সরল কথা বলতে গেলে কোনো একজন ব্যক্তির সাথে কোন বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে এবং সেই ব্যক্তি কোন এক সময় সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তাকেই বেইমানি বলে।
শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে স্বীকৃত হলেও মানুষের মধ্যে অনেক ঘৃণিত অভ্যাস রয়েছে, এর অন্যতম হলো- বেঈমানী। পৃথিবীর সর্বত্রই এমন কিছু ঘৃণ্য স্বভাব-চরিত্রের মানুষ পাওয়া যায়, যারা অতীতের সব ঋণ অস্বীকার করে দিয়ে নিজের উপকারীর বুকে ছুড়িকাঘাত করতে কোনো দ্বিধা বোধ করে না। বেইমান হল মানুষ শুধু নিজের কথা ভাবে। এসব ব্যক্তি বেঈমান হিসেবে পরিচিত।
বেঈমান কিভাবে চেনা যায় ? How to recognize dishonest people ?
মানুষ যখন বেশি লোভে পড়ে যায়, তখনই বেইমানি করে। কেউ খারাপ পরিবেশে বেড়ে উঠলে তার মধ্যে মিথ্যাবাদী, বেইমানী, প্রতারণা, মানুষকে ঠকানো এগুলোর প্রভাব অনেক বেশি থাকে তাদের মধ্যে।। আর যারা সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে উঠে তাদের মধ্যে ভাল গুণ গুলোর প্রভাব বেশি থাকে। মানুষের কিছু বিশেষ চারিত্রিক দিক দেখে বুঝতে পারবেন যে তারা বেঈমান, সেগুলো হল :
- যখন মানুষ বিপদে পরে মিথ্যা বলে।
- মানুষের কাছে সুনামের জন্য মিথ্যা বলে।
- অনেক সময় মন জয় করার জন্য মিথ্যা বলে।
- স্বভাবগত কারণে বেইমানি করে।
- টাকার লোভে পরে বেইমানি করে।
- সম্পদ আত্মস্বাধ করার জন্য বেইমানি করে।
- ক্ষমতা লাভের জন্য প্রতারনা করে।
- পদোন্নতির জন্য প্রতারনা করে।
- প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য প্রতারনা করে।
বেইমান মানুষ নিয়ে কিছু উক্তি, Some quotes about dishonest people :
জীবনে চলার পথে বহু মানুষ আমাদের সাথে যুক্ত হয়, কাজের ক্ষেত্রে হোক কিংবা বন্ধু হিসেবে। কিন্তু সঠিক পরিস্থিতিই আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে সেই ব্যক্তিগণ বিশ্বাসযোগ্য না বেঈমান।
আমাদের সকলের জীবনেই এমন বহু অভিজ্ঞতা আছে যেখানে আমরা কিছু বেইমান মানুষকে চিনতে পেরেছি, যাদেরকে আমরা খারাপ সময়ে সহায়তা করলেও তাদের থেকে কোনো সাহায্য আশা করতে গেলে তারা নিজেকে আমাদের থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
এইসব বেঈমান মানুষ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখতে গিয়ে অনেকেই উপযুক্ত উক্তির খোঁজ করে থাকেন। তাই আজকের এই প্রতিবেদনের আমরা বেইমান মানুষ নিয়ে কিছু উক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
- অপরিচিত মানুষগুলো কখনো বেইমান হয় না! আমাদের খুব পরিচিত মানুষগুলোই বেইমান থাকে।
- বেইমান মানুষ কখনো নিজের ভালো ছাড়া অন্যের অনুভূতি বোঝে না।
- বেইমান মানুষগুলো কখনও কাউকে ভালোবাসতে পারে না! তারা নিজের প্রয়োজন অনুসারেই প্রিয়জন বানায়।
- বেইমানরা নিজের স্বার্থ উদ্ধার করে ঠিকই ভালো থাকে! ভালো থাকেনা শুধু বোকা মানুষ গুলো, যারা একসময় সেই বেঈমানের উপর ভরসা করেছিল।
- স্বপ্ন কারো সাথে কখনো বেইমানি করে না! বরং বেইমানি করে স্বপ্ন দেখানো মানুষগুলো।
- যে অন্য কারো খুশী ছিনিয়ে নেয়, তার সুখের মেয়াদ বেশিদিন হয় না! তাই আমারও বিশ্বাস যে বেঈমানদেরও একদিন শাস্তি হবে।
- বেইমান মানুষেরা কখনো ভালোবাসার মূল্য বোঝেনা! এরা বরং মানুষের জীবনে এসে সেই মানুষগুলির সুন্দর জীবনটা ধ্বংস করে দেয়।
- মনে খুবই কষ্ট হয় তখন..! যখন নিজের খুব কাছের মানুষগুলো বেইমানি করে।
- পৃথিবীতে সব কিছুই হয়তো ভোলা সম্ভব, কিন্তু কখনো কারো বেইমানি অথবা প্রতারণা ভোলা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
- আজকাল নিজের মানুষ চেনা বড় দায়! এর কারণ হল এরা নিজের স্বার্থের জন্য যে কোনো সময় বেইমানি করতে পারে।
বেঈমানদের নিয়ে স্ট্যাটাস :
- সময়কে ভয় করো না, বরং ভয় মানুষকে করো! এর কারণ মানুষ সময়ে বেইমানি করতে পারে, কিন্তু সময় কখনো বেইমানি করে না।
- বেইমানরা কখনও হেরে যায় না ! ওরা বেইমানি করেও ঠিকই জিতে যায়, কিন্তু হেরে যায় তারা করা সেই বেঈমানের উপর বিশ্বাস করেছিল।
- মিথ্যেবাদী বেইমানদের আশ্চর্যজনক গুণ হল এরা হাসতে হাসতে মিথ্যে কথা বলে, আবার কাঁদতে কাঁদতেও মিথ্যে কথা বলে।
- আমি তোমায় নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করেছিলাম, কিন্তু ভাবতেই পারি নি যে তুমি আমার সাথে এভাবে বেইমানি করবে।
- মনের মানুষকে পাওয়া যাবে না জেনেও শুধুমাত্র তাকেই সর্বদা ভালোবেসে যাওয়া মানুষগুলো কখনোই বেইমান হতে পারে না।
- আমি মনে করি যে, বেইমানদের সংস্পর্শে থাকার চেয়ে শত্রু বানিয়ে যুদ্ধ করে নেওয়া অনেক ভালো।
- বেইমানরা অসহায় মানুষগুলোর বিশ্বাস নিয়ে খেলতে পারে, কিন্তু কখনই কারো বিশ্বাসের দাম দিতে জানে না।
- অর্থ এবং স্বার্থ কখনো যে কাকে বেইমান করে তোলবে, সেটা বলা দায়!
- তুমি কাউকে যতোই ভালোবাসো না কেনো, যাদের বেইমানি করার তারা তোমার ভালোবাসার মূল্য না দিয়ে তোমার সাথে বেইমানি করবেই।
- বেইমানরা শোধরে যাবে, এই আশা করে তাদের উপর আবার ভরসা করা ভুল। এর কারণ বেঈমান মানুষ শুধু প্রয়োজন অনুসারে খোলস বদলায়।
বেইমান ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন উক্তি সমূহ :
- বেঈমান মানুষ সহজে চেনা যায় না, কারণ তারা নিজেকে তোমার আপন মানুষের মত অনুভূতি দেয়, আর সময়ে নিজের আসল রং দেখায়।
- যে ভুল করে তাকে অবশ্যই ক্ষমা করা যায়। কিন্তু তাকে কখনো ক্ষমা করো না যে তোমার সাথে বেইমানি করেছে।
- সবচেয়ে বড়ো বেইমান হল আমাদের মন! এটি থাকে আমাদের বুকের মধ্যে, আর অন্যের জন্য কাঁদে।
- মানুষ হলো বেইমান জাতি! এর ফুলে ফুলে মধু খায়, আর ফুলের মধু শুকিয়ে গেলে সেই ফুলের দিকে আর ফিরিয়া নাহি চায়।
- যতই মানুষ চিনতে পারবেন, ততো একা বাঁচার ইচ্ছা বেড়ে যাবে। এর কারণ একাকিত্ব কখনো বেইমানি করে না।
- বেইমান কখনো অশ্রুর মূল্য বোঝেনা! অন্ধের কাছে আয়না বিক্রি করা, আর বেইমানদের বিশ্বাস করা একই জিনিস।
- বেইমান মানুষ গুলো দিন শেষে ঠিকই ভুলে যাবে আপনি তার জন্য কি করেছেন।
- বেইমান আর স্বার্থপর লোক কখনো নিজের ভালো ছাড়া অন্যের অনুভূতি বোঝে না!
- বেইমান মানুষ গুলোর থেকে, রাস্তার কুকুর গুলো অনেক ভাল।
- আমাদের জীবনে খারাপ সময় আসাও দরকার! একথা বলার কারণ হল, খারাপ সময় না আসলে, কখনো মুখোশ পরা বেইমান মানুষ গুলোকে চেনা যায় না।
বেইমান মানুষ নিয়ে ইসলামিক উক্তি :
- বেইমানের প্রতিশোধ কখনো নেয়া যায় না, কারণ সেই প্রতিশোধ নিতে নিজেরও বেইমানি করতে হয়।
- মানুষ অতি সহজে দূরের লোকদের কাছ থেকে বেইমানির শিকার হয় না, বরং তারা সবচেয়ে অতি কাছের পরিচিত মানুষদের থেকেই বেশি বেইমানের শিকার হয়।
- বেইমান ও স্বার্থপর মানুষ দ্বারা কখনো অন্যের উপকার হয়না, কেননা তারা সব সময় তাদের নিজেদের স্বার্থ নিয়েই চিন্তা করে।
- বেইমান কে? বেইমান তো আমি, আপনি সবাই। কিন্তু সেই বেইমানি প্রকাশ হয় স্থান, কাল, সময় ও মানুষ ভেদে।
- কিছু কিছু মানুষ বেইমানি করে খুব আনন্দ পায় কারণ তাদের মানসিকতা বিকৃত।
- বেইমানদের স্থান জাহান্নামেও হবে না। তাদের ছোঁয়ায় তাও অপবিত্র হয়ে যাবে।
- দূর্ভাগ্য তো আমারই! তোমার মতো একজন বেইমানকে আমি বিশ্বাস করেছিলাম।
বেঈমান নিয়ে রচিত কিছু কবিতা, Some poems written about dishonesty :
বেঈমান
মানুষ চেনা নয়তো সহজ
যতই থাকুক কাছে,
কথার ছলে মনটা কাড়ে
দুর্নাম ছড়ায় পাছে।
আপন মানুষ গুলো শুধুই
স্বার্থ নিয়ে চলে,
বিপদে তাই উদ্ধার হতে
আসে নানান ছলে।
দেখায় ভীষণ সরল সহজ
যেন হাবা বোকা,
সুযোগ পেলে যায় পালিয়ে
দেয় যে তারা ধোঁকা।
ভাবতে ভীষণ অবাক লাগে
চলে সাধু বেশে,
আঘাত করে মিষ্টি কথায়
ঢেলে গরল হেঁসে।
নিজের লাভটা ভাবেন শুধুই
স্বার্থের জন্য আসে,
ন্যাকামি ভাব ধরেই তাঁরা
নিজের জন্য বাসে।
চিনতে পারলে এমন স্বজন
তাদের দূরে রেখো,
চলার পথে সকল সময়
সাবধানেতে থেকো।
হিসাব নিকাশ করতে ভীষণ
পটু হয় যে তারা,
মুখোশ পরা মানুষ গুলো
যায় না চিন্তে পারা।
মানুষ নামের ওই স্বার্থপর
মানুষ স্বাধে সাধু,
তাদের মধুর কথায় যেন
থাকে অনেক যাদু।
নিজের স্বার্থ হাসিল করে
ওই স্বার্থপর গুলো,তাদের কর্মের রূপের মর্মের
চিত্ত মুখোশ খুলো
বেইমান পাখি
উড়ন্ত পাখিকে কেমনে ধরে রাখি
মানতে চায় না সে পোষ।
না জানি কার পাল্লায় পড়ে
মিথ্যা আশ্বাস শুনে চলেছে কার ফোঁস।
পিঞ্জর ভেঙ্গে যায় যখনই ভাবি হায়
তার দেয়া সেই অতীত স্মৃতি গুলো।
যত্নে গড়া হৃদয়ে রাখা স্বপ্নগুলো
আজ তা হয়েছে যেন পথের ধুলো।
অন্তরে দিয়ে তারে কত ভালোবাসিলাম
বুঝতে চাইলো না আমার কথা।
কার কথা শুনে আজ সে আমার বুকে
দিয়ে গেল চিরকালের ব্যথা।
পাখিরও লাগি মন বিবাগী
থাকতে চায় না মন ঘরে।
তারি পথ চেয়ে চেয়ে একাকী এই
আমার অন্তর কেঁদে মরে।
বুঝলো না সেই নিষ্ঠুর পাষানী
আমার মনের খবর।
এক সুতোতে বাধা জীবন
দিয়ে গেছে একা কবর।
মিষ্টি প্রেমের ছোয়া মন পেতে চায় তাকে
আজ চাঁদনী জোছনায়।
নিঃস্ব করে গেছে মিথ্যে ভালবেসে
কেমন করে মনকে বুঝায়।
কেমন করে হাই বার বার ফিরে পায়
নিঃস্ব নীরবতায় তার ছোয়া।
যেখানে থাকিস সুখে থাকিস
বেইমান পাখির লাগি করি সর্বদা দোয়া।
বেঈমান তুমি!
বেঈমান তুমি! কারন কথা রাখোনি!
প্রতারক তুমি! কারন ধোকা দিয়েছ!
পাষান তুমি! কারন দুঃখ বোঝনি!
অকৃতজ্ঞ তুমি! কারন মনে রাখোনি!
ভন্ড তুমি! কারন ভালোর মুখোশ পড়ে ছিলে!
নষ্ট তুমি! কারন আমায় ব্যবহার করেছ!
মিথ্যবাদী তুমি! কারন আমায় ভালোবাসনি
শেষ কথা, Conclusion :
বেইমান স্বার্থপর গুলো সব সময়ই ভালো থাকে। আর স্বার্থহীন ভাবে যারা ভালোবাসে তারা কষ্ট পেতে পেতে বুক ধুঁকে মরে। আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত বেইমান মানুষ নিয়ে উক্তি এবং কবিতাগুলি পড়ে আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। এমন পোস্ট আরো পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।