আজকাল বিভিন্ন ধরনের মুরগি পাওয়া যায়। সংকরায়ণ পদ্ধতিতেও মুরগির বিভিন্ন ব্রিড বাজারজাত করা হয়েছে, যার থেকে বহু মানুষ মুরগি পালনের মাধ্যমে ব্যবসার কাজ করছেন। বলাই বাহুল্য যে, মুরগি পালন করার মাধ্যমে আজকাল অনেকেই আয় করেছেন। জনপ্রিয় মুরগির ব্রিডগুলোর মধ্যে একটি হল টাইগার মুরগি, যা নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
টাইগার মুরগি কি ? What is tiger chicken?
বর্তমানে টাইগার মুরগী খুবই জনপ্রিয়। মুরগি ব্যবসায়ীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মুরগিকে মাংস ও ডিম উৎপাদনের জন্য লালন পালন করে থাকে। এই ধরনের মুরগি মূলত মাংসের জন্য অধিক জনপ্রিয়। তবে টাইগার মুরগীগুলো সাধারণত বছরে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ টি ডিম দিয়ে থাকে। এই মুরগিগুলোকে ভালোভাবে লালন পালন করলে তথা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে এগুলো সাধারণত ৭ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাছাড়াও মুরগিগুলো পালন করার বিষয়ে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে যার ফলে অতি সহজেই টাইগার মুরগি পালন করে লাভবান হওয়া যায়।
টাইগার মুরগি চেনার উপায়, How to identify tiger chickens?
টাইগার মুরগি চেনার বিভিন্ন উপায় আছে। এগুলো অন্যান্য মুরগির থেকে কিছুটা আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। টাইগার মুরগী চেনার উপায়গুলো হলো :
■ টাইগার মুরগি কিছু ক্ষেত্রে দেখতে ডোরাকাটা হয়ে থাকে।
■ এদের পালকের রং ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে।
■ টাইগার মুরগি মূলত কিছুটা নাদুস নুদুস প্রকৃতির হয়।
■ অন্যান্য মুরগির তুলনায় টাইগার মুরগির ওজন তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে।
■ টাইগার মুরগির পা গুলো বেশ মোটা হয়।
■ ওজন বেশি হওয়ার ফলে টাইগার মুরগি দেখতেও তুলনামূলক বড় আকারের হয়ে থাকে।
টাইগার মুরগির বৈশিষ্ট্য, Features of Tiger Chicken :
টাইগার মুরগি পালন করতে হলে অবশ্যই টাইগার মুরগির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে রাখা জরুরী।
■ সাধারণত টাইগার মোরগের ওজন হয় ৭ থেকে ৮ কেজি। অন্যদিকে টাইগার মুরগির ওজন হয়ে থাকে ৫ থেকে ৬ কেজি এর মত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলোর ওজন পাঁচ কেজি হয়। যদি এদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয় তাহলে সঠিক ওজন পাওয়া সম্ভব।
■ টাইগার মুরগির বয়স দুই থেকে আড়াই মাস হলেই আপনারা অতি সহজে তা বিক্রি করতে পারবেন।
■ টাইগার মুরগির সাধারণত প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৮০ গ্রাম খাবার খেয়ে থাকে।
■ টাইগার মুরগির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এই মুরগিগুলো ৫ মাসের মধ্যে ডিম দিতে শুরু করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে তা ওজনের ওপর নির্ভর করে ডিম দিতে শুরু করে। এদের সঠিক ওজন থাকলে তাড়াতাড়ি ডিম দেয়।
■ টাইগার মুরগি দুই বছর থেকে শুরু করে আড়াই বছর পর্যন্ত ডিম দেয়।
■ খামারে টাইগার মুরগি অতি সহজেই লালন পালন করা যায়।
টাইগার মুরগির খাবারের তালিকা, Food of tiger chicken :
■ টাইগার মুরগির বাচ্চা সাধারণত জন্ম হওয়ার সাথে ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম এর থাকে।
■ টাইগার মুরগির বাচ্চার বয়স একদিন হলে সে সময় থেকে এদেরকে এদের ওজন অনুযায়ী পেরু গ্রাম পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
■ জন্মের দ্বিতীয় দিনে টাইগার মুরগির ওজন ৭২ গ্রাম হয়ে থাকে। এদিন তাদের ১৭ গ্রাম থেকে ৩০ গ্রাম পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
■ তৃতীয় দিনে টাইগার মুরগির ওজন ৯০ গ্রাম হয়, এ সময়ে তাদেরকে ৫১ গ্রাম পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
■ চতুর্থ দিনে যখন টাইগার মুরগির বাচ্চার ওজন ১১০ গ্রাম হলে তখন তাদেরকে ৭৫ গ্রাম পরিমাণ খাবার খাওয়াতে হবে।
■ পঞ্চম দিনের যখন টাইগার মুরগির বাচ্চার মোট ওজন হবে ১৩২ গ্রাম তখন তাদেরকে ৮০ গ্রাম খাবার দিতে হবে।
■ এরপর টাইগার মুরগির বাচ্চার বয়স ষষ্ঠ দিন হলে, যখন তাদের ওজন ১৫৭ গ্রাম পরিমাণে হবে, তখন তাদের ১০৫ গ্রাম পরিমাণ খাবার দিতে হবে।
■ সপ্তম দিনে টাইগার মুরগির বাচ্চাগুলোর ওজন ১৮৫ গ্রাম হলে তখন এদেরকে ১৬৮ গ্রাম পরিমাণে খাবার খাওয়াতে হবে।
টাইগার মুরগী পালনের সুবিধা, Benefits of rearing tiger chickens :
■ টাইগার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাধারণত বেশি, তাই অন্যান্য মুরগীদের থেকে এদের রোগ কম হয়।
■ টাইগার মুরগি মাংসের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এর কারণ এই মুরগির ওজন সাধারণত ৭ থেকে ৮ কেজি পর্যন্ত হতে পারে, পাশাপাশি সাধারণ মুরগির চেয়ে এদের শরীরে মাংস বেশি হয়।
■ টাইগার মুরগির খাবারের খরচ অন্যান্য মুরগী থেকে তুলনামূলক কম হয় এবং এগুলো খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
■ টাইগার মুরগি দেখতে বেশ আকর্ষণীয় এবং বড় আকারের হয়, যার ফলে বাজারে অতি সহজেই এবং কম সময়ে এই মুরগী বিক্রি করা যায়।
■ টাইগার মুরগী থেকে বাচ্চা উৎপাদন করেও ব্যবসা করা যায়, যারা এমন করতে চান তারাও লাভবান হতে পারবেন। এভাবে মুরগি সহ আপনি মুরগির বাচ্চার মাধ্যমেও লাভবান হতে পারবেন।
■ টাইগার মুরগি পালন করে কম সময়ে অর্থ উপার্জন করা যায়। এর কারণ এই ধরনের মুরগির ওজন সাধারণত দ্রুত বৃদ্ধি পায় এর ফলে সঠিক খাবার দেওয়ার মাধ্যমে এদের ওজন বৃদ্ধি করে আপনারা কম সময়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
■ এই মুরগিগুলো সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে এবং সারা বছর ধরে ভালো পরিমাণ ডিম দেয়।
■ টাইগার মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো বলে রোগ কম হয়, তাই এদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন বেশি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
■ সাধারণত একটি টাইগার মুরগী বিক্রয়ের উপযোগী হয় দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে।
■ টাইগার মুরগি খোলা বা আবদ্ধ যে কোন জায়গাতেই পালন করা যেতে পারে।
টাইগার মুরগি পালন, Tiger Chicken Breeding :
টাইগার মুরগি পালন করার ক্ষেত্রে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন।
- টাইগার মুরগি খোলা বা আবদ্ধ যে কোন জায়গাতেই পালন করা যেতে পারে।
- মুরগির খামারে প্রবেশের সময় অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখা জরুরী।
- এদের খাবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ফ্যাট এবং প্রোটিনের পরিমাণ থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- টাইগার মুরগীকে যেকোনো ধরনের ওষুধ খাওয়ানোর আগে অবশ্যই পশু বিশেষজ্ঞ এর পরামর্শ নিতে হবে।
টাইগার মুরগি কত মাস বয়সে ডিম পাড়ে ? At what age do tiger chickens lay eggs?
