বাংলাদেশ ইন্টারনেট চালু হয় কত সালে? In which year was the Internet launched in Bangladesh?

বাংলাদেশ ইন্টারনেট চালু হয় কত সালে?

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে ইন্টারনেট এখন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষা, বিনোদন, ব্যবসা, যোগাযোগ সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে।

সূচিপত্র: hide

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ইতিহাস, History of internet in Bangladesh :

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৯০-এর দশকে।

প্রাথমিক সময়:

  • ১৯৯৫ সালে অফলাইন ই-মেইলের মাধ্যমে সীমিত আকারে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয়।
  • ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সবার জন্য উন্মুক্ত হয় এবং দেশে প্রথম ইন্টারনেটের জন্য ভিস্যাট স্থাপন করা হয়।

বিস্তার:

  • ২০০৫ সাল নাগাদ ১৫০ এর অধিক আইএসপি-র নিবন্ধন দেয়া হয়।
  • সরকারের উদারনৈতিক নীতি এবং প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারের ফলে ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ৪ জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা প্রদান শুরু করে।

বর্তমান:

  • বর্তমানে ইন্টারনেট বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
  • ই-কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।

কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য:

বাংলাদেশ ইন্টারনেট
  • প্রথম ইন্টারনেট সংযোগ: ৬ জুন ১৯৯৬ সালে ইনফরমেশন সিস্টেম নেটওয়ার্ক(আইএসএন) প্রথম ইন্টারনেট সংযোগ দেয়।
  • সাবমেরিন কেবল: বাংলাদেশে ইন্টারনেট মূলত সি-মি-ইউ-৪ এবং সিমিউ-৫ এই দুটি সাবমেরিন কেবল দ্বারা সরবরাহ করা হয়।
  • বিটিআরসি: বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দেশের টেলিযোগাযোগ খাত সহ ইন্টারনেট সেবা নিয়ন্ত্রণ করে।

ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার ফলে বাংলাদেশের সমাজে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে? What kind of changes have come in the society of Bangladesh as a result of the increase in the use of the Internet?

ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ার ফলে বাংলাদেশের সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন তুলে ধরা হলো:

  • তথ্যের সহজলভ্যতা: ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কেউ খুব সহজেই যে কোনো তথ্য পেতে পারে। এটি শিক্ষা, গবেষণা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
  • যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন: সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। দূরত্ব আর বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
  • ব্যবসায়ের পরিবর্তন: অনলাইন শপিং, ডিজিটাল পেমেন্ট এবং অনলাইন মার্কেটিং এর মাধ্যমে ব্যবসায়ের ধরণ বদলে গেছে।
  • শিক্ষার পরিবর্তন: অনলাইন কোর্স, ই-বুক এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষা আরো সহজলভ্য হয়েছে।
  • সাংস্কৃতিক পরিবর্তন: ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়া সহজ হয়েছে। এটি সাংস্কৃতিক বিনিময়কে উৎসাহিত করে।
  • কর্মসংস্থানের সুযোগ: ইন্টারনেটের কারণে অনেক নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং এবং অনলাইন মার্কেটিং এর মতো কাজগুলো এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

কিন্তু ইন্টারনেটের ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে:

  • ভুয়া খবর: ইন্টারনেটে ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
  • সাইবার বুলিং: অনলাইনে মানুষকে হেনস্থা করার ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
  • নির্ভরশীলতা: অনেকেই ইন্টারনেটে অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়ে যা তাদের সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে।
  • সার্বিকভাবে, ইন্টারনেট বাংলাদেশের সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এটি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। তবে ইন্টারনেটের সুবিধা গ্রহণ করার পাশাপাশি এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকাও জরুরি।

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি এবং মূল্য কেমন? How is the speed and price of internet in Bangladesh?

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের গতি এবং মূল্য নিয়ে আপনার জানতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক। এই বিষয়টি দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

ইন্টারনেটের গতি:

  • ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে: বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এখনও কিছুটা পিছিয়ে আছে।
  • মোবাইল ইন্টারনেট: মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য বাংলাদেশ গতি সাধারণত বেশ ভালো। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের তুলনায় মোবাইল ইন্টারনেটের গতি বেশি স্থিতিশীল।
  • ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট: বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিও বাড়ছে, তবে কিছু এলাকায় এখনও উন্নতির জায়গা রয়েছে।

ইন্টারনেটের মূল্য:

ইন্টারনেটের গতি
  • সাধারণত সুলভ: বাংলাদেশে ইন্টারনেটের মূল্য অনেক দেশের তুলনায় সুলভ। বিভিন্ন ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ দিয়ে থাকে।
  • ডেটা প্যাক: মোবাইল ইন্টারনেটের জন্য বিভিন্ন ধরনের ডেটা প্যাক পাওয়া যায়, যা বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই সুবিধাজনক।
  • ব্রডব্যান্ড: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মূল্যও সাধারণত সুলভ।

কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন:

  • এলাকাভেদে পার্থক্য: ইন্টারনেটের গতি এবং মূল্য বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন হতে পারে।
  • নেটওয়ার্ক কভারেজ: আপনার এলাকায় কোন নেটওয়ার্কের কভারেজ ভালো, সেটি জেনে নেওয়া জরুরি।
  • প্যাকেজের শর্তাবলি: কোন প্যাকেজটি আপনার জন্য উপযুক্ত, সেটি বুঝতে প্যাকেজের শর্তাবলি ভালো করে পড়ুন।

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের বর্তমান অবস্থা, Current status of Internet in Bangladesh :

  • মোবাইল ইন্টারনেট: বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনপ্রিয়।
  • ই-কমার্স: অনলাইন শপিং বাড়ছে।
  • ডিজিটাল পেমেন্ট: বিকাশ, নগদসহ বিভিন্ন ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি জনপ্রিয়।

বাংলাদেশে ইন্টারনেটের চ্যালেঞ্জ, Internet challenges in Bangladesh:

  • ইন্টারনেট গতি: কিছু এলাকায় ইন্টারনেট গতি সন্তোষজনক নয়।
  • ডেটা চার্জ: ডেটা চার্জ অনেকের জন্য ব্যয়বহুল।
  • ডিজিটাল সাক্ষরতা: সবার কাছে ডিজিটাল সাক্ষরতা নেই।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ইন্টারনেট, Internet in Bangladesh in the future :

  • ৫জি নেটওয়ার্ক: ভবিষ্যতে ৫জি নেটওয়ার্ক চালু হলে ইন্টারনেট গতি আরো বৃদ্ধি পাবে।
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার বাড়বে।
  • ইন্টারনেট অফ থিংস: ইন্টারনেট অফ থিংসের মাধ্যমে সবকিছু ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হবে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত 2024? What is the number of internet users in Bangladesh 2024?

  • ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৭৭.৩৬ মিলিয়ন। সেই সময়, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৪.৫ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করত।
  • ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংজ্ঞা হল, যে কোনও ডিভাইস থেকে গত ১২ মাসে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করেছেন এমন ব্যক্তি।
  • ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছিল, সেই সময় দেশে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১১৯.০৬ মিলিয়ন, আর আইএসপি ও পিএসটিএন গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৩.৭৪ মিলিয়ন।

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান কত? What is the position of Bangladesh in the use of Internet?

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য নিচে দেওয়া হল:

  • বাংলাদেশের চারটি মোবাইল অপারেটর টেলিটক, গ্রামীণফোন, রবি, এবং বাংলালিংক ৬৪টি জেলায় 3G, 4G পরিষেবা অফার করে।
  • অন্যান্য অপারেটররা কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় 3G, 4G ইন্টারনেট পরিষেবা এবং বাকি এলাকায় EDGE বা GPRS GSM ইন্টারনেট পরিষেবা অফার করে।

বাংলাদেশের ইন্টারনেট আসে কত সালে ? In which year did the internet come in Bangladesh?

বাংলাদেশে ১৯৯৫ সালে ইন্টারনেট চালু হয়। ২০১৮ সালে ৪ জি নেটওয়ার্ক পরিষেবা শুরু হয়।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধের কারণগুলি হলো:

  • ২০২৪ সালে জুন মাসে ছাত্র আন্দোলনে বিক্ষোভ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে সরকার মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ দেয়।
  • ছাত্র আন্দোলনে মারাত্মক বিক্ষোভের পরে দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
  • জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার পরে মোবাইল নেটওয়ার্ক, ফেসবুক, এবং টেলিগ্রাম বন্ধ করা হয়

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সমস্যা হলে কি হয়? What happens if there is a problem with the internet in Bangladesh?

  • বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের জন্য 4G এবং 3G নেটওয়ার্কের প্রচলন রয়েছে।
  • টেলিটক, রবি, গ্রামীণফোনসহ অপারেটররা 5G পরিষেবা পরীক্ষা শুরু করেছে।
  • ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকলে ব্যবসায়ীদের আর্থিক লোকসান হয়।
  • ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে অনলাইনের লেনদেন ব্যাহত হয়।
  • ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে প্রিপেইড গ্যাস, বৈদ্যুতিক মিটারে রিচার্জ করা যায় না।
  • ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকলে ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রফতানিতে সমস্যা হয়।

বাংলাদেশের সেরা সিম কোনটি? / বাংলাদেশের সেরা অপারেটর কোনটি?Which is the best operator in Bangladesh?

বিগত কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশ মোবাইল নেটওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স পুরষ্কারে গ্রামীণফোন এবং বাংলালিংকের আধিপত্য রয়েছে।

ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান কত? What is the position of Bangladesh in the use of Internet?

গ্লোবাল ডিজিটাল ইনসাইটসের ডেটা রিপোর্ট অনুযায়ী, 2024 সালের শুরুতে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল 77.36 মিলিয়ন। সেই সময় ইন্টারনেট প্রবেশের হার ছিল 44.5 শতাংশ।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট সরবরাহ করে ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।

শেষ কথা, Conclusion :

আজকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলো থেকে আশা করি আপনারা বাংলাদেশ ইন্টারনেট সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। পোস্টটি আপনাদের মনোগ্রাহী হলে অবশ্যই নিজের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts