বিড়াল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, Detailed information about cats in Bengali

বিড়াল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

বিড়াল একটি ছোট মাংসাশী স্তন্যপায়ী প্রাণী। এটি ফেলিডা পরিবারের একমাত্র গৃহপালিত প্রজাতি। গার্হস্থ্য বিড়ালদের সাহচর্য এবং তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী শিকারের দক্ষতার জন্য মানুষ এদেরকে মূল্যবান বলে মনে করে থাকেন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা বিড়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো। বিড়ালের বৈশিষ্ট্য, প্রজনন, রোগ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিষয়ে যারা অজানা ছিলেন তারা আজকের আলোচনার মাধ্যমে এসব তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

বিড়ালের বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস, Scientific classification of cats :

  • জগৎ/রাজ্য: অ্যানিম্যালিয়া (Animalia)
  • পর্ব: কর্ডাটা
  • শ্রেণি: স্তন্যপায়ী (ম্যামেলিয়া)
  • বর্গ: শ্বাপদ বর্গ (মাংসাশী)
  • উপবর্গ: ফেলিফর্মিয়া
  • পরিবার: মার্জার (ফেলিদাএ)
  • উপপরিবার: Felinae
  • গণ: Felis লিনিয়াস, ১৭৫৮
  • প্রজাতি: F. catus
বিড়ালের বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস

বিড়ালের শরীরে কয়টি হাড় আছে, How many bones are there in the cat’s body?

বিড়ালের শরীরে ২৩০ থেকে ২৫০টি হাড় আছে। একটা প্রাপ্তবয়ষ্ক বিড়ালের ৩০টা দাঁত থাকে। এদের তীক্ষ্ণ দাঁত এবং সঙ্কোচনীয় থাবা ক্ষুদ্র শিকারে পারদর্শী। বিড়ালকে বলা হয় ‘বাঘের মাসি’। কারণ, বাঘ ও বিড়াল একই গোত্রের প্রাণী। এরা প্রায় ৪৮ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে।

বিড়ালের শারীরিক গঠন, Physical structure of cats :

বিড়ালের শারীরস্থান অন্যান্য ফেলিডি প্রাণীর অনুরূপ হয়, তাদের শরীর দৃঢ় নমনীয়, ত্বরিত প্রতিক্রিয়াশীল, ক্ষুদ্র শিকারে এদের তীক্ষ্ণ দাঁত এবং সঙ্কোচনীয় থাবা পারদর্শী। পাশাপাশি বিড়ালের নৈশদৃষ্টি এবং ঘ্রাণশক্তিও খুব প্রখর হয়। তবে এদের বর্ণের দৃশ্যমানতা দরিদ্র।

বিড়ালের যোগাযোগের জন্য কণ্ঠস্বরের ব্যবহারের পাশাপাশি বিড়ালের নির্দিষ্ট শরীরী ভাষা রয়েছে। বিড়াল, একক শিকারী, তা সত্ত্বেও এরা সামাজিক প্রজাতির পশু।

এছাড়াও এরা নিজ প্রজাতির সাথে অপ্রকাশ্য এবং ফেরোমোন অনুভূতি দ্বারা যোগাযোগ করতে সক্ষম।

বিড়ালের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য, Some special features of cats :

বিড়ালের বৈশিষ্ট্য
  • নিজেদের উচ্চতার চেয়ে ৫ গুন ওপরে লাফাতে পারে এরা।
  • বিড়ালেরা মানুষের মতো স্বপ্ন দেখে।
  • পৃথিবীর জনপ্রিয় পোষা প্রানীদের একটি হলো বিড়াল।
  • পৃথিবীতে প্রায় পঞ্চাশ কোটি বিড়াল রয়েছে।
  • প্রায় ১০ হাজার বছর আগের থেকে মানুষ বিড়াল পুষছে।
  • মানুষ দিনের বেলা যতোটা পরিষ্কার দেখে, বিড়ালেরা রাতে তার চেয়েও ভালো দেখতে পায়।
  • বিড়ালের শোনার, দেখার এবং ঘ্রাণের ক্ষমতা মানুষের চেয়ে বহুগুণ বেশি।
  • বিড়াল সবচেয়ে পরিষ্কার প্রাণীদের একটি। এরা জিভ দিয়ে চেটে চেটে সর্বদা নিজেকে পরিছন্ন রাখে।
  • মানুষের কানের তুলনায় বিড়াল খুব তীক্ষ্ণ এবং খুব উচ্চ শব্দ কম্পাঙ্ক শুনতে পায়, যেমন ইঁদুর অথবা অন্যান্য ক্ষুদ্র প্রাণীর দ্বারা সৃষ্ট শব্দ।
  • গার্হস্থ্য বিড়াল যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন কণ্ঠস্বরের ব্যবহার করে, যেমন গরগর (প্যুর), কম্পনজাত (ট্রিল) শব্দ, হিস, গোঁ-গোঁ শব্দ, এবং বিভিন্ন ধরনের মিয়াও শব্দ করা।
  • এরা শিকারী প্রবৃত্তির হওয়ায় ভোর ও সন্ধ্যায় সর্বাধিক সক্রিয় থাকে।
  • খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ সাল থেকে প্রাচীন মিশরে বিড়ালের পূজা করা হতো।

বিড়াল দিনে কত ঘন্টা ঘুমায়, How many hours a day do cats sleep?

বিড়াল অলস প্রাণী

বিড়াল অলস প্রাণী। আমাদের কাজকর্মে কোনো উপকারে না এলেও, সারাদিন ঘুম চাই তার।

জার্মানির জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক—স্কট ক্যামবেল ও আইরিন টবলার তাঁদের এক গবেষণায় দেখান, গৃহপালিত বিড়ালগুলো প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা ঘুমায়। এমনকি দিনে ১৭ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমানোও এদের জন্য অস্বাভাবিক নয়।

বিড়ালের অপর নাম কি, What is the other name for cat?

সঠিক উত্তরটি হল ফেলিস ডোমেস্টিকাস। বিড়ালের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ফেলিস ডোমেস্টিকা । এটি ফেলিডে পরিবারের অন্তর্গত একমাত্র প্রজাতি যা গৃহপালিত।

বিড়ালের প্রজনন, Cat Breeding :

বিড়ালের প্রজনন

বিড়ালের প্রসবকাল বসন্ত থেকে শরতের শেষ সময় অবধি হতে পারে। এরা সাধারণত একসঙ্গে দুই থেকে পাঁচটি ছানার জন্ম দিয়ে থাকে। বিড়ালের উচ্চ প্রজনন হার রয়েছে।

বিড়ালের বিভিন্ন রোগ, Different diseases of cats :

পোষা বিড়ালের বিভিন্ন রোগ হতে পারে, যে ব্যাপারে অনেকেই হয়তো জানেন না। বিড়ালের মধ্যে দেখা যায় এমন রোগগুলো হল :

  • প্যানলিউকপেনিয়া : প্যানলুয়েক ভাইরাল রোগ। এই রোগ বিড়ালের বোনম্যারো ও অন্ত্রের ক্ষতি করে। আপনার পোষা বিড়াল বাইরে গিয়ে একাধিক বিড়ালের সাথে মেলামেশা করলে এটি ছড়ায়।
  • আপার রেসপিরেটরি ইনফেকশন : উক্ত রোগটির আরেক নাম ফেলাইন হার্পিস ভাইরাস। এই রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে হাঁচি বা নাক দিয়ে জল ঝরা ইত্যাদি। এই রোগ হলে বিড়ালের চোখও গোলাপি হয়ে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। তবে এর ভ্যাকসিন আছে। বিড়াল থেকে এই রোগটি মানুষেও সংক্রমিত হতে পারে।
  • ফেলাইন ইনফেকসিয়াস পেরিটোনিটিস : উক্ত রোগটি সংক্রামক। এর অন্যতম কারণ জেনেটিক বা বংশগত। এ রোগে বিড়ালদের মৃত্যুর হার বেশি।
  • ফেলাইন ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস : এ রোগে আক্রান্ত হলে বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • ফেলাইন লিউকেমিয়া : রোগটি ছোঁয়াচে। ভ্যাকসিন দিয়ে এটি প্রতিরোধ করা যায়।
  • হিপ ডিসপ্লেসিয়া : এটিও জিনগত রোগ। অস্ত্রোপচারে এ রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
  • পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ : এটি জিনগত যা কিডনিতে সংক্রমিত হয়। এ রোগের চিকিৎসা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
  • ফেডিং কিটেন সিনড্রোম : সদ্যোজাত থেকে কয়েক সপ্তাহ বয়সী বিড়ালের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  • ওয়ার্ম : পোষা বিড়ালের বড় সমস্যা হলো হার্টওয়ার্ম। ট্রিটমেন্টের সময় বিড়ালের লালার নমুনা নিয়ে যেতে হয়। পশু চিকিৎসকরা এর চিকিৎসা করে থাকেন।

বিড়াল আঁচড় বা কামড় দিলে কি করবেন, What to do if the cat scratches or bites ?

