সর্দি, কাশির সমস্যায় অনেকেই ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করেন, তেমনই অনেকে কফ সিরাপ খেয়ে থাকেন। কাশি, কফের সমস্যা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেলে এই সিরাপ খেতেই হয়। তবে এই কফ সিরাপ কিন্তু মোটেই বেশি খাওয়া ঠিক নয়। কাশির সমস্যার জন্য যদি রাতের পর রাত ঘুম না আসে তখন খেতেই হয়। কিন্তু কফ সিরাপ খেলে সারাদিনই একটা ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায়। ঘুম ঘুম ভাব বেশি থাকা মানেই স্নায়ু শিথিল থাকা, যে কারণে অনেকেই প্রয়োজন ছাড়াও এই সিরাপ খান, যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
কাশির সিরাপ কি? What is cough syrup?
কাশির সিরাপ হল এক প্রকার তরল ওষুধ যা আমাদের কাশি এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন উপসর্গ যেমন গলা ব্যাথা , কনজেশন এবং বুকের অস্বস্তির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি সাধারণত মৌখিকভাবে সেবন করা হয় এবং এর সক্রিয় উপাদানগুলি মস্তিষ্কে কাশির প্রতিফলনের সংবেদনশীলতা হ্রাস করার মাধ্যমের কাশি দমন করে।
কাশির সিরাপ কত প্রকার? What are the types of cough syrup?
কাশির ওষুধের চারটি প্রধান শ্রেণি রয়েছে: কাশি দমনকারী, কফের ওষুধ, মিউকোলাইটিক্স এবং প্রাকৃতিক প্রতিকার।
কাশির সিরাপ বেশি খেয়ে ফেললে কি হয়? What happens if you take too much cough syrup?
অতিরিক্ত কাশির সিরাপ খেলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে, অস্থিরতা বা শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পেটের সমস্যা হতে পারে অতিরিক্ত সিরাপ খেলে। তাই সিরাপ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কাশি হলে কি কি খাবার খাওয়া যাবে না? If you have a cough, which food can not be consumed?
বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, দই, চিজ, মাখনের মতো খাবার এই সময়ে খেলে মিউকাসের উৎপাদন বেড়ে সমস্যা আরও জটিল হতে পারে । সমস্যা বাড়তে পারে ঝাল দিয়ে কোনও খাবার খেলেও। তাই হাঁচি-কাশি হয়ে থাকলে, যতই ইচ্ছা করুক না কেন, ঝাল জাতীয় মশলাদার খাবার না খাওয়াই শ্রেয়।
এবি কফ সিরাপ এর কাজ কি? What is the function of AB Cough Syrup?
এবি কফ সিরাপ এমন একটি ওষুধ যা ব্রঙ্কিয়াল স্রোত এবং প্রদাহকে বাধা দেওয়ার কাজ করে। এই ওষুধের ব্যবহার হল এটি হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, ক্রনিক দীর্ঘস্থায়ী ওবসট্রাক্টিভ পালমোনারি রোগ, বুক শক্ত হওয়া, এবং ফুসফুসের প্রদাহের মতো রোগের চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
ভেজা কাশির জন্য কি শুকনো কাশির সিরাপ খাওয়া যাবে? Can dry cough syrup be consumed for wet cough?
আপনার কাশির জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা আপনার কাশির ধরণের উপর নির্ভর করে। আপনার যদি ভেজা কাশি থাকে তবে এক্সপেক্টোরেন্টগুলি সবচেয়ে ভাল কাজ করে।
কাশি দমনকারী শুষ্ক কাশির জন্য সাহায্য করতে পারে । আপনার যদি এমন কাশি থাকে যা আপনাকে উদ্বিগ্ন করে, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে জানাতে দ্বিধা করবেন না।
কাশি হলেই কি কাফ সিরাপ খাওয়া উচিত? As soon as you have cold and cough, should you take cough syrup?
শীত শেষে দিনে মানুষ রীতিমতো ঘামছেন, আর রাতে আবহাওয়া ঠান্ডা অনুভব করছেন। আবহাওয়া বদলের এই পরিস্থিতিতে গলায় ঠান্ডা লাগা খুবই স্বাভাবিক, কারণ বাতাসে তখন প্রচুর জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময় কিছু মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই ইনফ্লুয়েজ্ঞা ও প্যারাইনফ্লুয়েজ্ঞা ভাইরাস চেপে ধরে।
কারও খুসখুসে কাশি হচ্ছে তো কারও বের হচ্ছে কফ। রাতে কাশির জন্য ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে বলে এইসব ব্যক্তি ছুটছেন ফার্মাসিতে, কিনছেন কাফ সিরাপ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কফ সিরাপ হল অ্যান্টিঅ্যালার্জিক, ব্রঙ্কোডায়ালেটর, এক্সপেকটোরেন্ট, ভ্যাসোকনস্ট্রিকটরের মিশ্রণ।কাশি কমাতে এই ওষুধ দারুণ কাজ করে। এক্ষেত্রে উপরের চারটি উপাদানের প্রতিটির কাজ ভিন্ন।
কোনও উপাদান অ্যালার্জি কমায়, কোনও উপাদান কফ গলায়, কোনও উপাদান মস্তিষ্কে কাশির সংকেতবাহী জায়গাকে দমিয়ে রাখে, কেউ আবার কফ তৈরি হতে দেয় না। তাই এই সমস্ত উপাদানগুলি একসঙ্গে কাজ করে বলেই কাশি কমে।
মনে রাখবেন, কাফ সিরাপের বিভিন্ন ধরন রয়েছে। এটা একজন বিশেষজ্ঞই ঠিক করে দেন যে কার কেমন ধরনের কফ সিরাপ লাগবে।
নিজে কিনে খেলে আদতে শরীরে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তখন আরও বড় সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে হাজির হতে হবে। তাই কাশি হলেই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ না করে কফ সিরাপ খাওয়া উচিত নয়।
কফ সিরাপ না বুঝে খাওয়ার সমস্যা, Problems of taking cough syrup without understanding :
ওষুধ না বুঝে খেলে অনেক সমস্যা হতে পারে-
1. অ্যাজমা রোগীদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে
2. ঘুম পায় অনেকের
3. ব্লাড প্রেশার বেড়ে যায়
4. বুকের ভিতর কফ সিক্রেশন কমে যাওয়ায় অন্য অসুখ হয়। তাই এই ধরনের বিষয়গুলি মাথায় রেখে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তবেই রোগ থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে পারবেন।
কাশির ওষুধ খেলে কি কফ বসে যায়, Does the phlegm accumulate in the chest after taking cough medicine?
অনেকেই মনে করেন যে, কাশির ওষুধ খেলে হয়তো কফ বসে যাবে। তবে বিষয়টা একবারেই তেমন নয়। এটা বলতে গেলে একটা কাল্পনিক ধারণা। এক্ষেত্রে বরং কফ বেরিয়ে যায় ও ফুসফুসে কফ তৈরি হওয়া বন্ধ হয়। তাই ভয় পাবেন না। প্রয়োজনে কফ সিরাপ খেতে পারেন।
এদিকে অনেকের আবার শুষ্ক কাশি হয়। সেই পরিস্থিতিতে কী কাজ করে কাফ সিরাপ? সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের মত, শুষ্ক কাশির বহু কারণ রয়েছে। নানা কারণে কাশি হতে পারে।
অ্যাসিড রিফ্লাক্স থেকেও সমস্যা হয়, পেটে গ্যাস থেকেও সমস্যা হওয়া সম্ভব। তাই কাশি হলেই কফ সিরাপ না খেয়ে, অর্থাৎ রোগ না বুঝে ওষুধ যাবে না। প্রথমে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
কার্যকর কাশির সিরাপ নির্বাচন, Selection of Effective Cough Syrup :
কাশির সাথে লড়াই করার সময় একটি কার্যকর কাশির সিরাপ নির্বাচন করা অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হতে পারে। কিভাবে আপনি ফার্মেসিতে অগণিত ওষুধ থেকে সঠিক ওষুধ নির্বাচন করবেন? এক্ষেত্রে কাশির সিরাপে কি কি উপাদান ব্যবহার করা হয় সেটা জানা খুব জরুরি।
কফ সিরাপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ওপিয়াম, হেরোইন, ক্লোরোফর্ম, মরফিন। এই হল প্রাথমিক উপকরণ। যদিও এখন এই সব উপকরণেও এসেছে বদল। ডেক্সট্রোমেটোমরফিন কেমিক্যাল, বেঞ্জোনেটেট, প্রোমেথাজেন- কোডেইন এসব ব্যবহার করা হয়।
এই সব উপাদান কিন্তু সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের মস্তিষ্ক এবং সমগ্র স্নায়ুতন্ত্রের উপরে। ঘুম ভাব ছাড়াও কফ সিরাপ খেলে সারাদিন মাথা ধরে থাকা, ক্লান্ত লাগা, চোখে অস্পষ্ট দেখা, হ্যালুসিনেট করা ইত্যাদি নানা সমস্যা থাকে। কোন ধরনের কাশিতে কোন সিরাপ ব্যবহৃত হয় জেনে নিন :
- এলার্জিক কাশির জন্য ডিফেনহাইড্রামাইন :
ডিফেনহাইড্রামাইন একটি অ্যান্টিহিস্টামিন ড্রাগ। এটি মূলত অ্যালার্জির উপসর্গ এবং সর্দি থেকে মুক্তি দিতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি antitussive বা কাশি দমনকারী হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। এটি বিভিন্ন ওভার-দ্য-কাউন্টার কাশি এবং সর্দি ওষুধে উপস্থিত রয়েছে।
- ভিজা কাশির জন্য অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড :
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড একটি কফের ওষুধ। এটি শ্বাসনালী থেকে শ্লেষ্মা বা কফ পরিষ্কার করতে সাহায্য করতে পারে এবং ফলদায়ক বা ভেজা কাশি হতে পারে। অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ব্রঙ্কিয়াল মিউকোসাকে জ্বালাতন করে যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে তরল তৈরি হয়।
- নাক বন্ধের জন্য ফিনিলেফ্রাইন :
ফেনাইলেফ্রাইন একটি ডিকনজেস্ট্যান্ট এবং এটি প্রধানত সাধারণ সর্দি, ফ্লু, অ্যালার্জি এবং সাইনোসাইটিস এবং ব্রঙ্কাইটিসের মতো নির্দিষ্ট শ্বাসযন্ত্রের ব্যাধিগুলির উপসর্গগুলি উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এই শ্রেণীর ওষুধ সাইনাস কনজেশন থেকে মুক্তি দিতে পারে।
উল্লেখ্য বিষয়গুলো জেনে রাখার মাধ্যমে আপনারা কাশির সিরাপ নির্বাচন সহজে করতে পারবেন।
কাশির সিরাপ খাওয়ার পর কি শুয়ে থাকা উচিত? Should I lie down after taking cough syrup?
ওষুধ খাওয়ার সময় দাঁড়ান বা বসুন। ওষুধ খাওয়ার সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না , নিশ্চিত করুন যে ওষুধগুলি খাদ্যনালী দিয়ে পেটে গেছে।
শেষ কথা, Conclusion :
কফ সিরাপ অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়, তবে প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে খেতে পারেন। উপরে উল্লেখিত জরুরী বিষয়গুলো এক্ষেত্রে মাথায় রাখা জরুরি, তাহলে কাশির সিরাপে আপনার ক্ষতি হবে না এবং কাশি থেকেও সহজে মুক্তি পাবেন।
Frequently Asked Questions
কাশি দমনকারী, কফের ওষুধ, মিউকোলাইটিক্স এবং প্রাকৃতিক প্রতিকার।
এটা বলতে গেলে একটা কাল্পনিক ধারণা। এক্ষেত্রে বরং কফ বেরিয়ে যায় ও ফুসফুসে কফ তৈরি হওয়া বন্ধ হয়। তাই ভয় পাবেন না।
দই, চিজ, মাখনের মতো খাবার, ঝাল দিয়ে কোনও খাবার, মশলাদার খাবার না খাওয়াই শ্রেয়।