কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে বিস্তারিত, All details about Kuakata tourist spot in Bengali

কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে বিস্তারিত

কুয়াকাটা হল বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলার একটি শহর তথা পর্যটনকেন্দ্র। এই অঞ্চলটি মূলত সমুদ্র সৈকতের জন্য বিখ্যাত। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত যা পর্যটকদের কাছে “সাগরকন্যা” হিসেবে পরিচিত। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কুয়াকাটা কিভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন, আশেপাশের দর্শনীয় স্থান গুলো কিভাবে ঘুরে দেখবেন, এই সব কিছু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

কুয়াকাটা সমুদ্র বন্দরের নাম কি, What is the name of Kuakata sea port?

কুয়াকাটা সমুদ্র বন্দর

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অবস্থান পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার লতাচাপলি ইউনিয়নে। এই সমুদ্র সৈকতটি লম্বায় ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) এবং বিস্তৃতিতে ৩ কিলোমিটার (১.৯ মাইল)।

এই সৈকতের বিশেষত্ব হলো ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ সৈকত থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। কুয়াকাটার সাদা বালির সৈকতের তীর থেকে বঙ্গোপসাগরের সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়। এর আরেক নাম সাগরকন্যা।

কুয়াকাটা কেন বিখ্যাত, Why is Kuakata famous?

মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, নীল আকাশ এবং বঙ্গোপসাগরের জলের ঝলমলে বিস্তৃতি এবং চিরহরিৎ বন কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

পরিচ্ছন্ন বেলাভূমি, অনিন্দ্য সুন্দর সমুদ্র সৈকত, দিগন্তজোড়া সুনীল আকাশ এবং ম্যানগ্রুভ বন কুয়াকাটাকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। সমুদ্র সৈকতের পাশে অবস্থিত ১০০ বছরের পুরানো বৌদ্ধ মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের মূর্তি এবং দু’টি ২০০ বছরের পুরানো কূপ রয়েছে।

কুয়াকাটা কি পবিত্র স্থান, Is Kuakata a holy place?

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান

কুয়াকাটা হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়েরই তীর্থস্থান। ‘রাশ পূর্ণিমা’ এবং ‘মাঘী পূর্ণিমা’ উৎসবে এখানে অসংখ্য ভক্তের আগমন ঘটে। এই দুটি উপলক্ষে তীর্থযাত্রীরা উপসাগরে পবিত্র স্নান করে এবং ঐতিহ্যবাহী মেলায় অংশ নেয়।

কুয়াকাটা যাওয়ার উপায় কি, What is the way to go to Kuakata!

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা নদী ও সড়ক পথে যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে ঢাকা থেকে অনেক কম সময়ে এবং সহজে সড়ক পথে কুয়াকাটা যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ২৮০ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬-৭ ঘন্টা। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা নন-এসি বাসের ভাড়া ৭৫০- ৯০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১১০০-১৬০০ টাকা।

এছাড়াও ঢাকা থেকে লঞ্চে কুয়াকাটা যাওয়া যায়। নদী পথে সদরঘাট থেকে বরিশাল অথবা পটুয়াখালি গিয়ে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা যেতে পারবেন। লঞ্চ ভাড়া অনুমানুকভাবে বলতে গেলে; ডেক ৪০০-৫০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১৩০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২৪০০ টাকা, ভি আই পি কেবিন ভাড়া ৭০০০ টাকা।

পটুয়াখালী লঞ্চ ঘাট থেকে লোকাল বাসে কুয়াকাটা যেতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত, আর বাস ভাড়া ১৫০-১৬০ টাকা।

কুয়াকাটার কিছু দর্শনীয় স্থান সমূহ, Some of the attractions of Kuakata :

কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান

কুয়াকাটায় শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, এখানে দেখার মতো আছে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান। পূর্ব ও পশ্চিমের ঝাউবন, লেবুর চর, গঙ্গামতির জঙ্গল, তিন নদীর মোহনা, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ ও সবুজ অরণ্য উপভোগের সাথে পাবেন সুন্দরবনের একাংশ কিংবা কুয়াকাটার ঐতিহাসিক বৌদ্ধমন্দির ইত্যাদি।

  • কুয়াকাটার কুয়ো : কুয়াকাটা নামকরণের পেছনের ইতিহাসের সাক্ষী কুয়োটি এখনও আছে। এই কুয়াটি দেখতে হলে যেতে হবে কেরাণিপাড়ায়। কথিত আছে ১৭৮৪ সালে রাখাইনরা মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি দ্বীপে আশ্রয় নেয়। সেখানে থাকার সময় সাগরের নোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় রাখাইনরা মিষ্টি পানির জন্য একটি কূপ খনন করে, তাই জায়গাটি কুয়াকাটা নামে পরিচিত হয়ে উঠে।
  • ক্রাব আইল্যান্ড : কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ধরে পূর্ব দিকে অনেকটা দূর এগিয়ে গেলে ক্রাব আইল্যান্ড, অর্থাৎ কাঁকড়ার দ্বীপ। এখানে নির্জন সৈকতে ঘুরে বেড়ায় হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার দল। কুয়াকাট সমুদ্র সৈকত থেকে ক্রাব আইল্যান্ডে যাবার স্পিড বোট পাওয়া যায়।
  • গঙ্গামতির জঙ্গল : পূর্ব দিকে গঙ্গামতির খাল পর্যন্ত এসে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সমাপ্তি, আর এখান থেকেই গঙ্গামতির জঙ্গল শুরু। বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ছাড়াও এই জঙ্গলে দেখতে পাবেন। এছাড়াও দেখা যাবে বিভিন্ন রকম পাখি, বন মোরগ-মুরগি, বানর ইত্যাদি পশুপাখি। এই জঙ্গল গজমতির জঙ্গল হিসাবেও পরিচিত।
  • সীমা বৌদ্ধ মন্দির : কুয়াকাটার প্রাচীন কূপের কাছেই সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের অবস্থান। পূর্বে এই মন্দির কাঠের তৈরি ছিল, কয়েক বছর আগে মন্দির ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। এই মন্দিরের মধ্যে প্রায় ৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতুর তৈরি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
  • ফাতরার বন : সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে অবস্থিত নদীর অন্য পাড় থেকে ফাতরার বন শুরু। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হলে আপনাকে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে।
  • কেরানিপাড়া : বৌদ্ধ মন্দিরের কাছেই রাখাইনদের আবাসস্থল কেরানিপাড়া। রাখাইন নারীরা কাপড় বুণনে বেশ দক্ষ। তাদের তৈরি শীতের চাদর অনেক আকর্ষণীয়, চাইলে সেখান থেকে ক্রয় করে নিতে পারেন।
  • মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির : কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মিশ্রিপাড়া, এটি রাখাইনদের আরেকটি গ্রাম। এখানে বড় একটি বৌদ্ধ মন্দির আছে। মন্দিরের ভেতরে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
  • শুঁটকি পল্লী : কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে জেলে পল্লীর অবস্থান। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত শুঁটকি তৈরির মৌসুম। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে সৈকতের পাশেই শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। চাইলে সময় কাটাতে জেলেদের এই কর্মব্যস্ততা দেখে আসতে পারেন।
শুঁটকি পল্লী

কুয়াকাটার হোটেল ও রিসোর্ট সম্পর্কে তথ্য, Information about hotels and resorts in Kuakata: :

কুয়াকাটায় আপনার বাজেট অনুযায়ী হোটেল/রিসোর্ট পেয়ে যাবেন। একটু ভালো হোটেলে থাকতে আপনার ২০০০-৩০০০ টাকা খরচ হবে । কম বাজেটে থাকার জন্যে ১০০০ – ২০০০ টাকায় দুইজনের জন্য রুম পেয়ে যাবেন।

বাজেটের সমস্যা না থাকলে চলে যেতে পারেন শিকদার রিসোর্ট। তবে কুয়াকাটায় খুব ভালো মানের সি-ভিউ হোটেল নেই। তবে পাশেই পর্যটক মার্কেটের গলিতে কিছু সি-ভিউ হোটেল পাবেন। তবে ছুটির দিনে অথবা পরিবার নিয়ে গেলে আগে থেকেই বুকিং করে যাওয়া ভালো হবে।

কুয়াকাটায় কোথায় খাবেন, Where to take meals in Kuakata !

কুয়াকাটার হোটেলগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা আছে। এছাড়া এখানকার স্থানীয় রেস্টুরেন্টেও বিভিন্ন রকম দেশীয় খাবার পাওয়া যায়।

কুয়াকাটায় গেলে পছন্দ মতো তাজা মাছ কিনে বারবিকিউ করে খেতে পারেন, সেই সুবিধেও আছেন সেখানে। ভাবলেই কত ভালো লাগে, এক পাশে সাগরের ঢেউ আর অন্য পাশে খোলা উন্মুক্ত জায়গায় ফিশ বারবিকিউ এর স্বাদ।

সাগরের ঢেউ

জনপ্রিয় বাহন, Popular vehicles :

কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টকে কেন্দ্র করে পূর্ব এবং পশ্চিম দিক মিলিয়ে সব গুলো স্থানের অবস্থান। সূর্যোদয় দেখার সবচেয়ে ভালো স্থান কুয়াকাটার পুর্ব প্রান্তে অবস্থিত গঙ্গামতি চরে। এখানে ঘুরে দেখার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক অথবা ভ্যানগাড়ি।

কোন কোন জায়গা ঘুরে দেখবেন তার উপর নির্ভর করে প্যাকেজের দরদাম করা যায়। প্রায় সব গুলো জায়গা ঘুরে দেখতে ১০০০-১৫০০ টাকার মত খরচ হবে।

ভ্রমণ নিয়ে সতর্কতা, Travel Precautions :

হোটেল, রিসোর্ট, যানবাহন ভাড়া ও অন্যান্য খরচ সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। তাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্য বর্তমানের সাথে মিল না থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ভ্রমণে যাওয়ার আগে বর্তমান ভাড়া ও খরচের তথ্য জেনে পরিকল্পনা করা শ্রেয়।

কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট

শেষ কথা, Conclusion :

শহরের জীবনের কোলাহল থেকে বেরিয়ে স্বস্তিদায়ক আর মন-চোখ জুড়ানো গন্তব্য হিসেবে কুয়াকাটা ও এর আশেপাশের জায়গাগুলো ঘুরে আসতে পারেন। তীরে হাঁটাহাঁটি করে কিংবা স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কেটে ছুটির মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করতে পারবেন। সমুদ্র সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে গভীরভাবে উপভোগ করার জন্য কাঠের লাউঞ্জ চেয়ার ও ছাতা ভাড়া করে বসে লম্বা সময় কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। উপভোগ করতে পারেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত।

Frequently Asked Question

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের আরেক নাম কি?

সাগরকন্যা

কুয়াকাটা কেন বিখ্যাত?

মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, নীল আকাশ এবং বঙ্গোপসাগরের জলের ঝলমলে বিস্তৃতি এবং চিরহরিৎ বনের জন্য বিখ্যাত

কুয়াকাটা কোথায় অবস্থিত?

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পটুয়াখালী জেলায়

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts