২০২৪ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা পদ্ধতির সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। এর আগে ২০১৩ এবং ২০২৪ সালেও শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা কোটা আন্দোলনের চরম পর্যায় নিয়ে আলোচনা করবো।
কোটা আন্দোলন কি ? What is the quota movement?
সরকারি চাকরিতে কোটার পরিমাণ কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে বাংলাদেশ কোটা সংস্কার আন্দোলন সংগঠিত হয়। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট তিনবার কোটা সংস্কারের জন্য বড়ো ধরনের আন্দোলন সংগঠিত হয়।
২০১৩-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল দেশের সরকারি খাতে চাকরি সংক্রান্ত সরকারের নীতির বিরুদ্ধে একটি আন্দোলন। ২০১৩ সালের কোটা আন্দোলন সফলতার মুখ না দেখলেও এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে এদেশে পুনরায় কোটা আন্দোলন সংগঠিত হয়।
১৯৭২ সাল থেকে চালু হওয়া কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চাকরি প্রত্যাশী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
প্রসঙ্গত , বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল। ওই সময়কালে চাকরির ক্ষেত্রে মেধাতালিকা ২০ শতাংশ বরাদ্দ রেখে, ৪০ শতাংশ জেলাভিত্তিক, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ করে দেওয়া হয়।
২০২৮ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলনে অংশগ্রহণের ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটাব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু পরবর্তী সময়ে, ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বাতিলকৃত কোটা পুনরায় বহাল করে। এর ফলে পুনরায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
কোটা আন্দোলনরে ছবি / কোটা আন্দোলন ছবি
২০২৪-এ বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন, Quota reform movement in Bangladesh in 2024
এই আন্দোলনে সারা বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দ্বারা শুরু হলেও পরবর্তীতে নটরডেম কলেজ, আদমজী ক্যান্টমেন্ট কলেজ, সেন্ট যোসেফ কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দনিয়া কলেজ, ডাঃ মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি,ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, সিভিল এভিয়েশন স্কুল এন্ড কলেজ, তেজগাঁও,মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সহ আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করা শুরু করে।
কোটা আন্দোলন চলাকালীন উল্লেখযোগ্য ঘটনা, Notable Events During the Quota Movement:
- আপিল বিভাগ ১০ জুলাই কোটা ইস্যুতে চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থার আদেশ দেন
- বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দমন-পীড়ন, সশস্ত্র ও সহিংস হামলার শিকার হন
- পুলিশ রাবার বুলেট, ছররা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে, লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে
- সরকার প্রায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও এইচ.এস.সি পরীক্ষা স্থগিত করে
- আন্দোলনকারীদের আগুনে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে টোল প্লাজা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ভবন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত
- সরকার সব ধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় ও সারাদেশে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে
কোটা আন্দোলনের ফলাফল, Results of the Quota Movement :
- ২১ জুলাই ২০২৪ সালে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে ও ৭% কোটা রেখে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩% নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে
- ২৩ জুলাই সুপ্রীম কোর্টের রায় অনুযায়ী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে
- কোটা সংস্কার আন্দোলন অসহযোগ আন্দোলনে পরিণত
- ৫ই আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে পলায়ন
আন্দোলনকারী সংগঠন, Quota Movement Organisation :
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
- কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
- কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা
- কয়েকজন আইনজীবী এবং বার কাউন্সিলের সদস্য
- প্রবাসী বাংলাদেশী
আন্দোলনকারীদের সমর্থক, Supporters of quota activists :
- বিএনপি
- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
- জাতীয় পার্টি(জাপা)
- গণতন্ত্র মঞ্চ
- ১২ দলীয় জোট
- বাম গণতান্ত্রিক জোট
- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ
- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
কোটা আন্দোলন কতজন মারা গেছে? How many people died in the quota movement?
আন্দোলনকারীদের মধ্যে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি :
- মৃত্যু: অন্তত ৭৫৭ জন , মতান্তরে ৮৩৫ জন(হিউম্যান রাইটস ওয়াচ)।
- আহত: ৬,৭০০+ জন।
- গ্রেফতার: ১০,৫০০+ জন।
আন্দোলন বিরোধীদের মধ্যে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি :
- মৃত্যু: ১ জন ছাত্রলীগ কর্মী এবং ৪৭ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য।
- আহত: ১১১৭ এর বেশি পুলিশ কর্মী এবং বহু ছাত্রলীগ কর্মী।
বাংলাদেশে কি কোটা নিষিদ্ধ? Is quota banned in Bangladesh?
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে 2013, 2018 এবং 2024 সালে প্রতিবাদ করেছিল এবং যুক্তি দিয়েছিল যে কোটার কারণে মেধাবী প্রার্থীদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। সিস্টেমটি 2018 সালে বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু 2024 সালে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে এটি পুনঃস্থাপন করা হয়।
২০২৪ সালের কোটা আন্দোলন কবে শুরু হয়? When does the quota movement of 2024 start?
কোটা সংস্কারের দাবিতে এবার আন্দোলন শুরু হয় গত ৫ জুন।
২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ কে ছিলেন? Who was the first martyr of the student movement of 2024?
আবু সাঈদ (২০০১ – ১৬ জুলাই ২০২৪) ছিলেন একজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ও ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয়কর্মী। তিনি এই আন্দোলনের রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন। ১৬ই জুলাই আন্দোলন চলাকালে একজন পুলিশ সদস্যের গুলিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কোটা আন্দোলন ২০২৪ প্রথম শহীদ কে ছিলেন? Who was the first martyr of the quota movement 2024?
বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রথম শহীদ হন মোহাম্মদ রাশেদ খান।
কোটা আন্দোলন স্লোগান/ কোটা আন্দোলন স্লোগান কি কি? Quota movement slogan
- ২০২৪-এর আন্দোলনে একজন আন্দোলনকারীর শরীরে লেখা স্লোগান “এক দফা এক দাবী কোটা নট কাম ব্যাক (কোটা ফেরত আসবে না)”।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” এবং “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান দেয়।
- “ নারী চায়না নারী কোটা, নাতি আইস্যা দেয় নানার রক্তের খোঁটা। “
- ‘তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার’,
- ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’,
- ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র করোর বাপের না’।
- ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’
- ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’
- ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। এর পর থেকেই স্লোগান শুরু হয়, ‘আমার খায়, আমার পরে, আমার বুকেই গুলি করে’; ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে’; ‘বন্দুকের নলের সাথে ঝাঁজালো বুকের সংলাপ হয় না’ এবং ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’
কোটা আন্দোলন শহীদদের নাম কি ?
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন:
- আবু সাঈদ (২২) — বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
- মো. ওয়াসিম আকরাম — চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র ও কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
- ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২৪) — ওমরগনি এম.ই.এস কলেজের ছাত্র ছিলেন।
- মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ — বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস-এর (বিইউপি) ছাত্র।
- তাহির জামান প্রিয় — সাংবাদিক।
- মো. ফারুক — একটি আসবাবের দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
- রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ — টঙ্গী সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী।
- শেখ ফাহমিন জাফর (১৮) — গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আন্দোলনের সময় ঢাকার উত্তরার আজমপুরে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে।
- মো. শাহজাহান (২৫) — তিনি নিউমার্কেট এলাকার হকার ছিলেন।
- সিয়াম (১৮) — তিনি গুলিস্তানের একটি ব্যাটারির দোকানের কর্মচারী ছিলেন।
- আসিফ ও সাকিল — নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
- দিপ্ত দে — মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
- দুলাল মাতবর — গাড়ি চালক।
- ইয়ামিন — মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির।
- মো. জিল্লুর শেখ — ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজ।
- শাইখ আসহাবুল ইয়ামিন — মিরপুর এমআইএসটির কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী।
- হাসান মেহেদী — নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস।
- রাকিব হাসান (১২) — রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আইটিজেড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
- তাহমিদ ভূঁইয়া তামিম (১৫) — নরসিংদী শহরের নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
- মো. ইমন মিয়া (২২) — শিবপুরের সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের শিক্ষার্থী।
- আবু সায়েদ (৪৫) — ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় ছোট একটি মুদিদোকান চালাতেন।
- হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২) — (২০০২ – ২৩ জুলাই ২০২৪) ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের চাটগাঁ আবাসিক এলাকায় চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
- মো. ফয়েজ (৩২) — স্যানিটারি মিস্ত্রির (পাইপ ফিটার) কাজ করতেন।
- মাহামুদুর রহমান সৈকত (১৯) — (১১ সেপ্টেম্বর ২০০৪ – ১৯ জুলাই ২০২৪) সরকারি মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সৈকত ২০২৪ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
- ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির — সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
- নাইমা সুলতানা (১৫) — ঢাকার মাইলস্টোন কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
- রাকিবুল হাসান (২৭) — প্রকৌশলী হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন।
- মো. আলমগীর হোসেন — ঢাকার রামপুরা এলাকায় একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে গাড়িচালকের চাকরি করতেন।
- নুর আলম (২২) — নির্মাণশ্রমিক।
- শেখ শাহরিয়ার বিন মতিন — ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার আইডিয়াল কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
- ইমরান খলিফা (৩৩) — গুলশান-২-এর চারুলতা নামের একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
- জসিম উদ্দীন (৩৫) — উত্তরায় একটি অটোমোবাইলসের দোকানে চাকরি করতেন।
- সাব্বির হোসেন — জ্বর হওয়ায় অসুস্থ শরীরে ওষুধ কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
- মিজানুর রহমান ওরফে মিলন (৪৮) — ঢাকার নর্দা এলাকায় একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন।
- মো. রাসেল (১৫) — নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
- জাকির হোসেন (৩৮) — ভীমবাজার এলাকায় ‘কাজী ভিআইপি গার্মেন্টস’ নামের একটি কারখানায় উৎপাদন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন।
- আবদুল্লাহ আল আবির (২৪) — নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন।
- রিদওয়ান হোসেন সাগর — ১৯ জুলাই ময়মনসিংহে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
- সজীব সরকার (৩০) — চিকিৎসক।
- মোস্তফা জামান ওরফে সমুদ্র (১৭) — চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ব্যবসা শাখা থেকে জিপিএ-৪.৯৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় সে।
- আরিফ হোসেন ওরফে রাজীব (২৬) — গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় ভাঙারি দোকানে শ্রমিকের কাজ করতেন।
- জুবাইদ হোসেন (১৫) — রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে একটি মুদিদোকানে চাকরি করত।
- কাদির হোসেন (২৫) — কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিতে চাকরি করতেন।
- সেলিম তালুকদার (৩২) — নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
- মোবারক হোসেন (৩৩) — একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন।
- সাগর আহম্মেদ (২২) — মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
- কুরমান শেখ (৪৯) — ঢাকার সাভার বাসস্ট্যান্ডে একটি ছোট্ট ঘরে দৈনিক ভাড়া ভিত্তিতে মুরগির ব্যবসা করতেন।
- এটিএম তুরাব হোসেন — সাংবাদিক।
- মোহাম্মদ ইরফান ভূঁইয়া (২১) — ঢাকার ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর সিএসই বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
- তাহমিদ আবদুল্লাহ অয়ন (২১) — ঢাকার বিইউবিটি এর সিএসই বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
- আব্দুল্লাহ আল মামুন (২০) — তিনি মাদ্রাসা ছাত্র ছিলেন।
- শাহরিয়ার হাসান আলভি (১৫) – নবম শ্রেনী ছাত্র, দেশ টেকনিক্যাল স্কুল।
- জাহিদুজ্জামান তানভীন (২৫) – (১৩ অক্টোবর ১৯৯৯ – ১৮ জুলাই ২০২৪) বাংলাদেশি উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা। তানভীন গাজীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরার আজমপুর এলাকায় কোটা সংস্কারের আন্দোলনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
- সাগর আহম্মেদ (২১) – মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অনার্সে রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ।
- মামুন হোসেনে – প্রাইভেটকার চালক মামুন হোসেন ঢাকার মহাখালীতে ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
- রনি প্রামাণিক (২৮) — ব্যাটরিচালিত অটোরিকশা চালাতেন।
- রুদ্র সেন — শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি দিনাজপুর জেলার দিনাজপুর সদর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের হামলার শিকার হয়ে আহত হন এবং পরবর্তীতে জলে ডুবে তার মৃত্যু হয়।
এছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সরকার পদত্যাগের দাবিতে সারাদেশে কমপক্ষে ৬৭ জন শিশু কিশোর নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৭জন গুলিতে নিহত হন।
কোটা আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে উক্তি
কোটা আন্দোলন নিয়ে উক্তি:
- “মেধার মূল্যায়ন চাই, কোটা সংস্কার চাই। #কোটাআন্দোলন”
- “ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য একসাথে এগিয়ে চলি, কোটা সংস্কার এখন সময়ের দাবি। #কোটাআন্দোলন”
- “মেধার মঞ্চে সাম্যের সূচনা, কোটা সংস্কার চাই অবিলম্বে। #কোটাবাতিল”
- “কোটা সংস্কার মানে মেধার মর্যাদা। আসুন, সবাই মিলে গড়ি এক নতুন বাংলাদেশ। #কোটাআন্দোলন”
- “মেধার বাংলাদেশ, অন্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়াই। কোটা সংস্কার চাই। #কোটাসংস্কার”
- “কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। #কোটাআন্দোলন”
- “কোটা সংস্কার মানে মেধার বিজয়। সবাই একসাথে বলি, কোটা চাই না। #কোটাবাতিল”
- শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করুন, কোটাবিহীন বাংলাদেশ গড়ুন!
- সকলের জন্য সমান সুযোগ, কোটাবিরোধী আন্দোলনের দাবি!
- আমাদের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করুন, কোটা বাতিল করুন!
- “আমরা কোটা চাই না, শুধু ন্যায় চাই।”
- একাত্ম বাংলাদেশ গড়তে হবে, কোটা বাতিল করতে হবে!
কোটা আন্দোলন নিয়ে কবিতা :
কিসের ভয়- মো.সারোয়ার হোসেন
কিসের ভয় কিসের কি?
এটাকে স্বাধীন বলে নাকি?
আবার উঠো গর্জে তুমি
স্বাধীন করো নিজের ভূমি।
আবার মরনের ডঙ্কা বাজা-কে কুকুর কেইবা রাজা।
ছাড় দিস না একটাকেও।
যে বলবে ” ছেড়ে দে” স্বৈরাচার সে নিজেও।
তার বুকেতে লাথি মেরে
স্বৈরাচারদের আগুন দেরে।
কিসের ভয় কিসের কি?
এটাকে স্বাধীন বলে নাকি?
আবার উঠো গর্জে তুমি
স্বাধীন করো নিজের ভূমি।
মোরা ছাত্র, মোরা সাহসী – মাহাবুব
মোরা ছাত্র, মোরা সাহসী, মোরা নওজোয়ান!
মোদের নিয়ে খেলা করো না,
মোরা দস্যুদের ভয় করি না!
আমার ভাই বোনের রক্তে রঞ্জিত,
মোদের চোখে রক্তের নিশানা,
মোদের শক্তি, মোদের মনোবল!
ওরা দস্যু, ওরা দস্যু, ওরা দস্যু,
ওদের মানুষ পেটাতে বুক কাপে না,
দস্যুদের গুলিতে_
মোরা বুক পেতে দিতে ভয় করি না!
দস্যুরা গুলি করে ঝাঁজরা করেছে,
আমার ভাইয়ের বুক,
কত আছে বুলেট? কর গুলি
পেতে আছি কোটি কোটি বুক!
সূর্য উঠলেও সরেনি মেঘ,
মেঘ সরিয়ে আনবো মোরা,
রক্ত দিয়ে কেনা এই দেশে _
মেধার মূল্য একদিন,
আমরাও হবো স্বাধীন,
নতুন সূর্য, নতুন করে হবে দেশ স্বাধীন!
