কবুতর পালন পদ্ধতি, Pigeon breeding methods in Bengali

কবুতর পালন পদ্ধতি,

কবুতর অনেকেরই পছন্দের একটি পাখি। আগেকার সময়ে বেশিরভাগ মানুষ কবুতর পালন করতো, বিশেষত বার্তা পাঠানোর জন্য। তবে আজকাল কবুতর পোষা হয় না, খুব কম মানুষ কবুতর প্রতিপালন করেন। এর নেপথ্যে মূল কারণ হল পালনের পদ্ধতি অনেকেরই সঠিকভাবে জানা নেই। তাই আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কবুতর পালন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।

কবুতরকে বাস করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করা, Provide suitable environment for pigeons to live :

কবুতর পালন করার জন্য সবার আগে আপনাকে তাদের জন্য একটি নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। জেনে রাখা ভালো যে, কবুতর সাধারণত একটি ভীতু প্রকৃতির নিরীহ প্রাণী, যার কারণে তারা শিকারী প্রানীর আক্রমণকে ভয় করে।

তাই, শিকারী প্রাণীদের আক্রমণের হাত থেকে দূরে থাকা যায় এমনভাবে তাদের বাসা তৈরি করতে হবে। কবুতরকে রক্ষা করার জন্য কবুতরের বাসা একটু উঁচুতে তৈরি করা উচিত। প্রয়োজনে তাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বাসার চারপাশে জালি লাগানো যেতে পারে।

তাছাড়া, কবুতরের বাসা তৈরীর সময় প্রবেশদ্বার কিছুটা সরু রাখা যেতে পারে, এতে অন্য প্রাণী এদের বাসায় প্রবেশ করতে বাধার সম্মুখীন হবে। তবে, একটা বিষয় নিয়ে খেয়াল রাখতে হবে যে, কবুতরের ঘরের ভিতর ডিম পাড়ার সময় যেনো পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে এবং কবুতরদের জন্য বাসা যেন স্বাস্থ্যকর হয় ও বিশ্রাম নেওয়ার মত পর্যাপ্ত বড় হয়।

কবুতরের ঘরের ভেতর পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস প্রবেশ করার মত ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাদের ঘরের ভিতরে কোন গ্যাস যেন তৈরি না হয়, সেজন্য কবুতরের ঘর দৈর্ঘ্যে ১২ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ১২ ইঞ্চি রাখা উত্তম।

সেইসাথে, কবুতর যাতে বাইরে থেকে উড়ে এসে নিজের বাসার আরামে অবতরণ করতে পারে, সেজন্য বাসার সামনে ছোট একটি বারান্দা তৈরি করতে হবে।

সুষম খাদ্য প্রদান করা, Providing a balanced diet :

 কবুতর পালনের ক্ষেত্রে পাখির সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন তাদেরকে সুষম খাদ্য প্রদান করা। কবুতরকে দিনে দুই থেকে তিন বার নির্দিষ্ট সময়ে খাবার প্রদান করতে হবে। এভাবে তারা আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করতে না পারে।

 কবুতরকে সুস্থ রাখার জন্য বাজারি প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। প্রয়োজনে আপনি কবুতরের জন্য ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, চাল, খেসারি ইত্যাদির সংমিশ্রণে নিজে খাবার প্রস্তুত করতে পারেন।

জেনে রাখা ভালো যে,

  • একটি প্রাপ্ত বয়স্ক কবুতর প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম খাবার গ্রহণ করে থাকে।
  • মধ্যবয়সী একটি কবুতরকে সাধারণত ৩৫ গ্রাম খাদ্য এবং কবুতর ছোট হলে তাকে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম খাবার দেওয়া উচিত।

নিম্নোক্ত অনুপাতে কবুতরের জন্য খাবার প্রস্তুত করতে পারেন :

  • ভুট্টা ভাঙ্গাঃ ৩৫ গ্রাম।
  • গম ভাঙ্গাঃ ৩০ গ্রাম।
  • মটর ভাঙ্গাঃ ২০ গ্রাম।
  • ঝিনুক ভাঙ্গাঃ ০৭ গ্রাম।
  • ভিটামিনঃ ০৭ গ্রাম।
  • লবণঃ ০১ গ্রাম।

উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত খাবারের মিশ্রণ ব্যবহার করে কবুতর বাণিজ্যিকভাবে পালন করার ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন।

কবুতরের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, Adhering to pigeon hygiene:

কবুতরের স্বাস্থ্যবিধি

একটি কবুতর থেকে অন্য কবুতরে যেন রোগ না ছড়িয়ে পরে সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। পালিত কবুতরের মধ্যে অস্বাভাবিক কোন আচরণ লক্ষ করলে সাথে সাথে পশু চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। চিকিৎসা নিয়ে কোন সময় অবহেলা করা উচিত নয়।

 কবুতরের কোন রোগ হয়েছে তা একমাত্র একজন ডিভিএম বা পশু চিকিৎসক পর্যবেক্ষণ করে বলতে পারবেন। সে অনুযায়ী তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য টিকা বা ঔষধ প্রদান করবেন।

কবুতরের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলঃ

  • কবুতররের ঘরকে নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে।
  • বাসায় পোকা হয়েছে কি না খেয়াল রাখা।
  • কবুতরের ঘরকে কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত রাখা।
  • বাসা বাঁধার উপকরণ নোংরা হয়েছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখা।