টাইগার মুরগির বয়স সাধারণত ৫ মাস অথবা ২০ সপ্তাহ হলে এরা ডিম দেওয়া শুরু করে। এই মুরগি বছরে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ টির মত ডিম দিতে পারে। তবে ডিম দেওয়ার ক্ষমতা ধীরে ধীরে কম হতে শুরু করলে তখন তারা বছরে ১৮০ থেকে ২০০ টির মত ডিম দেয়। এই ধরনের মুরগি সাধারণত দুই থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত অনায়াসেই ডিম দিতে পারে। তবে এর থেকে তাদের ডিম দেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকে।
টাইগার মুরগির ভ্যাকসিন তালিকা, List of tiger chicken vaccines :
■ (বয়স ১-৩ দিন) হলে ভ্যাকসিন (আইবি+ এনডি)
■ (বয়স ৭-৯ দিন) হলে ভ্যাকসিন (আই বি ডি)
■ (বয়স ১৬-১৭ দিন) হলে ভ্যাকসিন (ল্যাসোটা)
■ (বয়স ১৮-২০ দিন) হলে ভ্যাকসিন (আই বি ডি)
■ (বয়স ২৪-২৮ দিন) হলে ভ্যাকসিন (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা)
■ (বয়স ৩০-৩৫ দিন) হলে ভ্যাকসিন (ফাউল পক্স)
■ (বয়স ৬-৭ সপ্তাহ) ভ্যাকসিন (এনডি)
■ (বয়স ৮ সপ্তাহ) হলে ভ্যাকসিন (ফাউল কলেরা)
■ (বয়স ১২ সপ্তাহ) হলে ভ্যাকসিন (ফাউল কলেরা)
■ (বয়স ১৫-১৬ সপ্তাহ) হলে ভ্যাকসিন (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (H5N1)
টাইগার মুরগি কত টাকা কেজি? What is the price of tiger chicken per kg?
সাধারণত, প্রতিটি টাইগার মুরগির দাম 500-1000 টাকা। সুতরাং, 300 টি মুরগি কেনার খরচ হবে 150,000-300,000 টাকা। মুরগি কেনার খরচ কত হবে তা নির্ভর করবে মুরগির বয়স, ওজন, ও স্বাস্থ্যের উপর। টাইগার মুরগির ওজন সাধারণত ৭ থেকে ৮ কেজি হয়ে থাকে।
শেষ কথা, Conclusion :
টাইগার মুরগি পালন করার জন্য এদের বৈশিষ্ট, সঠিক খাবারের পরিমাণ, লালন পালন সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা জানা খুব জরুরি। এর কারণ অনেকেই এমন আছেন যারা এই ধরনের মুরগি সম্পর্কে উল্লেখ্য বিষয়গুলো না জানার ফলে টাইগার মুরগি পালন করেও লাভের মুখ দেখছেন না। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলি আপনাদের টাইগার মুরগি সম্পর্কে জানতে সহায়তা করেছে।
Frequently Asked Questions
টাইগার মুরগী সাধারণত দুই থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত টানা ডিম দিতে থাকে।
টাইগার মুরগী পালন করতে আমাদের জানামতে প্রায় দুই বর্গফুট জায়গা লাগে। তবে আপনি এক্ষেত্রে খামারের জায়গায় পরিমাণ বাড়াতে পারেন।
টাইগার মুরগির ওজন সাধারণত ৭ থেকে ৮ কেজি হয়ে থাকে।
টাইগার মুরগি সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস বয়স থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে। তবে অনেক সময় পুষ্টিকর প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে পাঁচ মাসের আগেই ডিম দেওয়া শুরু করে।