিবেশক (Authorized Dealer – AD) শাখা সহ ৯৬২টি শাখা রয়েছে। অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকে অনলাইন ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকিং কার্যক্রমও পরিচালিত হয়ে থাকে। অগ্রণী ব্যাংকে বর্তমানে অনলাইন শাখার সংখ্যা ৯৬২টি।
ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিট চালু, Launch of Islamic Banking Unit :
২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিট চালু করে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে উক্ত ব্যাংক প্রথম ইসলামী ব্যাংকিং ইউনিট চালু করেছিল।
অগ্রণী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরির নিয়ম, Rules for opening Agrani Bank Account :
অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট তৈরী করতে চাইলে দুই রকমের ব্যাংক একাউন্ট তৈরি করার সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারেন। একটি হলো স্টুডেন্ট একাউন্ট এবং অন্যটি হলো সেভিংস একাউন্ট। এই দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চাইলে বিভিন্ন রকমের জরুরী তথ্যাদি ব্যাংকে জমা করতে হবে। এরপর কিছু স্টেপ এর মাধ্যমে খুব সহজেই অগ্রণী ব্যাংক একাউন্ট তৈরী করে নিতে পারবেন।
অগ্রণী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরির ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন, Requirements for Agrani Bank Student Account opening :
অগ্রণী ব্যাংক স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করার মাধ্যমে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন, সেই সুযোগ সুবিধা গুলো হলো :
- পাঁচ বছর মেয়াদি স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট তৈরি করলে সেই স্টুডেন্ট একাউন্টে প্রতি মাসে 500, 1000, 2000, 3000, 4000, 5000, 6000, 7000, 8000, 9000, 10000 সমপরিমাণ টাকা জমা রাখতে পারবে।
- 10 বছর মেয়াদী স্টুডেন্ট একাউন্ট এ 500, 1000, 2000, 3000, 4000, 5000, 6000, 7000, 8000, 9000, 10000 সমপরিমাণ টাকা জমা রাখতে পারবে।
- অন্যদিকে স্কুলে প্রদানকৃত উপবৃত্তি বা বৃত্তির টাকা স্টুডেন্ট একাউন্ট এর মাধ্যমে আপনার কাছে নিয়ে আসতে পারবেন।
- স্টুডেন্ট একাউন্ট এর জন্য বরাদ্দকৃত ইন্টারেস্ট রেট হলো 7.00%। তবে স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করার সময় কেউ চাইলে এই ইন্টারেস্ট রেট পরিবর্তন করতে পারবেন।
স্টুডেন্ট একাউন্ট তৈরি করার জন্য যে সমস্ত ডকুমেন্টস প্রয়োজন সেগুলি হলোঃ
- স্টুডেন্ট আইডি কার্ড।
- বার্থ সার্টিফিকেট পাসপোর্ট ন্যাশনাল আইডি কার্ড এগুলোর মধ্যে থেকে যে কোন একটি ডকুমেন্টস।
- যার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে তার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- নমিনি সনাক্তকৃত ব্যক্তির 1 কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
উক্ত ডকুমেন্টগুলো আপনার আশেপাশে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের যে কোন একটি শাখায় নিয়ে গেলে ব্যাংক কর্মীরা একটি ফ্রম দেবে, সেটি ফিলাপ করার পরেই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে এই কাজগুলো ঘরে বসেই করে ফেলতে চাইলে নিম্নলিখিত লিংকে ভিজিট করে যে রেজিস্ট্রেশন ফরম রয়েছে সেগুলো ডাউনলোড করে নিন।
Agrani Bank Account Openina Form
উক্ত লিংকে গিয়ে দেখবেন স্টুডেন্ট অ্যাকাউন্ট তৈরির ফর্ম বরাদ্দ রয়েছে সেটি ডাউনলোড করে ফিলাপ করে প্রিন্ট আউট বের করে আপনার নির্দিষ্ট ব্যাংক প্রতিনিধির কাছে জমা দিন, এভাবে একাউন্ট তৈরীর কাজ সম্পাদন হয়ে যাবে।
অগ্রণী ব্যাংক সেভিংস একাউন্ট তৈরির নিয়ম, Agrani Bank Savings Account Creation Rules :
অগ্রণী ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট তৈরি করার মাধ্যমে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন সেগুলো হলো :
