গঙ্গার জল কি সত্যিই অমৃত? কেন হাজার বছরেও নষ্ট হয় না, জানুন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা


গঙ্গা নদী শুধু ভারতের একটি নদীবাহিত জলধারা নয়, কোটি কোটি মানুষের কাছে এটি এক জীবন্ত দেবী হিসেবেও পরিচিত। হিন্দু ধর্মে গঙ্গার জলকে পবিত্র মনে করা হয়। এই জলের প্রতি মানুষের এতটাই বিশ্বাস রয়েছে যে, বছরের পর বছর বাড়িতে বা মন্দিরে এই জল বোতলে ভরে রাখা হয়। দেখা গেছে এভাবে সঞ্চয় করে রাখা হলেও এর জল নষ্ট হয় না বা দুর্গন্ধ হয় না। বিষয়টি কি শুধুই আধ্যাত্মিক, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো বৈজ্ঞানিক কারণ? চলুন, আজ জেনে নিই এই রহস্যের পেছনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

গঙ্গার জল নিয়ে বিজ্ঞানীরা কী বলেন?

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, গঙ্গা স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন, তাই এর জলে রয়েছে ঐশ্বরিক শক্তি। তবে আধুনিক বিজ্ঞান এই ঘটনাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। বিজ্ঞানীদের মতে, গঙ্গার জলে ‘ব্যাকটেরিওফাজ’ নামক এক বিশেষ ধরনের অণুজীবের উপস্থিতি দেখা যায়। এই ব্যাকটেরিওফাজগুলো জলের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। এতে জল বিশুদ্ধ থাকে।

গঙ্গার জল নিয়ে বিজ্ঞানীরা কী বলেন?

এছাড়া, গঙ্গার জলে স্বাভাবিকের চেয়ে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন এবং বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে, যা জলকে প্রাকৃতিকভাবেই পরিশোধিত করে দেয়।

কেন গঙ্গার জল সহজে নষ্ট হয় না?

গঙ্গার জল সহজে পচে না যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:

  • অক্সিজেনের উচ্চ মাত্রা: বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, অন্যান্য নদীর জলের তুলনায় গঙ্গার জলে অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি আছে। এই অতিরিক্ত অক্সিজেনই জলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে কঠিন করে তোলে। পাশাপাশি জল পচন রোধে সহায়ক হয়।
  • সালফারের উপস্থিতি: গঙ্গা নদী হিমালয়ের গভীরে অবস্থিত। গঙ্গোত্রীর গোমুখ থেকে উৎপন্ন হয়ে এই নদী পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে আসে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে নদীর জল পাহাড়ের বিভিন্ন শিলা ও খনিজ পদার্থের সংস্পর্শে এসে জলে সালফার সহ আরও অনেক উপকারী উপাদান মিশে যায়। গঙ্গার জলে অন্যান্য নদীর তুলনায় সালফারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি প্রাকৃতিকভাবেই জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।
কেন গঙ্গার জল সহজে নষ্ট হয় না?

গঙ্গা কোথা থেকে আসে?

গঙ্গা নদী উত্তরাখণ্ডের গঙ্গোত্রীর গোমুখ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এটি মূলত অলকানন্দা এবং ভাগীরথী নদীর সঙ্গমস্থলে গঠিত। জেনে রাখা ভালো, ভারত ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা মোট ২৫২৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। এর বাম পাশের প্রধান উপনদীগুলোর মধ্যে রয়েছে রামগঙ্গা, গোমতী, ঘাঘরা, গণ্ডক, কোশী এবং মহানন্দা। অন্যদিকে, ডান পাশের উপনদীগুলোর মধ্যে রয়েছে যমুনা এবং সোন নদী।

গঙ্গার জল নিয়ে প্রচলিত বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, উভয়ই এক অসাধারণ মেলবন্ধন তৈরি করে। আজও গঙ্গাজল বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। তবে, এই পবিত্রতা এবং বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও, এক শ্রেণীর মানুষ ক্রমাগত গঙ্গার জল দূষণ করে চলেছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ঐতিহ্যবাহী নদীকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts