প্রতিবেদন বা Report Writing লেখার নিয়ম, প্রত্যেকটি মানুষের শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে কর্ম জীবন, সর্ব ক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে প্রায়শই প্রতিবেদন লেখার প্রয়োজনীয়তা পড়ে না বলেই অনেকেই প্রতিবেদন লেখার সঠিক নিয়ম ও ফরম্যাট কি হবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান।
তাছাড়া, বিষয় সাপেক্ষে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও ফরম্যাট পরিবর্তন হয়, তাই Report Writing কৈাশল মনে রাখা অনেক ক্ষেত্রেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
তাই আজ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও কিভাবে মানসম্মত একটি প্রতিবদেন লিখতে হয় তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো।
প্রতিবেদন কি? What is meant by a Report?
প্রতিবেদন শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ Report থেকে । কথাটির অর্থ সমাচার, বিবৃতি বা বিবরণী। নির্দিষ্ট কোন বিষয় সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয় তথ্য অনুসন্ধান করার পর সেটিকে সুসংগঠিত করে বিবরণী আকারে যথাযথ রূপে কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করাই হল প্রতিবেদন। এক কথায় বলা যায় যে যেকোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ বিবরণীকেই সংক্ষেপে প্রতিবেদন হিসেবে অভিহিত করা হয়।
প্রতিবেদনে কি খাম লিখতে হয়? Protibedone ki kham likhte hoy?
প্রতিবেদন লেখায় কোনো খাম দরকার হয় না। তবে প্রতিবেদন লেখা শেষে প্রতিবেদক ও প্রতিবেদন সম্পর্কিত একটি তথ্য-ছক দিতে হবে।
প্রতিবেদন দেখতে কেমন হয়? How does a report look like?
প্রতিবেদনগুলি হল আনুষ্ঠানিক নথি যাতে শিরোনাম, উপ-শিরোনাম, সংখ্যাযুক্ত বিভাগ, বুলেট পয়েন্ট টেক্সট এবং গ্রাফিক্স যেমন ফ্লো চার্ট, ডায়াগ্রাম বা গ্রাফ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
সাধারণ প্রতিবেদন লেখার ফরম্যাট /কাঠামো/ প্রতিবেদনের গঠনরীতি, Report writing format
শিরোনাম
এটি প্রতিবেদনের প্রাণ। কী নিয়ে প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে তা এটি দেখেই বোঝা যাবে। প্রতিবেদনের শুরুতেই থাকবে শিরোনাম যা হতে হবে সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষণীয় ।
প্রতিবেদনের সারাংশ
শিরোনামের পরে ছোট করে বিষয়টির সারাংশ লিখতে হয়। এটা এমন ভাবে লিখতে হবে যেনো পাঠক তা পড়েই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পায়।
ভূমিকা
প্রতিবেদনের মূল বিষয় লেখা শুরু করার আগে ভূমিকা লিখতে হয়। তবে ভূমিকা সহজ ভাষায় লিখতে হবে। যাতে পাঠক এর থেকে পুরোটা প্রতিবেদন পড়ার আগ্রহ পান।
বিষয়বস্তু আলোচনা
প্রতিবেদনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল বিষয়বস্তু। বিষয়বস্তু লেখায় প্রথমে সমস্যা সম্পর্কে উল্লেখ করে সমস্যা নিয়ে সংগ্রহ করা তথ্য উপস্থাপন করবেন। এর পর সে থেকে উত্তরণের পরামর্শ বা সুপারিশ উপস্থাপন করতে হয়।
প্রতিবেদকের নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য বিষয়
বিষয়বস্তুর পর প্রতিবেদকের সকল তথ্য থাকবে। প্রতিবেদকের নাম, ঠিকানা, প্রতিবেদন তৈরীর সময় ইত্যাদি বিষয় উপস্থাপন করতে হবে। তবে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে এই অংশটি শুরুর দিকে উপস্থাপন করতে হয়।
প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি ? Characteristics of a Report
প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ না করা হলে প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সেই প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
১. নির্দিষ্ট কাঠামো অনুযায়ী লেখা :
প্রতিবেদন লেখার প্রধান নিয়ম হল একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করে লিখতে হবে। যেমন লেখায় শিরোনাম, প্রাপকের নাম-ঠিকানা, আলোচ্যবিষয়ের সূচিপত্র, বিষয়বস্তু, তথ্যপঞ্জি, স্বাক্ষর, তারিখ ইত্যাদি সঠিকভাবে তথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
২. সঠিক তথ্য পরিবেশন করা :
প্রতিবেদনে সত্য ঘটনাকে তুলে ধরা বাঞ্ছনীয়। তাই নির্ভুল, নিরপেক্ষ এবং সত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন রচনা করতে হয়।
৩. লেখায় নিজের বক্তব্যে স্পষ্টতা রাখতে হবে :
প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে সর্বদা স্পষ্ট বক্তব্য সহজ ভাষায় তুলে ধরতে হবে। এতে লেখকের বক্তব্য তথা মূল বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা লাভ করা সহজ হয়।
৪. সংক্ষিপ্ততা :
প্রতিবেদন রচনায় যতটা সম্ভব অল্প শব্দের মাধ্যমে বেশি তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করতে হবে। লেখার সময় অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা বক্তব্য এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
৫. নির্দিষ্ট বিষয়ের তথ্য সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করা :
সহজ ভাষা এবং সুন্দরভাবে সাজিয়ে তথ্যগুলো উপস্থাপন করতে হবে যাতে পাঠক খুব সহজেই মূল বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পারে।
৬. প্রতিটা তথ্যের জন্য আলাদা প্যারাগ্রাফ
প্রতিটা তথ্য লেখার জন্য আলাদা প্যারাগ্রাফ ব্যবহার করার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করতে হবে। এতে পাঠক সহজেই তথ্যগুলো বুঝতে পারবে।
৮. সুপারিশ সংযোজন
প্রতিবেদনের শেষে উপসংহারে সুপারিশ সংযোজন করতে হয়, যাতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ্য সমস্যা সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে পারেন।
সাধারণ প্রতিবেদনের নমুনা, General report sample
শিরোনাম…………………………………………….
প্রতিবেদনের সারাংশ………………………………………………………….
ভূমিকা……………………………………………………………………
বিষয় বস্তু আলোচনা …………………………………………………………………….
…………………………………………………..…………………………………………………..…………………………………………………..……………………………………………………..…………………………………………………..
প্রতিবেদকের নাম:……………………..
তারিখ…………….
ঠিকানা……………….
স্বাক্ষর
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম, Rules for writing reports
একটি মানসম্মত প্রতিবেদন লেখার সময় বিভিন্ন বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। যদি প্রতিবেদন লেখার নিয়মগুলো সঠিক ভাবে তথা একটু সতর্ক থেকে না লেখা হয় তবে গঠনমূলক প্রতিবেদন তৈরি করা যাবে না।
প্রতিবেদনের আকার, Report size
প্রতিবেদন লেখার শুরুতেই এর আকৃতি সম্পর্কে জানা দরকার। একটি সাধারণ প্রতিবেদন সীমিত ব্যাখ্যা ও প্রয়োজনীয় বিবরণ দিয়ে লেখা হতে পারে, যা সাধারণত ২ থেকে ৩ পৃষ্ঠার মধ্যে লেখা হতে পারে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন আকারে তেমন বড় হয় না। এক্ষেত্রে মূলত ঘটনার বিবরণ তুলে ধরতে হবে। এছাড়া সংবাদ পত্রের প্রতিবেদেনে সম্পাদকের টেবিল থেকে প্রতিবেদনের আকৃতি নির্ণয় করা হয়। তদন্ত বা গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করতে নকশা, সারণি ইত্যাদিও যুক্ত হয়।
প্রতিবেদন লিখন
প্রতিবেদন বড় হোক কিংবা ছোট, এর গঠন বা কাঠামো ও রূপ যা-ই হোক, সকলকেই সাবলীল ও মানসম্মত প্রতিবেদন লিখতে জানা দরকার। ভালো মানসম্মত প্রতিবেদন রচনার অন্যতম দিকগুলো হল :
রূপরেখা পরিকল্পনা
একটি উত্তম ও মানসম্পন্ন প্রতিবেদন রচনার জন্যে পর্যাপ্ত ও বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সঠিক তথ্য থাকা জরুরি। প্রতিবেদনে যেনো ভুল তথ্য না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। যে বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন রচনা করা হবে তা লেখার সময় সঠিক কাঠামো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রতিবেদন রচনা শুরু করার আগে মনের মধ্যে লেখার রূপরেখা তৈরি করে নিলে লিখতে সহজ হয়। এতে প্রতিবেদন সুন্দর ও মানসম্মত হয় না। নয়তো আপনার প্রতিবেদন লেখার উদ্দেশ্যও সফল হবে না।
প্রতিবেদন হবে নির্মেদ ও সংহত
একজন দক্ষ প্রতিবেদক লেখার বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ও প্রয়োজনীয় সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন রচনার সময় সকল তথ্য যাচাই-বাছাই করে বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্যগুলো ব্যবহার করে প্রতিবেদন রচনা করেন।
প্রতিবেদন হবে বস্তুনিষ্ঠ
প্রতিবেদন হতে হবে বস্তুনিষ্ঠ। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নিরপেক্ষ হতে হবে প্রতিবেদনের মধ্যে থাকা বিষয়বস্তু। প্রতিবেদন রচনায় কোন পক্ষপাতিত্ব করা হয় না। নির্বাচিত বিষয়ের ওপর তথ্য সংগ্রহ করে ফলাফল ও সুপারিশ করলে প্রতিবেদন সুন্দর হয়। মানসম্মত প্রতিবেদন যেমন অতিরঞ্জিত হয় না, বরং একজন সৎ প্রতিবেদকের কাজ হলো প্রকৃত ঘটনা ও তথ্য স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করে সহজ ও সাবলীল ভাষায় সঠিক, সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ প্রতিবেদন রচনা করা।
ভাষা হবে সহজ
প্রতিবেদন রচনার সময় সহজ সরল ও স্পষ্ট ভাষার প্রয়োগ করতে হবে। জটিল করে বিষয় উপস্থাপন করা উচিত নয়। কঠিন-দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহারে প্রতিবেদন যেনো জটিল হয়ে না পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। কোনো বক্তব্য যেন স্বার্থবোধক না হয় এবং আপনার লেখায় কেউ যেন তার প্রাপ্য হতে বঞ্চিত না হয় সে দিকেও নজর রাখবেন।
প্রতিবেদনের ভাষা হবে ব্যাকরণসম্মত
ব্যকরণের নিয়ম মেনে বাক্যের গঠন করা জরুরী। নির্ভুল ভাবে বাক্যের অনুসরণ করে যথাযথ বিরামচিহ্ন প্রয়োগ করতে হবে। এই সব দিক মেনে বাক্যের গঠন করতে প্রতিবেদন উৎকর্ষমণ্ডিত হবে।
উদ্দেশ্যের সাথে মিল রেখে প্রতিবেদন তৈরি
প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। তাই লেখার সময় মনে রাখতে হয়, মূল উদ্দেশ্য থেকে লেখার বিষয় যেন বিচ্যুত না হয়। উদ্দেশ্য ছেড়ে অপ্রয়োজনীয় বা উদ্দেশ্যের বাইরে লেখা যাবে না।
পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না, অতি আবেগ পরিহার করতে হবে
প্রতিবেদক সৎ ও সংবেদনশীল হবেন, পাঠকের মন নাড়া দিতে ভাষা ব্যবহারে অতিমাত্রায় আবেগী হবেন না বা পক্ষপাতিত্ব করবেন না। প্রতিবেদকের সরাসরি মন্তব্য ও নিজস্ব পরামর্শ প্রতিবেদনে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। সংশ্লিষ্ট মহল বা পর্যবেক্ষকের নামে মন্তব্য জুড়ে দেয়া প্রতিবেদনের অঙ্গহানি করে। ভাষা ও বিশেষণের ব্যবহার যাতে এমন না হয় যে প্রতিবেদন দেখে মনে হবে প্রতিবেদক ঘটনাটিকে যেভাবে দেখতে চেয়েছেন সেভাবেই প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন।
সরাসরি অভিযোেগ আনা যাবে না
যেসব প্রতিবেদনে পদে পদে মানহানি মামলার আশঙ্কা থাকে, সেসব প্রতিবেদনে সরাসরি অভিযোগ আনা রিপোর্টারের পক্ষে অনুচিত। গোয়েন্দা স্টোরি বানানো প্রতিবেদকের কাজ নয়, পুলিশি ডিটেকটিভের কাজ সাংবাদিকতার নীতি বিরুদ্ধ।
প্রতিবেদনের সংখ্যা ও ধরন নির্ধারণ
একটি খাতের সব সমস্যা নিয়ে একটি প্রতিবেদন যথেষ্ট নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে একটি বিশেষ সমস্যাকে মূল বিষয় ধরে সমস্যা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে প্রতিবেদন করা যেতে পারে। ছোট ছোট কয়েকটি প্রতিবেদন হতে পারে। জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো দাবি প্রতিবেদকের নিজ থেকে উপস্থাপন না করে সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে উপস্থাপন করাতে হবে।
সহজ কৌশলে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম জেনে নিন, Know the rules of report writing in simple techniques
- ১। আপনি কি কারো নির্দেশে প্রতিবেদন লিখছেন? কী ধরনের প্রতিবেদন লিখছেন? যিনি আপনাকে সমস্যা খতিয়ে দেখতে বলেছেন তিনি কে? তিনি কখন, কেন, এ দায়িত্ব দিয়েছেন?
- ২। সুনির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে প্রতিবেদন লিখতে হবে? সেটা কী?
- ৩। কীভাবে অনুসন্ধান, তদন্ত বা তথ্য সংগ্রহ করতে হবে?(কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ, ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পাদন, প্রয়োজনীয় পঠন-পাঠন ইত্যাদি) সে বিষয়গুলো কী কী?
- ৪। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট ফলাফল বা সুপারিশ কী কী?
- এই সব প্রশ্নের উত্তর প্রতিবেদন তৈরি করার আগে সাজিয়ে নিতে হবে। তারপর দরকারী ও সামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্যগুলো দিয়ে প্রতিবেদন সাজাতে হবে।
প্রতিবেদনের প্রকারভেদ, Types of reports
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম একটি নয়, বরং ভিন্ন ক্ষেত্রে পাঠানোর জন্য সাধারণত বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন লেখা হয়। তাই জেনে রাখা ভালো যে প্রতিবেদনের প্রকারভেদও রয়েছে, সেগুলি হল :
১. সংবাদপত্রের জন্য লেখা প্রতিবেদন :
সংবাদপত্রে প্রকাশ করার জন্য এই ধরনের প্রতিবেদন লেখা হয়। এক্ষেত্রে লেখকের উল্লেখ নিজস্ব প্রতিবেদক বা নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে করা হয়ে থাকে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক :
এই ধরনের প্রতিবেদন আকারে বেশ বড় হয়। সাধারণত কোন ঘটনার পুরোপুরি তথ্য দিয়ে এই প্রতিবেদন লেখা হয়।
৩. অপ্রাতিষ্ঠানিক :
এই ধরনের প্রতিবেদন আকারে ছোট হয়, এক্ষেত্রে প্রতিবেদনে মূল তথ্য খুব অল্প সংখ্যায় তুলে ধরা হয়। সাধারণত কোন বিশেষ অনুষ্ঠানের ঘোষণা অথবা কোন প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রতিবেদন লেখা হয়।
৪. অফিস আদালতের কর্ম সংক্রান্ত দাপ্তরিক প্রতিবেদন :
প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন লেখা হয়, এক্ষেত্রে বিশেষত দপ্তর কর্মীদের ক্ষেত্র বিশেষে করনীয় বিভিন্ন ব্যাপারগুলোও তুলে ধরা হয়।
৫. গবেষণামূলক :
এই ধরনের প্রতিবেদনে কোন বিষয় অথবা কোন নির্দিষ্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়, যেমন কোন একটি ঘটনার কারণে পরবর্তী সময়ে কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং সেগুলোর প্রতিকার, ইত্যাদি সম্পর্কে এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
৬. নতুন প্রস্তাবের জন্য লেখা প্রতিবেদন :
কোন ধরনের সমস্যা সমাধানের, কাজের সুবিধার্থে কোনো রকম পরিবর্তনের জন্য, নির্দিষ্ট ব্যাপারে মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে এই ধরনের প্রতিবেদন লেখা হয়। এই লেখায় প্রতিবেদক নিজস্ব মতামতও তুলে ধরতে পারেন।
৭. ঘোষণা দেওয়ার জন্য লেখা প্রতিবেদন :
কোন প্রতিষ্ঠান নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোনোও তথ্য প্রকাশ, পণ্যের মূল্যমান সম্পর্কে কোনো তথ্য সহ বিভিন্ন ব্যাপারে এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকেন।
৮. নিয়মিত প্রতিবেদন :
এই ধরনের প্রতিবেদনে নিত্যদিন ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য তুলে ধরা হয়।
৯. বিশেষ প্রতিবেদন :
এই ধরনের প্রতিবেদন লেখা হয় কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে। এক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে, বিশদভাবে খুঁটিনাটি তথ্য খুঁজে প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এই ধরনের প্রতিবেদন অনেক সময় একাধিক পর্বেও প্রকাশিত হয়ে থাকে।
উক্ত প্রতিবেদনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের প্রতিবেদন রয়েছে। সেগুলি হল, খেলাধুলা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রতিবেদন, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিবেদন,সম্পাদকীয় প্রতিবেদন ইত্যাদি ।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের জন্য লেখা প্রতিবেদন :
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নমুনা :
শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিনিধি, স্থান,তারিখ:……………………………………………………………………
বিষয়……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
তদন্ত প্রতিবেদন :
সাধারণত বিভিন্ন বিষয়ের উপর তদন্ত বা গবেষণা করে সেই সম্পর্কে সুপারিশ সহ বিস্তারিত বিবরণী তৈরি করতে লেখা হয় তদন্ত প্রতিবেদন।
তদন্ত প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নমুনা :
তারিখ:…………
প্রাপক:…………………………….
প্রেরক…………………………
বিষয়:……………………………………………………………………………………………………
ঘটনার বিবরণ: …………………………………………………………………………………………………………..
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..
দুর্ঘটনার কারণ:……………………………………………………………………………………………………..
……………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………….
১)
২)
সুপারিশ: …………………………………………………………………………………………………………………….
…………………………………………………………………………………………………….
১)
২)
স্বাক্ষর ও তারিখ
তদন্ত কমিটির প্রধানের নাম
ফলোআপ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম:
ফলোআপ প্রতিবেদন বলতে বোঝায় পূর্বে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার বর্তমান পরিস্থিতি বর্ণনা করে যে প্রতিবেদন লেখা হয়। ফলোআপ প্রতিবেদনের শেষদিকে অনুচ্ছেদে ঘটনাটি রিক্যাপ করা বা পুনরায় সংক্ষেপে বর্ণনা করতে হবে। দীর্ঘ বিলম্বিত ফলোআপ রিপোর্টে মূল ঘটনাটি কবে, কোথায়, কীভাবে ঘটেছিল তা উল্লেখ করে দিলে পাঠকের স্মরণ করতে সুবিধা হবে।
কোনো সমীক্ষা উল্লেখ করলে তা কীসের, কবেকার এবং কী পদ্ধতিতে তৈরি তা উল্লেখ করা জরুরি।
একজন গবেষকের গবেষণার ফলাফল কিংবা একটি প্রবন্ধের তথ্য নিয়েও রিপোর্ট করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে প্রবন্ধে উল্লেখিত সমস্যা-সম্ভাবনা- পরিসংখ্যান সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য বা কোনো পাঠকের মন্তব্য নিয়ে খবর বানাতে হবে।
পরিশেষে, Conclusion
প্রতিবেদন লেখা প্রথম দিকে কিছুটা জটিল মনে হলেও নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন লেখা ও পড়ার অভ্যাস থাকলে প্রতিবেদন লেখার নিয়মকানুন সহজেই শিখে ফেলতে অসুবিধা হবে না।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জেনেছি যে শুদ্ধ ভাষার ব্যবহার ও নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুসরণ করে সহজেই প্রতিবেদন লেখা যায়। প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নমুনায় উল্লেখ করা বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিবেদন লিখতে পারা গেলে আপনার প্রতিবেদনটি সকলের প্রশংসা কাড়তে বাধ্য।
আশা করি আজকের এই আলোচনা থেকে সবাই প্রতিবেদন কী, কিভাবে লিখতে হয় বা কত ধরণের প্রতিবেদন হয় তা জানতে পেরেছেন। তাই এখন থেকে প্রতিবেদন লেখা আয়ত্ত্ব করুন ও নিয়মিত চর্চা করুন।