বহুকাল পূর্ব থেকেই মানুষ বেকিং সোডার বিভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। সোডিয়াম বাইকার্বোনেটের মিহি গুঁড়া হচ্ছে বেকিং সোডা। খাবারে এর ব্যবহার হয় সেটা হয়তো সকলেই জানেন তবে খাবার ছাড়াও এর রয়েছে আরও নানা ব্যবহার। পরিচ্ছন্নতার কাজের পাশাপাশি বেকিং সোডা রূপচর্চাতেও অনায়াসে কাজে লাগানো যায়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বেকিং সোডার বিভিন্ন ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করবো।
নিত্যদিনের কাজে বেকিং সোডা ব্যবহার, Baking soda has various uses in everyday life : –
- কাপড় থেকে ঘামের গন্ধ দূর করতে ধোয়ার সময় ডিটারজেন্টের সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এর ব্যবহার শার্টের কলার ও হাতা থেকে খুব সহজে ময়লা দূর হয়।
- এক চামচ বেকিং সোডা হালকা গরম জলে মিশিয়ে ফল ও সবজি পরিষ্কার করে নিন। এই পদ্ধতি ময়লা ও কীটনাশক দূর করতে চমৎকার কাজ করে।
- রান্নাঘর পরিষ্কার করা তথা রান্নাঘরে থাকা বিভিন্ন আসবাব ঝকঝকে রাখতে বেকিং সোডার কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য একটি ছোট পাত্রে ১ চা চামচ বেকিং সোডা নিয়ে সেটা ফ্রিজে রেখে দিন, এটি ফ্রিজের ভেতরের গন্ধ দূর করে দেবে।
- এক টুকরা ভেজা স্পঞ্জ নিয়ে তাতে কিছুটা পরিমাণ বেকিং সোডা লাগিয়ে সেটা দিয়ে ফার্নিচার পরিষ্কার করলে ফার্নিচারগুলো ঝকঝকে হবে।
- গরম জলে এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়ে ধাতব ট্যাপ বা বেসিন পরিষ্কার করতে পারবেন।
- এক কাপ ভিনেগারের সঙ্গে এক কাপ বেকিং সোডা মিশিয়ে মরচেপড়া উপরিতলে তা ঘষলে মরিচা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রূপচর্চাতে বেকিং পাউডারের ব্যবহার, Use of baking powder in skincare :
- চুলের গোড়া থেকে ময়লা দূর করতে রেগুলার শ্যাম্পুর সঙ্গে ১ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে চুল পরিষ্কার করে নিন। এতে খুশকিও কম হয়ে যাবে।
- বাথটাবের জলে আধা কাপ বেকিং সোডা মিশিয়ে সেই জলে স্নান করলে ত্বকে থাকা জীবাণু দূর হবে, পাশাপাশি ত্বকের রোদে পোড়া দাগ কম হয়ে যাবে।
- দাঁতের যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে বেকিং সোডা বেশ কার্যকর এটা হয়তো অনেকেই জানেন। বেকিং সোডা দাঁতে কালো দাগ থাকলে তা দূর করার পাশাপাশি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও সাহায্য করে।
- অনেকের গলা-ঘাড়ে কালো দাগ পড়ে যায়, সেই দূর করতে ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা নিয়ে সামান্য জলে মিশিয়ে তিন মিনিট ভালোভাবে ঘষুন, মিশ্রণটি চামড়ায় শুকানোর জন্য কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার এভাবে করলে দাগ কম হয়ে যাবে।
- বেকিং সোডা ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য রক্ষায়ও নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। এর কারণ হল এটি ব্রন ও ব্ল্যাকহেডস দূর করে দেয়। পাশাপাশি এটি ত্বক ও শরীরের স্ক্রাব হিসেবেও কাজ করে।
বেকিং সোডা উপরিউক্ত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করলেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়া শ্রেয়।
বেকিং সোডার ব্যতিক্রমী কিছু ব্যবহার, Some exceptional uses of baking soda :
- মধু বা চিনি বেকিং সোডার সঙ্গে মিশিয়ে ঘরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিতে হবে। মিষ্টির গন্ধে তেলাপোকা সেই খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হবে ও বেকিং সোডার প্রকোপে মারা যাবে।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঘরের কোণায় কিংবা সিংকের পাইপের মুখে বেকিং সোডা ছড়িয়ে রাখুন। এভাবে পরপর কয়েকদিন করলে পোকামাকড় দূর হবে।
- নারকেল তেলের সাথে প্রয়োজন মতো বেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়ে সেটা দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের হলদে দাগ দূর হবে।
- টয়লেট ঝটপট পরিষ্কার করতে চাইলে বেকিং সোডা একটি স্প্রে বোতলে ১ টেবিল চামচ নিয়ে তাতে ৩ টেবিল চামচ সাদা ভিনেগার ও ৪ টেবিল চামচ লেবুর রস সহ ২ টেবিল চামচ লিকুইড সোপ ও আধা কাপ জল নিয়ে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন। এই মিশ্রণ টয়লেটের মেঝে, বেসিন ও কমোডে স্প্রে করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ব্রাশ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ইস্ত্রিতে যদি কালচে দাগ পড়ে তবে তা পরিষ্কার করার জন্য বেকিং সোডা ও জল একসঙ্গে মিশিয়ে ভারি পেস্ট তৈরি করে সেটা দাগের উপর ৪৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ঘষে তুলে নিন।
- রূপার গয়না বা কড়াইতে লেগে থাকা পোড়া দাগ তুলতে বেকিং সোডার মিশ্রণ তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। মিশ্রণটি তৈরি করার জন্য ২ টেবিল চামচ বেকিং সোডা ও ১ টেবিল চামচ লিকুইড ডিশ ওয়াসিং সোপ মিশিয়ে তাতে প্রয়োজন মতো ভিনেগার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি দাগ পরিষ্কার করতে সহায়তা করবে।
- নারকেল তেলের সাথে বেকিং সোডা মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে বাহুমূলের কালচে দাগ দূর করতে পারেন। মিশ্রণটি কয়েক মিনিটে লাগিয়ে রেখে, এরপর ধুয়ে ফেলুন।
দৈনন্দিন জীবনে বেকিং সোডার ব্যবহার কি? What is the use of baking soda in daily life?
বেকিং সোডা একটি বহুমুখী উপাদান যার ব্যবহার রান্নার বাইরেও প্রসারিত। গন্ধ নিরপেক্ষকরণ এবং পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে এই পরিবারের প্রধান জিনিসটি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, কারণ এটি শক্ত দাগ অপসারণ করতে, নোংরা গন্ধ দূর করতে এবং ওভেন, মাইক্রোওয়েভ এবং টাইল গ্রাউটের মতো কঠিন জায়গাগুলি পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
বেকিং সোডা কোথায় ব্যবহার করা হয়? Where is baking soda used?
বেকিং সোডা হল কেক, মাফিন এবং কুকিজের মতো বেকড পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত একটি খামির। এটি সোডিয়াম বাইকার্বোনেট নামে পরিচিত, এটি একটি সাদা স্ফটিক পাউডার যা প্রাকৃতিকভাবে ক্ষারীয় তথা মৌলিক। বেকিং সোডা সক্রিয় হয়ে ওঠে যখন এটি একটি অ্যাসিডিক উপাদান এবং একটি তরল উভয়ের সাথে মিলিত হয়।
ত্বকের জন্য বেকিং সোডা কিভাবে ব্যবহার করব? How to use baking soda for skin?
মৃত ত্বকের কোষগুলি অপসারণ করতে বা প্রদাহকে প্রশমিত করতে, কিছু লোক ফেসিয়াল স্ক্রাব বা মাস্কে বেকিং সোডা ব্যবহার করে থাকেন। ফেসিয়াল ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অল্প পরিমাণ গরম জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে একটি পেস্ট গঠন করে তা আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ব্রণে প্রয়োগ করতে পারেন এবং আপনার ত্বকে ম্যাসেজও করতে পারেন।
বেকিং সোডা দিয়ে কিভাবে কাপড় পরিষ্কার করতে হয়? How to clean clothes with baking soda?
