করলার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত, Details about the benefits of Bitter gourd in Bengali

করলার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত

তেতো সবজি হিসেবে সুপরিচিত হল করলা। তবে তেতো বলেই এর বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমাতেও এর জুড়ি নেই।তেতো হলেও সবজিটির উপকারী গুণের শেষ নেই। তেতো স্বাদের জন্য অনেকেরই এই সবজি অপছন্দ, আবার অনেকে এটি খেতে পছন্দ করেন। তবে আপনারা কি জানেন করলা কে ইংরেজিতে কি বলে ? যদি না জেনে থাকেন তবে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনে যাবেন।

করলার ইংরেজি নাম কি? What is the English name of Korola?

করলার ইংরেজি নাম এবং বৈজ্ঞানিক নাম অনেকেরই অজানা। তাই এখানে আমরা এই তথ্য গুলো উল্লেখ করলাম :

  • বৈজ্ঞানিক নাম : Momordica charantia
  • করলার ইংরেজি নাম : Bitter gourd ( বিটার গর্ড )

করলার বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস, Scientific classification of bitter gourd :

করলার বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
  • জগৎ: Plantae
  • শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
  • শ্রেণীবিহীন: Eudicots
  • শ্রেণীবিহীন: Rosids
  • বর্গ: Cucurbitales
  • পরিবার: Cucurbitaceae
  • গণ: Momordica
  • প্রজাতি: M. charantia

করলার পুষ্টি মান, Nutritional value of bitter gourd :

পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিবেচনা করলে করলা অনেক সমৃদ্ধ একটি সবজি। এতে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টি গুণাগুণ।  করলাতে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন A, B এবং C ইত্যাদি। প্রতি ১০০ গ্রাম করলায় উপস্থিত বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান হল :

  • কার্বোহাইড্রেট : ৩.৭০ গ্রাম,
  • প্রোটিন : ১ গ্রাম,
  • ফ্যাট : ০.১৭ গ্রাম,
  • খাদ্য আঁশ : ২.৮০ গ্রাম,
  • নায়াসিন : ০.৪০০ মিলিগ্রাম,
  • প্যান্টোথেনিক এসিড : ০.২১২ মিলিগ্রাম,
  • ভিটামিন এ : ৪৭১ আই ইউ,
  • ভিটামিন সি: ৮৪ মিলিগ্রাম,
  • সোডিয়াম ; ৫ মিলিগ্রাম,
  • পটাশিয়াম : ২৯৬ মিলিগ্রাম,
  • ক্যালসিয়াম : ১৯ মিলিগ্রাম,
  • কপার : ০.০৩৪ মিলিগ্রাম,
  • আয়রন: ০.৪৩ মিলিগ্রাম,
  • ম্যাগনেসিয়াম : ১৭ মিলিগ্রাম,
  • ম্যাঙ্গানিজ: ০.০৮৯ মিলিগ্রাম,
  • জিংক : ০.৮০ মিলিগ্রাম।

করলা তেতো হয় কেন? Why bitter gourd tastes bitter?

করলা তেতো হয় কেন?

করলায় একটি বিশেষ ধরনের জৈব রাসায়নিক যৌগ থাকে৷ এক বিশেষ ধরনের গ্লাইকোসাইড৷ নাম মোমরডিসিন৷ এই মোমরডিসিন নামক উপাদানের জন্য করলার তিক্ত হয়। কিন্তু এই তেতো স্বাদের উপাদানটির জন্যই করলার এত স্বাস্থ্যগত উপকারিতা।

করলায় কি কি উপাদান আছে? What are the beneficial ingredients present in bitter gourd?

ভিটামিন সি আমাদের দেহে প্রোটিন ও আয়রন যোগায় এবং ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক ক্ষমতা গড়ে তোলে। ফাইবার সমৃদ্ধ করলা কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমায়। করলায় রয়েছে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ম্যাগনেসিয়াম, ফলিক এসিড, জিঙ্ক, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম।

গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া যাবে কি? Can you eat bitter gourd during pregnancy?

করলাতে কিছু বিশেষ উপাদান থাকে যা মাসিকের রক্তপাত ঘটাতে পারে এবং গর্ভপাত ঘটাতে পারে। এটি শিশুর জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। করলা ভারতে তেতো তরমুজ বা মোমরডিকা চারান্তিয়া বা কারেলা নামেও পরিচিত, এটি অতুলনীয় স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির জন্য পরিচিত।

প্রতিদিন তিতা করলার জুস খাওয়া যাবে কি? Can you drink bitter gourd juice every day?

হ্যাঁ, প্রতিদিন খালি পেটে করলার রস পান করুন । এটি আপনার সুগারের মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ রাখবে, আপনার শারীরিক সিস্টেমকে ডিটক্সিফাই করবে, রক্ত পরিষ্কার করবে।

করলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যগুণ, Various health benefits of bitter gourd :

তেতো করলার গুণ

করলা তেতো মানবস্বাস্থ্যের জন্য এই সবজির উপকারী গুণও নেহাত কম নয়। করলার কিছু স্বাস্থ্য গুনাগুণ সম্পর্কে জেনে নিন :

১। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে :

এই সবজিটিতে থাকা কেরোটিনয়েড রক্তের সুগারের মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে রক্তে উপস্থিত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যারা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে করলার রস থেকে অনেক উপকার পেতে পারেন।

২। রক্ত পরিশুদ্ধ রাখে :

সুস্থভাবে বাঁচার জন্য রক্ত পরিশুদ্ধ থাকা জরুরী। এর জন্য আপনি প্রতিদিন করলার রস খাওয়া শুরু করতে পারেন, কারণ এতে “ব্লাড পিউরিফাইং এজেন্ট”  উপস্থিত, যা রক্তকে পরিশুদ্ধ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

৩। পেটের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করে :

করলায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে যা কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি পেটের নানাবিধ চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৪। দেহের ওজন কম করা :

অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় রয়েছে যাদের তারা চাইলে করলার রস খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন। এছাড়া এই পানীয়টি লিভার ফাংশন বাড়ানোর পাশাপাশি হজম ক্ষমতাও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

৫। পাইলসের সমস্যা দূর করে : 

যে সব ব্যক্তির পাইলসের সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন সকালে করলার রস খেতে পারেন। এছাড়া করলা গাছের মূল বেটে নিয়ে সেই পেস্ট পাইলসের উপর লাগালেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

৬। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে :

 প্রতিদিন সকাল বেলায় করলার রস খেলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

৭। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে :

করলার রসে প্রচুর পরিমানে বিটা-ক্যারোটিন থাকে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি করে। তাই চোখ ভালো রাখতে নিয়মিত করলা খেতে পারেন।

৮। পিত্ত শ্লেষ্মাজনিত রোগ সারায় :

অনেক সময় পিত্ত ঠিকমতো  কাজ করতে পারেনা ফলে শরীরে বিভিন্ন  উপসর্গ যেমন শরীর কামড়ানি, পিপাসা ও বমি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে এক চা চামচ করলা পাতার রস একটু গরম করে অথবা গরম জলের সাথে মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার করে খেতে পারেন।

৯। গুঁড়ো কৃমি দূর করে :

 বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক সময় গুঁড়ো কৃমির সমস্যা দেখা যায়। তাদের নিয়মিত আধা চা চামচ করে  করলার পাতার রস অল্প জলে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

১০। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে :

করলায় রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান যা দেহে ক্ষতিকর কোষের বৃদ্ধি আটকিয়ে দেয়। এছাড়া অ্যানিমিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের চিকিৎসাতেও এই সবজিটি দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে। 

এছাড়াও করলার রস অ্যালার্জি প্রতিরোধে দারুণ উপকারী। বাতের ব্যাথায় নিয়মিত করলা রস খেলে ব্যাথা আরোগ্য হয়। করলার জীবাণু নাশক ক্ষমতাও রয়েছে। চর্মরোগেও করলা বেশ উপকারী। এছাড়া জন্ডিস ও লিভারের অসুখে খাবারে অরুচি দেখা দিলে করলা খেলে রুচি আসে।

করলার জুসের বৈশিষ্ট্য, Various properties of bitter gourd juice :

সবজির মধ্যে করলা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাই হয়তো এর ঔষধি ব্যবহার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা জয়। অনেকেই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে করলার রস পান করে থাকেন। জেনে নিন করলার রসের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে :

 করলার রসের বৈশিষ্ট্য
  • ক্যান্সার প্রতিরোধক : এটি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার সম্ভাবনা থাকতে পারে। 
  • অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ : এটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে। 
  • এন্টিডায়াবেটিক : এটি ডায়াবেটিসে সাহায্য করতে পারে।
  • অ্যান্টিউলসার : এটি আলসারে সাহায্য করতে পারে।
  • অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ : এটি প্রদাহ উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
  • এন্টিফাঙ্গাল : এটি ছত্রাকের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট : এটি শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলগুলিকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • অ্যান্টিভাইরাল : এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে।   
  • অ্যান্টি-ওবেসিটি : এটি সর্বোত্তম ওজন অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
  • হাইপোটেনসিভ : এটি উচ্চ রক্তচাপের সাথে সাহায্য করতে পারে।
  • নিউরোপ্রোটেক্টিভ : এটি স্নায়ু এবং স্নায়ু কোষের জন্য ভাল হতে পারে।

করলা জুস এর ক্ষেত্রে সতর্কতা, Precautions for bitter gourd Juice : 

একথা সকলেই জানেন যে, সমস্ত খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। করলার রসের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নেই। পরিমিত মাত্রায় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি গ্রহণ করা উচিত। অন্যদিকে গর্ভবতী এবং বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের, বয়স্ক ব্যক্তি এবং শিশুদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ বেশি এবং বিস্তারিতভাবে প্রয়োজন। পাশাপাশি করলার রস খাবার প্রভাবে আপনার যে কোনো স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত উদ্বেগের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।

শেষ কথা, Conclusion :

করলার রস শরীরের জন্য অনেক বেশী উপকারী। স্বাদে না হলেও গুণ বিচারে সবজিকে গুরুত্ব না দিয়ে কোনো উপায় নেই। ভর্তা, ভাজি আর তরকারি বিভিন্ন ভাবেই সবজিটি খাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে বিভিন্ন প্রকার রোগের প্রকোপ কমাতে করলার জুড়ি নেই।

Frequently Asked Questions

করলা সেদ্ধ খেলে কি হয়?

করলা সেদ্ধ খেলে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে এবং আমাদের শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে এই সবজি। করলায় থাকে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করার উপাদান। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করলা হতে পারে উপকারী একটি সবজি। করলার রস খেলে মুক্তি পাবেন অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসরোগ ও গলার প্রদাহের মতো সমস্যা থেকে।

করলার জুস খেলে কি সুগার কমে?

করলার রস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর বলে পরিচিত, এটি আপনার নির্ধারিত চিকিৎসার সাথে পরিপূরক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।

করলার জুস খাওয়ার সঠিক সময়?

করলা জুস সাধারণত সকালে খালি পেটে পান করা উচিত।

Contents show

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts