এখন চারদিকে ওজন কমানো নিয়ে দারুণ চর্চা। কিছুদিন পর পরই বাজারে নতুন নতুন ওষুধ আসছে, এর মধ্যে ওজেম্পিক নিয়ে তো আলোচনার শেষ নেই। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, অনেকেরই দাবি ওজেম্পিক নাকি দ্রুত ওজন কমায়।
কিন্তু এবার এই তালিকায় যোগ হলো আরও একটি নতুন নাম, ওয়েগোভি। ডেনমার্কের বিখ্যাত ওষুধ নির্মাতা সংস্থা নোভো নরডিস্ক তৈরি করেছে এই যুগান্তকারী ওষুধ, যা এতদিন আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিতে বিক্রি হচ্ছিল, এবার তা পা রাখল ভারতের বাজারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ওজেম্পিকের মতোই ওয়েগোভি ‘জিএলপি-১’ (GLP-1) মানব দেহে হরমোনের উপর কাজ করবে। এই হরমোন আমাদের শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। বারবার খিদে পাওয়া, ভালোমন্দ খাওয়ার তীব্র ইচ্ছা – এ সব কিছুর মূলে রয়েছে এই জিএলপি-১ হরমোন।
যদি একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই খিদে কম হবে এবং খাওয়ার পরিমাণও কমে যাবে, যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কিন্তু ওয়েগোভি তো এখানে থেমে নেই! এর নির্মাতারা দাবি করেছেন, এই ওষুধ টাইপ ২ ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি, তাদের নির্দিষ্ট ডোজে এই ওষুধ দিলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কমবে।
স্থূলত্বের কারণে যে ডায়াবেটিস হয়, তাকেও নাকি সহজেই কাবু করতে পারবে এই ওয়েগোভি। শুধু তাই নয়, গবেষকদের দাবি, এই নতুন ওষুধ হার্ট ভালো রাখতেও বিশেষ ভূমিকা নেবে।
এক কথায়, ওজন কমানোর পাশাপাশি এটি হার্ট ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও আশীর্বাদ হয়ে আসতে পারে।
এই ‘জাদু’ ওষুধ কারা নিতে পারবেন?

ওয়েগোভি ওষুধটি নিতে হবে ইনজেকশনের মাধ্যমে। যাদের দেহে স্থূলত্ব রয়েছে, অর্থাৎ বডি-মাস-ইনডেক্স (BMI) ৩০ বা তার বেশি, তারাই এই ওষুধ ব্যবহারের উপযুক্ত। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট ডোজেই এটি নিতে হবে। নির্মাতা সংস্থা জানিয়েছে, ০.২৫ মিলিগ্রাম, ০.৫ মিলিগ্রাম, ১ মিলিগ্রাম, ১.৭ মিলিগ্রাম এবং ২.৪ মিলিগ্রাম ডোজে এই ওষুধ পাওয়া যাবে। কোন রোগী কোন ডোজে নেবেন, তা সম্পূর্ণভাবে চিকিৎসকই নির্ধারণ করবেন।
ওয়েগোভির দাম কত হতে পারে?
বলাই বাহুল্য, ওয়েগোভির দাম তার ডোজের ওপর নির্ভর করবে। ভারতে ০.২৫ মিলিগ্রাম, ০.৫ মিলিগ্রাম এবং ১ মিলিগ্রাম ডোজের দাম পড়বে প্রায় ১৭ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি সপ্তাহে ব্যক্তিকে একটি করে ইনজেকশন (৪৬৬৫ টাকা) তিন সপ্তাহ ধরে নিতে হবে। আর যদি এর থেকে বেশি ডোজের প্রয়োজন হয়, তাহলে তার মাসিক খরচ পড়বে ২৪ হাজার ২৮০ টাকা।
ওজন কমানো এবং সুস্থ থাকার এই নতুন পথটি কতটা কার্যকরী হবে, তা সময়ই বলবে। তবে নিঃসন্দেহে এটি চিকিৎসা জগতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।