হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দেবতা ও অসুরদের মধ্যে অমৃতের জন্য যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধ ১২ দিন ধরে চলেছিল এবং এই সময়কাল দেবতাদের ১২ বছরের সমান ছিল। তাই, প্রতি ১২ বছর পর পর কুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়।
জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, বৃহস্পতি গ্রহ যখন কুম্ভ রাশিতে প্রবেশ করে, তখন কুম্ভের যোগ তৈরি হয়। এই যোগ অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় এবং এই সময় গঙ্গায় স্নান করলে সকল পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এক কথায় বলতে গেলে, মহাকুম্ভ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক।

তবে এবছর মহাকুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের হতাহতের ঘটনা সামনে এসেছে। ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলায় প্রয়াগরাজে ৫ জানুয়ারি মৌনি অমাবস্যা তিথিতে শাহি স্নানের সময় ভয়াবহ পদপিষ্টের ঘটনা ঘটেছে। লাখ লাখ তীর্থযাত্রী একসঙ্গে গঙ্গা, যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে জড়ো হয়েছিলেন পুণ্যস্নানের জন্য। কিন্তু হঠাৎই প্রচণ্ড ভিড়, দিশাহীন মানুষ, বাধাপ্রাপ্ত প্রবেশ ও প্রস্থান পথ এর কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এই ঘটনার পর থেকে স্থানীয় হাসপাতালগুলিতে আহতদের ভিড় লেগে রয়েছে। এদিকে, মেলায় অনেকেই নিখোঁজ হয়ে যান, তাদের খোঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
অতীতেও বিভিন্ন সময় মহাকুম্ভে এরকম দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটার প্রধান কারণ হল মেলা উপলক্ষে বিপুল জনসমাগম এবং সেই অনুযায়ী পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনার অভাব।

কিছু ক্ষেত্রে মানুষের অসাবধানতা বা তাড়াহুড়োও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। অনেকে স্নান করার জন্য বা অন্য কোনো ধর্মীয় আচার পালনের জন্য অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করে, যার ফলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য, নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নজর রাখা উচিত:
- পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা: মেলার আয়োজকদের উচিত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা এবং জনসমাগমকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা।
- স্থান পরিকল্পনা: মেলাস্থলের পরিকল্পনা এমনভাবে করা উচিত, যাতে মানুষের চলাচল সহজ হয় এবং ভিড় বেশি না হয়।
- সচেতনতা: জনগণকে সচেতন করা উচিত যাতে তারা সাবধানে থাকে এবং তাড়াহুড়ো না করে।
মহাকুম্ভ একটি বিশাল ধর্মীয় উৎসব, কিন্তু মানুষের জীবন সবচেয়ে মূল্যবান। তাই, আমাদের সকলেরই উচিত এই ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য সতর্ক থাকা এবং সহযোগিতা করা।