আপনি ফল খাচ্ছেন, আর সেই ফলই আপনাকে ‘খেয়ে’ নিচ্ছে—ভাবতে কেমন লাগছে? এমন ভয়ের কথা একটা চেনা ফলকে নিয়েই প্রচলিত আছে। ভাবছেন কেন এমন বলা হয়? এর পেছনের কারণটা কিন্তু বেশ চমকপ্রদ!
কেন ফলও আপনাকে খাবে?
আপনি নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন শিরোনামটা পড়ে। সেভাবেই ফলটার নাম শুনলে আরও বেশি চমকে যাবেন, কারণ এই ফল আমাদের খুবই পরিচিত। তাহলে আর দেরি না করে ফলটির নাম বলেই দিচ্ছি, ফলটি হলো আনারস।
খাবার ও পুষ্টিগুণ নিয়ে যেখানে প্রতি মুহূর্তে গবেষণা চলছে, সেই দুনিয়ায় অনেকেই আনারসকে একটি বিশেষ নামে ডাকেন—‘ফ্রুট দ্যাট ইটস ইউ ব্যাক’; অর্থাৎ, যে ফল আপনাকে পাল্টা খায়!
আনারস কেন আপনাকে খাবে?
এই প্রশ্ন হয়তো অনেকের মনেই আসছে। এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক স্তরের বহু পুষ্টিবিদ এ ব্যাপারে তাঁদের মতামত দিয়েছেন, এমনকি বেশ কিছু গবেষণাও হয়েছে। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর জার্নাল ‘মেডিলাইন প্লাস’-এর একটি প্রতিবেদনে আনারসের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে আনারসে থাকা একটি বিশেষ এনজাইম, যার নাম ব্রমেলাইন।
ব্রমেলাইনের প্রভাব কি ?
আমেরিকান লেখক কেভিন এল নাইটস এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, একবার আনারস খাওয়ার পর তাঁর ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরিয়ে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। তিনি বহু গবেষকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, আনারস হলো এমন এক ধরনের খাবার, যার মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে কিছু প্রতিরোধ শক্তি থাকে। এর উদ্দেশ্য হলো, কোনো জীবজন্তু যেন সহজে ফলটি খেতে না পারে। আনারস মুখে যাওয়া মাত্রই অনেকের মুখে যে জ্বালা বা চুলকানির অনুভূতি হয়, তা এই প্রতিরোধ শক্তির কারণেই।

আনারসের এই প্রতিরোধ শক্তিই হলো ব্রমেলাইন। পুষ্টিবিদ শ্রেয়া চক্রবর্তী ব্রমেলাইনের প্রভাব সম্পর্কে বলেছেন, “ব্রমেলাইন শরীরে যাওয়া মাত্রই শরীরের পেশিতন্তুতে থাকা প্রোটিনকে আক্রমণ করে তাকে ভাঙতে শুরু করে।”
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রেও বলা হয়েছে, ব্রমেলাইনের এই কাজের জন্যই এটি খাওয়ার পর মুখে অস্বস্তি হয়, কারণ, মুখের ভেতরের পেশিতন্তুতে প্রোটিনের মাত্রা বেশি থাকে। ব্রমেলাইনের সংস্পর্শে তা ভাঙতে শুরু করলে জিভে বা মুখের পেশিতে সুঁই ফোটার মতো অনুভূতি হয়। এই বিষয়টি এতটাই কার্যকর যে, অনেকে রান্না করার আগে মাংস নরম করার জন্য আনারসের রস ব্যবহার করেন।
তবে কি আনারস খাওয়া ক্ষতিকর?
আনারস খাওয়া একেবারেই ক্ষতিকর নয়, বরং এর এই বৈশিষ্ট্য সাধারণত শরীরের উপকারে লাগে। বহু গবেষণাতেই দেখা গেছে যে, ব্রমেলাইন শরীরের সেই সমস্ত প্রোটিনগুলোকেই আক্রমণ করে, যেগুলো প্রদাহের কারণ। এতে ক্যান্সারের মতো অসুখ দূরে থাকে।
পুষ্টিবিদ শ্রেয়া চক্রবর্তী বলেছেন, “শুধু আনারস খেয়ে ক্যান্সার সারানো যাবে না। তবে আনারসে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে।”
তাহলে এবার থেকে আনারস খাওয়ার সময় জিভে একটু অস্বস্তি লাগলে ভয় পাবেন না, বরং জেনে রাখুন, আপনার প্রিয় আনারসটি আপনার শরীরের উপকারেই কাজ করছে।