বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি কর্ণফুলী টানেল নামেও পরিচিত। এটি হলো বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত একটি সড়ক সুড়ঙ্গ। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সুড়ঙ্গ পথটির উদ্বোধন করেছিলেন। আজকের এই প্রতিবেদন থেকে আপনারা বাংলাদেশের এই টানেল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কেন বঙ্গবন্ধু টানেল গুরুত্বপূর্ণ? Why is the Bangabandhu Tunnel important?
বাংলাদেশের চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক অর্জন। এই টানেল দক্ষিণ এশিয়ার নদীতলের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গ হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু টানেল গুরুত্বপূর্ণ, কারণ :
- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি: টানেলটি চট্টগ্রাম শহরের উত্তর ও দক্ষিণ অংশকে সংযুক্ত করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করেছে।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: টানেলটি বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।
- পর্যটন: টানেলটি একটি নতুন পর্যটন আকর্ষণ হিসেবেও পরিচিত হয়ে উঠছে।
বঙ্গবন্ধু টানেলের কিছু বিশেষ তথ্য, Some special information about Bangabandhu Tunnel:

- দৈর্ঘ্য: প্রায় ৩.৩২ কিলোমিটার
- গভীরতা: ১৮ থেকে ৩১ মিটার
- উদ্বোধন: ২৮ অক্টোবর, ২০২৩
বঙ্গবন্ধু টানেল বা কর্ণফুলী টানেল সম্পর্কে কিছু সাধারণ তথ্য, Some general information about Bangabandhu Tunnel or Karnaphuli Tunnel:
- এটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত একটি সড়ক টানেল।
- দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশ দিয়ে যানবাহন চলাচলকারী এটিই প্রথম টানেল।
- বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রবেশপথ চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর ২ কিলোমিটার ভাটির দিকে নেভি কলেজের কাছে।
- এই টানেলের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যুক্ত হয়।
কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত? What is the length and width of the Karnaphuli tunnel?
কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নামেও পরিচিত, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের একটি ডুবো এক্সপ্রেসওয়ে টানেল। পুরো রুটের দৈর্ঘ্য হল 9.39 কিলোমিটার (5.83 মাইল), টানেলটি 3.32 কিলোমিটার (2.06 মাইল) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। টানেলের ব্যাস 10.80 মিটার (35.4 ফুট)।
বঙ্গবন্ধু টানেল এর বর্তমান নাম কি? What is the current name of Bangabandhu Tunnel?

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের নামফলক সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ৭ আগস্ট টানেলের নামফলক সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু এখনো এই টানেলটি বঙ্গবন্ধু টানেল নামেই পরিচিত। তবে অনেকে এই টানেলে কর্ণফুলী টানেলও বলে থাকেন।
কর্ণফুলী টানেলের ডিজাইনার কে ছিলেন? Who was the designer of Karnaphuli tunnel?
নদীর নিচের সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ করে চীনা কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। সুড়ঙ্গের বিভিন্ন অংশ চীনের ঝেনজিয়াংয়ে উত্পাদন করে বাংলাদেশে আনা হয়। ২০২২ সালের মধ্যে সুড়ঙ্গটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৩ সাল পর্যন্ত নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল।
বঙ্গবন্ধু টানেল দৈনিক আয় কত? What is the daily income of Bangabandhu Tunnel?
প্রতিদিন গড়ে বঙ্গবন্ধু টানেল থেকে টোল বাবদ আয় হচ্ছে ১০ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। কিন্তু মাটির তলদেশে নির্মিত টানেল হওয়ায় প্রতিদিন টানেলে কৃত্রিম অক্সিজেন ও আলো সরবরাহ, সামগ্রিক নিরাপত্তা ও জরুরি নিরাপত্তা বাবদ একটা বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
কর্ণফুলী টানেল কত টাকা খরচ হয়েছে? How much money was spent on the Karnaphuli tunnel?

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ বা টানেল খুব একটা ব্যবহার করছেন না গাড়িচালকেরা। চালুর পর প্রথম বছরে টানেল দিয়ে যেখানে প্রতিদিন সাড়ে ১৮ হাজার গাড়ি চলাচল করার কথা ছিল, সেখানে চলছে ৪ হাজারের কম। টোল রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন খরচ হচ্ছে ৩৭ লাখ ৪৬ লাখ টাকা। টানেলটি স্থাপনা নির্মাণে প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন টাকা ব্যয় হয়েছিল।
কর্ণফুলী টানেল কি উন্মুক্ত? Is the Karnaphuli tunnel open?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নামে এই টানেলটি ২০২৩ সালের অক্টোবরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু টানেল কত ফুট নিচে? How many feet down is the Bangabandhu tunnel?
কর্ণফুলী নদীর মধ্যভাগে বঙ্গবন্ধু টানেল বা সুড়ঙ্গটি ১৫০ ফুট গভীরে অবস্থিত।
কর্ণফুলী টানেলের গুরুত্ব, The importance of the Karnaphuli tunnel
কর্ণফুলী টানেল, একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মধ্যে ব্যবধান পূরণ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সংযোগ বাড়াতে চায় । 2016 সালে অনুমোদিত, এই আন্ডারওয়াটার টানেলটি কর্ণফুলী নদীকে প্রসারিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা ভ্রমণের সময় এবং যানজট কমানোর লক্ষ্যে নির্মিত।
বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য, Some general information about Bangabandhu Tunnel :

- বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর।
- বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণ পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে।
- বঙ্গবন্ধু টানেল এর উচ্চতা ১৪.৫ মিটার বা ৪৭ ফুট।
- বঙ্গবন্ধু টানেল এর টিউব সংখ্যা ২ টি।
- বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রতিটি টিউবের ব্যাস ১২.৫ মিটার বা ৪১ ফুট।
- বঙ্গবন্ধু টানেল ডাবল সেল ড্রিলিং পদ্ধতিতে খনন করা হয়েছে।
- বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করতে ১০৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
- বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি।
- বঙ্গবন্ধু টানেলের অর্থায়ন করেন চীনের এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার।
- বঙ্গবন্ধু টানেল এর মালিক বাংলাদেশ সরকার।
- বঙ্গবন্ধু টানেল এর মধ্য দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মোটর গাড়ি, (মোটর সাইকেল) ব্যতীত চলাচল করতে পারে।
- বঙ্গবন্ধু টানেল চালু করাতে চট্টগ্রাম শহরের সাথে কক্সবাজার এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলির মধ্য যোগাযোগ সহজ হবে এবং এটি পরিবহন সময় ও ব্যয় কমাবে।
- বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
- বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় ২০১৪ সালের ১০ জুন।
- ২০১৫ সালের ১৭ জুন বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে।
- বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের জন্য খনন কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর।
- বঙ্গবন্ধু টানেলটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণের প্রস্তাবিত হয় ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি। এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী।
- বঙ্গবন্ধু টানেলে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষেধ করা হয়েছে।
- বঙ্গবন্ধু টানেল পার হতে তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিট সময় লাগে। বঙ্গবন্ধু টানেলে যানবাহনের গতিসীমা ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার।
- বঙ্গবন্ধু টানেল ভূমি অধিগ্রহণ ৩৮২.১৫৫১ একর।
- বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশ সরকারের বিনিয়োগ ৪৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। নির্মাণে চীনের সহায়তা ৫৯১৩ কোটি টাকা।
- বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প পরিচালকের নাম হারুনুর রশিদ চৌধুরী।
- বঙ্গবন্ধুর টানেলে বায়ু চলাচলের জন্য ৮ টি ফ্যান আছে।
বঙ্গবন্ধু টানেলে যানবাহনের টোল কত? How much is the vehicle toll in Bangabandhu Tunnel?
বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল ভাড়া গাড়িভেদে ২০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।
- কার, জীপ, পিকআপ – ২০০ টাকা
- মাইক্রোবাস – ২৫০ টাকা
- বাস (৩১ আসন বা এর কম) – ৩০০ টাকা
- বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) – ৪০০ টাকা
- বাস (৩ এক্সল) – ৫০০ টাকা
- ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) – ৪০০ টাকা
- ট্রাক (৫.০১ টন হতে ৮ টন পর্যন্ত) – ৫০০ টাকা
- ট্রাক (৮.০১ টন হতে ১১ টন পর্যন্ত) – ৬০০ টাকা
- ট্রাক/ট্রেইলার (৩ এক্সল) – ৮০০ টাকা
- ট্রাক/ট্রেইলার (৪ এক্সল) – ১০০০ টাকা
- ট্রাক/ট্রেইলার (৪ এক্সলের অধিক) – ১০০০ টাকা + প্রতি এক্সল ২০০ টাকা
প্রসঙ্গত, যানবাহনে চাকার সাথে একটি অংশ থাকে, যাকে এক্সল বলে। এর মাধ্যমে গাড়ি কতটা প্রশস্ত সেটা নির্ধারণ হয়।
শেষ কথা, Conclusion :
আজকের এই প্রতিবেদন থেকে আপনারা বাংলাদেশের কর্ণফুলী টানেলে তথা বঙ্গবন্ধু টানেলে বা সুড়ঙ্গ সম্পর্কে বিবিধ তথ্য জানতে পেরেছেন। এই ধরনের পোস্ট আরো পেতে চাইলে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।