মিশর মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশালাকার পিরামিড, বালির প্রান্তর, উটের কাফেলা আর রহস্যময় দেবমূর্তি। তবে এই প্রাচীন সভ্যতা যে কতটা উন্নত, তা প্রমাণ করে দিল এক যুগান্তকারী আবিষ্কার! পিরামিডের বাইরে গিয়ে এবার উঠে এল এমন তথ্য, যা মিশরের ইতিহাসকে একেবারে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করবে গবেষকদেরও!
স্কুল ছিল প্রাচীন মন্দিরে!
হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন! পিরামিডের দেশ মিশরে প্রাচীন মন্দিরেই ছিল স্কুল! মিশরের ঐতিহাসিক শহর লাক্সারে অবস্থিত রামেসিয়াম মন্দিরে খননকার্যের সময় প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পেয়েছেন এমন নিদর্শন, যা থেকে জানা গেছে— মন্দির চত্বরে ছোটদের পড়াশোনার জন্য ছিল বিশেষ স্কুল!

স্কুলে ব্যবহৃত খেলনা, আঁকার খাতা, এমনকি শিক্ষা সামগ্রীও মিলেছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের হাতে, যা প্রমাণ করে, প্রাচীন মিশরের মানুষরা শিশু শিক্ষার প্রতি কতটা সচেতন ও আধুনিক চিন্তাভাবনার ছিলেন।
মন্দিরই ছিল প্রশাসনিক দপ্তর!
এখানেই শেষ নয়। রামেসিয়াম মন্দির শুধু উপাসনার জায়গা ছিল না, বরং ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কেন্দ্রও! মন্দিরের পূর্ব দিকে খুঁজে পাওয়া বাড়িগুলো বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানিয়েছেন, সেখান থেকেই চলত রাজকীয় প্রশাসনিক কাজ। তাবড় আধিকারিকরা বসতেন সেই ঘরেই।
অলিভ অয়েল, মধু, আর কুটিরশিল্পের ভাণ্ডার!
মন্দির চত্বরের এক প্রান্তে সংরক্ষিত ছিল অলিভ অয়েল ও মধু। এই উপাদানগুলি খুব যত্নে সংরক্ষণ করা হত। সেইসঙ্গে স্থানীয় কুটির শিল্পীদের জন্য ছিল নানা উপকরণ ও বণ্টনের ব্যবস্থাও। অর্থাৎ, একটি প্রাচীন মন্দিরই ছিল একপ্রকার মাল্টিফাংশনাল হাব!
এখন প্রশ্ন একটাই— এত আধুনিক ব্যবস্থা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল সেই সময়ে?
এই আবিষ্কার দেখিয়ে দিল, মিশর কেবল পিরামিড নয়, বরং ছিল এক পরিপূর্ণ, সংগঠিত ও প্রগতিশীল সভ্যতা। শিশু শিক্ষা, প্রশাসন, খাদ্য সংরক্ষণ, শিল্প সমর্থন— সবই চলত সুসংগঠিত পদ্ধতিতে।

রামেসিয়াম মন্দিরের পরিচয় নতুনভাবে গড়ে দিল ইতিহাসকে।
প্রসঙ্গত, এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল দ্বিতীয় রামেসিসের রাজত্বকালে। এতদিন যা শুধুই এক রাজকীয় উপাসনাস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল, আজ তা হয়ে উঠছে এক প্রাচীন ‘কমপ্লেক্স’— যেখানে শিক্ষা, প্রশাসন ও সমাজের নানা দিক একসাথে গাঁথা ছিল।
মিশর মানে আর শুধু পিরামিড নয়। এবার মিশর মানে— আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি, উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা ও সাংগঠনিক সমাজের এক প্রাচীন নিদর্শন! ইতিহাসকে নতুন চোখে দেখতে হলে, মিশরকেও দেখতে হবে নতুন করে।