বিশ্বজুড়ে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন, বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি বিশ্ব উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ। এই পরিস্থিতিতে কার্বন নির্গমন কমানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে। এবার সেই লড়াইয়ে ভারতকে এক ধাপ এগিয়ে দিলেন বাঙালি বিজ্ঞানী ইন্দ্রজিৎ শোঁ। তাঁর উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি অত্যন্ত কম খরচে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনে সক্ষম। এক সাক্ষাৎকারে এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন এই বিজ্ঞানী।
‘গাছের সালোকসংশ্লেষের মতোই কাজ করে এই প্রযুক্তি’
চেন্নাইয়ের হিন্দুস্তান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স (HITS)-এর অধ্যাপক ইন্দ্রজিৎ শোঁ এবং তাঁর দল ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষকদের সঙ্গে যৌথভাবে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তাঁদের এই গবেষণা ‘ন্যানো এনার্জি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ইন্দ্রজিৎ জানান, “আমাদের এই প্রযুক্তি গাছের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মতোই কাজ করে। এই বিশেষ যন্ত্রটি বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) সংগ্রহ করে। তারপর সূর্যের আলো ব্যবহার করে তা থেকে অ্যাসিটালডিহাইড (CH₃CHO) তৈরি করে। এর পাশাপাশি কার্বন মনো অক্সাইড ও মিথেনও উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়ায় উৎপন্ন এই অ্যাসিটালডিহাইড বা ইথানলকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।”

খরচ কম, দূষণও নেই
হুগলির বাসিন্দা ইন্দ্রজিৎ আরও ব্যাখ্যা করেন, “সাধারণত কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে অ্যাসিটালডিহাইড তৈরি করতে উচ্চ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। এই তাপমাত্রা সরবরাহ করতে তাপবিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করতে হয়, ফলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। আবার, এই তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে বাতাসে আরও কার্বন ডাই অক্সাইড মিশে যায়। কিন্তু আমাদের নতুন প্রযুক্তিতে সূর্যের সাধারণ আলোতেই এই বিক্রিয়া সম্পন্ন হয়, কোনো বাড়তি তাপের প্রয়োজন হয় না। এর ফলে একদিকে যেমন শক্তির অপচয় হয় না, তেমনই অন্যদিকে পরিবেশ দূষণও হয় না!”
কবে আসবে বাজারে?
ইন্দ্রজিতের মতে, এই প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি বলেন, “কারখানায় এই পদ্ধতিতে ইথানল উৎপাদনে অন্তত ৩ থেকে ৬ বছর সময় লাগতে পারে। একবার এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেলে, আমার বিশ্বাস বিশ্ব উষ্ণায়নের মতো বড় সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হবে।”