জরুরী কাগজপত্র সামলে রাখা বেশ কঠিন কাজ, আর যদি কেউ সব দরকারি কাগজ গুছিয়ে রাখেও তবুও সঠিক সময় তা খুঁজে বের করাও যেন এক বিশাল ব্যাপার, যা মানুষকে বিরক্ত করে দেয়। পূর্বে জমির খতিয়ান বের করার কাজ বেশ কঠিন ছিলো। কিন্তু বর্তমানে সবকিছু ডিজিটাল হয়ে যাওয়ার কারণে এখন জমির খতিয়ান বের করা তেমন কঠিন কাজ নয়।
তবে অনেকেই অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার পদ্ধতি জানেন না, তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আলোচনা করবো যে অনলাইনে খতিয়ান কিভাবে বের করতে হয়।
জমির খতিয়ান যাচাই করার চার পদ্ধতি, Four methods of land verification :
মোট চার ভাবে জমির খতিয়ান যাচাই করতে পারবেনঃ
- খতিয়ান নম্বর জানা থাকলে খতিয়ান নাম্বার দিয়ে সার্চ করে,
- দাগ নম্বর জানা থাকলে দাগ নম্বর দিয়ে সার্চ করে,
- জমির মালিকের নাম জানা থাকলে জমির মালিকের নাম দিয়ে সার্চ করে এবং
- জমি মালিকের পিতা বা স্বামীর নাম জানা থাকলে জমি মালিকের পিতা/স্বামীর নাম দিয়ে সার্চ করে।
অনলাইনে খতিয়ান বের করার নিয়ম, Rules for obtaining land registration online :
কোনো ব্যক্তি যদি জমির খতিয়ান বের করতে চান, তবে তাদের কিছু বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকতে হবে। বিষয় গুলো হলো :
- বিভাগ,
- জেলা,
- উপজেলা,
- জমির মৌজা,
- খতিয়ান নং,
- দাগ নং,
- মালিকের নাম ইত্যাদি।
উক্ত বিষয়গুলো যদি জানা থাকে তবে খুব সহজেই আপনি জমির খতিয়ান বের করতে বা সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই করার পদ্ধতি, Procedure to verify land records online :
জমির খতিয়ান বের করতে গিয়ে আপনাকে কয়েকটি নির্দিষ্ট ধাপ অতিক্রম করতে হবে। অনলাইনের মাধ্যমে জমির খতিয়ান বের করার সহজ পদ্ধতি নিম্নে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হলো :
- ধাপ ১:
প্রথমেই eporcha.gov.bd ঠিকানায় প্রবেশ করতে হবে। আপনি জমির খতিয়ান বা পর্চা যদি অনলাইনে বের করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে যেকোনো একটি ব্রাউজার ওপেন করে নিতে হবে। আর সেখানে গিয়ে আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট eporcha.gov.bd লিখে প্রবেশ করতে হবে।
- ধাপ ০২:
প্রথম ধাপ থেকে এগিয়ে এসে খতিয়ান অপশন নির্বাচন করুন। উক্ত ঠিকানায় প্রবেশ করার পর আপনার সামনে একটি পেইজটি চলে আসবে। এই পেইজের উপরে লেখা সার্ভে খতিয়ান অপশনটিতে গিয়ে তারপর সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান অপশনটির প্রতিটি কলাম যথাযথভাবে পূরণ করে দিতে হবে।
কলামগুলোতে বিভাগের নাম, জেলার নাম, উপজেলার নাম, খতিয়ানের ধরন, মৌজার নাম সবকিছু ঠিকঠাক দিতে সব শেষে খতিয়ানের তালিকা অপশনে ক্লিক করতে হবে। সেখানে গিয়ে আপনার খতিয়ান বা পর্চা যাচাই করতে পারবেন।
প্রথমে বিভাগ ঘর থেকে আপনার জমি কোন বিভাগে রয়েছে তা বাছাই করুন। এরপর জেলা লেখা অংশে ক্লিক করলে আপনার বিভাগের অধীন সকল জেলা দেখতে পাবেন, সেখান থেকে আপনার জেলায় ক্লিক করুন।
এরপর উপজেলা লেখা অংশে ক্লিক করলে আপনার জেলার সকল উপজেলার নাম সেখানে দেখতে পাবেন, এবার আপনার উপজেলার নামে ক্লিক করুন।
এরপর মৌজা ঘরের বিকল্পে ক্লিক করলে আপনার উপজেলার যে সকল মৌজার খতিয়ান চুড়ান্ত হয়েছে, সেইসব মৌজার নাম দেখতে পাবেন। আপনার জমি যে মৌজায় অবস্থিত সেই মৌজার নাম খুঁজে তাতে ক্লিক করুন।
- ধাপ ০৩:
তিন নং ধাপে রয়েছে খতিয়ান বা পর্চার অনুসন্ধান। খতিয়ান তালিকার নিচে খতিয়ান অনুসন্ধান লেখা বিকল্পে ক্লিক করলেই পর্চা ডাউনলোড করার পেইজটি চলে আসবে।
খতিয়ান বা পর্চার বিস্তারিত দেখার জন্য ‘বিস্তারিত’ লেখা বাটনে ক্লিক করুন, এভাবে আপনি ফরমের মতো একটি পেজ পাবেন যেখানে খতিয়ান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জমির রেকর্ড যাচাই করতে পারবেন।
- ধাপ ০৪:
চতুর্থ ধাপে আপনি যদি খতিয়ান বা পর্চার জন্য আবেদন করতে চান তবে পূর্বের ধাপে উল্লেখিত পেজে থাকা খতিয়ান আবেদন বাটনে ক্লিক করুন, এতে একটা ফর্ম আসবে আপনার সামনে। উক্ত ফরমটি যথাযথভাবে পূরণ করে নিন।
তারপর আবেদনের ধরন তথা আপনি কি খতিয়ানের অনলাইন কপি চান না সার্টিফাইড কপি চান সেটা সিলেক্ট করে নিন। অতঃপর ফি পরিশোধ করার মাধ্যম সিলেক্ট করে পদ্ধতিটি সম্পন্ন করুন।
- ধাপ ০৫:
পঞ্চম ধাপে খতিয়ান বা পর্চা ডাউনলোড কিভাবে করবেন সেটা জেনে নিন। পূর্বের ধাপে উল্লেখিত ফরমে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নং, জন্ম তারিখ, এবং মোবাইল নং যা ফর্মে দিয়েছিলেন সেটা দিয়ে যাচাই বাটনে ক্লিক করলেই আপনার নাম ও ঠিকানা ইত্যাদি সবকিছু চলে আসবে।
এভাবে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যও যাচাই হয়ে যাবে। এরপর আবেদনের ধরন এর বিকল্প সিলেক্ট করুন। আপনি অনলাইন কপি না সার্টিফাইড কপি চান সেটা নির্ধারণ করুন। আপনি যদি সার্টিফাইড কপি চান তবে অফিস কাউন্টার থেকে নেবেন না ডাক যোগে নিবেন সেটা সিলেক্ট করুন।
অতঃপর এর জন্য যে ফি পরিশোধ করতে হবে তা করে পরবর্তী ধাপ(ফি পরিশোধ) বাটনে ক্লিক করলে আবেদন সম্পন্ন হবে এবং আপনি খতিয়ানের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবেন।
যারা ডাকযোগে খতিয়ানের কপি আনতে চান তাদের ক্ষেত্রে ফরমে প্রদত্ত ঠিকানায় খতিয়নের সার্টিফাইড কপি চলে যাবে।
অনলাইন খতিয়ান কি? What does online land survey mean?
জমির খতিয়ান বা পর্চা অনুসন্ধান হলো বাংলাদেশের ভূমির রেকর্ড ও মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য খোঁজার প্রক্রিয়া। খতিয়ান বা পর্চা হচ্ছে একটি সরকারি দলিল যা ভূমির মালিকানা, ভূমি ব্যবহারের ধরন, জমির আয়তন, জমির দাম, ইত্যাদি তথ্য জানা যায়।
খতিয়ান বা পর্চা যা বর্তমানে বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি এবং পরিচালিত হয়।
জমিতে পরচা কি? What does land Parcha mean?
পর্চা বা রেকর্ড অফ রাইট প্লট সম্পর্কে তথ্য রয়েছে । এর মধ্যে রয়েছে প্লটের মানচিত্র, প্লটের আগের মালিকদের তালিকা।
জমির দাগ নম্বর কি? What does the daag number mean?
যখন জরিপ ম্যাপ প্রস্তুত করা হয় তখন মৌজা নক্সায় ভূমির সীমানা চিহ্নিত বা সনাক্ত করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ভূমি খন্ডকে আলাদা আলাদ নাম্বার দেয়া হয়। আর এই নাম্বারকে দাগ নাম্বার বলে।
প্লট নাম্বার কি? What is plot number?
সংক্ষেপে খাতাউনি নম্বর হল জমির নম্বর/প্লট নম্বর। খাতা নম্বর পেলে সেই খসরা নম্বর উল্লেখ করা হয়। গ্রামের ভিন্ন স্থানে যদি কোনো ব্যক্তির একাধিক জমি থাকে, তবে সব জমির নম্বর (খাতাউনি নম্বর) তাতে উল্লেখ থাকে। এক টুকরো জমির একাধিক মালিক থাকলেও তাও খাতাউনি নম্বরে উল্লেখ থাকবে।
শেষ কথা, Conclusion :
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে জমির খতিয়ান দেখার প্রয়োজন হতে পারে। তবে জরুরী সময়ে সকল নথির মধ্য থেকে জমির পরচা খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই সবচেয়ে সুবিধে হয় যদি অনলাইনে পরচা ডাউনলোড করা থাকলে। বর্তমানে এইধরনের সুবিধা রয়েছে, কারণ এখন প্রায় সব ধরনের খতিয়ান অনলাইন পাওয়া যায়। উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিতে আশা করি আপনারা সহজেই খতিয়ান দেখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
Frequently Asked Questions :
জমির খতিয়ান বা পর্চা অনুসন্ধান হলো বাংলাদেশের ভূমির রেকর্ড ও মালিকানা সম্পর্কিত তথ্য খোঁজার প্রক্রিয়া।
বিভাগ,
জেলা,
উপজেলা,
জমির মৌজা,
খতিয়ান নং,
দাগ নং,
মালিকের নাম ইত্যাদি।
https://eporcha.gov.bd/