আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছুর উপর নির্ভরশীল, তার মধ্যে অন্যতম হল মোবাইল ফোন। বর্তমান সময়ে সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য অ্যালার্ম দেওয়া থেকে শুরু করে সারা দিন ধরে বিভিন্ন কাজে আমরা মোবাইলের প্রয়োজনীতা অনুভব করি। তাই বেশিরভাগ মানুষই মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে এবং মোবাইল সাথে না থাকলে বিভিন্ন অসুবিধা সৃষ্টি হয়ে যায়।
মোবাইল ফোনের নিত্য ব্যবহার, Daily Use of Mobile Phone
কাজের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করা, সময় দেখা, প্রয়োজনীয় কোনো ছবি তুলে রাখা থেকে শুরু করে আজকাল আমরা মোবাইলের মাধ্যমে পত্রিকাও পড়তে পারি। কারোর সাথে যোগাযোগ করার হোক কিংবা দেশ বিদেশের ঘটনা সম্পর্কে জানতে হলেও সাথে একটা মোবাইল থাকা যথেষ্ট।
![](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/06/342.jpg)
বলতে গেলে দিনের সব আপডেটেড তথ্য আমরা এর মাধ্যমেই পেয়ে থাকি। কিন্তু এইসব প্রয়োজনীতার ভিড়ে আমরা মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকটাকে অজান্তেই যেন উপেক্ষা করছি। আমাদের অনেকের জ্ঞানই এ বিষয়ে খুবই সীমিত।
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব, Harmful effects of using mobile phone :
- মোবাইল ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বললে, কানে হেডফোন লাগিয়ে দীর্ঘক্ষণ গান শুনলে মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়।
- মোবাইল ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বললে তা আমাদের মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া; অস্থিরতা, অমনোযোগিতা ইত্যাদি মোবাইল ব্যবহারের কারণে বৃদ্ধি পায়।
এগুলো ছিল মোবাইল ফোনের প্রভাবে সরাসরি মানবশরীরে সৃষ্টি হওয়া কিছু ক্ষতিকর দিক। কিন্তু এগুলো ছাড়াও কিছু দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়, তা আমাদের দৃষ্টি থেকে এড়িয়ে গেছে।
ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের প্রভাব :
গ্রাহকদের মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সুবিধা দেয়ার জন্য যে টাওয়ার নির্মাণ করা হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে দুই ধরনের এন্টেনা থাকে। মূলত এই তরঙ্গগুলোর মাধ্যমেই আমরা দূরে অবস্থিত মানুষগুলির সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি। এই তরঙ্গ চলার সময় চারপাশে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ফিল্ড উৎপন্ন করে যার থেকে তৈরি হয় ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন।
![ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের প্রভাব](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/06/download-1.jpg)
এই রেডিয়েশন আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি রোগ ও ব্রেন ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে গেছে। এই রোগগুলোর একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হল মোবাইল ফোন।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল ফোনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া রেডিয়েশন যে শুধু মানব শরীরেরই ক্ষতিসাধন করে তা নয়; বরং এর প্রভাবে টাওয়ারের আশপাশে অবস্থিত গাছপালা ও ফসলের ফলনও কম হয়ে যায়।
মোবাইল ব্যবহারের এইরূপ ভয়াবহ ক্ষতিকর দিক থাকা সত্ত্বেও দেশের বেশ কিছু জায়গায় মোবাইল ফোনের টাওয়ার বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে বা আশেপাশে স্থাপন করা হয়েছে।
এভাবে যদি চলতে থাকে তবে ভবিষ্যতে বিকলাঙ্গ প্রজন্ম দেখতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বলাই বাহুল্য যে গর্ভবতী নারীর শরীরে এই রেডিয়েশন বিরূপ প্রভাব ফেলে। তাই একটি স্বাস্থ্যকর, সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যত পাওয়ার জন্য আমাদের এখন থেকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
ঘাড় ব্যথা:
![মোবাইল ফোনের নিত্য ব্যবহারে ঘাড় ব্যথা:](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/06/c73.jpg)
মোবাইল ফোন অত্যধিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলোর ভিতরে অন্যতম একটি বিষয় হল হলো ঘাড় ব্যথা। অনেকেই এমন আছেন যারা দীর্ঘ সময় মাথা ঝুঁকিয়ে মোবাইলে বিভিন্ন কাজ করেন, এতে দেখা দিতে পারে ঘাড় ব্যথার সমস্যা।
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে গেমস্ খেলার আসক্তি থাকার প্রভাবে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ভিডিও দেখা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় কাটাতে গিয়ে মোবাইল ব্যবহারের সঠিক দূরত্ব ও বডি পজিশন ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। এর ফলে মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ঝুঁকে থাকার কারণে ঘাড়ে ব্যথা হয়।
দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া:
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হল চোখের জ্যোতি কমে যাওয়া। গবেষকদের মতে দীর্ঘ সময় চোখের খুব কাছে রেখে মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার একসময় দৃষ্টিহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এক্ষেত্রে মোবাইল স্ক্রিনের ফন্ট সাইজ বড় করে নিয়ে চোখ থেকে অন্তত ১৬ ইঞ্চি দূরে রেখে দেখা উচিত এবং একটু পরপর ২০ সেকেন্ডের জন্য স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নিতে সবুজ গাছপালার দিকে তাকানোর মাধ্যমে চোখের সমস্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
কানে কম শোনা:
আমাদের মধ্যে অনেকেরই মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার অভ্যাস রয়েছে। তাছাড়া, আওয়াজ বাড়িয়ে গান শোনা এবং কানে হেডফোন গুঁজে রাখার মাধ্যমেও অজান্তে আমরা আমাদের শ্রবণশক্তির ক্ষতি করছি।
১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী মানুষের শ্রবণশক্তি কম হয়ে যাওয়ার হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। গবেষণা অনুযায়ী, দৈনিক দুই থেকে তিন ঘন্টার বেশি সময় ধরে মোবাইল ব্যবহারকারীদের ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই আংশিক বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে কানে হেডফোন লাগিয়ে কথা বলা অথবা গান শুনতে গিয়ে যত্রতত্র চলাফেরা করায় প্রতিনিয়ত অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে।
প্রয়োজন থেকে অতিরিক্ত আওয়াজে গান না শোনা, বেশি সময় কানে হেডফোন গুঁজে না রাখা এবং দীর্ঘ সময় মোবাইলে কথা বলার প্রবণতা কম করে দেওয়া সহ সর্বোপরি সচেতনতাই হতে পারে শ্রবণশক্তি সঠিক রাখার কার্যকর সমাধান।
অস্থি সন্ধি গুলোর ক্ষতি:
![অস্থি সন্ধি গুলোর ক্ষতি:](https://okbangla.com/wp-content/uploads/2024/06/ac5bb64a-e5ab-4bb1-8111-624e251a562e.jpg)
গবেষণায় দেখা গেছে দীর্ঘ সময় স্ক্রিনে টাইপের ফলে হাতের আঙুলে থাকা জয়েন্ট ব্যথা হয়। এমনকি এর প্রভাবে আর্থারাইটিসের সমস্যাও দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া ফোন ব্যবহারের সময় বসার ভঙ্গি ও কানের ফোন লাগিয়ে রেখে কথা বলা এবং বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত ঝুঁকে দীর্ঘক্ষন মেসেজ টাইপিং এর ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
শুক্রাণু কমে যাওয়া:
আমাদের অজান্তেই শরীরের বিভিন্ন কৌশ ও পুরুষের প্রজনন তন্ত্রের উপর মোবাইল ফোন থেকে নির্গত হওয়া হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন প্রভাব ফেলে। মোবাইলের ক্ষতিকর তরঙ্গগুলোর কারণে শুক্রাণুর ঘনত্ব কম হওয়া ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা হতে পারে। ফোন সাথে রাখার জন্য পুরুষ মানুষেরা প্যান্টের পকেটে ব্যবহার করেন। মোবাইল ব্যবহার করে পকেটে রাখলে সেটি উত্তপ্ত থাকার ফলে অণ্ডকোষের চারপাশেও তাপমাত্রা বেড়ে যায়, এর ফলে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
চিন্তা শক্তি কমে যাওয়া:
মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে মানুষের চিন্তা শক্তি কম হয়ে যায়। সাধারণত সৃজনশীল মেধা কম হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষের কোন বিষয়ে উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া মোবাইল ব্যবহার করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও নকল করার মতো অপরাধের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পায়, এর ফলে দিন দিন মেধাবী ছাত্রদের সৃজনশীলতা কম হয়ে যাচ্ছে। মোবাইলের প্রতি আসক্তির ফলে শিশু কিশোররা পানাহার ও দৈনন্দিন কাজকর্মে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। তাই নির্দিষ্ট বয়সের আগে কোন ভাবে শিশুর হাতে মোবাইল তুলে দেয়া ঠিক হবে না। বর্তমানে দেখা গেছে যে অনেক সময় শিশুর কান্না বা রাগ ভাঙ্গাতে অভিভাবকরা মোবাইল কার্টুন বা গান চালিয়ে শিশুর হাতে দেন, যা পরবর্তীতে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
শেষ কথা, Conclusion :
মোবাইল ফোন আমাদের জীবন অনেক কাজ সহজ করে দিলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করছে। তাই মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা বিষয়গুলোর মাধ্যমে আপনার মোবাইলের ক্ষতির প্রভাব সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাই এখন থেকেই এর ব্যবহার নিয়ে সাবধান হোন এবং সুস্থ থাকার জন্য মোবাইল ফোন অতিরি
Frequently Asked Questions :
আমাদের চোখকে বিশ্রাম না দিয়ে দীর্ঘক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে চোখের চাপ, মাথাব্যথা, শুষ্ক চোখ এবং ঝাপসা দৃষ্টি হতে পারে। স্মার্টফোনগুলি আমাদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, তাদের মস্তিষ্ক ও কানে নন-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার উচ্চতর আশঙ্কা থাকে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার কারণে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেওয়া ঠিক না।