আঁচড় বা কামড় খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই এমন বিড়াল মালিক খুঁজে পাওয়া দায়। মাঝেমধ্যে বিড়ালের আঁচড় লাগলেও তেমন ক্ষত তৈরি হয় না। এ ক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জীবাণুনাশক দিয়ে ক্ষতস্থানটি ভালো করে পরিষ্কার করে নিন।

তবে ক্ষত গভীর হলে বা অতিরিক্ত রক্তপাতে অবহেলা করবেন না। বিশেষ করে যদি কামড়ে ক্ষত হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বেশির ভাগ সময় আঁচড়ের ফলে বয়স্কদের কিছু না হলেও ছোটদের জ্বর চলে আসে। এটি জীবাণুঘটিত কারণে হয়। এরূপ সমস্যা দেখলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।

আঁচড় বা কামড়

ক্ষত গভীর না হলেও এতে জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। ফলে হালকা ক্ষত দেখে অবহেলা করবেন না। প্রতিষেধক নেওয়া জরুরি।

বিশেষ করে বিড়ালটি যদি কোনো রোগে আক্রান্ত থাকে তবে ভুলেও নখের আঁচড় বা কামড়ের ক্ষতকে অবহেলা করা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিড়াল ও কুকুরের জলাতঙ্ক মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে। তাই পোষাপ্রাণী ও মানুষ ২ পক্ষের সুরক্ষার জন্যই টিকা প্রয়োজন।

বিড়ালের বয়স ৩ মাস হওয়ার পর প্রথম ফ্লুর ভ্যাকসিন দিতে হয়। প্রথম বার ভ্যাকসিন দিলে ২১-২৮ দিনের মধ্যে বুস্টার ডোজ দিতে হবে। বিড়াল যদি কামড় দেয় আর কামড় যদি গভীর হয় বা যদি রক্ত বের হয় তবে, ক্ষতস্থানের পাশে রেইবিজ ইমিউন গ্লবিউলিন বা আরআইজি ভ্যাকসিন দিতে হয়।

বিড়াল কেন ঘাস খায়, Why do cats eat grass?

বিড়াল সবুজ ঘাস খায়।

অনেকেই হয়তো লক্ষ করে থাকবেন যে বিড়াল মাঝেমধ্যে সবুজ ঘাস খায়। মূলত পরিপাকতন্ত্রে কোনো ধরনের গোলযোগ দেখা দিলে বিড়াল সবুজ ঘাস খেয়ে থাকে। ঘাস খাওয়ার পর বমি কার মাধ্যমে বিড়াল পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা থেকে মুক্তি পায়।

বিড়াল সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা, Some misconceptions about cats :

পোষ্য হিসেবে বহু মানুষের পছন্দ বিড়াল। কিন্তু বিড়াল সম্পর্কে বহু ভুল ধারণা আছে পালকদের।
সেগুলি হল :

বিড়ালকে যে কোনও দুধ খাওয়ানো হয় :

বহু বিড়ালেরই ল্যাকটোজে সমস্যা থাকে। আপাত ভাবে কোনও সমস্যা বোঝা না গেলেও, দীর্ঘ দিন ধরে লেকটোজ সম্পন্ন দুধ খাওয়ার হলে বিড়ালের পেটের নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই ল্যাকটোজ ছাড়া দুধই বিড়ালকে দেওয়া উচিত।

বিড়ালকে দুধ খাওয়ানো

বিড়াল জল অপছন্দ করে :

বিড়ালের পূর্বপুরুষদের বেশির ভাগই মরুভূমি এলাকায় থাকত। সেখানে বৃষ্টির কম হতো বলে বিড়ালও জল পছন্দ করে না। কিন্তু বাড়ির সব পোষ্য বিড়ালই যে তাই, তা নয়।

বিড়াল একা থাকতে ভালবাসে:

বিড়াল খুবই স্বাধীনচেতা, সে কথা যেমন সত্যি, কিন্তু বিড়াল একা থাকতে পছন্দ করে না, এই ধারণা হয়তো ভুল। বিশেষ করে বাড়ির পোষ্য বিড়ালকে যদি একা রাখা হয়, তা হলে সে প্রচণ্ড উদ্বেগে ভুগতে থাকে।

বিড়ালের ডিপথিরিয়া রোগ হয় :

আসলে বিড়ালের ডিপথিরিয়া হয় না। সে ওই অসুখের বাহক। তাই এই রোগের ক্ষেত্রে বিড়ালকে টিকাকরণ করা সম্ভব নয়।

শেষ কথা, Conclusion :

আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা বিড়াল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন।

Frequently Asked Questions :

বিড়ালের অপর নাম কি?

ফেলিস ডোমেস্টিকাস

বিড়াল কেন ঘাস খায় ?

পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে।

বিড়ালের কি কি রোগ হতে পারে?

প্যানলিউকপেনিয়া, ফেলাইন লিউকেমিয়া, হিপ ডিসপ্লেসিয়া, পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ, ফেডিং কিটেন সিনড্রোম , ওয়ার্ম।

Contents show

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts