গত ২৫শে জুন স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’- এ চড়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন ভারতীয় নভশ্চর শুভাংশু এবং তাঁর তিন সহকর্মী। তাঁদের যাত্রা শুরু হয়েছিল আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে, কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে তাঁরা নামলেন ফ্লোরিডা থেকে প্রায় ৩৬০০ কিলোমিটার দূরে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে।
এই প্রসঙ্গে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই সিদ্ধান্ত? হঠাৎ করে গন্তব্য বদল করা কি নিছকই পাগলামি ছিল, নাকি এর পেছনে গভীর কোনো পরিকল্পনা ছিল?
তবে এটা কোনো পাগলামি নয়, বরং সম্পূর্ণ সুচিন্তিত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক একটি সিদ্ধান্ত। এর পেছনে মূল দুটি কারণ কাজ করেছে, এক হল আবহাওয়া এবং অন্যটি নিরাপত্তা।
প্রতিকূল আবহাওয়া:
শুভাংশুদের পৃথিবীতে ফেরার সময় ফ্লোরিডার আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত প্রতিকূল। সেখানে টানা বৃষ্টি চলছিল, যার কারণে দৃশ্যমানতা ছিল খুবই কম। অন্যদিকে, মহাকাশচারীরা যখন অবতরণ করবেন, তখন আমেরিকায় ছিল গভীর রাত। এই পরিস্থিতিতে কম দৃশ্যমানতা যেকোনো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারতো।
দ্বিতীয়ত, মহাকাশযানের সফল ‘স্প্ল্যাশডাউন’ এর জন্য প্রয়োজন হয় শান্ত সমুদ্র। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফ্লোরিডার সমুদ্র তখন উত্তাল হয়ে ছিল। উত্তাল সমুদ্রে মহাকাশযান অবতরণ করলে ক্যাপসুলটি উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত। মহাকাশচারীদের জীবন বিপন্ন হতে পারতো।

নাসা-র সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার মহাকাশচারীদের নিরাপত্তা:
নাসা সবসময় মহাকাশচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তাই কোনো রকম ঝুঁকি না নিয়ে, খারাপ আবহাওয়া এবং উত্তাল সমুদ্রের ঝুঁকি এড়িয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো উপকূলকে বেছে নেওয়া হয়। সেখানকার আবহাওয়া ছিল অনুকূল এবং সমুদ্র ছিল শান্ত। এই সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্তটিই নিশ্চিত করেছে যে শুভাংশু ও তাঁর দল নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এসেছেন।
ফ্লোরিডা থেকে প্রায় ৩৬০০ কিলোমিটার দূরে হলেও, এটি ছিল নাসার কাছে সবচেয়ে নিরাপদ বিকল্প। ১৮ দিনের মহাকাশ অভিযান শেষে শুভাংশুদের ২৩ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রাপথ শেষ হয় মঙ্গলবার দুপুর ৩টে নাগাদ, প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে এক সফল অবতরণের মধ্য দিয়ে। এটি আবারও প্রমাণ করে দিল যে মহাকাশ অভিযানে কোনো সিদ্ধান্তই আকস্মিক নয়, বরং প্রতিটি পদক্ষেপই নেওয়া হয় নিখুঁত হিসাব ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে।