প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার হেঁটে মানুষ আফ্রিকা থেকে এশিয়া হয়ে দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছেছিল। এটি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ পায়ে হেঁটে ভ্রমণ ছিল।
কীভাবে এই আবিষ্কার সম্ভব হলো?
সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (NTU Singapore) এবং সিঙ্গাপুর সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল লাইফ সায়েন্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং (SCELSE) ও এশিয়ান স্কুল অফ দ্য এনভায়রনমেন্ট (ASE)-এর বিজ্ঞানীরা ‘সায়েন্স’ জার্নালে এই গবেষণাটি প্রকাশ করেছেন। তাঁরা ১৩৯টি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ১,৫৩৭ জন ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করে এই বিশাল যাত্রার পথ খুঁজে পেয়েছেন।
যাত্রাপথ এবং প্রতিবন্ধকতা
এই দীর্ঘ যাত্রা হাজার হাজার বছর ধরে অনেক প্রজন্ম ধরে চলেছিল। এই সময়ে পৃথিবীর অনেক এলাকা বরফে ঢাকা ছিল, যা এখন সমুদ্রের নিচে চলে গেছে। এসব বরফের পথই মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সাহায্য করেছিল। যাত্রাপথে মানুষেরা অনেক প্রাকৃতিক বাধা পার করে ভিন্ন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিল।
জেনেটিক বৈচিত্র্যের গুরুত্ব

গবেষণায় দেখা গেছে, এই দীর্ঘ যাত্রার কারণে মানুষের জেনেটিক বৈচিত্র্য কমে গিয়েছিল। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যারা ভ্রমণ করেছিল, তাদের মধ্যে পূর্বপুরুষদের সব ধরনের জিন ছিল না। এর ফলে, তাদের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও কম ছিল। এই কারণে, যখন ইউরোপীয়রা আমেরিকায় পৌঁছায়, তখন আদিবাসী আমেরিকানরা তাদের আনা নতুন রোগের প্রতি বেশি সংবেদনশীল ছিল।
অধ্যাপক কিম হি লিম বলেছেন যে, এই গবেষণা আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে অতীতে জনসংখ্যা কীভাবে গঠিত হয়েছিল এবং কীভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে।
অভিযোজন ক্ষমতা এবং ভবিষ্যতের গবেষণা
ডঃ এলেনা গুসারেভা বলেছেন যে, এই গবেষণা থেকে বোঝা যায় আদিম মানুষেরা কতটা অসাধারণভাবে নিজেদেরকে বিভিন্ন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারত। তিনি আরও বলেছেন যে, আধুনিক জেনেটিক প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা এখন মানুষের প্রাচীন ইতিহাস এবং তাদের ভ্রমণের চিহ্নগুলো খুঁজে বের করতে পারি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই গবেষণায় দেখা গেছে এশিয়ার মানুষদের মধ্যে জেনেটিক বৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি। আগে মনে করা হতো ইউরোপীয়দের মধ্যে এই বৈচিত্র্য বেশি, কারণ বেশিরভাগ বড় গবেষণায় ইউরোপীয়দের ডিএনএ নিয়ে কাজ করা হয়েছিল। কিন্তু এই গবেষণা সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে।