জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আর ভবিষ্যতের বিষয় নয়, বরং তা বর্তমানের কঠিন বাস্তবতা। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর সামনে একের পর এক নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সমুদ্রের জলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বিশেষ করে দক্ষিণ মহাসাগরের। গবেষকরা এই বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন, কারণ এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র এবং মানুষের জীবনে।
লবণাক্ততা বাড়ছে দক্ষিণ মহাসাগরে :
ইউরোপের স্পেস এজেন্সি (ESA) তাদের উপগ্রহ চিত্রে লক্ষ্য করেছে যে, দক্ষিণ মহাসাগরের জলের রঙ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে, যা পরিবেশ পরিবর্তনের একটি বড় ইঙ্গিত। সাধারণত, সমুদ্রের জলে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার লবণ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই লবণের মাত্রা অত্যাধিক বৃদ্ধি পায়, তখন তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
২০১৫ সাল থেকে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলন দ্রুত হারে বাড়ছে। এই গলিত বরফ থেকে জলের পরিমাণ বাড়লেও, নতুন উদ্বেগ হলো এই জলের সাথে নুন মিশে যাচ্ছে। বরফ গলার কারণে সৃষ্ট এই লবণাক্ত জল দক্ষিণ মহাসাগরের লবণাক্ততা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের প্রাণীরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে, কারণ তাদের জীবনচক্র এবং বেঁচে থাকা অনেকটাই জলের লবণাক্ততার উপর নির্ভরশীল।
উষ্ণতা বৃদ্ধির নবপ্রক্রিয়া :

লবণাক্ততা বৃদ্ধির সাথে সাথে আরও একটি ভয়াবহ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাধারণত, পরিষ্কার জল গরম হলে বাষ্পীভূত হয়ে উপরের দিকে উঠে যায়। কিন্তু জলে লবণের পরিমাণ বেশি থাকলে, সেই তাপ জলের মধ্য থেকে বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে না। তখন সেই তাপ জলের নিচের দিকে যেতে থাকে, যা সমুদ্রের গভীরের জলকে অতিরিক্ত গরম করে তোলে। এর ফলে সমগ্র সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের দিকে আরও এক ধাপ এগোচ্ছে পৃথিবী :
যদি সমুদ্রের জল অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়, তাহলে তা পরিবেশে বিরাট প্রভাব ফেলবে। এটি বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রক্রিয়াকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দেবে। আমরা জানি, জলই জীবন। কিন্তু এই লবণাক্ত ও উষ্ণ জলের কারণে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হলে তা কেবল সামুদ্রিক জীবদের নয়, বরং সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনকেও সংকটে ফেলবে।
এই নতুন সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায়, উষ্ণায়নের এই ধাক্কা মানবজাতির জন্য এক নতুন ও ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে।