আমাদের অনেকেই হয়তো তারকাদের কিংবা কোনো সুনাম অর্জিত প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ এ নামের পাশে নীল রঙের একটি ব্যাজ দেখতে পান, যা সহজেই বুঝিয়ে দেয় যে, ওই পেজ বা অ্যাকাউন্টটি ভেরিফায়েড; অর্থাৎ সেটা ভুয়া কোনো পেজ নয় বরং এটি অকৃত্রিম এবং সঠিক তথ্য সহকারে পরিচালিত তথা ফেসবুক স্বীকৃত একটি পেজ এটি।
মূলত কোনো বিখ্যাত ব্যক্তি ও পাবলিক পরিসংখ্যান-ক্রীড়া, মিডিয়া, রাজনীতি, বিনোদন, গ্লোবাল ব্র্যান্ড, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেই এই নীল ব্যাজ ফেসবুক থেকে দেওয়া হয়। ব্লু-ব্যাজের জন্য ফেসবুকের কাছে আবেদন করতে হয়। নিজের ফেসবুক পেজ বা প্রোফাইল ভেরিফাই করতে হলে বেশ কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আজ এই প্রতিবেদনে আমরা ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল ভেরিফায়েড করার উপায় সম্পর্কে সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ফেসবুকের ব্যবহার, use of Facebook
আজকাল ছোটো থেকে বড় প্রায় সকলেই ফেসবুক ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে নিজের পরিচিতির পরিধি বাড়ানোর যায়। তাছাড়া অনেকেই নিজের প্রতিভার প্রকাশ করার জন্য ফেসবুক পেজ ব্যবহার করেন। ফেসবুকের প্রোফাইল বা পেজ এ নিজের ঘুরতে যাওয়ার ছবি, কোনো বিষয় নিয়ে মত প্রকাশ করা, নিজের গানের বা নাচের ভিডিও অথবা কখনো রান্নার ভিডিও শেয়ার করে থাকেন।
কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ভালো কোনো কাজের ভিডিও বা ছবি দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হন, তবে অনেকে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন কিছু বিষয়ও শেয়ার করেন ফেসবুকের প্রোফাইলের মাধ্যমে, যা অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। এক কথায় কিছু মানুষ ফেসবুকের ব্যবহার ভালোভাবে করছেন আবার অনেকে খারাপভাবে এর ব্যবহার করেন, ফলে অনেক সময় বেশ কিছু মানুষের ক্ষতি হয়।
বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু দুষ্ট বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি ভুয়ো প্রোফাইল বা পেজ ব্যবহার করেন। এই ক্ষতি থেকে বাঁচতে ফেসবুক ভেরিফিকেশন ব্যাজ আসল ব্যক্তির প্রোফাইল বা পেজকে স্বীকৃতি হিসেবে দেয়, যাতে যারা দেখছেন তারা বুঝতে পারেন যে একই নামে অন্য কোন অ্যাকাউন্ট থাকলেও কোনটা আসল এবং কোনটা ভুয়ো।
ভুয়া অ্যাকাউন্ট বা পেজ ব্যবহার, Using fake accounts or pages
বর্তমানে বহু মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন, কারণ এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা সবার জন্য উন্মুক্ত। যেকোনো কেউ চাইলেই নিজের প্রোফাইল কিংবা পেজ তৈরি করতে পারবেন। এমনকি কেউ ইচ্ছে করলে অন্য প্রতিষ্ঠানের নামেও ফেসবুক পেজ তৈরি করে নিয়মিত তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ব্যাপারটা এতটাই সহজ, কারণ এখানে কোনো বৈধ পরিচয়পত্র দেখানোর প্রয়োজন পড়ে না। তাই যে কেউ চাইলেই অন্য কারও নামে প্রোফাইল বা পেজ খুলতে পারেন। ফলে বেশ কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান তথা ব্যক্তিগণ অনেক সময় ক্ষতির মুখে পড়েছেন, কারণ কিছু কিছু মানুষ এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট বা পেজ ব্যবহার করে মিথ্যা প্রচারণা করেন।
কিছু সময় এসব পুরোপুরি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় আবার কিছু সময় নিছক মজার ছলেই করা হয় এ কাজগুলো। এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে মূল অ্যাকাউন্টটি আলাদা বোঝানোর জন্যই ফেসবুকের একটি নিজস্ব ভেরিফিকেশন পদ্ধতি রয়েছে। এই ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রে সেই পেজ বা প্রোফাইল উত্তীর্ণ হয় তাদের নামের পাশে নীল রঙের একটি টিক চিহ্ন থাকে।
অ্যাকাউন্ট বা পেজ ভেরিফিক্যাশন, Facebook account or page verification
অনেকের কাছেই এটা একটা শখের বিষয় যে তার ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজ ভেরিফাইড। এতে অ্যাকাউন্টের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কম হয়ে যায়। তাছাড়া নিজের পরিচিতি যদি সামাজিক মাধ্যমে ইতিবাচক দিক থেকে বেড়ে যায় তবে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আপনি নিজের পেজ ও প্রোফাইল ভেরিফাই করতে পারবেন।
সাধারণত তারকাখ্যাতি-সম্পন্ন ব্যক্তি, চলচ্চিত্র জগতের সেলিব্রিটি, সুখ্যাত গায়ক, স্বনামধন্য সাংবাদিক, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের পেজগুলো ফেসবুক ভেরিফাই করে থাকে। জেনে রাখা ভালো যে শুধু প্রামাণ্য বা বৈধ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেই ফেসবুক থেকে ব্লু-টিক দেওয়া হয়।
তবে এক্ষেত্রে প্রথমে ইচ্ছুক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডকে এই ব্লু-ব্যাজ পাওয়ার জন্য ফেসবুকের কাছে আবেদন করতে হয়। তাদের জমা করা আবেদন পাওয়ার পর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্টটিকে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখেন, বিভিন্ন বিষয় এক্ষেত্রে যাচাই করা হয়। ফেসবুকের পরিষেবার শর্তাবলী যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে প্রোফাইল বা পেজ ‘ভেরিফিকেশন’ করা সম্ভব। নির্দিষ্ট আইডির সত্যতা নিশ্চিতকরণ ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ফেসবুক দীর্ঘদিন ধরে এই সুবিধা প্রদান করছে।
ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড, Facebook community standards
কোনো পেজ ও প্রোফাইলের ক্ষেত্রে, ফেসবুক পরিষেবার শর্তাবলী এবং কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ফলো করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে, সেগুলো হল :
- আসল প্রোফাইল বা পেজ: অবশ্যই একজন প্রকৃত ব্যক্তি, নিবন্ধিত ব্যবসা বা সত্ত্বাকে প্রোফাইল বা পেজ উপস্থাপন করতে হবে।
- অনন্য প্রোফাইল : ফেসবুকে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যবসার একমাত্র উপস্থিতি হতে হবে। প্রতি ব্যক্তি বা ব্যবসায়ের জন্য কেবলমাত্র একটি পেজ বা প্রোফাইল যাচাই করা যেতে পারে।
- সম্পূর্ণ সঠিক তথ্য: ফেসবুকে একটি পরিচয় বিভাগ থাকে যেখানকার সকল তথ্য সঠিক হওয়া জরুরি, এছাড়া পেজ বা প্রোফাইল ফটো এবং সাম্প্রতিক অ্যাক্টিভিটি ঠিক থাকতে হবে।
- লক্ষ্যনীয়: একটি সু-পরিচিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি, অন্য সাধারণ ব্যবহারকারীদের দ্বারা প্রায় খোঁজা হয় এমন ব্যক্তির প্রোফাইল, ব্র্যান্ড বা সত্ত্বা হতে হবে।
জেনে নিন কীভাবে ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজ ভেরিফাইয়ের জন্য আবেদন করবেন, Learn how to apply for Facebook profile or page verification
ফেসবুক প্রোফাইল বা পেজ ভেরিফাইয়ের জন্য প্রথমে ফেসবুকের হেল্প সেন্টারে গিয়ে ভেরিফাই ইওর পেজ অর প্রোফাইল লেখা বিকল্প টি ক্লিক করুন।
- ১. এরপর সেখান থেকে আপনি যে পেজ বা প্রোফাইল টি ভেরিফায়েড করতে চান সেই অপশন সিলেক্ট করুন।
- ২. যদি আপনার প্রোফাইল ভেরিফাই করতে হয় তবে নির্ধারিত বক্সে প্রোফাইলে লিংক দিয়ে দিন।
- ৩. প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার বৈধ কাগজপত্র জমা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে অফিশিয়াল আইডি কার্ডের (যেমন- জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ফোন বা ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি) স্ক্যান করা কপি আপলোড করে দিন।
- ৪. এবার আপনার ব্যবহৃত সঠিক তথ্য সম্পন্ন পেজের লিংক সেখানে সাবমিট করুন।
- ৫. ‘Additional Information’ লেখা একটি বিকল্প থাকবে যেখানে আপনি কেনো এই প্রোফাইল ও পেজ ভেরিফাই করতে চান তা সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।
- ৬. এবার দেখুন Send লেখা একটি বাটন থাকবে, তাতে ক্লিক করে সকল তথ্য সাবমিট করুন।
উপরে উল্লেখিত ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনার আবেদনের কি অবস্থা তা আপনাকে জানাবে ফেসবুক। এরপর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, কারণ সবকিছু জমা করার পর আপনার পেজ বা প্রোফাইল ফেসবুক ভেরিফায়েড হওয়ার জন্য প্রসেস হবে।
এই তথ্যগুলো দিয়ে পেজ ও প্রোফাইল ভেরিফাই করার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির ফলোয়ার তথা অন্যান্য সাধারণ ব্যবহারকারীও পেজের মালিক বা যিনি পরিচালনা করছেন, তার সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন।
শেষ কথা, Conclusion
ভেরিফায়েড ব্যাজ পাওয়ার জন্য সেই ব্যাক্তি বা ব্র্যান্ডকে উল্লেখযোগ্য ও অনন্য হতে হয়। আপনার প্রোফাইল বা পেজ যদি অনন্য হয়ে থাকে তবে আপনিও উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলোর মধ্য দিয়ে খুব সহজে নিজের পেজ ও প্রোফাইল ভেরিফাই করে নিতে পারবেন। আশা করি আমদের এই প্রতিবেদন আপনার ফেসবুক পেজ ভেরিফাই করার ক্ষেত্রে অনেকটা সহায়তা করবে।