কৃষ্ণচূড়া ফুল সম্পর্কে যাবতীয়, All Details About Krishnachura Flower in Bengali :

কৃষ্ণচূড়া ফুল সম্পর্কে যাবতীয়

আমাদের সকলের খুব পরিচিত একটি ফুল কৃষ্ণচূড়া। যখন ফুটে থাকে এই ফুল তখন মনে হয় যেন গাছটি এক রাঙা চাদরে নিজেকে ঘিরে রেখেছে।

“কৃষ্ণচূড়া শোন শোন শোন —
সারাবেলা দোলায় তোকে
ক্ষ্যাপা হাওয়া যে!
তার পায়ের শব্দ যায় না শোনা
পাতার আওয়াজে।। “

এক অপরূপ সৌন্দর্য যেন ছড়িয়ে পড়ে কৃষ্ণচূড়ার রাঙা শোভায়। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কৃষ্ণচূড়া ফুল নিয়ে আলোচনা করবো এবং এই বিশেষ ফুল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

কৃ্ষ্ণচূড়া ফুলের বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস, Scientific classification of Krishnachura flowers :

  • কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix regia)।
  • শ্রেণী: Magnoliopsida
  • বর্গ: Fabales
  • পরিবার: Fabaceae
  • উপপরিবার: Caesalpinioideae
  • গোত্র: Caesalpinieae
  • গণ: Delonix
  • প্রজাতি: D. regia
কৃষ্ণচূড়া

কৃষ্ণচূড়া গাছের বৈশিষ্ট্য, Features of the Krishnachura tree:

কৃষ্ণচূড়া গাছের লাল, কমলা, হলুদ ফুল এবং উজ্জ্বল সবুজ পাতা একে অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। কৃষ্ণচূড়া মাদাগাস্কারের শুষ্ক পত্রঝরা বৃক্ষের জঙ্গলে পাওয়া যায়। যদিও জঙ্গলে এটি বিলুপ্ত প্রায়, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি জন্মানো সম্ভব হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধক গুণ ছাড়াও, এই গাছ উষ্ণ আবহাওয়ায় ছায়া দিতে বিশেষভাবে উপযুক্ত।

কৃষ্ণচূড়া গাছ বড় হতে কত সময় লাগে, How long does it take to grow a Krishnachura tree?

কৃষ্ণচূড়া গাছ বড় হতে প্রায় ২ থেকে ৩বছর সময় লাগে। কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া (Delonix regia)। এই গাছ চমৎকার পত্র-পল্লব এবং আগুনলাল কৃষ্ণচূড়া ফুলের জন্য প্রসিদ্ধ।

কৃষ্ণচূড়া কখন ফোটে, When does Krishnachura bloom??

কৃষ্ণচূড়া ফুল

শুষ্ক অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে কৃষ্ণচূড়া -র পাতা ঝরে গেলেও, নাতিষীতোষ্ণ অঞ্চলে এটি চিরসবুজ। ভারত- বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় বিভিন্ন। কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটার ভিন্ন সময় হল :

  • দক্ষিণ ফ্লোরিডা – জুন
  • ক্যারাবিয়ান – মে থেকে সেপ্টেম্বর
  • অস্ট্রেলিয়া – ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি
  • সংযুক্ত আরব আমিরাত – মে- জুলাই

কৃষ্ণচূড়ার আদিনিবাস, Ancestral place of Krishnachura :

কৃষ্ণচূড়ার আদিনিবাস পূর্ব আফ্রিকার মাদাগাস্কারে। উষ্ণ ও শুকনো আবহাওয়া এই ফুলের জন্য উপযোগী। তবে হংকং, ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারতসহ আরও অনেক দেশেই কৃষ্ণচূড়ার দেখা পাওয়া যায়। তবে বিভিন্ন দেশে ফুল ফোটার সময়কাল এক নয়। ভিনদেশি হওয়ার স্বত্বেও কৃষ্ণচূড়া আমাদের দেশি ফুলগুলির মাঝে জায়গা করে নিয়েছে।

কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য, Beauty of Krishnachura :

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানের মধ্য দিয়ে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য উপলব্ধি করা যায়।

‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে-
আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’

প্রকৃতির রুক্ষ-শুষ্ক মৌসুমে কৃষ্ণচূড়া আসে মানব মনকে শীতল পরশ বোলাতে, ক্লান্তি দূর করে নব উদ্যমে জাগিয়ে তুলতে। গাঢ় কমলা লাল ছোপে ভরা কৃষ্ণচূড়া আমাদের মন রাঙিয়ে দেয়।

কৃষ্ণচূড়া দেখতে কেমন, How does Krishnachura look ?

 লাল হলদেটে কৃষ্ণচূড়া ফুল

কৃষ্ণচূড়া ফুলের ভেতরের অংশ হালকা হলুদ ও রক্তিম হয়ে থাকে। ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়ি যুক্ত। পাপড়িগুলো প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মত লম্বা হতে পারে। কৃষ্ণচুড়া জটিল পত্র বিশিষ্ট, প্রতিটি পাতা ৩০-৫০ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ২০-৪০ টি উপপত্র বিশিষ্ট।

দেশে উজ্জ্বল লাল ও লাল হলদেটে—এই দুই ধরনের কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটতে দেখা যায়। লাল কৃষ্ণচূড়াই সচরাচর চোখে বেশি পড়ে। তবে লাল হলদেটে কৃষ্ণচূড়া এখন প্রায় বিরল। এদিকে লাল হলদেটে কৃষ্ণচূড়াকে অনেকে রাধাচূড়াও বলে।

দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলসহ শহরাঞ্চলেও কৃষ্ণচূড়ার শাখায় শাখায় লালে লাল হয়ে ফুটতে শুরু করেছে অগ্নিরাঙা কৃষ্ণচূড়া ফুল। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে কুঁড়ি আসার কিছুদিনের মধ্যেই পুরো গাছ ভরে যায় ফুলে ফুলে।

কৃষ্ণচূড়া গাছ পরিবেশের কি উপকার করে, What are the benefits of Krishnachura trees to the environment ?

কৃষ্ণচূড়া গাছ (Delonix regia), ভেষজ হিসেবেও কাজ করে, এটি হেমিপ্লেজিয়া, আর্থ্রাইটিস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমানোর জন্য কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানো খুবই কার্যকরী উপায়।

কৃষ্ণচূড়া গাছ ঘন তথা জলে দ্রবণীয় একপ্রকার আঠা তৈরি করে যা ট্যাবলেট এবং টেক্সটাইল শিল্পে বাঁধাই এজেন্ট হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে কৃষ্ণচূড়া গাছের কাঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

কৃষ্ণচূড়া গাছের বিভিন্ন ভেষজ উপকারিতা জেনে নিন, Know the various herbal benefits of krishnachura plant :

কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য

কৃষ্ণচূড়া মূলত বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ, যা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য কাজে লাগে। কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুল এবং উজ্জ্বল সবুজ পাতা গাছটিকে অন্যরকম দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। কৃষ্ণচূড়া গাছের বিভিন্ন ভেষজ উপকারিতা জেনে নিন :

সন্ধিবাতের সমস্যায় কৃষ্ণচূড়া :

সন্ধিবাতের সমস্যায় কৃষ্ণচূড়া উপকারী। এরজন্য প্রথমে কৃষ্ণচূড়ার পাতা সংগ্রহ করতে হবে, এরপর জলে ফুটিয়ে সেই জল একটু ঠাণ্ডা করে খেলে সন্ধিবাত ভালো হয়।

জ্বর সারাতে :

কৃষ্ণচূড়া পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খেলে জ্বর ভালো হয়ে যায়।

শ্লেষ্মার সমস্যায়:

কৃষ্ণচূড়া মূলের ছাল শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিয়ে পানের সাথে চিবিয়ে খেলে শ্লেষ্মাকে তরল করে বের করে দেয়।

খুশকি দূর করতে :

কৃষ্ণচূড়ার ফুল পিষে স্নানের কিছুক্ষণ আগে মাথায় ভালোভাবে লাগালে খুশকিতে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

স্বরভঙ্গ সারাতে :

স্বরভঙ্গ হলে তখন কৃষ্ণ-চূড়া পাতা চিবিয়ে খেলে ভালো হয়ে যায়।

পিত্তবৃদ্ধিতে :

পিত্তবৃদ্ধির সমস্যা দেখা দিলে কৃষ্ণচূড়ার ব্যবহার করতে পারেন। এরজন্য প্রথমে কৃষ্ণচূড়ার পাতা ভেজে নিতে হবে। এভাবে ভেজে নিয়মিত খেলে পিত্তবৃদ্ধিতে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

কৃষ্ণচূড়া গাছ কিভাবে লাগাতে হয় জেনে নিন, Know how to plant krishnachura trees :

বংশবিস্তার :

কৃষ্ণচূড়া ফুল মূলত দুই প্রকার পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করে।

  • বীজ থেকে বংশবিস্তার
  • গুটি কলম পদ্ধতিতে বংশবিস্তার
কৃষ্ণচূড়া গাছ

উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি :

কৃষ্ণচূড়া চাষের জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়া আদর্শ। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থা সহ্য করতে পারে। কৃষ্ণচূড়া গাছের পরিচর্যায় আর্দ্র মাটি প্রয়োজন। তবে মাটি বেশী ভিজে বা কাদা কাদা হলে চলবে না, সেদিকে নজর দিতে হবে। তবে কোনো কারণে মাটি স্যাঁতসেঁতে থাকলে জল দেওয়ার প্রয়োজন নেই যতক্ষণ মাটি শুষ্ক না হয়। তবে মাটি শুষ্ক হলে প্রতিদিন নিয়ম করে জল দেওয়া উচিৎ।

সার প্রয়োগ :

কৃষ্ণচূড়া গাছ যে কোনও মাটিতেই জন্মাতে পারে। তবে জেনে রাখা ভালো যে দোঁয়াশ মাটি কৃষ্ণচূড়া চাষের পক্ষে আদর্শ। আপনি যদি বাড়িতে কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগাতে চান তাহলে প্রথমেই পরিমান মতো দো-আঁশ বা বেলে মাটি, এর সাথে দু’মুঠো ছাই মিশিয়ে নিন।

গাছ যেখানে লাগাবেন সেখানে এই মাটি মিশিয়ে রেখে দিন, এর সঙ্গে কিছুটা পরিমান পাতা পচা সার, গোবর, খৈল ও কিছুটা টিএসপি সার মিশিয়ে গাছ লাগানোর জন্য মাটি তৈরি করা উচিত।

সার প্রয়োগের কথা বলতে গেলে কৃষ্ণচূড়া গাছের জন্য আদর্শ হল গোবর সার, চাপান সার ও তরল সার। বর্ষাকাল থেকে হেমন্তকাল পর্যন্ত তরল সার দেওয়া উচিত। এছাড়াও নিমের গুঁড়ো খোল, কাঠের ভষ্ম, গুঁড়ো হাড়, ও গোবর সার মিশিয়ে চাপান সার তৈরী করা যায়।

কৃষ্ণচূড়া গাছের পরিচর্যা

গাছের পরিচর্যা :

কৃষ্ণচূড়া গাছে জল দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গোড়ায় জল না জমে। তবে নিয়মিত জল দিতে হবে। তবে গাছ লাগানো হলে গাছ কিছুটা বড় হয়ে গেলে কিছুদিন পর পর ডাল ছাঁটাই করতে হবে।

যেহেতু কৃষ্ণচূড়া গাছের ডাল পালা,শাখা প্রশাখা অনেকটাই বিস্তৃত হয়, তাই প্রয়োজন বুঝে বেশী পরিমানে শাখা,ডাল পালা ছাঁটাই করা উচিৎ।

শেষ কথা, Conclusion :

কৃষ্ণচূড়া গাছের ডাল যখন ফুলে ভরে ওঠে তখন এই মনোরম দৃশ্য দেখে আমাদের সকলের মনও যেন ঠিক একইভাবে ভরে যায়। আমাদের দেশের অন্যতম সুন্দর ফুলের মধ্যে এই বিশেষ ফুলের নামও গণ্য হয়, যদিও এটি সকল ঋতুতে ফোটে না, তবুও যখনই এই ফুল ফোটে, এর সাথে যেন আনন্দের হাওয়া বয়ে যায়।

Contents show

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts