৩৭ বছর পর ফিরে এল ‘ভ্যানিশ’ হওয়া ফ্লাইট ৯১৪! অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের গল্পে তোলপাড় বিশ্ব

৩৭ বছর পর ফিরে এল ফ্লাইট ৯১৪

নির্দিষ্ট সময়ে উড়ে গিয়েছিল একটি বিমান, কিন্তু গন্তব্যে নামল ৩০ বছর পর! এটা শুনে আপনার মাথা ঘুরছে? বিমানে থাকা ৬৩ জন যাত্রীও ফিরে এলেন! এই রহস্য আর রোমাঞ্চে আপনার শরীর অস্থির লাগছে? তাহলে সিট বেল্ট শক্ত করে বেঁধে নিন। আমরা প্যান অ্যাম ফ্লাইট ৯১৪ নিয়ে কথা বলছি।

১৯৫৫ সালের ২ জুলাই নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে মিয়ামির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল আমেরিকান ডগলাস কোম্পানির তৈরি চার ইঞ্জিনবিশিষ্ট প্রোপেলার-চালিত বিমান ডগলাস ডিসি-ফোর। এই ফ্লাইটে ৫৭ জন যাত্রী এবং ৫ জন ক্রু সদস্য ছিলেন।

কিন্তু ৩৭ বছর পর (কিছু সূত্র ৩০ বছরও উল্লেখ করে), ভেনিজুয়েলার কারাকাসের কাছে বিমানটি দেখা যায়। রাডারে ধরা না পড়া, মাঝ আকাশে হারিয়ে যাওয়া এই বিমানের রহস্যময় সময় ভ্রমণ আজও আলোচনার বিষয়। আমেরিকা আজ পর্যন্ত এই অদৃশ্য বিমানের কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি।

প্যান অ্যাম ফ্লাইট ৯১৪-এর কোনো ধ্বংসাবশেষও আমেরিকা খুঁজে পায়নি। আরও অবাক করা বিষয় হলো, এই বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার প্রায় ৩০ বছর পর অন্য একটি দেশে অবতরণ করে এবং নামার কিছুক্ষণ পরেই আবার উড়ে গিয়ে আকাশে মিলিয়ে যায়। এটিই আমেরিকার ফ্লাইট ৯১৪-এর গল্প, যার প্রতিটি পরতে রহস্য লুকিয়ে আছে।

১৯৫৫ সালের ২ জুলাই নিউ ইয়র্ক থেকে ওড়া বিমানটি ১৯৮৫ সালের ৯ মার্চ ভেনিজুয়েলার কারাকাস বিমানবন্দরে রহস্যজনকভাবে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ এই অবতরণ সম্পর্কে জানত না।

সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিমানটি কারাকাস বিমানবন্দরে নামলে পাইলট সেখানকার কর্মীদের জিজ্ঞাসা করেন, এটা কোন সাল? কর্মীরা তাকে জানান, সাল ১৯৮৫। এই কথা শুনে পাইলট লম্বা শ্বাস ফেলে বলেন, ‘ওহ মাই গড’। এরপর, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই, বিমানটি আবার আকাশে উড়ে যায়।

আজ পর্যন্ত এই রহস্যময় বিমান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমেরিকা এখনও এই রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জানা যায়।

ফ্লাইট ৯১৪

তদন্তে জানা গিয়েছিল যে, বিমানটি আটলান্টিক মহাসাগরের একটি অংশের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। ধারণা করা হয়েছিল, বিমানটি হয়তো মাঝ আকাশেই কোনোভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছিল, উপকূলরক্ষীরা রীতিমতো জল খুঁজেছিল, কিন্তু কিছুই উদ্ধার হয়নি। হারিয়ে যাওয়া বিমানের একটি টুকরোও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদন্তকারীরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।

বাস্তবে আজও এই রহস্যের সমাধান হয়নি। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছিল যে, বিমানটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সকল যাত্রীর প্রাণহানি হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইট ৯১৪-এর আসলে ঠিক কী হয়েছিল, তা কেউ কখনও বলতে পারেনি।

এটি কি একটি বানানো গল্প?

অনেকেই মনে করেন, ‘ফ্লাইট ৯১৪’ আসলে একটি বানানো গল্প! এটি মিথ্যা খবর প্রকাশের জন্য পরিচিত ট্যাবলয়েড ‘উইকলি ওয়ার্ল্ড নিউজ’-এ ১৯৭৫ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। পরে ১৯৯৩ এবং ১৯৯৯ সালেও এটি আবার ছাপা হয়। বিমানটির যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটি আসলে ট্রান্স ওয়ার্ল্ড এয়ারলাইন্সের একটি ডিসি-৪ বিমানের পুরোনো ছবি।

সংবাদমাধ্যমে বা বেসামরিক বিমান চলাচল বোর্ডের কাছে এই ঘটনার কোনো সমসাময়িক প্রমাণ নেই। ডিসি-৪ বিমানের সম্পূর্ণ উৎপাদন তালিকা দেখলে বোঝা যায় যে, প্যান অ্যাম-সহ এই ধরনের ১২৪৪টি বিমানের কোনোটাতেই এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট চালু করেছে। সিঙ্গাপুর বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া এয়ারবাস A350-900ULR বিমানটি নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এটিই বিশ্বের দীর্ঘতম নন-স্টপ বিমান রুট, যা ১৮ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলে এবং ৯,৫৩৭ মাইল ভ্রমণ করে।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts