দেশের বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে বা কাজের উদ্দেশ্যে যেতে হলে সবচেয়ে জরুরি নথি হল পাসপোর্ট। ব্যক্তির বয়স বিশেষে পাসপোর্টের বিভিন্ন ধরনও রয়েছে। তবে কিভাবে আবেদন করতে হবে এবং পাসপোর্ট করতে কি কি নথি প্রয়োজন হয় তা অনেকেরই জানা নেই। তাই আজকের প্রতিবেদনে আমরা পাসপোর্ট করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগে তা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
অনলাইনে কিভাবে পাসপোর্ট করতে হয়? How to apply online for passport?
নিবন্ধিত লগইন আইডি দিয়ে পাসপোর্ট সেবা অনলাইন পোর্টালে লগইন করুন। “অ্যাপ্লাই ফর ফ্রেশ পাসপোর্ট/পাসপোর্ট রি-ইস্যু” লিঙ্কে ক্লিক করুন। ফর্মে প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করুন এবং জমা দিন। অ্যাপয়েন্টমেন্টের সময় নির্ধারণ করতে “দেখুন সংরক্ষিত/জমা দেওয়া অ্যাপ্লিকেশনগুলি” স্ক্রিনে “পে এবং শিডিউল অ্যাপয়েন্টমেন্ট” লিঙ্কে ক্লিক করুন।
পাসপোর্ট এর ধরন, Types of Passport: :
আবেদনকারীর বয়স হিসেবে পাসপোর্ট এর ধরন ভিন্ন হয়। পাসপোর্ট এর প্রকার সমূহ হল :
- শিশুদের পাসপোর্ট।
- প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট।
- সরকারি চাকরিজীবীদের পাসপোর্ট।
উক্ত প্রকারগুলো ছাড়াও সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ডকুমেন্টস হিসেবে NOC এবং GO প্রয়োজন হয়। এই ধরনের পাসপোর্টকে বলা হয় Government Order পাসপোর্ট।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ? What documents are required for a passport?
কারও ই-পাসপোর্ট করতে হলে প্রথমত আপনাকে আবেদন করতে হবে, এক্ষেত্রে –
- ৫ বছর কিংবা ১০ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন হয়।
- যাদের বয়স ২০ বছরের নিচে, তাদের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হবে।
- আবেদনকারীর পিতা মাতার আইডি কার্ড সহ নাগরিক সনদপত্র প্রয়োজন হবে।
- পেশা প্রমাণ এর জন্য স্টুডেন্ট হলে শিক্ষাকার্ড এবং চাকরিজীবী হলে চাকরির কার্ড প্রয়োজন।
- যারা সরকারি চাকরিজীবী তাদের জন্য NOC এবং GO প্রয়োজন।
- অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন ফি পরিশোধ করে, চালান রশিদ ও 3R Size এর ছবি প্রয়োজন হবে।
বয়স ভেদে পাসপোর্ট এর আবেদন করার ক্ষেত্রে আলাদা ডকুমেন্টস বা নথিপত্র প্রয়োজন হয়।
১.শিশুদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট এর আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি :
- শিশুর অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ
- পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ( বাধ্যতামূলক)
- অনলাইন আবেদন সারাংশ
- অনলাইন আবেদনের কপি
- আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফ্ট করে এ চালানের কপি
- টিকা কার্ড (প্রয়োজনের ক্ষেত্রে)
- 3R Size Photo ( বাধ্যতামূলক)
যেহেতু শিশুর (২০ বছরের নিচে) ভোটার আইডি কার্ড নেই, তাই শিশুদের পাসপোর্ট আবেদন করতে অবশ্যই পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের কপি অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র প্রয়োজন।
অন্যদিকে ১৮ বছরের বেশি যাদের বয়স তাদের যদি ভোটার আইডি কার্ড থাকে, তবে তারা গার্ডিয়ানের ডকুমেন্টস ব্যতীত পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবে।
২.প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট আবেদনের প্রয়োজনীয় নথি :
- জাতীয় পরিচয় পত্র তথা NID কার্ডের কপি
- ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র
- ইউটিলিটি বিলের কাগজ
- অনলাইন আবেদন সারাংশ
- অনলাইন আবেদনের কপি
- আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফ্ট চালানের কপি
- আবেদনকারী শিক্ষার্থী হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাপ্ত স্টুডেন্ট কার্ড অথবা সার্টিফিকেট
- পিতা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (বাধ্যতামূলক নয়)
- বিবাহিত হলে নিকাহনামা
৩.সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট আবেদনের প্রয়োজনীয় নথি :
- আবেদনকারীর ভোটার আইডি কার্ডের কপি
- নাগরিক সনদপত্র
- ইউটিলিটি বিলের কাগজ
- অনলাইনে আবেদন সারাংশ
- আবেদনের পরে অনলাইন আবেদনের কপি
- বিবাহিত হলে নিকাহনামা
- পিতা মাতার এনআইডি ( বাধ্যতামূলক নয়)
- NOC (No Objection Certificate) বা GO (Government Order)
যারা রাষ্ট্রীয় কোনো কাজে সরকারি আদেশে দ্রুত দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে চাইছেন, তাদের ক্ষেত্রে GO অবশ্যই (Government Order) প্রয়োজন।
অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারা যদি বিদেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট এর আবেদন করতে চান, তবে তাদের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় কিংবা অভিদপ্তর থেকে NOC (No Objection Certificate) সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে।
পাসপোর্ট অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর জন্য দরকারি নথি, Documents required for passport appointment :
পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দেওয়া হলে, যে সমস্ত নথিগুলি চাওয়া হয় সেগুলি হল-
- আবেদনকারী মাধ্যমিক পাস হলে মাধ্যমিক পাস সার্টিফিকেট
- আবেদনকারী অষ্টম শ্রেণী পাস হলে অষ্টম শ্রেণী পাশ সার্টিফিকেট অথবা স্কুল সার্টিফিকেট
- যদি আবেদনকারী পড়াশোনা না করে তাহলে তার ক্ষেত্রে শিক্ষা ক্ষেত্রে কোন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই।
- আধার কার্ড
- ভোটার কার্ড
- প্যান কার্ড
উক্ত নথিগুলোর জেরক্স কপি এবং আসল বা অরিজিনাল কপি নিয়ে যেতে হবে।
পাসপোর্ট এর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর দিন আবেদনকারীর সমস্ত নথিগুলি দেখা হয় এবং সেই সাথে আবেদনকারীদের একটি ছবি তোলা হয়।
এগুলো পরে পাসপোর্টে যোগ করে প্রিন্ট করা হয়। তাছাড়া আবেদনকারীদের পাঁচটি আঙুলের ছাপ নেওয়া হয় এবং একটি ফর্মে সই করানো হয়।
কিভাবে পাসপোর্টের আবেদন বাতিল করব? How to cancel passport application?
- ধাপ 1: পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট দেখুন।
- ধাপ 2: নেভিগেট করুন এবং “সংরক্ষিত/সাবমিট করা অ্যাপ্লিকেশন দেখুন” বিভাগে ক্লিক করুন।
- ধাপ 3: নতুন পৃষ্ঠায়, সময়সূচী অ্যাপয়েন্টমেন্ট বিভাগে নেভিগেট করুন এবং দুটি বিকল্প থেকে “অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করুন” নির্বাচন করুন- “পুনঃনির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট” বা “অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করুন”।
পাসপোর্ট আবেদনে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য দরকারি নথি, Documents required for police verification in passport application :
পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রক্রিয়া হয়ে যাওয়ার ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য যে সমস্ত ডকুমেন্ট গুলি চাওয়া হয় সেগুলি হল :
- মাধ্যমিক পাস মার্কশীট
- মাধ্যমিক পাস সার্টিফিকেট
- মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড
- জন্ম সার্টিফিকেট (যাদের জন্ম 26 জানুয়ারি 1989 সালের আগে হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে জন্ম সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই)।
- পিতার আধার কার্ড
- পিতার ভোটার কার্ড
- ভোটার আইডি
- প্যান কার্ড
- নিজের বা পিতার নামের জায়গা- জমির দলিল
- বাসিন্দা হিসেবে সার্টিফিকেট (পঞ্চায়েত অফিস অথবা পৌরসভা অফিস থেকে নিতে হবে)।
- যারা কখনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেনি তাদের ক্ষেত্রে Magistrate Affidavit জমা দিতে হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া যখন সম্পন্ন হয়ে যায়, এর ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই ডাক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেদনকারীর বাড়িতে পাসপোর্ট পৌঁছে দেওয়া হয়।
পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার পর জরুরী সমগ্র প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয়ে গেলে প্রায় ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট বাড়িতে চলে আসে।
পাসপোর্ট কিভাবে চেক করতে হয়? How to check passport status?
এসএমএসের মাধ্যমে পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন START EPP Application ID Number, এবং এটি লিখে পাঠাতে হবে 16445 নম্বরে। এসএমএস এ পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে আপনার ই পাসপোর্ট সম্বলিত সমস্ত তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।
ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম, Rules for checking e-passport :
ই পাসপোর্ট চেক করতে হলে e-Passport Portal এর Status Check পেইজে যান, তারপর আপনার পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপে দিয়ে রাখা Application ID বা Online Registration ID এবং আপনার জন্ম তারিখ DD-MM-YYYY ফরমেটে পেইজে লিখুন।
সবশেষে I am Not Robot ফিলাপ করে Check Status ক্লিক করুন। এভাবে পাসপোর্ট হয়েছে কিনা বা পাসপোর্ট এর বর্তমান স্ট্যাটাস কি আছে এই সবকিছু চেক করতে পারবেন।
ভারতের নাগরিকদের পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে? How much does it cost to get passport for citizens of India?
- ৩৬ টি পেজের পাসপোর্টের জন্য ১৫০০ টাকা।
- ৬০ টি পেজের পাসপোর্টের জন্য ২০০০ টাকা।
- ৩৬ টি পেজের পাসপোর্ট কখনো হারিয়ে গেলে অথবা নষ্ট হয়ে গেলে অথবা কোনোভাবে চুরি হয়ে গেলে পুনরায় আবেদন করলে ৩০০০ টাকা জমা দিতে হয়।
- ৬০ টি পেজের পাসপোর্ট কখনো হারিয়ে গেলে অথবা নষ্ট হয়ে গেলে অথবা কোনোভাবে চুরি হয়ে গেলে পুনরায় আবেদন করলে ৩৫০০ টাকা জমা দিতে হয়।
- ১৮ বছরের থেকে কম বয়সী কোনো শিশুর পাসপোর্ট করতে গেলে ১০০০ টাকা খরচ হবে।
পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে খরচের মাত্রা ভবিষ্যতে পরিবর্তন হতে পারে।
ভারতীয়দের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ট্র্যাকিং কিভাবে করবেন ? How to track passport status for Indians?
পাসপোর্ট সেবা পোর্টালে গিয়ে লগ ইন করুন এবং ‘চেক পাসপোর্ট স্ট্যাটাস’ বিভাগে নেভিগেট করুন। আপনার আবেদনে যা বিবরণ সেখানে চাইবে তা লিখুন, যেমন ফাইল নম্বর এবং জন্ম তারিখ সহ আপনার আবেদনের বিশদ বিবরণ লিখুন।
তারপর প্রেরণের অবস্থা ট্র্যাক করুন। একবার লগ ইন করলে, ভারতীয় স্পিড পোস্টের মাধ্যমে আপনার পাসপোর্টের প্রেরণের বাস্তব-সময়ের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করতে পারবেন।
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে কি হয়? What happens when the passport expires?
প্রারম্ভিকদের জন্য, একটি পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার মুহূর্ত থেকে অবৈধ হয়ে যায় । এর মানে হল যে আপনি এটিকে ফ্লাইটে বোর্ড করতে বা ভিসার জন্য আবেদন করতে ব্যবহার করতে পারবেন না।
পাসপোর্ট-এ বানান ভুল করলে কি হয়? What happens if you make a spelling mistake in the passport?
পাসপোর্টে ধারকের নামের বানান ভুল থাকলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপডেট করা অপরিহার্য। একইভাবে, যদি একজন ব্যক্তি সম্প্রতি একটি নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়, কিন্তু তাদের পাসপোর্ট তাদের পূর্বের ঠিকানা নির্দেশ করে, তাদের অবশ্যই এটি আপডেট করতে হবে, তা না করলে বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
শেষ কথা, Conclusion :
আশা করি পাসপোর্ট এর আবেদনের জন্য জরুরী নথি এবং পাসপোর্ট ট্র্যাকিং স্ট্যাটাস চেক করার নিয়ম সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য আপনারা বুঝতে পেরেছেন। আপনাদের মধ্যে কেউ যদি পাসপোর্ট আবেদন করে থাকেন তাহলে এই তথ্যগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে।
Frequently Asked Questions
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে অবিলম্বে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে এবং বিদেশে থাকলে পাসপোর্ট অফিস বা ভারতীয় মিশনে রিপোর্ট করা উচিত। যদি প্রয়োজন হয়, আপনি পাসপোর্টের “রি-ইস্যু” করার জন্য আবেদন করতে পারেন।
সরকারী প্রবিধান অনুযায়ী, আপনার ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়ার আদর্শ সময় হল আবেদনের তারিখ থেকে 30 থেকে 45 দিন ।
সাধারণত, 18 বছর বয়স পর্যন্ত অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রে (পাসপোর্টের বৈধতা 5 বছরের মধ্যে সীমিত) কোনো পিভির প্রয়োজন হয় না