- সেভিংস একাউন্ট ইন্টারেস্ট রেট হলো 3.50 শতাংশ।
- আপনি চাইলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রাখতে পারবেন এবং যেকোন সময় টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
- একটি সেভিংস একাউন্ট একজনের নামে অথবা দুইজনের নামে যুগ্ম ভাবেও তৈরি করতে পারবেন।
সেভিংস একাউন্ট তৈরির জন্য যে সমস্ত ডকুমেন্টস প্রয়োজন সেগুলো হল :
- যে ব্যক্তি একাউন্ট তৈরি করতে চায় তার নাম, সাথে ওই ব্যক্তির বাবা মায়ের নাম সহ ডকুমেন্টস।
- ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা।
- জন্ম নিবন্ধন কার্ড, জাতীয় পরিচয় পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স এর মধ্যে যেকোনো একটি ডকুমেন্ট।
- টিন সার্টিফিকেট থাকেলে সেটা প্রদান করলে আপনার কাজটি আরও সহজ হয়ে যায়।
- যে একাউন্ট তৈরী করবে তার দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং নমিনির জন্য 1 কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
উক্ত তথ্যগুলো সাথে নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের যে কোন একটি শাখায় গেলে একটি রেজিস্ট্রেশন ফরম পেয়ে যাবেন, যার মাধ্যমে আপনি একাউন্ট তৈরী করতে পারবেন।
সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খুলতে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেগুলি হল :
- -প্রাথমিকভাবে ১০০ টাকা জমা করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
- -অ্যাকাউন্টে সবময়য় অন্তত ৫০ টাকা রাখতে হবে।
- -সঞ্চয়ী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাবালকের নামেও খোলা হলে, সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন উক্ত নাবালকের অভিভাবক।
- -নিরক্ষর ব্যক্তিও তার বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। কিন্তু প্রতিটি লেনদেনের সময় ঐ ব্যক্তিকে ব্যাংকের কর্মীদের সামনে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে।
অগ্রণী ব্যাংক কারেন্ট ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে তথ্য, Information about Agrani Bank Current Deposit Account :
ব্যাংকের চলতি আমানত অ্যাকাউন্ট হল এমন একটি অ্যাকাউন্ট যা বাধাহীন লেনদেনে সহায়ক। যেসকল গ্রাহক বাধাহীনভাবে একাধিকবার অনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদানপ্রদান করতে ইচ্ছুক তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অ্যাকাউন্টটি অধিক প্রযোজ্য।
অগ্রণী ব্যাংক কারেন্ট ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট এর বৈশিষ্ট্যসমূহঃ চেকবই, এটিএম সেবা, তাৎক্ষণিক অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা।
অগ্রণী ব্যাংকে চলতি অ্যাকাউন্টের প্রকারভেদঃ
- ব্যক্তিগত
- দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মিলে যৌথ
- এক মালিকানা ব্যবসায়
- অংশীদারী ব্যবসায়
- লিমিটেড কোম্পানি (পাবলিক ও প্রাইভেট)
- সমিতি/ক্লাব/সংগঠন/আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ
- ব্যাংকসমূহ
- সরকারি/আধা-সরকারী অফিস/ কর্পোরেশন/স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাসমূহ।
অগ্রণী ব্যাংকের বিভিন্ন স্কিম, Various schemes of Agrani Bank :
অগ্রণী ব্যাংকের বিভিন্ন স্কিম রয়েছে, সেগুলি হল :
- নারী আমানত প্রকল্প
- শিক্ষা প্রকল্প
- প্রবাসী ডিপোজিট প্রকল্প
- ডাবল বেনিফিট স্কিম
- সঞ্চয় পেনশন স্কিম
- ত্রৈমাসিক আয় প্রকল্প ইত্যাদি।
শেষ কথা, Conclusion :
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে একটা কথা বুঝতে পারা যায় যে অগ্রণী ব্যাংক বিভিন্নভাবে দেশের জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পদ্ধতি তথা বিভিন্ন প্রকল্প জনস্বার্থে সুবিধা প্রদান করছে। এভাবে কাজ চললে দেশের উন্নতি সাধন সহজেই করা সম্ভব হবে।