৯-টা-৫-টার গতানুগতিক জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছেন অনেকেই। কিন্তু ক’জন পারেন সেই বাঁধাধরা ছক ভেঙে সম্পূর্ণ অন্য পথে হাঁটতে? অলিভার উইজার তেমনই একজন। ক্লান্তিকর অফিস জীবনকে বিদায় জানিয়ে নিজের জীবনভর জমানো টাকায় একটি নৌকা কিনেছেন এবং তার প্রিয় পোষা বেড়াল ফিনিক্সকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে এক অভাবনীয় অভিযানে।
ওরেগনের বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী অলিভার সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন রীতিমতো ভাইরাল। টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে তার লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, তার এই চাকরি ছেড়ে হাওয়াইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করার গল্প বহু মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।
অলিভারের কথায়, “এই পৃথিবীটা কিছুটা হতাশাজনক। আমার কাজের প্রতি যে অনুভূতি ছিল, মনে হয় না আমি একা। বছরে $150,000 উপার্জন করেও মনে হয় যেন কেবল জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। আমার মনে হয় মানুষ এতে ক্লান্ত এবং কোনও কিছুর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেও যখন তেমন কিছুই পায় না, তখন তারা একটা মুক্তির পথ খোঁজে।”
তিনি আরও জানান, তার ভিডিওগুলি জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হল মানুষ তার মতো যারা গতানুগতিক জীবন থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে পান, তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি বলেন, সবকিছু শুরু হয়েছিল তার ঘাড়ে আঘাতের মাধ্যমে, যা তার জীবনকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিয়েছে। “এটি আমার জগতকে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং সবকিছু সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে,” তিনি মন্তব্য করেন।

প্যারালাইসিসের ঝুঁকিপূর্ণ একটি রোগ ধরা পড়ার পর অলিভার বুঝতে পারেন যে টায়ার কোম্পানির ম্যানেজারিয়াল পদে কাজ করাটা তিনি আর সহ্য করতে পারছেন না। প্রতিদিন পরিপাটি পোশাকে এবং কামানো মুখে অফিসে যাওয়াটা তার কাছে অস্বস্তিকর লাগতো। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাওয়াই পর্যন্ত পালতোলা নৌকায় ভ্রমণের গল্প শুনে তিনি বুঝতে পারেন, এটাই তার জীবনের কাঙ্ক্ষিত পথ।
কোনও দ্বিধা না করে তিনি সঙ্গে সঙ্গে চাকরি ছেড়ে দেন। হাতে তখন কানাকড়িও ছিল না, বরং $10,000 ডলারের ঋণ ছিল। নৌচালনা শেখার জন্য ইউটিউব ভিডিও দেখতে শুরু করেন, ওরেগন উপকূলে চলে যান এবং একটি নৌকা কেনা ও মেরামতের জন্য $50,000 ডলার খরচ করেন।
বর্তমানে, অলিভারের প্রধান কাজ হল নৌচালনা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য “ফিনিক্সের সাথে পাল তোলা” ভিডিও তৈরি করা। এই দুই সঙ্গী সমুদ্রের মধ্যে ভেসে শ্বাসরুদ্ধকর সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন, জীবন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করছেন এবং প্রয়োজনে তাদের নৌকা মেরামত করছেন।
সমুদ্রে জীবনের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার পাশাপাশি, তিনি মহাসাগরের মাঝখান থেকে কনটেন্ট তৈরি করচেন। পাশাপাশি তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে হঠাৎ করে পাওয়া খ্যাতিও সামলাচ্ছেন। তবে, তিনি আশা করেন যে তার এই যাত্রা অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে যারা তাদের জীবনে কাজের চাপে আটকে পড়েছেন বলে মনে করেন।
অলিভার বলেন, “আমি যা কিছু করেছি, একসময় তা আমার কাছে অসম্ভব মনে হত। বিশ্বজুড়ে পালতোলা নৌকায় ভ্রমণ করা একটি অবিশ্বাস্য স্বপ্ন। আপনার স্বপ্ন যাই হোক না কেন, শুধু যান। শুধু করে ফেলুন।”