‘সমুদ্র থেকে ভেসে এলেন জগন্নাথ!’ — রহস্য, রোমাঞ্চ আর ইতিহাসে ঘেরা দিঘার আদি জগন্নাথ মন্দির

জগন্নাথধাম

দিঘার সৈকতে ভেসে এলেন জগন্নাথদেব! গল্প নয়, দাবি করা হচ্ছে একেবারে সত্যি ঘটনা। দিঘার পুরনো সৈকতের ধারে গড়ে ওঠা এক মন্দিরকে ঘিরেই ঘনিয়েছে এই রহস্যঘন কাহিনি। আজ যেখানে গড়ে উঠেছে জাঁকজমকপূর্ণ নতুন জগন্নাথধাম, তার ঠিক পাশেই রয়েছে ‘আদি’ জগন্নাথ মন্দির। আর তার ইতিহাস শুনলে চমকে উঠবেন আপনিও!

গঙ্গামন্দির থেকে জগন্নাথধাম! কীভাবে বদলে গেল পরিচয়?

আজ যে মন্দিরটি ‘আদি জগন্নাথ মন্দির’ নামে পরিচিত, তা একসময় ছিল গঙ্গামন্দির। ওল্ড দিঘার একেবারে সমুদ্রের ধারে তালপাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি হয়েছিল সেই ছোট্ট আশ্রয়। মৎস্যজীবীদের আরাধ্য দেবী মা গঙ্গা ও মহাকালমূর্তির পুজো চলত সেখানে। পুজো করতেন সাধু বলরাম দাস, যিনি এসেছিলেন নন্দীগ্রাম থেকে।

গঙ্গামন্দির থেকে জগন্নাথধাম

১৪১৩ সনের সেই সন্ধ্যা, যখন সমুদ্র আনল দেবতাদের উপহার!

এক সন্ধ্যায়, চৈত্র মাসের ৬ তারিখ, ১৪১৩ বঙ্গাব্দ। সময়টা ছিল সন্ধে ৭টা। জোয়ারের সময়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে কিছু মৎস্যজীবী ও দিঘায় বেড়াতে আসা সমীর মণ্ডল ও তাঁর স্ত্রী হঠাৎ দেখতে পান, কিছু একটা ভেসে আসছে ঢেউয়ের তোড়ে।

চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া দৃশ্য—ভাসছে তিনটি মূর্তি! প্রথমে বলরামদেব, তারপর জগন্নাথদেব, শেষে মাতা সুভদ্রা! বিস্ময়ে হতবাক সকলে।

মূর্তি তুলে আনা, আর শুরু হয় নতুন ইতিহাস

মৎস্যজীবীদের সাহায্যে সমীরবাবুরা সেই মূর্তিগুলি তুলে আনেন মন্দির চত্বরেই। সিদ্ধান্ত হয়, এখানেই তৈরি হবে নতুন মন্দির, আর স্থাপন করা হবে সেই ভেসে আসা মূর্তিগুলিকে। একসঙ্গে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা, আর্থিক সাহায্যে তৈরি হয় এক নব কলেবরের পবিত্র আশ্রয়। শুরু হয় নিয়মিত পুজো।

মাসির বাড়ি স্বীকৃতি ও মুখ্যমন্ত্রীর আগমন

এই আদি জগন্নাথ মন্দিরকে ‘মাসির বাড়ি’ হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এসেছিলেন এখানে। তাঁর আগমনে নতুন করে পরিচিতি পায় এই রহস্যঘেরা স্থান।

সমুদ্র থেকে ভেসে এলেন জগন্নাথ

নির্জনতা থেকে পবিত্রতায়—এক টুকরো অলৌকিক ইতিহাস

একসময় যেখানকার চারপাশে ছিল কেয়াপাতার ঝোপ, নির্জনতা আর ঢেউয়ের গর্জন, আজ তা এক পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। স্থানীয়দের দাবি, এই মন্দিরই আসল জগন্নাথধাম, যেখানে সমুদ্র নিজে ভেসে এনেছিল দেবতাদের।

আপনিও যদি দিঘায় যান, নতুন মন্দির দেখার পাশাপাশি এই আদি জগন্নাথ মন্দিরে অবশ্যই ঘুরে আসুন। কে জানে, হয়তো আপনিও অনুভব করবেন সেই অলৌকিক স্পর্শ!

ভেসে এসেছিলেন দেবতা… আর এখানেই শুরু হয়েছিল এক নতুন ভক্তির ইতিহাস।

শেয়ার করে দিন এই রহস্যঘেরা কাহিনি, জানুক সবাই দিঘার সেই অলৌকিক ইতিহাস!

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts