সাপে-নেউলে—এই শব্দবন্ধটির মধ্যে রয়েছে চিরন্তন শত্রুতার ছাপ। লোককথায়, কাহিনিতে এবং আধুনিক প্রামাণ্যচিত্রেও এই দ্বন্দ্ব বারবার উঠে এসেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—কীভাবে একটি ছোটখাটো প্রাণী, নেউল (বা বেজি), এতটা সাহসিকতার সঙ্গে বিষধর সাপের মুখোমুখি হয়ে বিজয় অর্জন করে?
এই প্রাকৃতিক দ্বন্দ্ব বহু মানুষকে রোমাঞ্চিত করেছে। নেউলের গতি, কৌশল আর সাহস আজও মানুষের কল্পনা ও বাস্তব পর্যবেক্ষণের মেলবন্ধনে বিস্ময় জাগায়। কিন্তু বিজ্ঞান কী বলছে এই বিষয়ে? কেবল সাহস নয়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নেউলের এই ক্ষমতার পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
চলুন জেনে নিই, ঠিক কী বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্য নেউলকে করে তোলে সাপের সামনে এতটা শক্তিশালী ও জয়ী—
১. বিষ প্রতিরোধ ক্ষমতা

নেউলের দেহে থাকে একটি বিশেষ ধরনের গ্লাইকোপ্রোটিন, যা সাপের বিষে থাকা নিউরোটক্সিনের প্রভাব অনেকটাই কমিয়ে দেয়। যদিও এটি পুরোপুরি প্রতিরোধ নয়, তবে সহনশীলতা অনেক বেশি। ফলে সামান্য পরিমাণ বিষে নেউলের মৃত্যু হয় না, সে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে।
২. দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও চটপটে গতি
নেউলের স্নায়ুবিক প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও দ্রুত। তার সঙ্গে থাকে অবিশ্বাস্য চটপটে গতি। ফলে সাপ ছোবল মারার আগেই নেউল তার অবস্থান বদলে ফেলে এবং সুযোগমতো পাল্টা আক্রমণ করে।
৩. পুরু লোম ও ত্বক
নেউলের গায়ে থাকা ঘন ও পুরু লোম সাপের দাঁতকে গভীরভাবে ত্বকে প্রবেশ করতে বাধা দেয়। এটি একটি প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে কাজ করে, যা তাকে সুরক্ষা দেয় প্রথম আঘাত থেকে।
৪. সাপকে খাদ্য হিসেবে বিবেচনা

নেউলের খাদ্যতালিকায় সাপ একটি স্বাভাবিক উপাদান। তাই লড়াই শুধু আত্মরক্ষার জন্য নয়, শিকার করার উদ্দেশ্যেও হয়। এই প্রাকৃতিক খাদ্যচক্রের মধ্যেই গড়ে উঠেছে তাদের অভিযোজন।
৫. প্রাকৃতিক নির্বাচন ও অভিযোজন
সহস্র বছরের অভিযোজনের ফলে যেসব নেউল সাপের বিষের প্রতি তুলনামূলকভাবে সহনশীল ছিল, তারা টিকে ছিল এবং সেই গুণটাই পরবর্তী প্রজন্মে বহন করেছে। ফলে আজকের নেউল প্রজাতি সাপের বিরুদ্ধে অনেকটাই প্রতিরোধক্ষম এবং অভিযোজিত।
নেউলের সাহস ও বুদ্ধিমত্তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য, তবে এর পেছনে রয়েছে জিনগত বৈশিষ্ট্য, শারীরিক গঠন এবং পরিবেশগত অভিযোজনের জটিল সমন্বয়। ‘সাপে-নেউলে’ এই দ্বন্দ্ব কেবল একটি জনপ্রিয় উপমা নয়, বরং প্রকৃতির এক রহস্যময় অধ্যায়, যেখানে ছোট হলেও, সাহস আর কৌশলে বড় প্রতিপক্ষকেও হারানো যায়।