জাতীয় সঙ্গীত হলো একটি দেশের সরকারীভাবে স্বীকৃত গান। এই গানটি সাধারণত দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে। বিভিন্ন দেশীয় অনুষ্ঠানে এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে এই গানটি গাওয়া হয় অথবা এর সঙ্গীত বাজানো হয়। বিভিন্ন দেশের জাতীয় সঙ্গীতের ইতিহাস ও তাৎপর্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
উদাহরণ:
- ভারতের জাতীয় সঙ্গীত: জনগণমন
- বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত: আমার সোনার বাংলা
জাতীয় সঙ্গীতের গুরুত্ব, Importance of National Anthem::
জাতীয় একতা: জাতীয় সঙ্গীত দেশের মানুষকে একত্রিত করতে সাহায্য করে।
গৌরবের প্রতীক: এটি একটি জাতির গৌরবের প্রতীক।
দেশপ্রেম জাগরণ: জাতীয় সঙ্গীত দেশপ্রেমের ভাবনা জাগিয়ে তোলে।
জাতীয় সঙ্গীত কেন গাওয়া হয়? Why is the national anthem sung?
জাতীয় সঙ্গীত একটি জাতির আত্মা, একটি দেশের গর্বের প্রতীক। এটি শুধু একটি গান নয়, এটি একটি জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।
জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার কারণ, Reasons for singing the national anthem :
- ঐক্যবদ্ধতা: জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে একটি জাতি একত্রিত হয়। এটি একটি সাধারণ পরিচয় এবং একটি সাধারণ উদ্দেশ্যের দিকে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।
- দেশপ্রেম জাগরণ: জাতীয় সঙ্গীতে দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং সম্মানের অনুভূতি জাগ্রত হয়। এটি দেশের জন্য আত্মত্যাগের মনোভাব তৈরি করে।
- ঐতিহ্যের স্মরণ: জাতীয় সঙ্গীত একটি জাতির ইতিহাসের স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের ত্যাগ এবং সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দেয়।
- গৌরবের অনুভূতি: জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশের গৌরবের অনুভূতি পাই। এটি আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
- সামাজিক ঐক্য: বিভিন্ন ধর্ম, জাতি, এবং ভাষার মানুষ মিলে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে সামাজিক ঐক্য বৃদ্ধি পায়।
- সারসংক্ষেপে, জাতীয় সঙ্গীত একটি জাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি আমাদেরকে একত্রিত করে, দেশপ্রেম জাগায়, ইতিহাসের স্মরণ করিয়ে দেয়, গৌরবের অনুভূতি দেয় এবং সামাজিক ঐক্য বৃদ্ধি করে।
জাতীয় সঙ্গীত কখন গাওয়া হয়? When is the national anthem sung?
জাতীয় সঙ্গীত সাধারণত বিভিন্ন জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে:
- স্বাধীনতা দিবস: প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়।
- সাধারণতন্ত্র দিবস: সাধারণতন্ত্র দিবসেও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু হওয়ার পূর্বে বা সপ্তাহের প্রথম দিন বা বিশেষ অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়।
- রাষ্ট্রীয় উৎসব: বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় উৎসব ও অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়।
- ক্রীড়া প্রতিযোগিতা: আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
- অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান: বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে, যেমন রাষ্ট্রপ্রধানের আগমন বা বিদায়, জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়।
- আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে : আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে সাধারণত দেশের প্রতিনিধিত্বকারীরা তাদের নিজ নিজ জাতীয় সঙ্গীত গান।
- সংক্ষেপে বলতে গেলে, জাতীয় সঙ্গীত একটি জাতির গর্ব ও একতার প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়।
জাতীয় সংগীত ও জাতীয় গান মধ্যে পার্থক্য, Difference Between National Anthem and National Anthem :
জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় গানের মধ্যে পার্থক্য হল:
- জাতীয় সঙ্গীত হল একটি সঙ্গীত রচনা, যা একটি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রামকে প্রকাশ করে। অন্যদিকে, জাতীয় গান হল একটি দেশাত্মবোধক গান।
- জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সুর থাকে।
- জাতীয় সঙ্গীত সরকারীভাবে অনুমোদিত হয়।
- জাতীয় গান পাবলিক বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়।
ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সুরকার কে? / জাতীয় সংগীতের কথা ও সুরকার কে? / ভারতের জাতীয় সংগীত কয়টি? Who is the composer of India’s national anthem?
ভারতের জাতীয় সঙ্গীত “জনগণমন” এর সুরকার হলেন দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। গানটির কথা লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে অনেকে ভাবেন যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই এই গানের সুর করেছিলেন। কিন্তু তা সত্য নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানের কবি। এই সঙ্গীত ইমন রাগে কাহারবা তালে নিবদ্ধ।
‘জন গণ মন’ গানটি ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হওয়ার কারণ, The reason why the song ‘Jan Gana Mana’ was adopted as the national anthem of India :
ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘জন গণ মন’ গানটিকে গৃহীত হওয়ার পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
- দেশপ্রেম ও একতার প্রতীক: এই গানটি ভারতের বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও ভাষার মানুষকে একত্রিত করে। এটি দেশের জন্য গভীর ভালোবাসা ও একতার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
- স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক: ‘জন গণ মন’ গানটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এটি স্বাধীনতার আন্দোলনের সময় দেশবাসীর মধ্যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তুলেছিল।
- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা: এই গানটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত। তাঁর সাহিত্যকর্মের মতোই এই গানটিও ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সমৃদ্ধি প্রকাশ করে।
- সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা: ‘জন গণ মন’ গানটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের কাছে সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য। এটি দেশের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এবং দেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়।
- এই সব কারণেই ‘জন গণ মন’ গানটিকে ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত করা হয়েছে।
‘জন গণ মন’ গানটি কখন এবং কোথায় প্রথম গাওয়া হয়েছিল? When and where was the song ‘Jan Gana Mana’ first sung?
‘জন গণ মন’ গানটি ১৯১১ সালে কলকাতায় আয়োজিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৬তম বার্ষিক অধিবেশনে প্রথম গাওয়া হয়। ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি গণপরিষদ এটিকে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করে।
ভারতের জাতীয় সংগীতের কত লাইন গাওয়া হয়? / জাতীয় সংগীত ভারতের, National anthem of India :
ভারতের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমন’ পাঁচটি শ্লোক নিয়ে গঠিত, তবে শুধুমাত্র প্রথম শ্লোকটিই জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে। শ্লোকটি হল :
জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা
পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মারাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছ্বল জলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গল দায়ক জয় হে, ভারত ভাগ্যবিধাতা
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় হে।।
ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘জন গণ মন’ গানটি গাওয়ার নিয়মাবলী কী কী? What are the rules for singing ‘Jan Gana Mana’ as the national anthem of India?
ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’ গাওয়ার কিছু নিয়মাবলী হল:
- জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য কাউকে বাধ্য করা যায় না।
- জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় যদি কেউ সম্মানের সাথে উঠে দাঁড়ায় না, তাহলে তা জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি অসম্মানজনক নয়।
- জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত।
- জাতীয় সঙ্গীতের সম্পূর্ণ সংস্করণটি প্রায় 52 সেকেন্ড সময় নেয়।
- আনুষ্ঠানিকভাবে শুধুমাত্র প্রথম স্তবকটি গাওয়া হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের সুরকার কে? Who is the composer of the national anthem of Bangladesh?
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হল “আমার সোনার বাংলা”। এই গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
কিছু তথ্য:
- রচয়িতা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
- সুর: গগন হরকরা
- গ্রহণকাল: ৩ মার্চ ১৯৭১
- বিষয়: বঙ্গমাতা বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা ও গর্ব
- উৎস: ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন
“আমার সোনার বাংলা” গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হওয়ার কারণ, The reason for its adoption as the national anthem of Bangladesh :
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে “আমার সোনার বাংলা” গানটি গৃহীত হওয়ার পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
- স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক: এই গানটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছে। এটি বাঙালি জাতীয়তাবোধের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়।
- ঐতিহাসিক গুরুত্ব: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত এই গানটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য একটি মূল্যবান অবদান। এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
- জনপ্রিয়তা: বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এই গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।
- একতা ও সম্প্রীতি: এই গানটি বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে একত্রিত করেছে এবং একটি জাতীয় পরিচয় বোধ তৈরি করেছে।
- সংক্ষেপে বলতে গেলে, “আমার সোনার বাংলা” গানটি বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং জাতীয়তাবোধের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই কারণেই এটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত সম্পূর্ণ ২৫ লাইনl / জাতীয় সংগীত বাংলাদেশ / বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত সম্পূর্ণ, National anthem of Bangladesh :
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥
তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে,
তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥
ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,
সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥
ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে—
দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব’লে গলার ফাঁসি
শেষ কথা, Conclusion:
আজকের এই প্রতিবেদনে জাতীয় সঙ্গীত সম্পর্কে বিবিধ তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। এই পোস্ট আপনাদের মনোগ্রাহী হলে অবশ্যই নিজের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে নেবেন। এই ধরনের পোস্ট আরো পেতে চাইলে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।