কিছু কিছু লন্ড্রিতে কাপড় পরিষ্কার করতে বেকিং সোডা ব্যবহার করা হয়, এটি আপনার ওয়াশিং মেশিনের টবে যোগ করে ব্যবহার করা যায়। আপনি কাপড়ে লেগে থাকা দাগ অপসারণের জন্য এর একটি পেস্ট তৈরি করে নিতে পারেন, এর জন্য প্রথমে এটি জলে দ্রবীভূত করতে হবে; তারপর কাপড়ে দাগ লেগে থাকা অংশে লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন।
বেকিং সোডা সারারাত মুখে লাগানো যাবে কি? Can baking soda be applied overnight on face?
বেকিং সোডা ব্রণ ব্রেকআউট কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং ত্বকের ব্যথা ও প্রদাহ পরিচালনা করতে পারে এর প্রদাহরোধী এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের কারণে, তবে, স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদের দ্বারা ত্বকে বেকিং সোডা ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয় না, কারণ এটি ত্বককে জ্বালাতন করতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ অপসারণ করতে পারে।
বেকিং সোডা দিয়ে কাপড়ের দাগ তোলার উপায় কি? How to remove stains from clothes with baking soda?
আপনি সাধারণত 4 টেবিল চামচ বেকিং সোডা এবং 60 মিলি জলের অনুপাতের দিকে তাকাবেন যা আপনার প্রয়োজন অনুসারে যতগুলি দাগ প্রয়োগ করতে আপনাকে পর্যাপ্ত পেস্ট তৈরি করবে। ওয়াশিং মেশিনে কাপড়ের দাগযুক্ত কাপড়টি ধোয়ার আগে বেকিং সোডা পেস্টটি সারারাত দাগের মধ্যে শোষণ করতে ছেড়ে দিন।
বেকিং সোডা দিয়ে মুখ কুলি করার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি? What are the side effects of washing your face with baking soda?
বেকিং সোডার ব্যবহার করলে বিশেষ করে মহিলাদের অ্যালার্জি হতে পারে, ফলস্বরূপ, এটি মুখের তালু, মাড়ি, জিহ্বা এবং ঠোঁটে ফুসকুড়ি এবং ঘা হতে পারে। এর ব্যবহার করলে জ্বলন, চুলকানি বা ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও, মাড়ি থেকে রক্তপাত অসম্ভব নয়।
বেকিং সোডা দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার অপকারিতা? Disadvantages of brushing teeth with baking soda?
বেকিং সোডা দাঁত ব্যবহার করার জন্য ব্যবহার করলে এটি আপনার এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর অনুপযুক্ত ব্যবহারে আপনার দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করতে পারে। বেকিং সোডা বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট দ্রবণ দিয়ে জোরালোভাবে প্রতিদিন ব্রাশ করা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে শুরু করবে, তাই এর অতিরিক্ত ব্যবহার না করা ভালো।
শেষ কথা, Conclusion :
বেকিং পাউডার বা বেকিং সোডা বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায়, এটা হয়তো উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আপনারা বুঝতেই পারছেন। আপনারা চাইলে বেকিং পাউডার এর ব্যবহার উল্লেখ্য পদ্ধতি অনুসারে করতে পারেন।
Frequently Asked Questions
বেকিং সোডা বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট দ্রবণ দিয়ে জোরালোভাবে প্রতিদিন ব্রাশ করা দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে শুরু করবে, তাই এর অতিরিক্ত ব্যবহার না করা ভালো।
দাগযুক্ত কাপড়টি ধোয়ার আগে বেকিং সোডা পেস্ট লাগিয়ে সারারাত দাগের মধ্যে শোষণ করতে ছেড়ে দিন। পরের দিন কাপড়টি ধুয়ে নিন।
বেকিং সোডা হল কেক, মাফিন এবং কুকিজের মতো বেকড পণ্যগুলিতে ব্যবহৃত একটি খামির।