কোটা নীতি ও দুর্নীতি – আনোয়ারা
এক কোটা,দুই কোটা, তিন কোটা, চারে চারে ষোল কোটা;
এখান দিমু বিয়ানের বাড়ী আর একখান শ্যলিকার চ্যালা।
বড় ভাই যাবে শশুর বাড়ী, হাড়ি-মিঠাই মন্ডা-মাঠা;
চিড়েকোটা দেব ননদের ঘড়ে, জেলাপির প্যাচে পরেছে সালা।
কোটা না পেলে বিয়ে দেবেনা বলেছে দেবরের খালা,
আরো কোটা আছে নানার বাড়ী আম-কাঁঠালের মেলা।
মামা বলেছেন, সচিবের ছেলে যেন আদরের হয়না হেলা।
মজুরের সন্তান ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে বাজারে তালি বাজা!
সাবাস বেটা, বাঘের বাচ্চা, রোল হয়েছে এক,
দেখবে ধরণী, সাজাবে সরণি, তোরা সবাই দেখ-
কিন্তু না…
কোটা পেলনা বলে, তাকে বাবার আলুক্ষেতে মই দিতে হল!
কেন পড়লাম অনার্সে বাংলা?
তারচে ভাল উঠান মাঝি পোর্ট মংলা!
কেন যে নিলাম রসায়নের রস?
তারচে ভাল বেচতাম টমেটোর সস!
কেন পড়লাম ত্রিকোনমিতি?
তাই বুঝি আজ দেশের ভূয়া নীতি।
কেন পড়লাম সাইকোলজি?
তারচে ভাল ছিল করতাম স্টানবাজী!
কেন পড়লাম অর্থনীতি?
তারচে ভাল ছিল করতাম দূর্নীতি!
কোন পড়েছিলাম ইংলিশ জেন্ডার?
তারচে ভাল ছিল শুধু ভরতাম টেন্ডার!
কেন মা কেন পড়লাম বিজ্ঞান?
ঐতো ভাল আছে যার নাই সভ্যতার জ্ঞান!
কোটা আন্দোলন – শওকতুর রহমান
আবু সাঈদ, আসিফ, রাফি, ওয়াসিম ও আদনান,
এ যুগের অকুতোভয় বীর যোদ্ধারা যারা হাসিমুখে দিয়ে গেলেন প্রাণ।
নাম না জানা আরো কতশত বীর প্রাণ বিলীয়ে দিয়েছেন অকালে,
অধিকার আদায়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি দাবী একটাই কোটা সংস্কারের।
বায়ান্ন কিংবা একাত্তরের প্রতিবাদী কন্ঠস্বর দেখা গেল চব্বিশে কোটা আন্দোলনে,
আবারো বিজয় তাদেরই হলো যারা মরণকে জয় করতে জানে।
বন্দুকের নল দিয়ে থামানো যায় না ন্যায্য অধিকার, ইতিহাসে নতুন করে এ নিয়ে লেখা হবে আবার।
নতুন প্রজন্ম নিয়ে অনেকের মাঝেই দেখা দিয়েছিল উদ্বেগ উৎকণ্ঠা,
ভুল প্রমানিত করল তারা বিলীয়ে দিয়ে নিজের জীবনটা।
মানুষের অধিকার আদায়ে মোবাইল ছুঁড়ে দিয়ে উঠতে পারে এ হাতে লাঠি,
অন্যায় হতে রক্ষা করবে লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত মাটি।
ওরা আমাদের গর্ব ওরাই আমাদের নতুনভাবে বাঁচার অনুপ্রেরণা,
দেশের স্বার্থে জীবন তুচ্ছ প্রমানে একটুও পিছপা হলো না।
মা, মাটি, দেশ যাদের কাছে প্রাধান্য পেয়েছিল সবার আগে,
তারাই মাতৃভূমির জন্য জীবন দিয়েছেন যোগে যোগে।
শেষ কথা, Conclusion :
আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলো থেকে আপনারা বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই ধরনের পোস্ট আরো পেতে চাইলে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।