সৌদি আরব বিস্তারিত, Details about Saudi Arabia in Bengali

সৌদি আরব বিস্তারিত

মধ্যপ্রাচ্যের একটি সার্বভৌম আরব রাষ্ট্র সৌদি আরব। ২১,৫০,০০০ বর্গ কিমি আয়তনের এই দেশটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় আরব দেশ। আলজেরিয়ার পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হল আরব। অন্যদিকে আয়তনের দিক থেকে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহওম মুসলিম দেশ। সৌদি আরব পশ্চিম এশিয়ায় অবস্থিত একটি দেশ। আরব উপদ্বীপের এই বৃহত্তম দেশটি পারস্য উপসাগর এবং লোহিত সাগরের সীমানায়।

সৌদি আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা, Establishment of the Saudi Arabian Empire

সৌদি আরব মূলত ৫টি আমিরাতে বা রাজ্য বিভক্ত। 

  • মধ্যাঞ্চলীয় আরব নজদ,
  •  উত্তরাঞ্চলীয় আরব আরার,
  •  দক্ষিণাঞ্চলীয় আরব আসির, 
  • পূর্বাঞ্চলীয় আরব আহসা
  •  পশ্চিমাঞ্চলীয় আরব হেজাজ।

১৯০২ সালে নজদ, ১৯১৩ সালে আহসা, ১৯২১ সালে আরার, ১৯২৫ সালে হেজাজ ও ১৯৩০ সালে আসির এই ৫টি রাজতান্ত্রিক দেশ দখলের মাধ্যমে সৌদি আরব সাম্রাজ্য গঠিত হয়। আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯৩২ সালে এই ৫টি রাজ্য দখল করেন এবং রাজ্যগুলো নিয়ে সৌদি আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সৌদি আরব পুরোপুরি রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত।

এই দেশে ইসলামি আইনের অনুসরণ করা হয়। সৌদি আরবে ইসলামের দুই পবিত্র মসজিদ মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী থাকার কারণে সৌদি আরবকে দুই পবিত্র মসজিদের দেশ বলা হয়। দেশটির জনসংখ্যা ৩,৪৭,৬০,০০০; যার মধ্যে আড়াই কোটি সৌদিয়ান আর ৯৭,৬০,০০০ জন বিদেশী।

সৌদি আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা

সৌদি আরব কি অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল? Was Saudi Arabia included in the Ottoman Empire?

সৌদি আরবের বেশিরভাগ অংশ একসময় অটোমান সাম্রাজ্যেরOpens in a new tab. অংশ ছিল । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আরবরা অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং যুদ্ধের সমাপ্তির পর সৌদি আরব একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

সৌদি আরব কি অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল?

তেল উৎপাদন, oil production

সৌদি আরব দেশটি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সর্বোচ্চ তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হাইড্রোকার্বন মজুদকারি দেশ। তেল উৎপাদনের বৃহৎ উৎস থাকার কারণে দেশটির অর্থনীতি বাড়ার পাশাপাশি সৌদি আরব মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকেও উপরের দিকে। 

সৌদি আরব দেশটি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সর্বোচ্চ তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারক এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম হাইড্রোকার্বন মজুদকারি দেশ

জি-২০ প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি, G-20 major economic power

সৌদি আরব দেশটি একমাত্র আরব দেশ হিসেবে জি-২০ প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির সদস্য। দেশটি তার অর্থনীতিকে কর্পোরেশন কাউন্সিল ফর দ্য আরব স্টেটস অব দ্য গালফ (জিসিসি) এর মধ্যে ডাইভারইসিফাইড করছে। সৌদি আরব পৃথিবীর চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খরচ বহনকারী দেশ। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে সৌদি আরবকে গণ্য করা হয়। সৌদি আরব জিসিসি, ওআইসি ও ওপেক এর সদস্য।

সৌদি আরব দেশটি একমাত্র আরব দেশ হিসেবে জি-২০ প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির সদস্য

সৌদি আরবের রাজনীতি, Politics of Saudi Arabia

সৌদি আরব রাজতান্ত্রিক দেশ। এই কারণে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন কিংবা জাতীয় নির্বাচন এদেশে নিষিদ্ধ। রাজকীয় ফরমান জারির মাধ্যমে ১৯৯২ সালে গৃহীত মৌলিক আইন অনুযায়ী রাজাকে অবশ্যই শরিয়া (ইসলামি আইন) এবং কোরআন মেনে শাসন করতে হয়। এই আইন অনুযায়ী কোরআন এবং সুন্নাহকে সৌদি আরবের সংবিধান হিসাবে গ্রহণ করা হয়।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা স্বৈর-একনায়কতান্ত্রিক বলে অধিকাংশ সমালোচকদের মত। দি ইকোনমিস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সৌদি আরব সরকারকে পৃথিবীর পঞ্চম সর্বোচ্চ স্বৈরাচারী সরকার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পত্রিকাটির ২০১২ সালে ডেমক্রেসি ইনডেক্সে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে আরও ১৬৭টি দেশের নাম উল্লেখিত হয়েছিল। ২০১৩ সালে ফ্রিডম হাউস নামক অপর একটি পত্রিকা দেশটিকে সর্বনিম্ন ৭ রেটিং দিয়েছে, এই রেটিংয়ের অর্থ হল সৌদি আরবে সাধারণ জনগণ “মুক্ত নয়”। যদিও দেশের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী ঐতিহ্যবাহী গোত্রীয় সম্মেলন মজলিসে প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোনো ব্যক্তি বাদশাহর কাছে আবেদন করতে পারে।

সৌদি আরবের রাজনীতি

সৌদি আরবের নাগরিকদের জীবনযাত্রা, Lifestyle of citizens of Saudi Arabia

সৌদি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত ধরনের। এই দেশে শিক্ষার হার প্রায় ৮০.৫ শতাংশ। সৌদি আরবের নাগরিকেরা বিলাসবহুল জীবন যাপন করে থাকেন। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সৌদি ফুটবল দল অংশগ্রহণ করে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী এদেশে অপরাধের হার প্রায় শূন্য। এদেশে আইন প্রয়োগে ইসলামি শরিয়াহ অবলম্বন করা হয়ে থাকে।

সৌদি আরবের অর্থনীতি, Saudi Arabia economy

  • সৌদি আরবের মূল অর্থনীতি পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক; বাজেটে রাজস্ব প্রায় ৭৫%
  •  রপ্তানি আয়ের ৯০% তেল শিল্প থেকে আসে। সৌদি আরবে সমগ্র বিশ্বের ভূ-ভাগের ২০% খনিজ তেলের মজুদ রয়েছে। পরিমাণে এটা ২৬ হাজার কোটি ব্যারেল। এছাড়া এখানে তেল ছাড়াও আছে গ্যাস ও স্বর্ণ খনি।
  • জিএনপি অনুসারে সৌদি আরব বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশের একটি। জাপান, চীন , দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত থেকে সৌদি আরব দেশটির প্রধান আমদানি হয়ে থাকে। পরিবর্তে চীন , আমেরিকা ও আমিরাত এ দেশটি থেকে রপ্তানি হয়ে থাকে।
সৌদি আরবের অর্থনীতি

সৌদি আরবের পোশাক, Saudi Arabian clothing

সৌদি আরবের নারীরা আবায়া, বোরকা, হিজাবসহ অন্যান্য শরিয়া সমর্থিত পোশাক পরেন, অন্যদিকে পুরুষেরা আলখাল্লা, জুব্বা, গুত্রা (মাথায় পরার আরব্য পোশাক) এবং টুপি পরিধান করে থাকেন। সৌদি আরবে পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়া মেনে চলা হয়। 

সৌদি আরবের পোশাক

সৌদি আরবের রাজার নাম কি ? Who is the king of Saudi Arabia?

২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মারা যাবার পর সালমান বিন আব্দুল আজিজ সৌদি আরবের বাদশাহ হন। সৌদি আরবের বাদশাহ, দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম এবং আল সৌদের প্রধান।

সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় শহর কোনটি? Which is the greatest city of Saudi Arabia?

 রিয়াদ বা রিয়াধ সৌদি আরবের রাজধানী এবং এটি সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় শহর হিসেবে গণ্য। রিয়াদ নামটি এসেছে আরবি শব্দ রাউধা এর বহুবচন থেকে, যার অর্থ “বাগান”। এটি আরব উপদ্বীপের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং 4,854,000 লোকের বাসস্থান এবং প্রায় 7 মিলিয়ন লোকের জনসংখ্যা সহ একটি অঞ্চলের নগর কেন্দ্র। তবে 2021 সালের হিসাবে প্রায় 4,697,000 জনসংখ্যা সহ, জেদ্দা হল মক্কা প্রদেশের বৃহত্তম শহর , হেজাজের বৃহত্তম শহর, সৌদি আরবের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রাজধানী রিয়াদের পরে মধ্যপ্রাচ্যের নবম বৃহত্তম শহর এটি। 

রিয়াদ বা রিয়াধ সৌদি আরবের রাজধানী এবং এটি সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় শহর হিসেবে গণ্য।

সৌদি আরবের রাজপরিবার কত বড়? How big is the royal family of Saudi Arabia?

মোট পরিবারে 10,000 থেকে 20,000 জন সদস্য রয়েছে বলে অনুমান করা হয়; যাইহোক, ক্ষমতা, প্রভাব এবং সম্পদের অধিকাংশই তাদের প্রায় 2,000 জনের একটি গোষ্ঠীর দখলে। রাজপরিবারের সম্পদের কিছু অনুমান তাদের নেট মূল্য $500 বিলিয়ন ডলার থেকে সর্বোচ্চ $3 ট্রিলিয়ন পর্যন্ত পরিমাপ করে।

সৌদি আরবের প্রথম শাসক কে ছিলেন? Who was the first ruler of Saudi Arabia?

সৌদি আরবের প্রথম শাসক ছিলেন বাদশাহ আব্দুল আজিজ। তিনি ইবনে সৌদ নামেও পরিচিত, তিনি ছিলেন সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম রাজা। তিনি 1876 সালে রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন এবং 1953 সালে মারা যান। তিনি একজন শক্তিশালী এবং ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন যিনি আরব উপদ্বীপকে একীভূত করেছিলেন এবং 1932 সালে সৌদি আরব রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজের কতজন স্ত্রী ছিল? How many wives of Saudi King Abdul Aziz were there ?

সৌদ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ ছিলেন আরবের প্রথম রাজার দ্বিতীয় পুত্র। তিনি 1953 থেকে 1964 সাল পর্যন্ত সৌদি আরব শাসন করেছিলেন। 30 জন স্ত্রীর সাথে তার মোট 108টি সন্তান ছিল; ফাহদ বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ 1982 থেকে 2005 সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের রাজা ছিলেন।

সৌদি আরবে হিন্দুদের সংখ্যা কত? What is the number of Hindus in Saudi Arabia?

হিন্দুধর্ম সৌদি আরবের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম এবং দেশটিতে বসবাসকারী মোট জনসংখ্যার প্রায় ১.৩%। ২০২০ সালের তথ্যনুসারে সৌদি আরবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা প্রায় ৪৫১,৩৪৭ জন এবং এটি প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয় এবং নেপালি বংশোদ্ভূত।

সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজের স্ত্রী কয়জন? How many wives of Saudi King Salman bin Abdul aziz?

সালমান বিন আবদুল আজিজ তিনবার বিয়ে করেছেন এবং বারোটি ছেলে সহ অন্তত তেরো সন্তানের জনক হয়েছেন। সালমানের প্রথম স্ত্রী ছিলেন সুলতানা বিনতে তুর্কি আল সুদাইরি, যিনি ছিলেন তাঁর মামা তুর্কি বিন আহমাদ আল সুদাইরির মেয়ে, যিনি (মামা) আসির প্রদেশের সাবেক গভর্নর ছিলেন।

সালমান বিন আবদুল আজিজ

শেষ কথা, Conclusion 

সৌদি আরব একটি তরুণ দেশ যা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাসের উত্তরাধিকারী। দেশের বিপুল তেল সম্পদ সৌদি আরবের অবকাঠামোতে বিশাল এবং দ্রুত বিনিয়োগকে উৎসাহিত করেছে । আশা করি আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আপনারা সৌদি আরব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে সক্ষম হয়েছেন।

Contents show

Oindrila Banerjee

Oindrila Banerjee, a master's graduate in Modern History from Calcutta University, embodies a diverse range of passions. Her heart resonates with the rhythm of creative expression, finding solace in crafting poetic verses and singing melodies. Beyond her academic pursuits, Oindrila has contributed to the educational realm, serving as a teachers' coordinator in a kindergarten English medium school. Her commitment to nurturing young minds reflects her belief in the transformative power of education. Oindrila's guiding principle in life, encapsulated in the motto, "There are two ways of spreading light: to be the candle or the mirror that reflects it,"

Recent Posts