প্রাকৃতিক উপায়ে কবুতর সুস্থ রাখার উপায়, Natural ways to keep pigeons healthy

সঠিক স্বাস্থ্যবিধি রক্ষণাবেক্ষণ ভাল পাখি পালনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খাঁচা বা মাচা প্রতিদিন পরিষ্কার করা, খড় বা কাঠের শেভিং দিয়ে একটি তাজা মেঝে আচ্ছাদন, এছাড়াও প্রতিদিন দুবার নতুন, পরিষ্কার জল এবং প্রতিদিন তাজা খাবার সরবরাহ করা অপরিহার্য। মনে রাখবেন খাবার এবং জলের পাত্রগুলোকেও পরিষ্কার রাখতে, সেগুলোকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

কবুতরদের প্রজননে আগ্রহী করা, To make pigeons interested in breeding :

কবুতরকে বাসায় থাকতে দেওয়ার পূর্বে, কবুতরের জাত, রং ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভালোভাবে চিন্তা করে, তারপর তাদের একটি জোড়া তৈরি করতে হবে।

জোড়ার প্রজননের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ হতে হবে। এমন জায়গা তৈরি করে তাদের একসাথে রাখুন, যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পেয়ে তারা প্রজননের উদ্দেশ্যে উৎসাহিত হয়।

কবুতর সাধারণত মাসে এক থেকে দুটি ডিম দিয়ে থাকে। পুরুষ এবং নারী উভয় কবুতরের ইনকিউবেশনের বা তা দেওয়ার মাধ্যমে প্রায় ১৭ থেকে ১৯ দিনে বাচ্চা বের হয়ে আসে।

কবুতরের বাসা বাঁধার উপরকণ যেমনঃ খড়, গাছের ডাল, ঘাস ইত্যাদি যাতে ডিম পাড়ার আগে তারা সহজে সংগ্রহে করতে পারে সে ব্যপারে সহায়তা করুন।

কবুতর ডিম পাড়ার আগে কতবার মিলন করে? How often do pigeons mate before laying eggs?

পায়রা একগামী হয়। সঙ্গমের আট থেকে 12 দিন পর, স্ত্রীরা 1 বা 2টি ডিম পাড়ে যা 18 দিন পর বাচ্চা বের হয়। পুরুষ বাসা বাঁধার উপাদান সরবরাহ করে এবং স্ত্রী ও বাসা রক্ষা করে।

কবুতরের মিলনের লক্ষণ কি কি? What are the signs of pigeon mating?

একটি পুরুষ কবুতর তার সঙ্গীকে প্রণাম করে, কুঁকড়ে, গলা ফুলিয়ে এবং মহিলার চারপাশে একটি বৃত্তে ঘুরিয়ে দেয় । সঙ্গম করার জন্য প্রস্তুত হলে, মহিলারা ক্রুচ করে এবং পুরুষরা তার পিঠে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

কবুতরের আচরণ বুঝার চেষ্টা করতে হবে, Try to understand pigeon behavior :

কবুতরের মিলনের লক্ষণ

কবুতরদের বিশেষ ভাষা রয়েছে। তারা একে অপরের সাথে শব্দের মাধ্যমে, ডানার মাধ্যমে, এবং আরও অনেক শারীরিক ভঙ্গির মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। এসব আচরণ ভালোভাবে লক্ষ করলে আপনি কিছুটা হলেও ধারণা করতে পারবেন যে, কবুতর কোন আচরণের মাধ্যমে কোন বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাদের আচরণ থেকে বোঝা যায় যে, তারা কোন চাহিদার কথা আপনার কাছে প্রকাশ করতে চাইছে।

তাছাড়া কবুতরদের নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার করার প্রবণতা রয়েছে। বলতে গেলে, তারা নিজেদের এলাকায় অন্য কবুতরকে প্রবেশ পছন্দ করেনা। এক্ষেত্রে কবুতররা পরস্পরের মধ্যে মারামারি করা, একে অন্যের ক্ষতি করা ইত্যাদির সম্ভাবনা থাকে। মারামারি করতে গিয়ে ডিম পড়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 শেষ কথা, Conclusion :

পরিশেষে বলা যায় যে, কবুতর পালন তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। তবে আপনার তাদের যত্নে অনেকটা সময় দিতে হবে। কবুতরকে থাকার জন্য নিরাপদ বাসস্থান প্রদান, তাদের আচরণ বুঝার চেষ্টা, সুষম খাদ্য প্রদান, অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া ইত্যাদি যথাযথভাবে ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে কবুতর পালন অনেকটা সহজ হয়ে উঠে। আশা করি উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা কবুতর পালন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

Frequently Asked Questions

কবুতর কত বছর বাঁচে?

উত্তরঃ কবুতরের গড় আয়ু সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছর হয়ে থাকে। তবে, সঠিকভাবে যত্ন নিতে পারলে কবুতর ১৫ বছর বা তার বেশি সময় পর্যন্ত বাঁচতে পারে।

 কবুতর কতদিনে ডিম দেয়?

উত্তরঃ কবুতর জন্মের ০৪ থেকে ০৫ মাস পর থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে এবং দেশি কবুতর হলে তারা প্রতি ২৮ দিন পর পর ০২ টি ডিম দিয়ে থাকে।

কবুতর কত দিনে বাচ্চা দেয়?

উত্তরঃ ডিম পাড়ার ১৭ থেকে ১৯ দিন পর কবুতরের বাচ্চা ডিম থেকে বাহির হয়ে আসে।

RIma Sinha

Rima Sinha is working as a writer and also as a journalist. she got her bachelor of arts degree from Tripura University. She has also completed Master of Arts in Journalism and mass communication from Chandigarh University.

Recent Posts